শিক্ষকতা এবং মোটিভেশনঃ কিছু ব্যক্তিকথন ও একান্ত চয়ন

শিক্ষকতা এবং মোটিভেশনঃ কিছু ব্যক্তিকথন ও একান্ত চয়ন

[এই লেখাটা আমার সকল শিক্ষক এবং ছাত্রকে উৎসর্গ করা হল।]

আমার ক্যাডেট কলেজের এক বন্ধুর দু’টি কথা আমি সবসময় মনে রাখার, পালন করার এবং অনুভব করার চেষ্টা করি। সে একদিন আমাকে বলেছিল নেশা এবং পেশা এক হওয়াটা নাকি একটা বিরাট মানসিক প্রশান্তির ব্যাপার। আবার কোন এক সময় তার মুখেই শুনেছিলাম, সেইই প্রকৃত সুখী, যে পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল এই দুই লাইফ-কে মিশিয়ে না ফেলে আলাদাভাবে এনজয় করার চেষ্টা করে। আমার সেই বন্ধুর রেফারেন্স দিয়ে এই কথাগুলো প্রায়ই আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের বলে থাকি। কারন আমি মনে করি পড়াতে যে কেউ পারে, কিন্তু সত্যিকারের শিক্ষকের জন্য মোটিভেশন একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

আমার আশেপাশে এমন অনেকেই আছেন যারা অন্য পেশা থেকে শিক্ষকতায় এসেছেন। কিন্তু কেউ শিক্ষকতা থেকে অন্য পেশায় গেছেন এমনটা আমি খুব কমই দেখেছি; অবশ্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এ’চিত্র কিছুটা ভিন্নও হতে পারে। কারন হিসাবে আমার উপলব্ধি হল, শিক্ষকতা একটা ইমোশোনাল পেশা; এ’এক আজব নেশা। যারা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, কিংবা কেবলমাত্র জীবিকার তাড়নায় এ’পথে একবার পা বাড়িয়েছেন তারাই এই মায়াজালে আটকে গেছেন। যেমন, স্বয়ং আমি।

ক্যাডেট কলেজেই আমরা বন্ধুরা অনেকেই বুঝে গিয়েছিলাম যে, ক্যাডেট কলেজে শিক্ষকতার চাকরী খুব একটা আরামের বিষয় নয়। সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষকদের ডিউটি করতে দেখে আমরা অভ্যস্ত। আসলেই চিন্তার বিষয়! তাহলে তাঁদের নিজস্ব জীবনটা কোথায়? এরই মাঝে কিছু শিক্ষক পেয়েছি যাঁদের আমার এখনো ক্যাডেট-অন্তপ্রান মনে হয়। আবার কিছু শিক্ষকের আজব এক মনঃছবি দেখেছি যেখানে তাঁরা ক্যাডেটদের দোষ ধরেই যেন আনন্দ পেতেন। শুধুমাত্র ক্যাডেট কলেজেই নয়, বাহিরেও আসলে সেই একই দশা। দু’ধরনের শিক্ষকই আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও, তা সে সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক না কেন।

এখন বুঝতে পারি, এমনটা কেন হয়। আমার মনে হয় কেবলমাত্র মোটিভেশনের অভাবেই এমনটা ঘটে চলেছে। এই মোটিভেশনটা দ্বিপাক্ষিকঃ ১) সেলফ-মোটিভেশন এবং ২) ইন্সটিটিউশনাল মোটিভেশন। আসলে যেকোন পেশাতেই এই দুই মোটিভেশনই প্রয়োজন। তবে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে প্রথমটির গুরুত্ব আপরিসীম। আমি প্রায়ই আমার ছাত্র-ছাত্রীদের বলে থাকি যাদের ধৈর্য্য কম তারা যেন শিক্ষকতায় না আসে, তা সে একাডেমিক বিষয়ে যত ভালই হোক না কেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে একজন ভাল ছাত্র একজন ভাল শিক্ষক নাও হতে পারে। অনেকক্ষেত্রেই দেখা গেছে একজন মধ্যম মানের ছাত্র একজন খুব ভাল মানের ছাত্রের চেয়ে অনেক ভাল পড়াতে পারছে। তার মানে আবার এটা কখনোই নয় যে আদর্শ ছাত্র আদর্শ শিক্ষক হতে পারে না।

আমি খুব ভালভাবে খেয়াল করে দেখেছি, আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষক দুটো মারাত্মক ভুল করে বসেনঃ ১) ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন এবং ২) নিজেকে ছাত্রের অবস্থানে না নামিয়েই পড়াতে থাকেন। একজন ছাত্র না বুঝলে বা কম বুঝলে শিক্ষকরা অনেক সময়ই রেগে গিয়ে বলে ফেলেন, “এই সহজ কথাটা বুঝছো না কেন?” কিন্তু সেই শিক্ষক কি এক্ষেত্রে একটিবারও ভেবে দেখেছেন যে কথাটা কতটা অপমানজনক? এই কথাটা যদি কোন কারনে প্রকাশ্যে তাকেই (সেই শিক্ষককে) কখনো হজম করতে হয় তাহলে তার নিজের কাছে কেমন লাগবে? আবার একজন শিক্ষক পড়াতে গিয়ে মাঝে-মাঝে হয়তো ভুলে যান যে তার সামনে যারা বসে আছে তাদের কাছে তার কথা বোধগম্য নাও হতে পারে। অর্থাৎ, তিনি হয়তো ছাত্রদের লেভেলে না নেমে তার লেভেল থেকেই পড়িয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা হয়তো ভুলেই যান যে তিনি নিজেও একসময় ছাত্র ছিলেন। আমার মতে, একজন শিক্ষকের সবসময় মনে রাখা উচিৎ, একজন ছাত্রের ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল আর তার নিজের লেভেল এক নয়; এবং সেই সাথে তাঁর এটাও মনে রাখা উচিৎ, সবার লেভেল অব রিসিপশন এবং ধারনক্ষমতা এক নয়।

রংপুর ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার আগে আমি বগুড়া জিলা স্কুলে পড়তাম। আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি না কিছু শিক্ষক (স্যার এবং ম্যাডাম উভয়েই) পড়া না পারলে কেন এত বেশি মারধোর করতেন। আমি নিজেও অনেক কিছু বুঝতাম না। কিন্তু আমার সেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা কি একটিবারের জন্যও ভেবে দেখেছিলেন যে আমি কিংবা আমারই মত অন্যেরা কেন পড়া পারছে না, বা পড়া বুঝছে না। শিক্ষকদের আমি সবসময়ই শ্রদ্ধা করে এসেছি; কিন্তু আমার সেই শিক্ষকদেরকে আমার সবসময়ই ব্যর্থ মনে হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে হয় তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের ঝামেলাগুলোর প্রতিফলন ঘঠিয়েছেন তাঁদের কর্মক্ষেত্রে, এককথায় ছাত্রদের উপরে তথাকথিত মাষ্টারি ফলিয়ে। আবার আমি এটাও খেয়াল করেছি, যিনি যত কম বোঝাতে পারতেন তিনি তত বেশি রাগ করতেন। এটা মন থেকে আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না।

নিজেকে আমার অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। বাবাকে সবসময় দেখেছি তাঁর ছাত্রদের সাথে এক সুমধুর সম্পর্কের বন্ধনে। আবার ক্যাডেট কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষক আমি পেয়েছি যাঁদের সাথে আমার এখনো চমৎকার যোগাযোগ রয়েছে। মজার কথা হল, এমনও হয়েছে যে আমি অনেকদিন ফোন না করলে তাঁরা নিজেরাই হয়তো আমাকে ফোন করে বলছেন, “কি ব্যাপার, অনেকদিন তোমার কোন খোঁজখবর নেই কেন?” এইতো সেদিন ইংল্যান্ড থেকে একজন শিক্ষক ফোন করলেন। টানা ২০/২৫ মিনিট ধরে কথা হল। আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবান। শিক্ষকদের এমন স্নেহধন্য হওয়াটা আমার জন্য এক বিরাট আশির্বাদ। আমি আমার শিক্ষকদের সাথে এখনকার এই বন্ধুত্যের সম্পর্কটা দারুনভাবে এনজয় করি।

আমার জীবনের প্রথম চাকরি ছিল করপোরেট জব। এর পরে শিক্ষকতায় পার করলাম একটানা সাড়ে সাত বছর। মাঝে বেশ কিছু ভাল মানের করপোরেট এবং ব্যাংকের অফার পেয়েও সে’পথে যাইনি বা যাওয়া হয়নি। অনেকেই বলে কি বোকা আমি! বাবাও একসময় হয়তো এমনটাই ভেবেছেন। আসলে প্রথম চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা করা দরকার তাই কয়েকমাস একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কাজ করেছি। আর ঠিক সেসময়েই আমি দু’একটা ভাল (নন-টিচিং) জবের অফারে সাড়া না দেয়ায় বাবা বোধহয় বেশ অবাকই হয়েছিলেন। এখন অবশ্য বাবা এই কথাগুলো আনন্দের সাথেই স্মরন করেন। কারন তিনি বুঝে গেছেন, ছেলেটা তাঁর মতই হয়েছে।

যাই হোক, আমার সাথে আমার ছাত্রদের সম্পর্ক খুবই স্বভাবিক এবং অনেকটাই বন্ধুর মত। অবস্থানগত কারনে কিছুটা দূরত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু নেই কোন অভিনয়। বরং রয়েছে দ্বিপাক্ষিক অধিকারবোধ এবং আবেগের টান। আমার বন্ধুরা এবং আত্মিয়-স্বজনেরা ফেসবুকে আমার শিক্ষকদের এবং ছাত্রদের কমেন্ট দেখে প্রথম দিকে খুবই অবাক হত (অবশ্য, এখন আর হয় না)। হয়তো ক্যাডেট কলেজ ব্লগে কোন নতুন লেখা দিয়েছি; লিংক দিয়েছি ফেসবুকে; দেখা গেল অধিকাংশ কমেন্ট করেছে আমার ছাত্ররাই। অন্যেরা এটাকে কিভাবে দেখছে আমি জানিনা। তবে আমি মনে করি এটা আমার জীবনের সঞ্চয়। আবার আমিও আমার শিক্ষকদের ব্লগের একনিষ্ঠ পাঠক এবং মন্তব্যকারি। ভালই লাগে। বিষয়টাকে আমি বেশ এনজয় করি।

ছাত্রদের নিয়ে আমার জীবনে বেশ মজার কিছু মুহূর্ত আছে। আমার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল দিনাজপুরে, এবং বিয়ের পরদিন বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল পঞ্চগড়ে। আমার বাসার এবং আমার শ্বশুরকুলের অনেকেই এই দুই অনুষ্ঠানে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি দেখে অবাক হয়েছিলেন। সচরাচর বিয়ের আসরে বরের সাথে বসে এবং খাওয়া-দাওয়া সারে বরের বন্ধুরা কিংবা ভগ্নিপতি স্থানীয়রা। কিন্তু আমার বিয়ের আসরে দেখা গেল আমাকে ঘিরে রয়েছে আমার ছাত্রবাহিনী। এমনকি তাদের কড়া পাহারায় আমার শ্যালক-শ্যালিকারা বরের জুতার টিকিটা পর্যন্ত খুজে পায়নি। সত্যি কথা বলতে কি, আসলে এতজন ছেলে-মেয়ে ঢাকা থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের আরেক প্রান্তে চলে গেছে শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের বিয়েতে যোগ দেবার জন্য, এতে আমিও কম অবাক হইনি। হয়তো এতটা ভালবাসা পাবার অধিকার আমার নেই। আমি দাওয়াত দেবার সময় ডিপার্টমেন্টের সব ছাত্র-ছাত্রীদের বলেছিলাম, “তোমরা গেলে আমি খুবই খুশী হব; কিন্তু আমি যেন ফিরে এসে না শুনি যে তোমরা কারো ক্লাশ বাদ দিয়ে গেছো।” তারাও কম যায় না; তারা অন্য ফ্যাকাল্টিদের ম্যানেজ করে ঠিকই চলে গেছে। আরো অবাক হয়েছি এটা দেখে যে আমার এক পুরোনো ছাত্রী তার হাসব্যান্ড এবং বাচ্চা সহ এসে হাজির। সে আমার কাছে এসেই বলে, “স্যার, আমি তো দিনাজপুরেই ছিলাম, খবর পেয়ে বিনা দাওয়াতেই চলে এসেছি।”

বিবাহিত জীবনে এসে প্রথম দিকে আমার স্ত্রী-ও হয়তো আমার সাথে আমার শিক্ষকদের এবং ছাত্রদের সম্পর্কের ধরণ দেখে বেশ অবাকই হয়েছে। তবে এখন সেও বেশ মজা পায়। আমার ছাত্র-শিক্ষকদের অনেককেই সে এখন চেনে। কাউকে নামে চেনে (আমার কাছে গল্প শুনে), কাউকে চেনে পরিচয়ের মাধ্যমে, আবার কাউকে টেলিফোনের আলাপে। আমার সাথে আমার শিক্ষকদের আলাপচারিতার নমুনা দেখে সে আগে বেশ অবাক হত। চোখেমুখে তার স্পষ্ট ছাপ থাকত, “উনি তোমার কেমন শিক্ষক?” ধীরে-ধীরে সেও এটাতে অভ্যস্ত হয়েছে যে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে শ্রদ্ধার দূরত্ব থাকা সত্বেও বন্ধুত্বের টান থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

আমি খুব সযত্নে খেয়াল করে দেখেছি আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমার সাথে নির্ভয়ে কিংবা নিঃসংকোচে কথা বললেও কখনো একবিন্দুও অশালীন আচরন (বা যাকে আমরা বলি ‘বেয়াদবি’) করে না। কেউ কোন আচরনগত ত্রুটি করে ফেললে আমি তাকে শুধু তার ভুলটুকু ধরিয়ে দেই। ব্যস। আর কিছুই করতে হয় না। দেখেছি, তারপরে শুধু আমার সাথেই নয়, বরং অন্য শিক্ষকদের সাথেও সে এ’ব্যপারে সচেতন হয়ে গেছে।

এবারে একটু পিছনে ফিরে যাচ্ছি। এই লেখার শুরুর দিকে আমি মোটিভেশনের কথা বলেছি। এবারে বিষয়টাকে ক্যাডেট কলেজের প্রেক্ষাপটে দেখা যাক। ক্যাডেট কলেজের সেই শিক্ষকদেরই আমরা সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরন করি যাঁরা ছিলেন সেলফ-মোটিভেটেড। তাঁরা শিক্ষকতার আদর্শে নিবেদিতপ্রান ছিলেন বলেই আমাদের সেই কৈশরের মানসপটে তাঁরা এমনকিছু এঁকে দিয়েছেন যার জন্য আজ আমরা সবাই নিজ-নিজ জীবনে এতদূরে এসেছি বা আসার স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু যাঁরা শিক্ষকতাকে কেবলমাত্র একটা চাকরি বা রোজগারের মাধ্যম হিসাবে নিয়েছিলেন, তাঁরা আমাদের কাছে বিরাগভাজন ছিলেন; এবং আমার বদ্ধমূল ধারনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোধহয় প্রাক্তন ক্যাডেটদের সাথে তাঁদের পরবর্তিকালীন যোগাযোগ সবচেয়ে কম। আমাদের সময়ের কিছু শিক্ষক সারাক্ষণ বিরক্তিকরভাবে শুধু রাগ করতেন আর ক্যাডেটদের দোষ ধরে রিপোর্ট করে দিতেন (এক্ষেত্রে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি যে আমি সহ আমাদের কয়েকজন বিভিন্ন অপরাধে তাঁদের কারো-কারো কাছে ধরা পরলেও তাঁরা অনেকসময় রিপোর্ট করেননি; এটা স্বীকার না করলে আমি নিজের মনের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতাম)। তাঁদের অনেকের সম্পর্কে শুনেছিলাম (সত্যি কিনা জানিনা) যে তাঁরা নাকি ব্যক্তিজীবনেও এমন ছিলেন। এখন মনে হয় তাঁরা হয়তো মানসিক চাপের বাহিরে থেকে শিক্ষকতা করতে পারেননি। অর্থাৎ পারসোনাল আর প্রোফেশনাল জীবনকে তারা আলাদাভাবে কন্ট্রোল করতে পারেননি। কিংবা হয়তোবা কিশোর-বয়সীদের সাইকোলোজি না বুঝেই তাঁরা এটা করেছেন। তবে, আমার মনে হয় তাঁরা এমনটা না করলেই ভাল করতেন। কারন তাঁদের মনে থাকা উচিৎ ছিল, ক্যাডেটরা বছরে নয়-মাস বাবা-কে ছেড়ে তাঁদের কাছেই থাকে।

আরেকটা কথা শুরুর দিকে লিখেছিলাম, সেটা হল ইন্সটিটিউশনাল মোটিভেশন। ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকরা যে পরিমান কষ্ট করেন, আমার মনে হয়, সেই তুলনায় তাদের মূল্যায়ন নেই। তা সে বেতন-ভাতার দিক থেকেই হোক, কিংবা চাকরির প্রোমোশনের দিক থেকেই হোক। আমি কষ্ট পাই যখন দেখি আমার পুরোনো কোন শিক্ষক এখনো ঠিকমত প্রোমোশন পাচ্ছেন না বা একই পদে আছেন। এটা নিঃসন্দেহে একটা মানসিক চাপের বিষয়। একজন শিক্ষককে এই মানসিক চাপের উর্ধে থাকতে দেয়া উচিৎ। নইলে শিক্ষক তাঁর মোটিভেশন হারাতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় কিছু শিক্ষককে দেখেছি কলিগদের নামে ছাত্রদের কাছে আপত্তিকর কথা বলতে। এটা আর যাই হোক, একজন শিক্ষকের ধর্ম হতে পারে না। ছাত্রের কাছে সহকর্মীর বদনাম করা মানে যে নিজেকেই অসম্মান করা এটা কেউ কেউ মনে রাখতে ব্যর্থ হন। এটা ঠিক না। তবে সর্বকালের সেই শিক্ষকেরাই মনে চিরস্থায়ী দাগ কেটেছেন যাঁরা ক্লাশে দায়িত্বের সাথে পড়াতেন, পড়ানোর আগে নিজে প্রস্তুতি নিয়ে আসতেন, আমরা না বুঝলে যাঁকে নির্দ্বিধায় মনের কথাটা বলেতে পারতাম, যাঁকে সমস্যার কথা বললে তিরস্কার না করে পথ দেখাতেন, যাঁকে শিক্ষকের চেয়ে বাবা-মা কিংবা বড় ভাই-বোনের মর্যাদা দেবার জন্যই মন বেশি সায় দিয়েছে।

খুব ভাল লাগে যখন সময়ে-অসময়ে হঠাৎ পুরোনো কোন ছাত্র নিঃস্বার্থভাবে শুধুমাত্র খোঁজ-খবর নেবার জন্য ফোন করে বা এসে দেখা করে যায়। আসলেই খুবই ভাল লাগে। মন থেকে কিভাবে যেন তাদের জন্য একটা শুভকামনা চলে আসে। এটাকেই বোধহয় বলে ‘শিক্ষকের দোয়া’। আবার অবাক হই যখন দেখি আমার কোন ছাত্র আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ দিয়ে চলে যায়। কিছু মনে করি না, জোর করে কষ্ট না পাবার চেষ্টা করি। হয়তো তার মনে আমি দাগ কাটতে পারিনি। হয়তো এখানে ব্যর্থতা আমারই।

২৭,৮১৬ বার দেখা হয়েছে

২৩৫ টি মন্তব্য : “শিক্ষকতা এবং মোটিভেশনঃ কিছু ব্যক্তিকথন ও একান্ত চয়ন”

  1. বন্য (৯৯-০৫)

    লেখাটা এত ভাল লাগলো আহমদ ভাই পুরোটা কোট করে ফেলতে ইচ্ছা করতেসে।পাচতারা তো দিলামই....কেক্কুকও পাওনা রইল আপনার। 😀
    লেখাটা পড়ে ক্যাডেট কলেজের চেয়ে ভার্সিটির শিক্ষকদের চেহারাগুলা ভাসছে সামনে।
    বুয়েটে এত বেশি বর্ণিল চরিত্রের শিক্ষক পেয়েছি কিন্তু আফসোস হাতোগোনা দুয়েকজন ছাড়া কাউকেই মনে হয় পজিটিভ কারণে মনে রাখব না।কেন রাখব না তার সব কারণই আপনি ব্লগে চমৎকার ব্যাখ্যাসহ বলে দিয়েছেন ।
    একজন অনুকরণীয় শিক্ষক পাওয়া যে একজন ছাত্রের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে বলে বোঝানো যাবেনা।ইনফ্যাক্ট তিনি ওই ছাত্রের জীবন পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারেন।এই জিনিসটা শিক্ষকরা মাথায় রাখলে সবার জন্যই মঙ্গল হইত।

    আবারও বলি লেখাটা বেশি বেশি ভাল্লাগসে।হ্যাটস অফ টু ইউ। :hatsoff:

    জবাব দিন
  2. রেশাদ (৮৯-৯৫)

    বস আবারো কমেন্ট করি...
    এই ব্লগে একটা লেখা পড়সিলাম, টিপিক্যাল টিচার কারে বলে বুঝে গেসিলাম ঐদিনই।
    তিনি এখানে আসেন "আমাদের কিছু শেখাতে"... আপনার লেখাটা তার চোখে পড়ুক এই কামনা করি...
    আমিন।

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সময়োপযোগী লেখা। বাংলাদেশের স্কুল কলেজের শিক্ষকদের আলাদাভাবে কিছু মনঃস্তত্বের উপর পড়াশোনা উচিত।
    বাংলাদেশে ভার্সিটি পর্যায়ে শিক্ষকদের কোন জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে কিনা জানা নেই। কে কিভাবে পড়াচ্ছে, কারিকুলাম আপডেট করছে এ ব্যাপারে বোধহয় কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। অন্ততঃ বুয়েটে অধিকাংশ শিক্ষকদের দেখে এটা মনে হয়েছে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সিস্টেমটা আছে।প্রতি সেমিস্টার শেষে ছাত্ররা সরাসরি শিক্ষকদের মূল্যায়ন করার সুযোগ পায় নামবিহীন ফর্ম পূরণ ও মন্তব্য লেখার মাধ্যমে।আমাদের চেয়ারম্যান স্যার উনার কোর্সে মজার একটা নিয়ম চালু করেছিলেন-একটা ইয়াহু আইডি তৈরি করে সেটার পাসওয়ার্ড সবাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন যাতে উনার কোর্সে বেনামে কেউ কোন অভিযোগ থাকলে তা করতে পারে। "ন্যাজিউ" এর শতটা খারাপ দিকের মাঝে এই একটা খুব ভাল দিক 😛

      জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      শান্তাপু, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে আপু, জবাবাদিহিতা কোথাও আছে, আবার কোথাও নেই। কিন্তু কেউ যদি ফাকি দিতে চায়, তাহলে যে কোন ভাবেই তা দিতে পারি। এক্ষেত্রে আমার মত হল, শিক্ষকদের মন-মানসিকতার উন্নয়নটাই সবচেয়ে জরুরী। আর আমি একটা ব্যপার কিছুতেই বুঝি না, ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে অত বেশি দূরত্ব থাকবে কেন? এই দূরত্ব কমে গেলেই দেখা যাবে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। কারন আপন জনের ক্ষতি আমরা নিসচয়ই কেউই চাই না।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আহমদ ভাই,নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের বড় অভাব আমাদের দেশে।আপনি এবং আপনার মত আরো শিক্ষক দেশের চেহারাটা পালটে দিতে সাহায্য করুন এই কামনা করি।

    জবাব দিন
      • আহমদ (৮৮-৯৪)

        আমি দেখেছি শিক্ষকতায় ক্যাডেটরা খুব কমই আসে। যারা আসে তারা ভালই করে বলে আমি জানি। আমি মনে করি ক্যাডেটদের জন্য শিক্ষকতা পেশাটা খারাপ না।


        চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

        জবাব দিন
        • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

          কি বলেন আহমদ ভাই! 😛 বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষকই ক্যাডেট-আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ এর ডিন,প্রক্টরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেই ক্যাডেটরা আছে(প্রক্টর অবশ্য বদলেছে কয়দিন আগে)-এ ছাড়াও অন্তত ২০ জন ক্যাডেট বর্তমানে নর্থ সাউথে পড়াচ্ছেন খুব সুনামের সাথেই।আর ডিইউ এর ইকোনমিক্স ডিপার্টমেনটে বেড়াতে গিয়ে লবিতে দেখি খালি ক্যাডেট আর ক্যাডেট(৫ জন ক্যাডেট শিক্ষকের সাথে দেখা হয়েছিল সেদিন)।অবশ্য মোট জনসংখ্যার তুলনায় বোধ হয় কিছুটা কম...কিন্তু শিক্ষকতায় প্রচুর ক্যাডেট আছে বলেই জানি 🙂

          (অফ টপিক-বস হালকা গিরিঙ্গি বাঁধাইলাম মাইর দিয়েন না)

          জবাব দিন
          • আহমদ (৮৮-৯৪)

            মাস্ফ্যু,
            তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।
            আমি ছিলাম আমার এখানে প্রথম ক্যাডেট রিক্রুটমেন্ট।
            তারপর থেকে বেশ কজন ক্যাডেট রিক্রুটেড হয়েছে (full-time & part-time both). তবে আমি আসলে সার্বিক পরিস্থিতির কথা বলছিলাম। ক্যাডেটরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই corporat লাইনের দিকেই যায়। আমিও তাই গিয়েছিলাম।
            কারন সম্ভবতঃ এক্টাই, অন্য আর সব জবের চেয়ে এটা কিছুটা slow profession. কিন্তু এখানে স্বাধীনতার আনন্দ আছে। generation build-up-এর আনন্দও কম নয়।


            চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

            জবাব দিন
        • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

          শিক্ষকতা পেশার সবচাইতে ভাল দিক আমার কাছে মনে হয় অবারিত স্বাধীনতা-নোবডি ইজ মাই বস-এই জিনিসটা।জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ কোন সাধারণ মানুষের কাজ না তাই শিক্ষকতা পেশাটাকে আমার অসাধারন বলেই মনে হয়।আমাদের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর গৌর গোস্বামী স্যার- ছোটখাট মানুষ,কাল প্যান্টের সাথে কেডস পরে চলে আসতেন ক্লাস নিতে-তথাকথিত চটকদার পোশাকের ধার ধারতেন না।অথরিটির কিছু পছন্দ না হলে সরাসরি বলতেন-ডিপ্লম্যাসির ধার না ধেরে।একবার ছাত্রদের একটা সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপুর্ন একজনকে ছাত্রদের সামনেই ধুয়ে দিয়েছিলেন-আমরা পরে এই প্রসং তোলায় তিনি বলেছিলেন যে একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব শুধু পড়ানোই নয় বরং ছাত্রদের সমস্যাগুলো যথাসাধ্য সমাধান করা।আরও বলতেন-আমার ছাত্র যদি আমার চেয়ে ভাল অর্থনীতি না শেখে তাহলে শিক্ষক হিসেবে আমি সফল নই।এই স্যার নিজের ঝুঁকিতে আমার দুই সেমিস্টার এক করে বেশি কোর্স শেষ করার সুযোগ দেবার মাধ্যমে আমাকে বিসিএস পরিক্ষায় অংশ নেবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।এঁনাদের মত মানুষদের দেখলে আসলেই মনে হয় যে শিক্ষকতা সাধারন আর দশটা পেশার মত নয়-এর মর্যাদা অনেক উচ্চে।

          আহমদ ভাই,আপনি নিশ্চয়ই এরকম শিক্ষক হবেন!

          জবাব দিন
          • আহমদ (৮৮-৯৪)

            মস্ফ্যুরে,
            কি রকম হব, জানিনা ভাই। আসলে প্রতিটা শিক্ষক, প্রতিটা মানুষই স্বতন্ত্র।

            আমি এখানে বেশ কিছুদিন Language & Literary Club এর দায়িত্বে ছিলাম। এখন আছি Debate Club-এর দায়িত্বে। লাইব্রেরিয়ানের অনুপিস্থিতিতে কিছুদিন সেটাও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে পালন করেছি। Department-এ Second Man হিসাবে Head of the Department-এর অনুপস্থিতিতে প্রায় ৬ মাস সেই দায়িত্বেও ছিলাম। এখন আমি হলাম University-র Student Counselor-দের একজন। ... ... ... প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতি মুহূর্তে যেন নিত্য নতুন সঞ্চয়। তবে ছাত্রদের মৌলিক চাহিদাগুলোই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। আর co-curricular কাজের ক্ষেত্রে সবসময় যেন ক্যাডেট-কলেজকেই feel করি।

            আমার ছাত্ররা সবাই খুব ভাল মতই জানে, আমি ঠিক যতটা বন্ধুর মত, আবার নিয়মের ক্ষেত্রে ততটাই কঠোর। ক্লাশে কোন ছাত্র আসবে না আর পরের ক্লাশে আমার কাছে জবাব্দিহি করবে না, তা হবে না।
            আসলে এই পেশাটা বোধহয় আমার রক্ত-মাংসে মিশে যাচ্ছে/গেছে।

            তবে মাস্ফ্যু, তুই যে diplomacy-র কথা বলেছিস। এই বিষয়টা আপেক্ষিক। তোর শিক্ষক যখন তোর পক্ষে ভূমিকা পালন করছেন, তখন কিন্তু তিনি তোর পক্ষে একজন diplomat.

            আমি আমার point of view থেকে কথাগুলো বললাম। নিজেকে জাহির করার জন্য নয়, বরং সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে না পেরে কথাগুলো বলে ফেললাম।কাউকে মনে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থি।


            চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

            জবাব দিন
  5. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    বস, পাঁচতারা। আপনার বেশিরভাগ অভিমতেই সহমত।

    শিক্ষকতায় আবেগের ব্যাপারটা আমার উপলব্ধিতে খুবই সত্য। আমি শিক্ষকতায় এসেছি একটা আবেগের কারণেই; এটা কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। আর তাই বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে অন্যান্য পেশায় যাবার পরামর্শ দিলেও কোন কাজ হয়নি।

    আরেকটা ব্যাপার- আমি শিক্ষকতায় এসেছি নিজের জন্য, ছাত্র পড়িয়ে জাতিকে উদ্ধার করে ফেলবো এমন কোন বৃহৎ উদ্দেশ্যে নয়। মনে হলো, এই ক্ষেত্রে আমি আপনার দলে পড়ি। আমি ছাত্রদের সাথে- এবং কলিগদের সাথেও- পড়ার বিষয়+রিলেটেড বিষয়ে কথা বলে মজা পাই। নিজের+অন্যদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করলে দেখতে পাই আমরা যা সঠিক বলে জানি তা'র কত কিছুই অজানা বা ভুল-জানা; আরো দেখি আমাদের আশেপাশেই কত মজার মজার বিষয় আছে যেগুলো আমাদের চোখের (এবং মনেরও) আড়ালে থেকে যায়- সেসবেও মজা পাই। (এটা কি শিক্ষক হিসেবে স্বার্থপরতার পর্যায়ে পড়ে? :-/ )

    একেকজন মানুষ (ছাত্ররা ত মানুষই) আমার কাছে একেকটা পূর্ণাংগ ইতিহাস। আর ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয় 😀 ।

    আপনার সাথে ছাত্রদের সম্পর্ক দেখে 'শিক্ষকের মর্যাদা' কবিতাটা মনে পড়ে হেলো......
    'বাদশাহ আলমগীর,
    কুমারে তাহার পড়াইতেন এক মৌলভী দিল্লীর।......'

    - ছাত্রদের সাথে আপনার এই সম্পর্ক চলতে থাকুক।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      মাহমুদ,
      তোর মন্তব্যের আপেক্ষাতেই ছিলাম। একজন শিক্ষক হিসাবে আরেকজন শিক্ষকের ফিলিংস জানার খুব আগ্রহ হচ্ছিল। খুব ভাল লাগল তোর মন্তব্য পেয়ে। তোর কথাই ঠিক। আমরা অন্যদের সাথে আইডিয়া শেয়ার করতে গেলে অনেক কিছুই নতুনভাবে দেখতে পাই। এমনো ঘটেছে যে কোন একটা বিষয়ে গল্প করতে গিয়ে দেখেছি আমার কোন ছাত্রের কাছে হয়তো এই বিষয়ে এমন কিছু আইডিয়া বা ইনফরমেশন সোর্স আছে যা আমার নেই।

      নিজের+অন্যদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করলে দেখতে পাই আমরা যা সঠিক বলে জানি তা’র কত কিছুই অজানা বা ভুল-জানা; আরো দেখি আমাদের আশেপাশেই কত মজার মজার বিষয় আছে যেগুলো আমাদের চোখের (এবং মনেরও) আড়ালে থেকে যায়- সেসবেও মজা পাই। (এটা কি শিক্ষক হিসেবে স্বার্থপরতার পর্যায়ে পড়ে? )

      তোর প্রশ্নের জবাবে বলছিঃ
      নাহ। এটা মোটেও স্বার্থপরতার পর্যায়ে পড়ে না। কারন এটা হার্মলেস এবং তুই এটা অকপটে স্বীকার করে গেলি। আমারো একই অবস্থা।

      আরেকটা কথা না বলে পারছি না। আমি সবসময় ছাত্রদের বলে থাকি, "We should not only see something, rather we must observe." আর তাই যদি হয়, তাহলে তোর-আমার কাজকর্মগুলো আমার হিসাবে স্বার্থপরতা নয়। বরং কিছুটা আলাদা বলা যেতে পারে যা আমাদের আত্মিক প্রশান্তির খোরাক।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আহমদ : প্রত্যেকটা পেশার কিছু ইউনিক দিক আছে। আহমদ তুমি নিজের এবং বাবার পর্যবেক্ষণে শিক্ষকতা পেশাকে যেভাবে তুলে ধরেছ তার সবটার সঙ্গেই একমত। আসলে পেশাটা যদি ভালোবাসার না হয়, নেশার না হয়; তাহলে কখনোই এটা তৃপ্তির বা আনন্দের হবে না।

    আমাদের দেশে অধিকাংশই তার ভালোলাগার বা আগ্রহের পেশা পায় না। ফলে প্রায় সব পেশাতেই দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ চাকরির জন্য চাকরি করছে। সে শিক্ষক হোক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যাংকার বা যে পেশার কথাই বলি না কেন, সর্বত্র একই অবস্থা। স্রোতে গা ভাসিয়ে জীবনটা পার করে দিচ্ছে সমাজের অধিকাংশ মানুষ। আর প্রায় সব পেশাতেই চলছে মেধাহীন, মতলববাজ মানুষের দৌরাত্ম্য! বিনয় আর সততার ভীষণ অভাব সর্বত্র।

    নিজের পেশার সঙ্গে দেশ, সমাজ, মহত্ব ইত্যাদি ইত্যাদিকে গুলিয়ে ফেলার পক্ষপাতি আমি নই। আমরা যার যার কাজে সৎ হলে এমনিতেই দেশটা সুন্দর হবে। আমি আমার পেশাটাকে এভাবেই দেখি। মনে হয়, বিষয়টা সব পেশার জন্যই প্রযোজ্য। আবারো :hatsoff: তোমার পোস্টের জন্য।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      সানা ভাই,
      সিসিবিতে যে কারো পোস্টে আমি আপনার কমেন্টগুলো সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি। আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে আপনি emotion-এর বাহিরে থেকে comment করেন।

      আমি আপনার সাথে পুরোটাই সহমত। আসলে প্রতিটি পেশাতেই সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার প্রয়োজন। কাজের প্রতি ভালবাসা না থাকলে আমরা আর যাই হোক মনের প্রশান্তি পেতে পারি না। আর মন শান্ত না থাকলে কাজের ফলও ভাল হয় না। তা সে যে পেশাই হোক না কেন।

      বাবা-মা আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক। কিন্তু এছাড়াও ক্যাডেট কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে উভয় ক্ষেত্রেই আমি জীবনের সত্যিকারের পথপ্রদর্শকের মত্ কিছু শিক্ষক পেয়েছি। আমি কখনোই শিক্ষক হতে চাই নি। কিন্তু মনের গভীরে শিক্ষকেরা যে দাগ কেটেছেন তার বাইরে বোধহয় আর যেতে পারলাম না। এখন আর যাবার ইচ্ছাও নেই।

      আরেকটা কথা ভাইয়া,
      আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। আপনার মন্তব্যে আমি অভিভুত। ঠিক প্রকাশ করতে পারছি না।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  7. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    আহমদ,.............
    সুন্দর লেখা দোস্ত...। :hatsoff: :salute: :thumbup: :clap: :hug:
    তবে, ছোট দুয়েকটা টাইপো রয়েছে মনে হলো... একটু দেখে নিস্‌... 😕
    অঃটঃ ফয়েজ ভাইয়ের কমেন্ট পাওয়ার লোভ তোর এখনো গেলো না...!!! 😛 😛


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  8. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    লেখাটি অসম্ভব ভাল লেগেছে দোস্ত। প্রতিটি কথাই বলে দিয়েছো। আসলে যারা শুধু মাত্র জীবিকার জন্য শিক্ষকতার মত পেশায় আসে তাঁদের কাছ থেকে তুমি বেশি কিছু আশা করতে পারবে না। তবে, এর জন্য সেই ব্যক্তি যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সমাজ ব্যবস্থা। সেই ব্যক্তিটি হয়তো তার নিজের পছন্দের পেশায় না যেতে পেরে এই পেশায় চলে এসেছে। এরকম বহুলোকই ভুল পেশায় কাজ করে যায় সারাজীবন।

    তোমার সেলফ মোটিভিশনের প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটি বেশির ভাগের না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই ইনস্টিটিউশনাল মোটিভিশনের প্রভাব অনেক বেশি। দেখা যায় যে ইনস্টিটিউশানাল মোটিভিশনের দ্বারা ব্যক্তিগত মোটিভিশন জাগ্রত করা সম্ভব। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই দিকে ঘাটতি রয়েছে। আশা করি এই বিষয়ে চিন্তা করবে। রাজনীতিতে শিক্ষকদের ইনপুটের প্রয়োজন আছে।

    লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাই। আশা করি আগামী বছর দেখা হবে। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      যারা শুধু মাত্র জীবিকার জন্য শিক্ষকতার মত পেশায় আসে তাঁদের কাছ থেকে তুমি বেশি কিছু আশা করতে পারবে না। তবে, এর জন্য সেই ব্যক্তি যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সমাজ ব্যবস্থা। সেই ব্যক্তিটি হয়তো তার নিজের পছন্দের পেশায় না যেতে পেরে এই পেশায় চলে এসেছে। এরকম বহুলোকই ভুল পেশায় কাজ করে যায় সারাজীবন।

      পুরা সহমত।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  9. আহমদ (৮৮-৯৪)

    মোস্তফা,
    থ্যাঙ্কু দোস্ত। আমি কিন্তু কেবলমাত্র সেটাই লিখেছি যা আমার কাছে ধরা পড়েছে, এবং যা আমি নিজে বিশ্বাস করি।

    অনেক ভাল লাগল তোর মন্তব্য পেয়ে।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  10. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    খুব ভালো লেখা আহমদ ভাই।
    পড়ে প্রথমেই মনে হচ্ছিল আপনাকে শিক্ষক হিসেবে কেন পেলাম না।

    বেশ কিছু শিক্ষক পেয়েছি ছাত্র জীবনে, যাদের আপনার এই লেখার 'আদর্শ শিক্ষক'দের দলে ফেলা যায়। তাদের প্রতি এই সুযোগে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাই আরেকবার। বাকিদেরও।

    এই রকম নিজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আরো কিছু লেখা দিন না।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  11. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    তিনি হয়তো ছাত্রদের লেভেলে না নেমে তার লেভেল থেকেই পড়িয়ে যাচ্ছেন

    এইটাই বেশি হয়... :no:

    বস, আপনার লেখা পড়ে অনেক ভাল লাগল। 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  12. আন্দালিব (৯৬-০২)

    সেদিন শান্তা আপুর "অতীত বয়ান" পড়ে যেমন মনে হচ্ছিলো যে আমার না বলা কথাগুলো উনি বলে দিয়েছেন, আজকে আপনার লেখা পড়ার পরের অনুভূতিও একই! পার্থক্য হলো ঐ লেখার বিষয় ছিলো নারী, যাঁদের অনুভূতি ও বাস্তবতা বুঝে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব না; আর এই লেখাটার বাস্তবতা আমার গত দুই বছরের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়!

    কতোকিছু যে পেলাম আপনার লেখায়, কী বলবো! কিছু কিছু কথা মনে রাখতে রাখতে ভুলে যাই, ছাত্রদের লেভেলে গিয়ে পড়ানো, ধৈর্য্য ধরে রাখা, সবসময় ছাত্রদের বেনিফিটগুলো দেখা- এরকম নানা ছোটখাটো বিষয় খেয়াল রাখতে রাখতেই হয়তো মাঝে মাঝে ভুল করি। রূঢ় আচরণ করে ফেলি হয়তো কারো সাথে। কিন্তু দুই তিন মিনিট পরেই খারাপ লাগে। মনে হয় একটু ব্যর্থ হলাম, ছাত্রটার চোখে হয়তো একটু নেমে গেলাম বা অজান্তেই তাকে দূরে ঠেলে দিলাম!...

    আমি নিজে পাশ করার পরে কর্পোরেটেও ঢুকি নাই। অন্য পেশাগুলো আমাকে চুম্বকের মতোন টেনেছে সবরকমের জৌলুস দিয়ে। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের কারণে যখন শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছি, ভেবেছি একটা সাময়িক একটা চাকরি। কয়দিন পরেই 'সুইচ' করবো। যে প্রতিষ্ঠানে পড়েছি, সেটার সু(দুঃ)নাম হয়ে গেছে "এখানকার পাশ করা ইঞ্জিনিয়াররা সুইচ করে" বলে। কিন্তু কী মায়ায় যে করতেই পারলাম না। ভালো লেগে গেলো। মাথার ইমোশন সেন্টারটা রিয়েলিস্টিক সেন্টারের উপরে দখল নিয়ে নিলো। হা হা! 🙂

    এই পেশায় এসে ক্যাডেট কলেজের স্যারদের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গির আমূল বদল ঘটেছে। আসলেই জুতো যে পরে, সেই জানে কোথায় বিঁধছে! স্যারদের মতো জীবনযাপন করতে হলে আমি নিশ্চিত ভারসাম্য হারাতাম, কারণ তাঁদেরকে সারাক্ষণ মনিটর করা হতো (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে) আমরা ডিউটি-ক্যাডেট হতাম পুরো ছয় বছরে এক বছর তাও সাকুল্যে তিন-চার দিন, আর ওনারা দিনের পর দিন প্রায় প্রতিমাসে একদিন করে ডিউটিমাস্টার থাকতেন! হাউসে ধর্না দিতে হতো, ক্লাস নেয়ার আগে পরে কতোরকমের ডিউটি, ইনচার্জ ইত্যাদি! এখন নিজের ইউনি থেকে সামান্য পিকনিক আয়োজন করতে বললেই মনে হয় কী গুরুদায়িত্ব এসে পড়লো!

    এখন মাঝে মাঝে ভাবি ঐ বয়সটা ফিরে পেলে অনেক স্যারের সাথে যে দুষ্টুমি করেছি, বা মনে মনে তাঁদের ব্যাপারে খারাপ ভেবেছি সেটা সংশোধন করতাম...
    =====

    প্রকৃতি খুব অদ্ভুত খেলা খেলে। কিছুদিন ধরেই নিজের ভেতর যে মোটিভেশন একটু ক্ষয়ে যাচ্ছিলো (অকুপেশনাল হ্যাযার্ডস 😉 ) সেটা আজকে আপনার লেখাটা পড়ে আবার ফিরে পেলাম, আহমদ ভাই!

    একদিন বনানী আসেন, আপনি আমি আর মাহমুদ ভাই, তিন দরিদ্র শিক্ষকে মিলে আড্ডা দেই! 😀

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      একদিন বনানী আসেন, আপনি আমি আর মাহমুদ ভাই, তিন দরিদ্র শিক্ষকে মিলে আড্ডা দেই

      - হ, আইস্যা পড়েন আহমদ ভাই। 😀


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      আন্দালিব,

      কিছু কিছু কথা মনে রাখতে রাখতে ভুলে যাই, ছাত্রদের লেভেলে গিয়ে পড়ানো, ধৈর্য্য ধরে রাখা, সবসময় ছাত্রদের বেনিফিটগুলো দেখা- এরকম নানা ছোটখাটো বিষয় খেয়াল রাখতে রাখতেই হয়তো মাঝে মাঝে ভুল করি। রূঢ় আচরণ করে ফেলি হয়তো কারো সাথে। কিন্তু দুই তিন মিনিট পরেই খারাপ লাগে। মনে হয় একটু ব্যর্থ হলাম, ছাত্রটার চোখে হয়তো একটু নেমে গেলাম বা অজান্তেই তাকে দূরে ঠেলে দিলাম!…

      আমার নিজেরও এমন অনেকবার হয়েছে। প্রথম আমার মেজাজ খুব কড়া থাকত। পরে ভেবে দেখলাম, এটা তো ক্যাডেট কলেজ না যে আমি আমার ছাত্রদের সাথে প্রিফেক্টের মত আচরন করব। আর বিশ্ববিদ্যালয় কোন সামরিক প্রতিষ্ঠান না যে কমান্ড করে কাজ করানো যাবে। এরই মাঝে ছাত্র-জাতটার প্রতি ভালবাসা জন্মালো। এখন তাদের কোন বিষয়ে ঘাটতি হতে দেখলে নিজের ত্রুটিটাই সবার আগে বের করার চেষ্টা করি। তবে অবস্যই principle-এর সাথে compromise করে কখনোই নয়।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  13. লেখাটা গতকালই পড়েছিলাম, কিন্তু কারেন্টের জ্বালায় মন্তব্য করতে পারি নি।
    সুন্দর লেখা তো নিঃসন্দেহে। নতুন করে আর স্তুতিবাক্যে না গিয়ে পাঁচতারা দাগাই।
    এত সুন্দর করে আমি তো আর বলতে পারি না। তাই শুধুমাত্র নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

    শিক্ষকতা একটি সম্মানজনক পেশা। তবে শিক্ষকতায় আসার পেছনে কোন কারণ ছিল না। কোন জব পাচ্ছিলাম না, কেউ ইন্টারভিউয়ের জন্যও ডাকে না। 🙁 সেখানে আমি যেই চাকুরিই পেতাম লাফাতে লাফাতে জয়েন করতাম। কপালটা বেশ ভাল যে, টিচিং টাই প্রথমে এসে ধরা দিল। এবং বেশ উপভোগ করছি এখন।

    ১. কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছিলাম, তখন শুধুমাত্র নতুন জয়েন করা টিচারদের নিয়ে একটা তিনদিনের ট্রেনিং সেশন হয়েছিল। বর্ষীয়ান অনেক প্রফেসর, নবীন প্রবীণ অনেক শিক্ষকদের মাঝে আমি ছিলাম কনিষ্ঠতম হওয়ায় "Mr, Youngest One" সম্বোধনটা প্রায়ই পেতে হত। আপনাকে দেখে তো আমরা স্টুডেন্ট ভেবেছিলাম হে হে হে টাইপ কথা বার্তার পালা শেষ করে একটু নিঃশ্বাস ফেলার জো পেলাম।
    সেখানে টিচিং রিলেটেড অনেক গঁৎবাধা কথাবার্তা শুনলাম। একেবারেই নতুন হবার কারণে একটু ভড়কেও গিয়েছিলাম। ভাবলাম, এটাই তো প্রথম জব। টিউশনি মনে করে করতে থাকি। খারাপ লাগলে ছেড়ে দিব।

    ২. কয়েকদিন পর থেকে যখন ক্লাস নেয়া শুরু করলাম, বেশ ভাল লাগা শুরু হল। স্টুডেন্টদের রেসপন্স আর শেখার আগ্রহ দেখে ভাল লাগল। ভাবলাম, শেষ পর্যন্ত বোধহয় পার্মানেন্টলি টিচারই হয়ে যাব। কিছুদিনের মধ্যেই কিছুটা বিরক্তি আর কিছুটা অবসাদ এসে ভর করল। অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম, আমি কিছু ক্লাসে খুব ভাল করে সবাইকে বোঝাতে পারছি, আর কিছু ক্লাসে পারছি না। মাল্টিমিডিয়া/ব্ল্যাকবোর্ড/দুয়ের কম্বিনেশন সব উপায়েই চেষ্টা করতে লাগলাম। হল না। আস্তে আস্তে আবার নতুন টেকনিকে, আপনার পোস্টের ভাষ্যমতে "নিজেকে ছাত্রদের লেভেলে নামিয়ে এনে" আবার চেষ্টা করলাম। এবার ফল হল বেশ ভাল। আস্তে আস্তে সবাই বুঝতে শুরু করল।

    ৩. কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা সমস্যা যেটা ফেস করছি, সেটার উল্লেখও আপনার পোস্টে আছে।

    সবার লেভেল অব রিসিপশন এবং ধারনক্ষমতা এক নয়।

    বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (সম্মানহানি করার উদ্দেশ্যে বলছি না) স্টুডেন্ট কোয়ালিটি একটু কম, ক্লাসের কমপক্ষে পাঁচটা ছেলে থাকে যাদের একেবারে গোড়া থেকে বোঝাতে হয় এবং মোটামুটি বেশ কয়েকজন থাকে অমনোযোগী। এমন ঘটনা ঘটেছে যে, একই ব্যাপার আমি চারবার বুঝিয়েছি, অথচ মোবাইল কিংবা আঁকিবুকিতে ব্যস্ত থাকা একজন পঞ্চমবারে বলল, স্যার বুঝি নাই।
    মেজাজ ঠিক রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে তখন। হাসিমুখে কনসালটেশন আওয়ারে রুমে দেখা করতে বলা ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না।

    আমার মোটিভেশন আসছে কিনা বুঝতে পারছি না। কারণ মাঝে বেশ কয়েকটা ভাল চাকুরীর সুযোগ পেয়ে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। প্রধানত যাতায়াতে সমস্যা আর ওভারলোডের কারণে। আর করপোরেট জবের ইচ্ছাও আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে 🙁 কিছু সুন্দর অভিজ্ঞতার কারণেই বোধহয়।

    কমেন্টটা মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক এবং বেশি বড় হয়ে গেল। 🙁

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      এইতো পাইছি হাসের ছানাডারে। তোমার কমেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম।
      আমি দেখতে চাচ্ছিলাম নতুন মাষ্টারের ফিলিংস কেমন। যাই হোক, অভ্যস্থ হতে শুরু করেছো, বুঝতে পারছি। তবে যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছো এগুলো নতুন কিছু নয়। তবে, যদি টিচিং-এই থেকে যাও, তাহলে দেখবে একসময় এই সব কিছুর উপরে উঠতে পেরেছো। একসময় অমনযোগী ছাত্রের attention কিভাবে তোমার দিকে (I mean তোমার পড়ানোর দিকে) ফেরাতে হয়, সেটাও শিখে যাবে। তোমার উন্নতি কামনা করছি। অনেক কথা চলে আসছে। আশাকরি দেখা হলে সব মাষ্টারমশাইরা মিলে একদিন ধুমসে আড্ডা দেয়া যাবে। আরেকটা কথা, এই আড্ডাগুলোতে মাস্ফ্যুর মত যে কেউ welcome. :hug:

      তুহিন, পড়ার জন্য & মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
      • কস্কি মমিন, আমার অপেক্ষা 😮 😮 😮
        পুরাই তো শরমের মইধ্যে ফালায় দিলেন বস ।
        শরোম্পাইতাছি

        অমনোযোগী ছাত্রদের অ্যাটেনশন পাওয়ার কিছু নিজস্ব টেকনিক আমি অ্যাপ্লাই করছি, হয়তো আপনাদের কাছে থেকে শুনতে পারলে আরো ভাল করা সম্ভব হবে।
        যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি বোরিং টিচার না হবার, কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু করার থাকে না, টপিকটাই বোরিং থাকে 🙁 🙁 🙁

        জবাব দিন
          • আহমদ (৮৮-৯৪)

            কয়েক বছর আগের একটা খুব বাজে অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল।

            মাস্টার্সে একটা কোর্স পড়াচ্ছিলাম Modern Literary Theories. কোর্সটা বেশ রসকসহীন এবং যথেষ্ট কাঠখোট্টা টাইপের। যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন সবাই মূল বিষয়টা ধরতে পারে। যেখান থেকে পারি মজার মজার এক্সাম্পল দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে ছাত্রদের এটেনশন টপিকের মধ্যে কনসেনট্রেট করাতে পারি।

            তখনো আমার কোন ডিরেক্ট স্টুডেন্ট আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থেকে মাস্টার্সে প্রমোশন পায়নি। কোর্সে যারা ছিল, প্রায় সবাই ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাস বা অনার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের। এদের মধ্যে একজন ছাত্রী এই কোর্সে C কিনবা C- বা C+ টাইপের একটা গ্রেড পায়। তার হাসব্যন্ড আবার এক্স-বুয়েটিয়ান, এবং আমাদের দু-এক বছরের জুনিয়র (নন-ক্যাডেট)। গ্রেড নিয়ে দেখা গেল তাদের মহা অসন্তোষ। তার হাসব্যান্ড আমার কাছে আসল, এবং আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তার স্ত্রী অর্থাৎ আমার ছাত্রী এসে যেন খাতাটা দেখে যায় (যদিও ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখানোর প্র্যাক্টিস নেই); এবং তাতেও সন্তুষ্ট না হলে তারা চাইলে খাতা রি-এক্সমিন করার জন্য এপ্লাই করতে পারে।

            প্রসংগতঃ বলে রাখি, আমি আমার স্টুডেন্টদের গার্জেনদের যথেষ্ট সম্মান দেই। আমার রুমে আসলে চেষ্টা করি অন্ততঃ এককাপ চা খাওয়াতে। এবং এর বিনিময়ে আমাকে কিছু আজব ধরনের গার্জেনের বিদ্ঘুটে আচরনও হজম করতে হয়েছে।

            যাই হোক, আমার এত পজেটিভ আগ্রহ বোধহয় তার পছন্দ হয়নি। সে সরাসরি খাতা রি-এক্সামিন করাতে চাইল। আমি এব্যাপারেও তাকে সাহাহ্য করব বলে ঠিক করলাম। হাজার হোক একজন স্টুডেন্টের গার্জেন। এরই মাঝে টুকটাক গল্প হচ্ছিল। কিন্তু ভুল করেও আমি তাকে একবারের জন্যও বলি নি যে তার স্ত্রী আসলেই বেশ খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে এবং তার ইংরেজির আবস্থা খুবই নিম্নমানের। বরং, কথাপ্রসংগে আমি আমার ছাত্রীর হাসব্যান্ডকে এটাও বললাম যে, কিছু কিছু কোর্স আসলেই একটু কাঠখোট্টা টাইপের। আর এই কথাটা বলাই যেন আমার কাল হল। সাথে সাথে তার ঝাঁঝালো প্রত্যুত্তর, টপিক না, আসলে শিক্ষকের উপরেই ডিপেন্ড করে একজন ছাত্র কেমন করবে (অনেকটা এই রকমেরই ছিল মন্তব্যটা -- স্মৃতি হাতড়ে লিখছি)। আমি হতবাক হয়ে গেলাম বেশ কয়েকটা কারনে। প্রথমতঃ আমি শুধু তার স্ত্রীর শিক্ষকই নই, বরং বয়সে তারও সিনিয়র। দ্বিতীয়তঃ তার স্ত্রীর ইংরেজির অবস্থা আসলেই খারাপ। অন্য কোন ফ্যাকাল্টি যদি তাকে কখনো বেশি গ্রেড দিয়ে থাকে, কিংবা আমারটার জায়গায় অন্য কোন কোর্সের পরীক্ষার খাতায় যদি ঘটনাচক্রে সে শুদ্ধ এবং ভাল ইংরেজি লিখে থাকে, সেটার জন্য তো আর আমি দায়ি না। আর এই কথাগুলো আমি তাকে বলতে পারছিলাম না, কারন একজন হাসব্যান্ডকে কিভাবে বলি যে আসলে তার স্ত্রী ছাত্রী হিসাবে আমার কোর্সে বেশ নিম্নমানের ছিল। তার হাসব্যান্ডের কথাগুলো এবং কথা বলার ধরন সম্পর্কে অবশ্য আমি আমার সেই ছাত্রীকেও কখনোই কিছুই বলিনি, আর বলিই বা কিভাবে যে তার হাসব্যান্ড (একজন গার্জেন) আমার সাথে ইনসাল্টিং সুরে কথা বলেছে।

            এরপরে সেই মুহূর্তে সেই মানুষটাকে আমার দায়িত্বের বাইরে আর কোন অতিরিক্ত হেল্প করার ইচ্ছা আমার নিভে গেল। আমি ইচ্ছা করলেই তাকে রি-এক্সামিন করার ফরমালিটিস গুলো বুঝিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আর ভাল লাগছিল না। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপরেও যদ্দুর মনে পড়ে খুব নরম সুরে আমি শুধু এইটুকু বলেছিলাম, "আপনি এক্সাম অফিসে যোগাযোগ করুন। আমার হাতে আর কিছুই করার নেই।"

            তারপরের ঘটনাঃ (পুরোনো স্মৃতি থেকে লিখছি) সেই স্টুডেন্টের রি-এক্সামিনেশনের এপ্লিকেশনটাতে দেখি আমার ডিপার্ট্মেন্টের হেড অনেকগুলো লাল কালির দাগ দিয়েছেন -- ভুল ইংরেজিতে ভরপুর। রি-এক্সামিনেশনের দায়িত্ব দেয়া হল আমার আরেক কলিগ-কে। আমি যতদুর জানি তার মন্তব্যটা ছিল অনেকটা এমন যে, এই খাতাটিতে যে নম্বরটা দেয়া হয়েছে তা যথেষ্টই দেয়া হয়েছে।

            এপ্রসংগে আমার সর্বশেষ মন্তব্যঃ আমি এরই মধ্যে বা পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম, এতকিছু করার পিছনে সেই ছাত্রীর বা তার হাসব্যান্ডের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, তা হল এমন একটা CGPA-তে থাকা যাতে করে ঢাকা শহরের নামি কলেজগুলোতে ফেকাল্টি পোজিশনে এপ্লাই করা যায়। আমার দূঃখ যেন আরো বেড়ে গেল। কেন, তা বোঝাতে পারব না। আশাকরি ব্লগের পাঠকরা তা বুঝে নেবেন।


            চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

            জবাব দিন
  14. ভাইয়া,লেখাটা খুব দেখাতে ইচ্ছে করছে আমাদের মেডিকেল কলেজের টিচারদের।শিক্ষক হিসেবে এরা মনে হয় সব চেয়ে খারাপ হয়।মেদিকেল কলেজ গুলোতে রাজনীতি যেমন খুব প্রকট,তেমনি এই ব্যাপারে শিক্ষকদের পক্ষপাতদুষ্টতার তুলনা তারা নিজেই।সরকারি ডাক্তার,তাই পড়ানোর ব্যাপারে,আমাদের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে তেমন কোন মাথা ব্যাথা উনাদের নেই।উনাদেরর মূল উদ্দেশ্য থাকে আমাদের পেনিক এর মাঝে রাখা,কখনোই বন্ধুসুলভ কোনো মনোভাব উনাদের মাঝে কেউ দেখেনি।আমি অবশ্য আমার কলেজের কথাই বলছি,যেখানে ঢালাও ভালে সবাই এইরকম।অন্যান্য গুলোর ও প্রায় একি অবস্থা আমার জানা মতে।

    জবাব দিন
  15. রকিব (০১-০৭)

    এলেখায় মন্তব্য করবার মতো যোগ্যতা এখনো হয়নি।
    কেবল শ্রদ্ধা আর সালাম জানিয়ে গেলাম সকল শিক্ষকদের যারা আপনার মতো করে ভাবতে পারেন।
    :salute: :salute: :salute:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  16. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    লেখায় উত্তম ঝাজা।

    তবে,

    সেইই প্রকৃত সুখী, যে পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল এই দুই লাইফ-কে মিশিয়ে না ফেলে আলাদাভাবে এনজয় করার চেষ্টা করে।

    লেখার শুরুতে এই উদ্ধৃতি বেশ কনফিউজড করে দিচ্ছে।

    আপনি যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন তার প্রত্যেকটিতে আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাগত জীবন মার্জ হয়েছে। যেমনঃ আপনার ছাত্ররা আপনার বিয়েতে এসেছে। সুতরাং পারসোনাল লাইফ এবং প্রফেসনাল লাইফ আলাদা হবে কেন? আপনি যদি একটা জিনিস ইনজয় করেন তাহলে তো সেটা জীবনের সব সময়ের জন্যই সত্য হবে। ছাত্রদের সাথে আপনার ইউনিভার্সিটির ভেতরে যেমন সম্পর্ক থাকবে, তেমন সম্পর্ক থাকবে বাইরেও।

    এটাই তো উপভোগ। আমি খুব ভাগ্যবান এমন একজনের সাথে এখন কাজ করতে পারছি। স্যার আলাদা ভাবে আমার টিচার নন, উনি এখন আমার ফ্যামিলি, আমার বন্ধু, সহকর্মী। ঠিক তেমনি ভাবে স্যারও আমাকে দেখেন ভাইসভার্সা হিসেবে। এমন না যে স্যার ইউনিভার্সিটি থাকাকালীন সময়েই খালি রিসার্চ নিয়ে ভাবেন, উনি বাসাতেও ভাবেন। রাত বারোটায় কিছু মনে হলে মেইল দেন। আমার শরীর খারাপ হলে দিনে তিনবার খবর নেন।

    ঠিক পরিষ্কার করে আমার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারলাম কীনা জানিনা। তবে সুখী হবার জন্য পারসোনাল লাইফ এবং প্রফেসনাল লাইফের সেপারেশন মানতে পারলাম না।

    তবে লেখার বাদ বাকী বিষয়গুলোর সাথে গভীর ভাবে একমত। শিক্ষকরা অনেক সময়ই ছাত্রদের নিজের লেভেলের মনে করেন, উত্তেজিত হয়ে যান। শুধু শিক্ষকদের দোষ কেন, আমার মা-বাবা ছোট ভাইকে পড়ানোর সময় যে উত্তেজিত হয়ে যান সেটাও তো ঠিক না।

    ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      @ রায়হান আবীরঃ

      আমি কিন্তু বলি নাই যে আমি নিজে সবসময় পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফকে শতভাগ আলাদা রাখতে পারি। তবে আমার মনে হ্য় তুমি আমার এই পয়েন্টের সাথে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের সূত্রটিকে মিলিয়ে ফেলেছো।

      আমার বিয়ের অনুষ্ঠানের উদাহরন দিয়ে আমি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের দিকটাকেই মূলতঃ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার সময় তারা ছিল আমার গেস্ট। আবার ক্লাশে ফিরেই তারা ছিল আমার নিয়মিত ছাত্র। এখানে আমার হাতে ভাল এবং মন্দ (বা কম ভাল) উভয় ধরনের গ্রেড পাওয়া ছাত্রই ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবার পরেও আমার মূল্যায়নে তার কোন প্রভাব ফেলেনি। ছাত্রদের আমি স্নেহ করি। কিন্তু নিয়মের ব্যাপারে যে আমি কঠোর, এই পয়েন্টটা তুমি বোধহয় মিস করেছো।

      তোমার সাথে তোমার শিক্ষকের রিলেশন খুবই ভাল লেগেছে। কিন্তু তার মানে নিশ্চয়ই এটা নয় যে তুমি উনার কাছে এর বিনিময়ে কোন undue সুবিধা পাও। যদি এমনটা ঘটে, তাহলে কিন্তু পার্সোনাল আর প্রফেশনাল রিলেশনটা আলাদা অবস্থানে রাখা হল না। আমি আসলে এটাই বুঝাতে চাইছি। আমার সাথে যে ছাত্র যত বেশি close, তার exam-script আমি ততটাই সতর্কতার সাথে চেক করি যাতে করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারি। যদি এটা করতে না পারি, তাহলে আমি এই থিওরীতে ব্যর্থ হয়ে যাব।

      আমি এক পর্যায়ে বলেছি শিক্ষকেরা মাঝে মধ্যে তাদের পার্সোনাল লাইফের ঝামেলাগুলোর প্রতিফলন ছাত্রদের উপরে ঘটিয়ে ফেলেন ... এটা ঠিক না। আবার কেউ যদি প্রফেশনাল লাইফের টেনশন রেগুলার বাসায় নিয়ে আসেন, তাহলে সেটাও সুখী হবার অন্তরায়।

      আমি জানি, এগুলো মেইন্টেইন করা সবসময় সহজ না। কিন্তু, যতটা পারা যায়, ততটাই মংগল। যেমন ধর, আমি চেষ্টা করি পরীক্ষার খাতা ইউনিভার্সিটিতেই বসে দেখতে। পারতঃপক্ষে খাতা বাসায় নেই না। কারন বাসার সময়টুকু আমার পরিবারের জন্য। আবার বাসার টেনশন নিয়ে পারতঃপক্ষে অফিসে যাই, কারন তাহলে আমি আমার কাজে কন্সেন্ট্রেট করতে পারব না।

      আশাকরি আমি আমার মূল লেখাটাতে কি বূঝাতে চেয়েছি, তুমি এখন তা বুঝতে পারছো। আমার কোন কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থি। :hug:


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  17. হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    আহমদ ভাই, আপনি ইংলিশের? :hug: কোন ইউনিভারসিটি? আমার বাসা আপনার অফিসের একদম কাছেই, সিসিবির যে কেউ আসলে আমাকে একটা ফোন/এসএমএস দিয়েন ০১৭১০৩০৭৬৯০ তে, চলে আসব।

    লেখা জটিল হইছে। আমি শিক্ষকতায় যেতে চাই নাই কখনো কারণ আমি নিজেই কিছু পারি না, ছাত্রদের কি শিখামু :((

    জবাব দিন
  18. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    লেখাটা পড়া হলো একটু দেরীতে। এমন সুলিখিত পোষ্টে ধন্যবাদ ছাড়া অন্য কিছু লিখতে হলে আরো গভীর চিন্তা করতে হয়। তাই মন্তব্য করতে আরো দেরী হলো।

    আমার ক্যারিয়ার শুরুই কর্পোরেট কোম্পানীতে। প্রথম প্রথম কর্পোরেট কোম্পানীর চোখ ধাঁধাঁনো ক্যারিয়ার খারাপ লাগত না। কিন্তু অচিরেই এর অন্ত:সার শূন্যতা স্পষ্ট হতে থাকল।এমনকি দেশীবিদেশী আরো কয়েকটা কর্পোরেট কোম্পনীতে থেকেও এই ধারনা ভাংগলো না। শিক্ষকতা পেশাটাকে আমি কিছুটা ভয়ই পেতাম। শিক্ষক হতে হলে যে পরিমান ধৈর্য্য ও নিষ্ঠা দরকার তা আমার কখনই ছিল না। তার উপর শিক্ষক হবো ভাবলেই নিজের ছাত্রাবস্থার বাঁদরামির কথা মনে পড়ত এবং নিজেকে ঐসব অসহায় শিক্ষকের অবস্থানে দেখে শিউরে উঠতাম।

    এর মাঝে ইইউ এর স্কলারশীপ আমাকে সুযোগ দিল ভিন্ন জগতের। স্কলারশীপের ধরনের কারনেই আমার ইউরোপের বেশ কয়েকটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, সাথে সাথে বেশ কিছু জগৎখ্যাত শিক্ষককে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্যও হয়েছে। ক্রমে ক্রমে শিক্ষকতা পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরও গাঢ় হয়েছে। খুব অবাক হয়েছি এমন সরলতা ও আত্মনিবেদনে ভরা একটা পেশাকে দেখে। সাথে সাথে যখন তুলনা করেছি দেশের শিক্ষকদের সাথে তখন মনে হয়েছে যে অনেক শিক্ষক তাদের পেশাটাকে যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আমি এক শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম আমার কিছু রেকমেন্ডশনের ব্যাপারে। কিন্তু শিক্ষক যখন শুনলেন আমি দেশের বাইরে চাকরী করি, তখন পড়ার প্রতি আগ্রহ নিয়ে খুব বাজেভাবে মন্তব্য করলেন। এমনভাব করলেন যেন আমি তার উপার্জনে ভাগ বসাচ্ছি। অথচ শিক্ষকতা নিয়ে তাঁর বানিজ্যিকতাও কম নয়। কিছু টুকরো ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকই আমার জীবনে খুব পজেটিভ আদর্শ রেখে গেছেন। তাঁদের অবদানকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি।

    জবাব দিন
  19. আহমদ (৮৮-৯৪)

    মান্নান, খুব ভাল লাগল তোমার মন্তব্যগুলো। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আসলে আমি আমার লেখায় আরো অনেক কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু গুছিয়ে নিতে পারছিলাম না। তোমার মত যারা খুব গভীরভাবে মন্তব্য করেছেন, সবাই মিলে আমার সেই না বলা কথাগুলোই যেন বলে দিয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থেকো সবসময়।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  20. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ওরে বাবা, এই পোস্টে দেখি তুমুল অবস্থা...............।।

    আমি মনে হয় শিক্ষক হলে ভালোই করতাম। নিজে মাঝারী মানের স্টুডেন্ট তো কি, পোলাপাইন বুঝাতে পারতাম ভালোই। এমনো হয়েছে, গ্রাজুয়েশনের সময় ট্রানজিস্ট্রেরর তিন ঠ্যাং এর অংক বন্ধুদের বুঝিয়ে দিয়েছি, ব্যাটারা ঠিকই এনালাইসিস করে এসেছে পরীক্ষার খাতায়, আমি ভুল করে ফেলেছি মতব্বরি করতে গিয়ে। 😀

    কর্পোরেট জবে চাকচিক্য আছে, কিন্তু অন্তঃসার শুন্য। শালার ডাব্লিউ টি ও (WTO) লেজুর বৃত্তি আর কি।

    যাক, তুমি ভালো আছ যেনে ভালো লাগলো। লাগে রহো মুন্না ভাই। 🙂


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  21. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এইরকম ভাবগম্ভীর একটা বিষয় নিয়ে আমি লিখলে ২০ টা কমেন্ট পড়ত কিনা সন্দেহ সেইখানে ২০০+ মন্তব্য-এবং অধিকাংশই মোটামুটি প্রাসঙ্গিক!!! এইখানেই আপনের লেখার ধরণের জয়জয়কার,পিয়াল ভাই :boss:

    জবাব দিন
  22. মাহবুব (১৯৯৪-২০০০)

    আমার স্বপ্ন আমি শিক্ষক হব। শিক্ষা নিয়েও কাজ করতে চাই। তাই এই লেখাটা পড়ে উপকৃত হলাম।

    একজন শিক্ষকের সবসময় মনে রাখা উচিৎ, একজন ছাত্রের ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল আর তার নিজের লেভেল এক নয়; এবং সেই সাথে তাঁর এটাও মনে রাখা উচিৎ, সবার লেভেল অব রিসিপশন এবং ধারনক্ষমতা এক নয়।

    সহমৎ। ছাত্রর ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল শিক্ষকের চেয়ে ভালো থাকলেও শিক্ষককে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি ফলপ্রসূ যোগাযোগ করছেন।

    একজন ভাল ফিল্ম ডিরেক্টর যে ডেডিকেশন নিয়ে সিনেমা বানায় সেই ডেডিকেশন নিয়ে লেকচার প্লান বানানো দরকার।

    জবাব দিন
  23. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    ইন্সট্রাক্টর কে নিয়ে খুবই বিপাকে আছি, যন্ত্রনায় আছি। তাই আরেকবারের মতন এই মহান ব্লগটিতে সালাম জানিয়ে গেলাম।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  24. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    বন্ধু,
    এই লেখাটি পরিচিত মনে হলো।
    কিন্তু কমেন্ট নাই দেখে বুঝলাম - হয়তো বাদ পড়েছিল।
    পরিচিত মনে হবার কারন - বাবা পেশায় শিক্ষকতা ছেড়ে আর্মিতে এসেছিলেন - আর আমি মনে হয় আর্মি ছেড়ে শিক্ষকতায় যাচ্ছি/যাব ইনশাআল্লাহ।

    সুন্দর লেখা - তার চেয়েও সুন্দর তোর এই প্যাশন।
    আমি উদ্ভাসিত দোস্ত।
    :clap:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  25. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    তোমার লেখাটি আজকেই চোখে পড়লো। কোনভাবে মিস করে গিয়েছি হয়তো। মনোযোগ দিয়ে পড়ে, বিস্তারিত কমেন্ট করবো। শিক্ষকতা আমার নেশা ও পেশা দুই-ই। আমি অন্য পেশা ছেড়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমি একবার সার্ভে করেছিলাম - ছাত্র বা অভিভাবকরা একজন শিক্ষকের কাছ থেকে উনত্রিশটা কোয়ালিটি আশা করে। আর কোন পেশায় এতগুলো কোয়ালিটি কেউ আশা করে বলে মনে হয়না।

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      ভাইয়া, আপনার মতন এত বড় মাপের একজন মানুষ আমার লেখাটাকে বিবেচনায় নিয়েছেন, এটা আমার এক বিরাট পাওয়া। খুব ইচ্ছে হয় আপনার সাথে আর পারভেজ ভাইয়ার সাথে দেখা করার। আমি কেমন যেন ঠিক সময়মত যাকে বলে ব্যাটে-বলে কোন কিছু ঘটানোর আগেই দেরি হয়ে যায়। অনেকের সাথেই দেখা করার প্লান করেও ভেস্তে গেছে। আন্দালিব দাওয়াত দিয়েছিল আমি-আন্দালিব-মাহমুদ তিন দরিদ্র শিক্ষকের আড্ডা দেবার জন্য। যাব যাব করেও যাওয়া হলো না, এর মধ্যে দুজনেই বিদেশ বিভুইয়ে পাড়ি দিল। জিতু আর মাজেদের আর্ট এক্সিভিশনে গিয়েও অনেকের সাথে (সানা ভাই, পারবেজ ভাই, আরও অনেকে) টাইমিং ঠিক না থাকাতে দেখা হলো না। এবারে একটু সিরিয়াস হব ভাবছি(!) , আলসেমী ঝেড়ে ফেলতেই হবে। আমার ইমেইল: pialbd@yahoo.com


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
      • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

        আমি বড় মাপের নয়, বরং খুবই ছোট মাপের মানুষ, আহমদ। বড় মাপের মানুষ হওয়া খুব কঠিন কাজ, বড় মাপের শিক্ষক হওয়া আরো বেশী কঠিন। আমাদের ক্যাডেট কলেজে আমার আদর্শ শিক্ষক ছিলেন আমার প্রথম অধ্যক্ষ বাকিয়াতুল্লাহ স্যার। উনার মূল্যায়ন আমাদের সমাজ করতে পারেনি। এরশাদ সিএমএলএ হওয়ার পরপরই উনাকে চাকুরিচ্যুত করেছিলো। ঘটনাটি আমার মনকে এখনও পীড়া দেয়। যাহোক, এক্স-ক্যাডেট শিক্ষক বেশ কয়েকজন আমার সিনিয়র-জুনিয়র কলিগ আছেন। তাদের একজন আমার পিতার বয়সী। মাঝে মাঝে উনাদের সাথে আলাপচারিতা হয়।
        তুমি চলে আস যেকোন একদিন, কথা হবে। আমার ই-মেইল ramit_azad@mail.ru । এছাড়া ফেইসবুকেও আমাকে পাবে। ইনবক্সে মেসেজ দিলে আমি খুব দ্রুত পাই।
        ভালো থেকো।

        জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।