এবার আর “যৌনশিক্ষা নয়, (তবে) প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে আরেক কিস্তি”

ভূমিকা

বলেছিলাম, এই বিষয়টা নিয়ে আরও লিখবো। বলেছিলাম, দরকার হলে বড় বিজয়ের জন্য ছোট পরাজয় মেনে নেবো।

তাই আবার লিখলাম। “যৌনশিক্ষা”  বদলে দিয়ে “প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা”-র আমদানি করলাম।

দেখা যাক এবার কি ধরনের মারমুখি আচরনের সম্মুখিন হতে হয়।

মূল লিখা পড়া যাবে এখানে

আমি বেশ অসহায় বোধ করি, যখন কেউ বলেন, এমন যৌনশিক্ষায় আপত্তি নেই যা বিবাহবহির্ভুত যৌনচর্চা উৎসাহিত করবে না।

যৌনশিক্ষা অর্থে যা বুঝিয়েছি তা হল, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষা। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য দু’টি–

১. যৌন-এক্সপ্লয়টেশন ও হয়রানির শিকার হওয়া (এবং এরই ধারাবাহিকতায় তা না করা) থেকে সুরক্ষা পেতে পর্যাপ্ত সচেতনতা অর্জন;

২. প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানের আদান-প্রদান যা একজনকে ভুল শিক্ষা থেকে দূরে রেখে যৌন আচরণের বিষয়ে সৎ থাকতে উৎসাহিত করবে।

আমার অসহায়ত্বের কারণ পাঠক হয়তো এখন অনুমান করতে পারছেন। আমি যে যৌনশিক্ষার কথা বলছি, তার সঙ্গে যৌনকর্মে বা রতিক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটা এমন একটা সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস যা থেকে আশা করা যায় যে সচেতনতাটি সেই পর্যায়ের হবে যা সঙ্গী নির্বাচনেও ভূমিকা রাখতে পারে। এমন ভূমিকা যা ওই সঙ্গীর বাইরে অন্য যে কোনো যৌনসম্পর্ক নিরুৎসাহিত করবে।

একজন মানুষের যৌনতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সে যেমন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াতে পারে, আবার কোনো জ্ঞান না থাকলেও তেমন ঘটনা ঘটাতে পারে। প্রজনন স্বাস্থ্য বা যৌনতা সম্পর্কিত জ্ঞানের সঙ্গে কারও কারও এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য যৌনআচরণের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রথমেই যৌনহয়রানি বা এক্সপ্লয়টেশন নিয়ে কিছু আলোচনা করি।

আমি যে যৌনশিক্ষার কথা বলছি, তার সঙ্গে যৌনকর্মে দক্ষতা অর্জনের সম্পর্ক নেই

আমি যে যৌনশিক্ষার কথা বলছি, তার সঙ্গে যৌনকর্মে দক্ষতা অর্জনের সম্পর্ক নেই

যৌনহয়রানি বা এক্সপ্লয়টেশনজনিত ট্রমা কারও কারও জীবন এমনভাবে বিষিয়ে তুলতে পারে যা হয়তো সে সারা জীবনেও কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তুলনামূলক কম আক্রান্ত অন্যরা হয়তো কষ্টকর একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এর সঙ্গে খাপ খাওয়ায়, স্বাভাবিক হয়। কিন্তু মূলত অজ্ঞতার কারণে এই পরিস্থিতির শিকার হওয়ার মূল দায়টা কার, ভেবেছেন কখনও? আর এদেরই একটা অংশ যে এই অভিজ্ঞতা ‘জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি’ ভেবে একসময় নিজেরাও তাতে জড়িয়ে যেতে পারে, (জড়ায়ও, অনেক অভিযুক্তই একটা সময়ে নিজেরাও এর শিকার ছিলেন বলে জানিয়েছেন) সেটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন?

“ও কিছু না, এই বয়সে এ রকম হয় একটু আধটু, বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, মনেও থাকবে না”-– ভেবে যারা বালিতে মুখ গুঁজে রাখছেন বা হয়রানিকারীকে রক্ষা করছেন (ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে), তারা যে এর মাধ্যমে একজন ভাবী হয়রানিকারী সৃষ্টির ঝুঁকি নিচ্ছেন না, বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন?

দুনিয়ার কোনো শিশুই যৌনহয়রানি ও এক্সপ্লয়টেশন থেকে নিরাপদ নয়– যতক্ষণ সে আগের প্রজন্মের এমন কারও সংশ্রবে থাকছে যে নিজে হয়রানির শিকার হয়েছিল কিন্তু জানে না যে তার সঙ্গে ঘটা ওই কাজটি গর্হিত কাজ ছিল। আমি এক ভদ্রলোককে বলতে শুনেছি যে, তিনি তার চার কী পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করে আট-নয় বছর বয়স পর্যন্ত নারী পুরুষ মিলিয়ে সাত-আটজনের কাছে অসংখ্যবার যৌনএক্সপ্লয়েটেশনের শিকার হয়েছেন।

পরে নিজের নয় বছর বয়সে প্রায় সমবয়সী একটি মেয়েকে প্রথম এক্সপ্লয়েট করার সুযোগ পান তিনি। সেটি ‘খুবই স্বাভাবিক একটি কাজ’ ভেবে গ্রহণ করেন তিনি। এভাবে নিজের বারো-তেরো বছর বয়স পর্যন্ত আরও একাধিক এক্সপ্লয়েটেশনের সুযোগ কাজে লাগানোর পর একটা সময়ে তিনি বোঝা শুরু করেন যে, এগুলো গর্হিত কাজ। এতে তার যে অনুশোচনা হয়, সেটা তাকে বয়ে বেড়াতে হয় দীর্ঘদিন।

এই কষ্টকর ও হতবিহ্বল অভিজ্ঞতার পুরোটা সময়ে তাকে কেউ কোনো বিষয়ে সহায়তা করতে পারেনি। কারণ এ রকমের একটা ‘লজ্জাজনক’ বিষয় যে কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায়, ভদ্রলোক সে সময়ে তা জানতেনই না।

অথচ একটি ছোট্ট তথ্য, “কারও কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত কখনও টাচ করতে হয় না। তোমাকে যদি কেউ কখনও টাচ করে বা নিজেরটা কেউ তোমাকে টাচ করতে বলে, সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবাকে জানাবে”-– ওই ব্যক্তিকে এই দীর্ঘ দিন বয়ে বেড়ানো ট্রমার হাত থেকে বাঁচাতে পারত।

প্রশ্ন উঠতে পারে, শিশুটি যদি জিজ্ঞাসা করে, কী এমন সমস্যা সামান্য টাচ-এ? কী উত্তর হবে এই প্রশ্নের?

দুনিয়ার কোনো শিশুই যৌনহয়রানি ও এক্সপ্লয়টেশন থেকে নিরাপদ নয়

দুনিয়ার কোনো শিশুই যৌনহয়রানি ও এক্সপ্লয়টেশন থেকে নিরাপদ নয়

কোন বয়সের শিশুকে এটা বলছেন, তার উপরে ভিত্তি করে এর জন্য কনভিন্সিং আবার সত্য এমন উত্তরও দেওয়া সম্ভব। বেশি ছোট শিশুকে যেমন বলা যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এটা প্রয়োজনীয় (যেমন, গাল টিপে আদর করার প্রচেষ্টা নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে)– তুলনামূলকভাবে বড়দের ক্ষেত্রে তাদের প্রজননঅঙ্গের সংবেদনশীলতার কথা বলে এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কারণ ততদিনে তারা সেই সংবেদনশীলতার বিষয়টি বুঝতে শুরু করেছে।

মূল ঘটনা হল, এই কাজটি একদম ছোট বয়সে করার মাধ্যমে একদিকে যেমন তার মধ্যে এক্সপ্লয়টেশন সম্পর্কে সচেতনতা জাগানো শুরু করা যায়, অন্যদিকে আবার তাকে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানানোর সূচনা করা সম্ভব। এই আলাপটি বাড়িতে মা-বাবাও করতে পারেন। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ করলে তার ফল আরও ভালো হবারই কথা। শিশুরা একটা বয়স পর্যন্ত প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে স্কুলকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। তাছাড়া মা-বাবার বলা একই কথাগুলি যখন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকেও বলতে শোনে, সেগুলির সারবেত্তা নিয়ে ওরা একদমই নিঃসন্দেহ হয়ে যায়।

যারা ভাবছেন, “স্কুলে যৌনশিক্ষা দেওয়া, সে কী করে সম্ভব? এ তো খুবই কঠিন (বা খারাপ) কাজ”– ভেবে বলুন তো, এই শুরুটা কি সত্যিই সে রকম কিছু?

এই শুরুটা যত নিচের ক্লাসেই করা হোক না কেন, সমস্যা নেই। এরপর পিউবার্টি অর্জনের আগ পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে শুধু হাত-দাঁত-চুল-নখ নয়, মলমূত্র ত্যাগের স্থান ও আশেপাশের সকল অঙ্গের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব আরোপ করা যায়। আর এগুলো বলার মাধ্যমে শরীর সম্পর্কিত আলাপে যে ট্যাবুগুলো রয়েছে তা কাটিয়ে উঠানো সম্ভব। পিউবার্টির সঙ্গে সঙ্গে যে শারীরিক পরিবর্তন ও সে সম্পর্কিত মানসিক চাপ, হতাশা ও ফ্যান্টাসিগুলো আসা শুরু করে তা কেন ঘটছে, কী কী হবে এগুলো জানিয়ে তাদের সেগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুত করা যায়।

এটাও কি খুব কঠিন বা গর্হিত কোনো কাজ? কই, এখনও তো সে রকম মনে হচ্ছে না।

তবে এই সময়ে বাবা-মাকেও এমন কিছু পাবলিকেশন বা তথ্যকণা সরবরাহ করা উচিত যেন শিশুর জিজ্ঞাসাগুলির উত্তরে তারা স্কুলে দেওয়া একই উত্তর দিতে পারেন। দু’জায়গায় দু’ধরনের উত্তর সদ্য-পিউবার্টির চাপে থাকা শিশুটির জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে সংবেদনশীল অঙ্গের যত্নের যে আলোচনা আগে থেকেই চলছিল, সে অঙ্গগুলোতে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে যত্ন ও আরও সংবেদনশীলতা সম্পর্কিত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা খুবই প্রসঙ্গক্রমে শুরু করা যায়। এই সময়ে সেসবের কাজ, সুরক্ষা, অপব্যবহারের ঝুঁকি, যত্নের সুফল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলাপে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। যখন তারা গাছের প্রজনন, ব্যাঙের প্রজনন নিয়ে শিখছে, প্রসঙ্গক্রমে মানব প্রজননের প্রক্রিয়াটাও সেখানে ঢুকে পড়া কঠিন কিছু হবার কথা নয়।

মনে রাখা দরকার, এজন্য তাদের সঙ্গে যেসব সংবেদনশীল অঙ্গ সম্পর্কে কথা বলতে হবে, সেগুলো নিয়ে আলাপে তারা কিন্তু অভ্যস্ত হয়েই আছে। সে ক্ষেত্রে এই আলাপে সমস্যা কোথায়?

মানব প্রজনন নিয়ে আলাপে যখন যাওয়াই যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে জন্মবিরতিকরণের প্রক্রিয়াগুলোও টেনে আনা সম্ভব। আর এই জন্য দেশের জনসংখ্যা আধিক্য একটা পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই সব আলোচনায় জন্মবিরতি ছাড়াও এগুলির অন্যান্য স্বাস্থ্যকর দিকগুলিও আলোচিত হতে পারে।

মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে এটুকু অর্জন করতে পারলে একদিকে যেমন এই কিশোর-কিশোরীদের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে তারা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা দ্বারা সহজে বিভ্রান্ত হবে না। তারা জানবে, ওইসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে কার কাছে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে।

তারা জানবে, ওইসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে কার কাছে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে

তারা জানবে, ওইসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে কার কাছে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে

আমাদের কৈশোরের এ জাতীয় একটি বিভ্রান্তিকর অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি যা এখনকার ওই বয়সী অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হবে।

সর্বরোগের মহৌষধ বিক্রেতা ক্যানভাসারদের ও মঘা শাস্ত্রীয় লিফলেট পড়ে আমাদের জেনারেশনের অনেকেরই বধ্যমূল ধারণা ছিল, হস্তমৈথুন অত্যন্ত স্বাস্থ্যহানিকর একটি জঘন্য কাজ এবং এতে অচিরেই মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও যারা সেটা ছাড়তে পারত না, তারা পরদিন সকালে অন্ধ হয়ে গেছে কিনা সেই ভয়ে চোখ খুলতে চাইত না দীর্ঘক্ষণ।

এই সময়ে বিদ্যুৎ মিত্রের ‘যৌনসঙ্গম’ বইটি হাতে এল। ওখানে বলা ছিল, কৈশোরোত্তীর্ণ বয়সে হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক যৌনআচরণ, এতে কোনো শারীরিক ঝুঁকি নেই।

আমরা বিরাট কনফিউশনে পড়ে গেলাম। শত শত সোর্স থেকে পাওয়া এতকালের এত এত জ্ঞান (?) যা দিয়ে হস্তমৈথুনে অভ্যস্তদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছি আর অন্ধ হবার ভয় দেখাচ্ছি, তা এভাবে এক ফুৎকারে চলে যেতে দেওয়া যায় না! নানান বানোয়াট যুক্তি দিয়ে এটা দাঁড় করানোর চেষ্টা চলল যে বইতে যা লেখা থাকে তার সব ঠিক না-ও হতে পারে।

আবার সমস্যা অন্য জায়গায়ও ছিল। প্রশ্ন করার ও তার উত্তর পাবার মতো কেউ ছিল না হাতের কাছে। তাই সঠিক তথ্য পেলেও সেটা তেমন কোনো কাজে আসেনি। জানতে চান কী প্রশ্ন? ১. ফ্রিকোয়েন্সি কী? ২. লুব্রিকেশনের জন্য কী কী ব্যবহার নিরাপদ, ইত্যাদি।

না জেনে ট্রায়েল এন্ড এররের প্রক্রিয়ায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখিও হয়েছে কেউ কেউ। বিপাকে পড়া একজনের সরল স্বীকারোক্তি থেকে জেনেছিলাম, লুব্রিকেশনের জন্য মবিল ব্যবহার করার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় মাসাধিককালের শারীরিক জটিলতা নিয়ে। অজ্ঞতার জন্য কেবল মানসিকই নয়, শারীরিক চাপেও পড়তে হয়।

সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে জিনবিদ্যার ক্লাসে। সঠিক সুস্থ উত্তরাধিকারীর জন্য অনেক নিম্নস্তরের প্রাণিদের মধ্যেও নাকি সঙ্গী নির্বাচনে বাছ-বিচার করতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে মানুষের সঙ্গী নির্বাচনে কী কী বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত সে আলোচনা টেনে আনা সম্ভব। মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক সঙ্গী হওয়ার জন্য ভালোবাসা থাকার গুরুত্ব আর সেই ভালোবাসাটা পাবার জন্য যোগ্যতা অর্জনের গুরুত্ব বোঝানো গেলে অনেক ধরনের ইম্পালস লাভের (লাভ-অ্যাট-ফার্স্ট সাইট জাতীয় কিছু একটা) অভিনয় করে প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এ সময়ে মনোবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে এটা বোঝানো সম্ভব যে, যাকে চিনি না জানি না সে এসে বলল, “তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না”-– এটা একটা উচ্চ পর্যায়ের ভণ্ডামিই শুধু নয়, বিরাট একটা ফাঁদ। কারণ চলচ্চিত্রে যা-ই দেখানো হোক না কেন, বাস্তবে ভালোবাসার মতো একটা কমিটেড ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে সম্পর্ক গড়ানোর জন্য পরিচিতি থেকে শুরু করে বন্ধুত্ব, সাধারণ বন্ধুত্ব থেকে আস্থায় নেওয়া যায় এ রকম একটা গাঢ় বন্ধুত্বের পর্যায়ে সম্পর্কটার উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন।

এটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার মতো বিষয়। হালকা কিছু নয়। বিশেষ করে পিয়ার প্রেসারে “ইলেভেনে উঠে গেলাম, এখনও বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড নেই.. কী হবে আমার…” এ রকম ভাবার সুযোগ নেই। আর এ রকম ভেবে অপরীক্ষিত কারও সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে জড়িয়ে যাবার সুযোগ তো আরও নেই। যদি কোনো বন্ধু এ রকম চাপ দেয়, তারা যে প্রকৃত বন্ধু নয়, সেটাও বুঝে নেওয়া উচিত।

সঙ্গী নির্বাচনে এই সতর্কতার বিষয়টি একবার পাঠ্য বিষয়ে আনা গেলে তা থেকে সঙ্গীর সঙ্গে মানবিক আচার-আচরণ, পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলোতে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। আর এর সবই এই পর্যায়ে সম্পর্ক নিয়ে চাপমুক্ত করাই শুধু নয়, তরুণ-তরুণীদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে সাহায্য করার কথা।

এর সবই তরুণ-তরুণীদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে সাহায্য করার কথা

এর সবই তরুণ-তরুণীদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে সাহায্য করার কথা

মনে হল, অনেকেই যে ভাবছেন, ‘যৌনশিক্ষা’ মানেই হয়তো শিক্ষক বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’ হাতে করে ক্লাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের দু’পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবেন, “দেখাও দেখি, এইগুলা ক্যামনে ক্যামনে করে”– তা যে নয়, তা কি পরিষ্কার করতে পারলাম?

যৌনশিক্ষাই বলি আর প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাই বলি, তা চালু ছাড়া বর্তমানে নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ক্রমাবনতিকর পরিস্থিতি চলার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি তা নিরসনে আর কোনো বিকল্প আছে কি? যদি না থাকে তাহলে এটা চালু করার বিরোধিতা কি এই ক্রমাবনতি সমর্থনের সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে না?

ভেবে বলুন তো?

[পুনশ্চ: ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ইচ্ছা করেই কোনো অবজেকটিভ আলাপে ঢুকিনি, বিষয়টার সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। আশা করছি, পাঠকগণও সেই সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন এবং অলৌকিক নয় বরং লৌকিক পদ্ধতিতেই সমাধান খুঁজবেন। ধন্যবাদ।]

 

৪,২৪৫ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “এবার আর “যৌনশিক্ষা নয়, (তবে) প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে আরেক কিস্তি””

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    আমি অনেক কিছু জানতাম না। মানে বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোরদের কাছে এই তথ্যগুলো পৌঁছে দেয়ার উপায় কি হতে পারে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করছিলা কিন্তু মাথায় আসছিলো না। চমৎকার কৌশলী পদ্ধতিগুলো চোখে পড়ছে এখানে। :thumbup: আশা করতে তো ক্ষতি নাই। আশা রাখি এই বিষয়গুলো আমাদের অভিভাবকরা বুঝতে পারবে। তবে সবচাইতে জরুরী হলো আমরা যারা ভবিষ্যত অভিভাবক আছি, তাদের মাথায় সঠিক ধারণাটির জন্ম নেয়া। নাহলে এই প্রচেষ্টার পুরোটাই মাঠে মারা যাবে।

    পুনশ্চঃ ব্যক্তিগত অভিমতঃ এই মূহুর্তে সবচাইতে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমে। মেয়ে/গার্লস ক্যাডেটদের ভোগের সামগ্রীর উপরে কিছু মনে করতে ব্যর্থ হচ্ছে ইদানিং কালের পাশ করে বের হয়ে আসা এক্স-ক্যাডেটরা। ঢালাও সবাই হয়তো এক নয় কিন্তু এই ক্যাডেট কলেজ ব্রাদারহুডের যাঁতাকলে পড়ে ঐ একদুইজন অসুস্থ মস্তিষ্ককে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে আরো দশজন এক্স-ক্যাডেট। সাম্প্রতিক যেই ঘটনাটি আমি সব সময় উল্লেখ করি এবং এখানেও করবো সেটা হলো ফেণী গার্লসের সেই মেয়েটিকে মেরে তক্তা বানানোর ঘটনাটি এবং ঘটনা পরবর্তী ছেলেটিকে কোন বিচারের আওতায় তো আনা হয়ই নাই উল্টো মেয়েটিকে চমৎকার কিছু উপাধি, যথাঃ ঢাকনা ছাড়া খাবার, দেয়া হয়েছে। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের সম্মানিত সিনিয়র ভাই ও আপারা। উনারা জানতেন একটু সময় দিতে হবে। এই সপ্তাহ দুয়েক, বড়জোড় এক মাস। সবাই ভুলে যাবে কি হয়েছিল কবে হয়েছিল কেন হয়েছিল। ফলাফলঃ ঢাকনা ছাড়া খাবার থেকে আর উন্নতি হবে না, অপরদিকে এরকম ফৌজদারী অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া ছেলেটির মনে জন্মাবে আত্মবিশ্বাস। জন্মাবে আরো একটি সাইকোপ্যাথ, পারভার্ট এক্স-ক্যাডেট 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      সারা দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যা ঘটছে, ক্যাডেট কলেজে তা থেকে খুব পৃথক কিছু হবে, এরকম ভাবার কোন কারন নাই। বরং নিজেদেরকে ভিন্ন (সুপিরিয়ার অর্থে) ভাবার কারনে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশী অর্জনে উৎসাহিত হবার সম্ভবনাও থাকে।
      ভাল কিছু অর্জনের চেষ্টায় আপত্তি নাই। সমস্যা বাঁধে সেই প্রচেষ্টাটা যদি মন্দ কিছুর জন্যে হয়।
      "অ-ক্যাডেট অমুকের দুইটা গার্ল-ফ্রেন্ড, আমার তিনটা না হলে আমি কিসের ক্যাডেট" - এই ধরনের কিছু একটা।
      আর তাছাড়া "যেনোতেনো ভাবে একটা গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতেই হবে, প্রেমে করতেই হবে, নাইলে স্মার্টনেস থাকবে না" - এই প্রবনতার মধ্যেই রয়েছে নারীদের প্রতি অসম্মানের বীজ।
      তাঁরা যেন কোন মানুষ নন, কেবলি একটা সংখ্যা!!!
      নিরাপত্তার জন্য নারীদের মাঝেও আরও সচেতনতা আশা করছি।
      একটি সম্পর্কের প্রস্তাবে বিগলিত না হয়ে ভাবুন, পরিচয়টা কতদিনের? কতবার ইন্টার একশনের মাধ্যমে ঘটা।
      এই সংখ্যা গুলি কি একজন মানুষকে চেনা জানার জন্য যথেষ্ট? তার সাথে পরিচয় থেকে ঘনিষ্টতায় উত্তরনের জন্য যথেষ্ট?
      দুটোর উত্তর হ্যাঁ হলে হ্যাঁ বলুন। একটিও যদি না হয়, সময় নিন।
      নারীদের বলছি, কারন, যতটা জানি, এখনো সম্পর্কের প্রস্তাব তাঁরাই পান। তাই প্রস্তাব পাশ করে সম্পর্ক শুরু করা কিছুটা বেশিট দায় তাদেরই।
      শেষকথা হলো, যেকোন সম্পর্ক চালিয়ে যাবার জন্য এই চেনা জানার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপুর্ন।
      একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করার আছে, পরে করছি। এখন সময় নাই। উঠলাম।


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        আমি কিন্তু ঘুরে ফিরে প্রযুক্তির ঠেলা সামলে উঠতে না পারার ফলাফলই বলবো এটাকে। ব্যাপারটা এভাবে দেখিঃ গার্লস ক্যাডেট কলেজ ৮৫ ইনটেক থেকেই পাওয়া শুরু হলো। ভেতরের খবর জানি না কিন্তু সিনিয়ার ব্যাচের আপা ভাইদের মাঝে যে সম্পর্কটা দেখি সেটা অন্তত বাইরে থেকে হলেও বন্ধুত্বের ও সম্মান বজায় রেখে একটি সম্পর্ক। এমন নয় যে অসুস্থ মস্তিষ্কের কেউ ছিল না। উনাদের মাঝেও আছে জানি এবং তারা এই প্রযুক্তির কল্যানেই ডানা মেলেছেন সেই কাহিনীও শুনেছি বেশ কয়েকটি। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা জানি (এবং স্বভাবতই বলা যাচ্ছেনা) যেগুলো এই প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেই হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে এড়ানো যেতো।

        প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার একটি সাইড উইং হিসেবে প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতা তৈরী করার একটি চেষ্টা আমাদের নেয়া উচিৎ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে প্রেম ভালোবাসার ব্যপ্তি শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয় এই ভার্চুয়াল জীবনেও ছড়িয়ে পড়েছে। ৮০র দশকে একটি ছেলে মেয়ের মাঝে মন দেয়া নেয়ায় কিংবা একটি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে "আমি-তুমি" বাদে আর কিছু ছিলো না। সেই আমি তুমিতে পাসওয়ার্ড ছিলো না। তাই নিরাপত্তাহীনতা, সন্দেহ এইসব তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। এখনকার জীবনে "আমি-তুমি" এর পাশাপাশি আছে "ফেইসবুক"--সন্দেহ ও নিরাপত্তাহীনতা উদ্রেক করার ভয়াবহ এক ভার্চুয়াল জগৎ। সেই জগতও আবার পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড। একটি মানুষ আরেকটি মানুষকে বিশ্বাস করার যে প্রক্রিয়া তা আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে এই ফেইসবুকের আবির্ভাব। এখনকার প্রেম ভালোবাসায় প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ফেবু প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড আদান-প্রদান, ফোনের কললিস্ট চেক করতে দেয়ার জন্য রীতিমত হুমকি দেয়। ও এত রাতে ফেইসবুকে কি করছে, কার সাথে কথা বলছে এই দুঃশ্চিন্তাগুলোই তিল থেকে তাল হয়। সুস্থ সম্পর্ক আর গড়ে উঠে না। বন্ধুত্ব, প্রেম কিংবা বিবাহ--যেই সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতা ও সন্দেহের আনাগোনা তাতে আর যাই কিছু হোক ভাল কিছু হচ্ছে না।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          এই ছবির বিষয়টা নিয়ে একটা ফুলস্কেল ব্লগ লিখার ইচ্ছা বেশ কিছুদিন ধরে মনের মধ্যে পুষছি। সময় করে উঠতে পারছি না।
          তোমার প্রযুক্তি সম্পর্কিত মন্তব্য দেখে এটার কথা মনে পড়ল।
          এখানে কম্বিনেশন-পারমুটেশন করে যতগুলা অপশান দাড় করানো যায়, তার মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ + সেক্স = ফা*বাডিটার সেতুবন্ধ নির্মানে ফেসবুক বা এজাতীয় যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত।
          কেবল ফেসবুক দিয়ে অন্য কোনটাই ঠিক মত দাঁড়াবে না। এমন কি ফ্রেন্ডশিপও না। ভারচুয়াল জগতের বেশ কাছের যতগুলা ফ্রেন্ডের সাথে আজ পর্যন্ত আমার দেখা হয়েছে, মিনিট পাঁচেক পরই অভিজ্ঞতাটা আর উপভোগ্য ছিল না।
          এখন তাই জানি, ভারচুয়াল ও একচুয়াল ফ্রেন্ডশিপ এক নয়।
          অন্যগুলার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তো আরও জটিল। মানে ভার্চুয়াল লাভ ও ভার্চুয়াল সেক্সের কথা বলছি।
          প্রশ্ন হলো, ফেসবুক এত ফা*বাডি-বান্ধব কি কারনে?
          উত্তর হলো, একজন ফা*বাডি সন্ধানকারী নারীর ফ্রেন্ড লিস্টের হাজার হাজার ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডের মধ্য থেকে ফা*বাডি হত ইচ্ছুক, অন্ততঃ তাতে কোন আপত্তি বা বাধা নেই, এরকম একাধিকজনকে চিহ্নিত করা খুব কঠিন কোন কাজ না। প্রোফাইল এখানে বড় সহায়তা।
          এরপর তাদের সাথে কিছু ওয়ান-টু-ওয়ান কমুনিকেশন করে শর্তহীন প্রেমের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে নেয়ার জন্যেও প্রচুর সময় ইনভেস্ট করা যায়।
          শেষে যার সাথে সবকিছু খাপে খাপ, আব্দুল্লার বাপ - বলে মনে হলো, তার সাথে একশন শুরুটা তো "বাম হাত কি খে" - রে পাগলা......
          এই যে দুজন ভার্চুয়াল বন্ধু প্রযুক্তির আশির্বাদে শরীর ভাগাভাগি করছেন, এজন্য প্রযুক্তি কেন দায়ী হবে?
          দায়িতো তাঁদের মনমানসিকতা অথবা অন্য এমন কোন কারন যা তাঁদের ফা*বাডি অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত করেছে অথবা ফা*বাডিতে পরিনত হওয়ার পথে বাধা হয় নাই।
          আমি মানি, এটা প্রযুক্তির একটা সীমাবদ্ধতা। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও যারা নীতি ও বিশ্বস্ততা নিয়ে চলতে চান, চলাটা কিন্তু খুবই সম্ভব। (সম্পাদিত)


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
          • মোকাব্বির (৯৮-০৪)
            শেষে যার সাথে সবকিছু খাপে খাপ, আব্দুল্লার বাপ - বলে মনে হলো, তার সাথে একশন শুরুটা তো "বাম হাত কি খে" - রে পাগলা......
            এই যে দুজন ভার্চুয়াল বন্ধু প্রযুক্তির আশির্বাদে শরীর ভাগাভাগি করছেন, এজন্য প্রযুক্তি কেন দায়ী হবে?

            :khekz: :khekz: যা বললেন ভাই!

            তবে আমি কিন্তু প্রযুক্তিকে দায়ী করছি না। আমি ঘুরে ফিরে সেখানে যেতে চাইছি যেখানে প্রযুক্তির দ্রুতগতির সাথে আমরা যেন তাল মিলিয়ে যেতে পারি। সেটা নিশ্চিত করার জন্য আলোচ্য প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার একটি অধ্যায় হতে পারে এটি। কারণ বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তির এই আবির্ভাবকে খুব ভুল ভাবে নিচ্ছে।


            \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
            অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

            জবাব দিন
            • পারভেজ (৭৮-৮৪)

              "প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার একটি অধ্যায়" হিসাবে প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কিত সতর্কতা অবশ্যই সংযুক্ত হওয়া উচিৎ। তবে এখানে সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটাকে আবার কেউ যেন প্রযুক্তি ব্যবহারে হস্তক্ষেপ হিসাবে না মনে করে। সেক্ষেত্রে পুরো উদ্দোগটা ভেস্তে যেতে পারে।
              তুমি প্রযুক্তিকে দায়ী করেছো, এই রকম কিছু বলার ইচ্ছা ছিল না যদিও পড়ে সেটাই মনে হয়। ওটা অনিচ্ছাকৃত।
              আসলে যেটা বলতে চেয়েছি, তা হলো, মানুষ দ্বারা প্রযুক্তির অপব্যবহারকে প্রায়ই প্রযুক্তির উপর দোষারোপ হিসাবে যে চিহ্নিত করা হয়, সেটা আসলে একটা অসার দাবী, অর্থহীন আলোচনা।
              প্রযুক্তি আসবেই। উন্নত থেকে উন্নততর হবেই। আর তা হবে, নতুন নতুন সীমাবদ্ধতাকে সাথে করে আবার নতুন নতুন সুযোগ মেলে ধরে। কিছু মানুষ শর্টরানে এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে এক্সপ্লয়েট করবে, যেমন করবে সুযোগের ব্যবহার।
              আমি আশাবাদি, লংরানে এগুলো অতিক্রমযোগ্য।
              শর্টরানেও কিভাবে তা অতিক্রম করা যায়, তা নিয়ে ভাবা উচিৎ।


              Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

              জবাব দিন
              • মোকাব্বির (৯৮-০৪)
                এটাকে আবার কেউ যেন প্রযুক্তি ব্যবহারে হস্তক্ষেপ হিসাবে না মনে করে। সেক্ষেত্রে পুরো উদ্দোগটা ভেস্তে যেতে পারে।

                সহমত। ইংরেজীতে যাকে বলে slippery slope. একটু উল্টাপাল্টা নড়াচড়া করলেই বিপদ ঘটতে পারে। হয়তো সরাসরি যোগ করা যাবে না তবে আপাতত অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে এই নিয়েও গবেষণা করা যায় চাইলে। এখানে কথা বলতে গিয়ে এখন মাথায় আসছে।


                \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
                অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

                জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      আমাদের দেশে বিয়ের পর, বিশেষ করে বিয়েটা যদি সেটেলড ম্যারেজ হয়, কনে পক্ষ থেকে কনের উপরে একটা চাপ থাকে দ্রুত সন্তান নেয়ার। একটা সন্তান হয়ে গেলে পরিবার, বিশেষ করে মুরুব্বিরা মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে যান "যাক, এই বাচ্চার জন্য হলেও বিয়েটা টিকে যাবার সম্ভবনা বেড়ে গেল"।
      আমাদের সেটেল্ড বিয়েটার পর দেখলাম আমার স্ত্রীর উল্টো খেয়াল। তিনি আমার কাছে সন্তান ধারন প্রচেষ্টার আগে দু'বছর সময় চাইলেন আমাকে চেনা জানার জন্য।
      "তোমাকে তো চিনিই না। কেমন মানুষের সাথে একটা সন্তান শেয়ার করবো জানতে বুঝতে হবে না?" দুবছরের আগে নো বেবী মেকিং এটেম্পট।
      অবশ্য, দু বছর পুরো লাগে নাই, দেড় বছরের কাছাকাছি গিয়েই তিনি ক্লিয়ারেন্স দিলেন। আর যার ফলশ্রুতিতে আনীলা পৃথিবীতে এলো।
      আনীলার এ লেভেল শেষ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশুনা শুরুর প্রস্তুতি চলছে এখন। দু জায়গার ইকুভ্যালেন্সের জন্য গিয়েছিলাম কিছুক্ষণ আগে। আরেকটাতে যাবো কিছুক্ষণ পর।
      বাইশ বছর আগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বিবাহিত অবস্থায় সামরিক কর্মকর্তা স্বামীকে চেনার, বোঝার জন্য সময় চাইতে পারলে এখনকার আরও আধুনিক, আরও ইনিফর্মড, আরও ভার্সেটাইল মেয়েরা অবিবাহিত অবস্থায় প্রনয়প্রার্থির কাছে সময় চাইতে পারছে না কি যুক্তিতে?
      ডিমান্ডের চেয়ে সাপ্লাই কি এতই কম যে যা পেলাম তাই গলায় তুলে নেবো। ওটা সাপ না মালা - সেই বাছ বিচারে যাবো না?
      মেয়েরা আবেগের চেয়ে বুদ্ধিটা কে প্রাধান্য দিতে শুরু করুক...


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        এর উত্তর একটাইঃ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কারণটা একাধিক কিন্তু আপনার লেখাতে যেটা বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। আমরা মনমানসিকতায় গোঁড়ারও গোঁড়ায় গিয়েছি, যাচ্ছি। নইলে আপনি এই লেখা লিখতেন না অথবা আমার এত লজ্জাজনক কাহিনী শুনে হজমও করা লাগতোনা। উপরে লেখা ঐ ঘটনা আমার মাঝে অনেক আত্মবিশ্বাসে বড় ধরনের ফাঁটল ধরিয়েছে। জানিনা মেরামত করা সম্ভব হবে কিনা। আশা দেখি। দেখতে থাকবো। চেষ্টাও হয়তো থাকবে।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          "আমরা মনমানসিকতায় গোঁড়ারও গোঁড়ায় গিয়েছি, যাচ্ছি"
          এটা ঠিক, কিছু কিছু বিষয়ে মন মানসিকতার দিক থেকে বরাবরই গোঁড়া ছিলাম, এখনো আছি।
          একটি ছেলের বিবাহ উদ্দোগে উৎসাহ না দেখানোটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় হিসাবে দেখা হয় অথচ একটি মেয়ের ক্ষেত্রে এটাকে দ্রুত ইকুয়েট করা হয় তার গোপন সম্পর্কের অস্তিত্বের সাথে। অনেক সময় যে তা থাকে না, তা না, কিন্তু থাকুক বা না থাকুক সেটাকেই প্রথম অপশন হিসাবে ধরে নেয়াটা অন্যয়।
          অনেক সময়ই, একটি মেয়েকে তার নেগেটিভ রেসপন্সের কারনে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় এভাবে, "কেন পছন্দ না, জাস্টিফাই করো"। ছেলেদের এই সংকটে পড়তে হয় না। তার দেয়া "মেয়ে পছন্দ হয়নি" উত্তরটা অনিবার্য ভাবে শিরোধার্য্য। তার জন্য আপছন্দের রায় ওয়াইড ওপেন।
          আবার এর সাথে রয়েছে মানসিক উৎপীড়নের হ্যাপা।
          ছেলেটি সম্পর্কের প্রস্তাব দিল। মেয়েটি গ্রহন করলো বা বলল, "ভেবে দেখি"
          এটাকে সম্পর্কের প্রস্তাবকারী দ্রুতই নিজের অপমান হিসাবে নিয়ে মেয়েটার নামে অপবাদ রটানোর কাজে যে নেমে যাবে, সেই সম্ভবনা অতি উজ্জ্বল।
          আরও বড় হ্যাপা হলো, ঐ মেয়েটির সার্কেলের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই রটনাটিকে সত্য ধরে নিয়ে মেয়েটিকে চাপ দেবে সেটার অসারত্ব প্রমান করার জন্য।
          হয়ত এইসব থেকে বাচতেই মেয়েরা সম্পর্কের প্রস্তাবে সচরাচর না করার বা ডিলে করার ঝুঁকি নেয় না। কি জানি?
          গোটা বিষয়টা অদ্ভুত এক আঁধারে ঢাকা......


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখাটা দারুন হয়েছে পারভেজ ভাই। 'প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা' নামকরনটাও পছন্দ হয়েছে, এতে নাম শুনেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেবার হার কিছুটা হলেও কমবে। বেশ সহজ ভাবে এক্সপ্লয়টেশন থেকে শিশু কিশোরদের সচেতন করার উপায়গুলো উঠে এসেছে।

    সময় থাকলে আমির খানের এই প্রোগ্রামটা দেখতে পারেন, Child Sexual Abuse নিয়ে দারুন একটা কাজ। আর আগে না দেখে থাকলে এই সিরিজের অন্যান্য পর্বগুলোও দেখতে পারেন, ভারতের বিভিন্ন সামাজিক সংকট নিয়ে কাজ করেছে, যার বেশিরভাগই আমাদের জন্যও প্রযোজ্য।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    চমৎকার পোষ্ট। কিছু মানুষ আছে, যাদের কুমিরের রচনার মতই আচরন। যৌন শিক্ষা বলেন আর প্রজনন শিক্ষাই বলেন ঘুরেফিরে ওই কুমিরেই গিয়ে ঠেকবে।

    ''যৌনশিক্ষাই বলি আর প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাই বলি, তা চালু ছাড়া বর্তমানে নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ক্রমাবনতিকর পরিস্থিতি চলার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি তা নিরসনে আর কোনো বিকল্প আছে কি? যদি না থাকে তাহলে এটা চালু করার বিরোধিতা কি এই ক্রমাবনতি সমর্থনের সমতুল্য হয়ে যাচ্ছে না?'' :boss: :boss: :boss:


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    আমি যে যৌনশিক্ষার কথা বলছি, তার সঙ্গে যৌনকর্মে দক্ষতা অর্জনের সম্পর্ক নেই

    :boss: :boss: :boss:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমি অন্য কারো শিশু সন্তান (ছেলে-মেয়ে) দের স্পর্শ করি না।
    মানুষকে এইটা বুঝতে হবে স্পর্শ না করেও ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়।
    খুব বেশি প্রয়োজন হলে বা বেশি পরিচিত হলে শিশুটির মাথায় হাত রেখে বাবা-মা বলে সম্বোধন করি।

    যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের গাল টিপে দেয়া বা গালে বা কপালে চুমু খাওয়া নির্দোষ। কিন্তু ১০০ ভাগ লোকের মধ্যে ৫ থেকে ১০ ভাগ থাকবে যাদের চিন্তা-চেতনা দুষ্ট।
    আমার নিজের মূল চিন্তা থাকবে আমার শিশুরা সেফ কিনা। কারণ অনেক আচার আচরণের ব্যাখ্যাই আমার শিশুরা জানবে না। কার চোখে-হাতে শুধুই ভালোবাসা আর কার কাম এইটা বোঝার মতো বয়স ওদের নয়।

    আমার পরিচিত অনেকে আমার মেয়েদের দেখলে জড়িয়ে ধরতো, গালে চুমু দিতো। আমি টেকনিকালি বন্ধ করছি এইটা।
    তাদের কে বলি ভাই আমি তো তাইলে আপনার ঠোঁটে চুমু খাচ্ছি।
    সে যদি বলে ক্যামনে?
    তখন বলি আপনি আমার মেয়ের যেই গালে চুমু দিচ্ছেন আমি তো সেই গালেই চুমু দেই।

    আরেকটা ব্যাপার শিশুদের কেনো আমাদের স্পর্শ করতে ইচ্ছা করে?
    শিশুরা সুন্দর।
    শিশুরা নরম, লাল্টু।
    শিশুরা পবিত্র।

    দাড়াচ্ছে এই তাহলে যে শিশুরা নরম বলে আদর করতে ইচ্ছা করে। কই আমরা তো কোন বয়ষ্ক লোকের গাল ধরে টেনে দিয়ে বলি না, ওরে সোনা যাদু টা।

    আমরা যারা সন্তানের বাবা-মা তাদের অনেকের হয়তো শিশু অবস্থায় এবিউজের ঘটনা আছে, আবার অনেকের নেই। যাদের নেই তারা অনেকেই হয়তো এই দিকটা সম্পর্কে জানে না।
    শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ দেয়া আমাদের সবার কর্তব্য।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।