স্মৃতির ঝাঁপি : চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ

প্রথম পর্ব ।। দ্বিতীয় পর্ব ।। তৃতীয় পর্ব

‘৭৩ সালের শেষ দিক থেকে পরিস্থিতির আরো অবনতি শুরু হলো। যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ। পূনর্গঠন, পূনর্বাসন দরকার। কিন্তু সরকারের কাছে টাকা নেই। মার্কিন বিরোধীতার কারণে বৈদেশিক সাহায্য আসছে সামান্যই। কিউবায় পাট রপ্তানি করায় মার্কিন সরকার বাংলাদেশে খাদ্য সাহায্যের জাহাজ আটকে দিলো। কৃষি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু যুদ্ধে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন হয়েছে কম। মানুষের কাজ নেই, হাতে টাকা নেই। বেসরকারি খাতও তেমন ছিল না। সরকারি কর্মচারিরা বেতন-ভাতা পেত বটে। কিন্তু সেটা ছিল এতো কম, যে বলার মতো না। বিশ্ব অর্থনীতিতে তখন চলছে বিপরীত চিত্র। তেলের দাম বাড়ছে। ফলে সরকারের উপরও চাপ বাড়লো। একদিকে খাদ্যের কম উৎপাদন, অন্যদিকে মানুষের হাতে টাকা না থাকায় দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিল। রাজনীতি-অর্থনীতির এসব মারপ্যাচ বড় হয়ে পড়াশুনা করে জেনেছি।

কিন্তু আমাদের চোখের সামনে দেখেছি, বেঁচে থাকার জন্য কর্মহীন মানুষ গ্রাম থেকে শহরের দিকে ছুটে আসছে। মতিঝিল কলোনীর মাঠে, ভবনগুলোর সিড়িতে গরীব মানুষরা এসে আশ্রয় নিচ্ছে। কমলাপুরের আশে-পাশে ফুটপাতগুলোও ওদের দখলে চলে গেল। বাসা-বাড়িতে কাজের খোঁজে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাড়তে শুরু করে ভিক্ষুকের সংখ্যাও।

আমাদের পরিবারটা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় ছিল। চাকরি ছাড়াও ফকিরেরপুলে বাবার কাপড়ের দোকান আমাদের সংসারে বাড়তি আয়ের সংস্থান করতো। কিন্তু মানুষের হাতে খাবার কেনারই টাকা নেই, কাপড় কিনবে কি? ফলে ব্যবসায় চলছে মন্দাবস্থা।

বাবা বাজার করাটাকে আনন্দ মনে করতেন। বলা যায়, ভোজনবিলাসী ছিলেন। সম্ভাব্য মেনুর সঙ্গে মিলিয়ে মাছ, তরি-তরকারি কিনতেন। ছোট বয়স থেকেই দেখেছি ব্যাগ ভর্তি বাজার আসতো বাসায়। পাঁচ-ছয় পদের রান্না না থাকলে বাবার মেজাজ খারাপ থাকতো। টেংরা মাছের সঙ্গে ডাটা, রুইয়ের সঙ্গে পটলের ঝোল, বেলে মাছের সঙ্গে বেগুনের তরকারি- এরকম আরকি! বাবা বাজার করে এনে মাকে বলতেন কি কি রান্না হবে। সেই বাবার বাজারের পরিমান কমতে লাগলো। আটার রুটি আমরা সকালে নাস্তায় খেতাম। এখন মাঝে-মধ্যে রাতেও খাওয়া শুরু হলো। পরে নিয়মিত হলো। ভাতের সঙ্গে তরকারির সংখ্যা ও পরিমান কমতে থাকে।

তখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা রেশন পেতেন। আগে রেশন না তুললেও ‘৭৩ সাল থেকে রেশন সংগ্রহ করা আমাদের নিয়মিত হয়ে উঠলো। আরামবাগের কাছে রেশন দোকানে সেই ভোর বেলা গিয়ে লাইন ধরতে হতো। রেশন থেকে চাল, গম, চিনি, তেল সংগ্রহ করেছি। রেশনের গম আমরা মেশিনে ভাঙ্গিয়ে আটা করে নিতাম।

ভাতের মাড়ও খাওয়া শিখলাম ১৯৭৪ সালে। বাসায় বাসায় ভাতের মাড় খাওয়ার চল হলো। লবন মিশিয়ে খেতে ভালোই লাগতো। আমরা এটাকে মজা হিসেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি এটাকে চরম অপমান হিসাবে নিয়েছিল। আসলে সেটা ছিল আকাল, দুর্ভিক্ষ। পরে বুঝেছি। ভিক্ষুকরা বাসা বাসা ঘুরে ভাতের মাড় চাইতো, সেটাও সহজে পেত না।

আমার সবচেয়ে ছোট ভাই সাইফের জন্ম ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে। ওর নামটা আমিই দিয়েছিলাম। বাবাকে দেখতাম এবার সন্তানের জন্মে খুশি হননি। আসলে যে টানাটানির সংসার তখন! দোকানে গুড়াদুধ পাওয়া যেত না। পেলেও ভীষণ দাম। কেনার সামর্থ্য নেই। “কসকর” নামে সরকার ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করেছিল। আমাদের কলোনীর ভেতরেও ছিল একটা। ওই দোকানে সকাল থেকেই লাইন পড়তো। দুধ কিনতে কতোদিন যে ওখানে লাইন ধরেছি। বাসায় দুধ নেই, সাইফ কাঁদছে, মা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, বাবা আর ভুঁইয়া স্যার গভীর রাতে দুধের খোঁজে দোকান-দোকান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কি সব দুঃসহ স্মৃতি! তখন থেকেই কি বাবা-চাচা, তথাকথিত মধ্যবিত্তরা আওয়ামী লীগবিরোধী হতে শুরু করেছেন?

কলোনীর ভেতরে-বাইরে কংকালসার গরীব মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। গ্রাম থেকে মানুষের শহরমুখী স্রোত যেন শেষ হয় না! খোলা আকাশের নিচে ওদের সংসার। কলোনীর ড্রেনগুলোতে চলতো ওদের প্রকাশ্য হাগা-মুতা। এমনকি ভবনগুলোর সিড়িতেও সুযোগ বুঝে ওরা কাজ সারতো। আমাদের কাছে রীতিমতো উৎপাতে পরিণত হয়েছিল ওরা।

দুর্ভিক্ষ শব্দটা সেই সময়ই শিখেছিলাম। বাস্তবতা শিখিয়েছিল। ফুটপাতে, যেখানে-সেখানে এসব গরীব মানুষকে মরে পরে থাকতে দেখি। আঞ্জমানে মফিদুল ইসলাম বা পৌরসভার ট্রাক এসব লাশ সরিয়ে নেয়। না খেতে পেয়ে মানুষ মরে যায়, সেই প্রথম দেখলাম।

একইসঙ্গে চলছে রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা। জাসদ হরতাল ডাকলে বড় ভাইরা এসে স্কুল বন্ধ করে দিতেন। অস্ত্রের সন্ধানে পুরো শহরে কার্ফ্যু দিয়ে সেনাবাহিনী বাসা বাসা তল্লাশি করতো। আমরা ছোটরা বাসার বাইরে বেরুতে পারতাম না। অবৈধ রেশন কার্ডের সন্ধানেও এরকম তল্লাশি দেখেছি। রক্ষী বাহিনীর তৎপরতা দেখা যেতো রাস্তায় রাস্তায়। জাসদের ছেলেপিলেদের খোঁজে কলোনীর বাসায় বাসায় ওরা হানা দিত। তৎপর ছিল আওয়ামী লীগও। কলোনীর ভবনগুলোর গায়ে গায়ে তখন জাসদ, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি আর আওয়ামী লীগ পরস্পরের বিরুদ্ধে চিকা মারার প্রতিযোগিতা করতো।

ত্রাণ-রিলিফ শব্দগুলো সে সময় নতুন শিখেছি। ঢাকায় বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে ত্রাণ শিবির খোলা হচ্ছিল। স্কুলগুলোও ক্রমে এর আওতায় চলে এলো। গাজী গোলাম মোস্তফার নাম তখন প্রথম শুনেছি। তিনি ছিলেন সম্ভবত ত্রাণ মন্ত্রী। স্বাধীনতার পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী এসেছিল। দারুণ দারুণ সব কম্বল এসেছিল পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে। প্রচলিত ছিল, জনসংখ্যার চেয়ে বেশি কম্বল ত্রাণ হিসেবে এসেছিল দেশে। এসব কম্বল আমরা পরে কলেজে গিয়ে পেয়েছি। খুবই আরামের ছিল ওগুলো। সত্য-মিথ্যা জানি না, একটা সংলাপ চালু ছিল সে সময়। বঙ্গবন্ধু নাকি গাজী গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “আমার কম্বল কৈ?”

স্কুলে আমাদের ছাতু (সম্ভবত গম গুড়ো করে এতে চিনি মেশানো থাকতো) দেওয়া চালু হলো সে সময়। দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ হিসাবে এই ছাতু এসেছিল। খেতে মজা লাগতো। ওজন মেপে আমাদের ছাতু দেওয়া হতো। আমরা বীরের মতো সেই ছাতু নিয়ে বাসায় ফিরতাম। শুকনো অথবা গুলিয়ে খেতাম।

এরকম একদিন সম্ভবত ‘৭৪-এর ফেব্রুয়ারিতে বাবা এসে বললেন, ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে হবে। বাবা গেলেন চট্টগ্রাম। ফৌজদারহাট থেকে ফরম আনলেন, পুরণ করে পাঠানো হলো। তখন প্রতিটি ক্যাডেট কলেজে পৃথক ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। ক্যাডেট কলেজ কি তা তখন জানতামই না। আবদুর রহমান ভুঁইয়া স্যার কড়া মানুষ। আগেই বলেছি, তিনি আমাদের বাসাতেই থাকতেন। তিনি নামলেন আমাকে নিয়ে। মনে আছে একবার স্যারকে বললাম, ক্যাডেট কলেজে না হলে আমি স্কুলে স্কাউটে যোগ দেব। স্যার ধমক দিয়ে বলেছিলেন, “কে বললো তোর ক্যাডেট কলেজে হবে না?” আমার চেয়ে স্যারের আত্মবিশ্বাসই ছিল বেশি।

অ্যাডমিশন টেস্টের কার্ড এলো। পরীক্ষা কোথায় হয়েছিল ঠিক মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ঢাকা কলেজে। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। একদিন সত্যি সত্যি বাসায় চিঠি এলো, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এবার মেডিক্যাল ও মৌখিক পরীক্ষা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে। গেলাম সেখানে। মেডিক্যাল পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা সব ক্যাডেটের আছে। পুরো ন্যাংটোপুটু হয়ে কাঁশি দেওয়ার সেই কাহিনী মনে করে এখনো বন্ধুরা মজা করি। সম্ভবত ওই পরীক্ষা দিতে গিয়েই কি প্রথম আন্ডারওয়ার পড়ছিলাম? হয়তো। আর আমার ছেলে তো বুঝের বয়স থেকেই আন্ডারওয়ার পড়ে।

ভুঁইয়া স্যারের কথা সত্যি প্রমান করে আমি ফৌজদারহাটে সুযোগ পেলাম। ১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট বাবা আমাকে পরের ছয় বছরের জন্য রেখে এলেন ফৌজদারহাট উপ-কারাগারে। তারপর থেকে আমি দুই ভুবনের বাসিন্দা হলাম!

৬০ টি মন্তব্য : “স্মৃতির ঝাঁপি : চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বরাবরের মতই অসাধারন :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    কি ভয়ঙ্কর ছিল দিনগুলো...এর আগে এরকম কোন বর্ণনা পড়িনি...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    প্রতি পর্বে আপনার প্রশংসা করতে করতে এখন আর শব্দ পাচ্ছি না।

    যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের এই অবস্হার কথা আগেও যতোবার পড়েছি, খুব খারাপ লেগেছে, কিন্তু এটা বোধহয় এড়ানোর উপায় ছিলো না!

    কাঁশি দেয়া নিয়ে আর কিছু বললাম না। 😉

    ওয়েল্কাম টু ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ । :thumbup:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
        • কামরুল হাসান (৯৪-০০)
          কিন্তু এটা বোধহয় এড়ানোর উপায় ছিলো না!

          এটা আসলে কোন সিদ্ধান্ত না, আমার নিজের ধারনা বলতে পারেন। একারণেই 'বোধহয়' বলেছি।

          প্রথমত, বংগবন্ধুর কিছু ব্যর্থতা অবশ্যই ছিলো, দেশ পরিচালনায়। কিন্তু 'দুর্ভিক্ষাবস্থা' সেই ব্যর্থতার কারণে হয়েছে এটা বললে তার প্রতি একটু বেশি অন্যায় করে ফেলা হয়।

          দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ পূনর্গঠন খুব সহজ কিছু নয়, বিশেষ করে সেই দেশটি যদি দীর্ঘ ২৪ বছর অর্থনৈতিকভাবে শোষিত হয়ে আসে।

          তৃতীয়ত, লাবলু ভাই তার লেখার প্রথম প্যারাতে আরো কিছু কারন বলেছেন, যেগুলি ঠেকানোর মতো আমাদের অবস্থা ছিলো না।

          তার মানে কিন্তু আমি বলছি না, সব যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ 'দুর্ভিক্ষাবস্থা'য় অবশ্যই পড়বে। শুধু আমাদের ক্ষেত্রে এসবকিছু আমাদের পক্ষে কাজ করেনি, এই যা।

          তাই সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে, এটা বোধহয় এড়ানো যেত না।


          ---------------------------------------------------------------------------
          বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
          ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

          জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

            ভালো বলেছো।

            দুর্ভিক্ষ বেশিরভাগ সময়েই হয়েছে মানুষের কারণে, বিশেষ করে বিগত দু'শো বছরে। এই সময়ের বড় বড় দুর্ভিক্ষ গুলো হয়েছে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অসম বন্টনের কারণে। আর অমর্ত সেনের থিসিসেরও মূল দাবী এটাই।

            টোকিও আর লস এঞ্জেলসে থাকার কারণে কিছুটা হলেও বাস্তব ধারণা পেয়েছি খাদ্যের এই অসম বন্টন কতটা অসম হতে পারে।


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
      • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

        ফয়েজ ও মাহমুদ ইতিহাস পড়ে যতোদূর জানা গেছে, উপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল ছিড়ে ষাটের দশকে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন- তারা দেশ শাসনে কমই সফল হয়েছিলেন। আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আর সরকার বা দেশ পরিচালনা দুটোর মধ্যে ফারাক অনেক। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু যতোটা সফল, ততোটা ব্যর্থ দেশ পরিচালনায়। আমার সঙ্গে অনেকে একমত নাও হতে পারো। তবে এটা আমার পর্যবেক্ষণ।


        "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

          সানা ভাই,

          আপনার পুরো বক্তব্যের সাথেই একমত।

          রাজনৈতিক নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু যতোটা সফল, ততোটা ব্যর্থ দেশ পরিচালনায়।

          এই কথাটার মধ্য দিয়ে আপনি একটা প্যাটার্ন তুলে ধরেছেন। যেসব দেশ আমেরিকার সাথে সুসম্পর্ক তৈরী+রক্ষা করতে পারেনি, সেখানেই এটা ঘটেছে। অন্যদিকে আমেরিকার ছত্রছায়ায় এমনকি স্বৈরতন্ত্রও টিকে গেছে।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
          • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

            না মাহমুদ। দুর্ভিক্ষ বা আর্থিক সমস্যার জন্য আমেরিকার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করিনা। কিন্তু দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর অনেক ব্যর্থতা ছিল। কিন্তু '৭২ সালে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগোনোর সম্ভাবনা এবং সুযোগ ছিল। তিনি সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। দলের লোকজনের দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস কঠোরভাবে দমন করার প্রয়োজন ছিল। তিনি ভালো প্রশাসক ছিলেন না। প্রশাসককে অনেক সময় কঠোর হতে হয়।


            "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

            জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ভালো লেগেছে।

    একটা জিনিস কিছুটা বুঝতে পারছি- কেন মানুষ মাত্র ৩ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • আরিফ (১৯৯৪-২০০০)
      একটা জিনিস কিছুটা বুঝতে পারছি- কেন মানুষ মাত্র ৩ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।

      সহমত মাহমুদ ভাই। আমিও এখনো ব্যাপারটা পুরাপুরি বুঝে উঠতে পারিনাই।

      সানা ভাই অসাধারন :boss: :boss: । এই প্রথম '৭৪ এর দূর্ভিক্ষের কোন বর্ণনা পড়লাম।

      জবাব দিন
  4. দিহান আহসান

    ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা ...
    বরাবরের মত :hatsoff:
    আপনার চোখ দিয়ে কষ্ট'টাকে অনুভব করার চেষ্টা করছি। 😐

    টেংরা মাছের সঙ্গে ডাটা, রুইয়ের সঙ্গে পটলের ঝোল, বেলে মাছের সঙ্গে বেগুনের তরকারি

    খেতে মন চায় ... 😕

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
      দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান

      একদম বাজে কথা। দারিদ্র মানে অভিশাপ। দারিদ্র মানুষকে কুকুর বেড়ালের চেয়েও অধম বানিয়ে দেয়। নিজের চোখে দেখেছি, মানুষ ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছে। কুকুরের সঙ্গে উচ্ছিষ্ট দখলের জন্য লড়াই করছে!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  5. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    পুরো ন্যাংটোপুটু হয়ে কাঁশি দেওয়ার সেই কাহিনী মনে করে এখনো বন্ধুরা মজা করি। সম্ভবত ওই পরীক্ষা দিতে গিয়েই কি প্রথম আন্ডারওয়ার পড়ছিলাম? হয়তো। আর আমার ছেলে তো বুঝের বয়স থেকেই আন্ডারওয়ার পড়ে।

    :khekz: :khekz:
    :just: অসাধারণ :salute: :boss: :salute:

    জবাব দিন
  6. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    সম্ভবত ওই পরীক্ষা দিতে গিয়েই কি প্রথম আন্ডারওয়ার পড়ছিলাম?

    যাক এদ্দিনে আপনার-আমার একটা জিনিস কমন পড়লো। 😀

    ভাইয়া আমি '৭১-'৭৪ এর বাস্তব নির্ভর লেখা খুঁজছি, জাসদের উত্থান, সিরাজ-শিকদারের আন্দোলন, রক্ষীবাহিনী এবং গন-বাহিনী, চুয়াত্তরের দূর্ভিক্ষ এবং বংগবন্ধুকে হত্যা, আপনার কি জানা আছে এমন কোন লেখা? বায়াসড না, নিরপেক্ষ বিশ্লেষন। আমি বুঝতে চাই, সে মানুষটার জন্য এতগুলো লোক জীবন দিল, মাত্র চার বছরের মধ্যে কেন আবার তার জীবন কেড়ে নিল, আর এর পরে তেমন বড় কোন প্রতিবাদও হলো না।

    লেখা ভালো হচ্ছে, লেখায় আপনার মনোযোগ টের পাওয়া যায় পড়লেই।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      কমন পড়েছে.......... :guitar: ধন্যবাদ ফয়েজ।

      আমি সুনির্দিষ্ট কিছু বইয়ের কথা বলবো। আপাতত লরেন্স লিফশুলজ ওই সময়টার জন্য সবচেয়ে ভালো বলতে পারি। ওর বইটার নাম কি "আনফিনিশড রেভ্যূলিউশন"? যাক জানাবো শিগগিরই।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        আমি কিছুদিন আগে শওকত ভাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম মেইলে।

        বাংলাদেশের ইতিহাসে মোটামুটি চারটি ব্লকে ভাগ করেছি, ৭১ এর পর থেকে, একটা ৭১-৭৪, আরেকটি ৭৫ এর সময় গুলো এরপর ৭৫-৮১ এবং এরপর ৮১-৯০। এই সময়ের ঘটনা গুলো নিয়ে ইতিহাস নির্ভর লেখা খুজছি।


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
  7. it was really a life time experience lablu bhai!thanks for sharing it with others.i had similar experiences in ration shop.lomba line e darie ration nite hoto r tarpor gom chatu korte azimpur jetam,pae hete amra dui bhai.

    yes,i agree with u,middle class tokhon thekey anti AL hote shuru kore.r rokkhy bahinir tortur amar family tei dekhechi.amar choto mama abdul hoqder party korten,tar karone,puro family i tortured hoechilo.

    tobe,apner information e ektu bhul ache,gazi golum mustafa chilen red cross er chairman.take manush joke kore bolto 'kombal chora'.

    probably.tran o punarbashan minister chilen tokhon,abdur rob serniabad,Bongobondhur brother in law.

    but,ur experience is really painstaking.

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    লাবলু ভাই আপনার লেখা পড়ে আজ বুঝলাম এক সময়ের কট্টর আওয়ামী লীগের সাপোর্টার আমার নানা ভাই কেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বি এন পি এর সাপোর্টার ছিলেন । কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি । আপনি যে অনেক মনোযোগ দিয়ে লিখেছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা থাকে না । পরের পর্ব পড়ার জন্য আর তর সইছে না ।

    জবাব দিন
  9. রাশেদ (৯৯-০৫)

    সময় খুব খারাপ আর আরো খারাপ ব্যাপার হল সেই পুরান সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করতে যাওয়া। সেই খটমট কাজে আর খটমটে বই গুলো মাঝে মাঝে মাথা ধরিয়ে দেয়। আপনার এই স্মৃতিচারণ কেন যানি অনেক খটমটে ব্যাপারের সাধারণ দৃষ্টি থেকে দেখা ব্যাখ্যা আছে। সিরিজটা ভাল লাগছে লাবলু ভাই।


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  10. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    প্রথম পর্বেই বলেছিলাম- আমার আব্বুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে শোনা ঘটনাগুলোই শুনছি আবার। চমৎকার হচ্ছে লাবলু ভাই। শেষ করে ফেলুন। একটা ই-বুক করে ফেলা যাবে।

    জবাব দিন
  11. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সানা ভাই, পোস্ট টা পড়ে খারাপ লেগেছে তবে লেখার জন্য না চোখের সামনে মানুষগুলোর কষ্ট চোখে ভেসে উঠেছে।
    আমার বাবা চাচা দের কাছেও প্রায় একই রকম গল্প শুনি। সেসময়কার অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক প্রক্ষাপটগুলো ডিটেইলস জানতে মন চায়।

    জবাব দিন
  12. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    একটা বেদনার খবর পেলাম একটু আগে। বন্ধু শাহাদাতের মেইলে। তোমাদের সঙ্গে খবরটা ভাগাভাগি করলাম সংশ্লিষ্টতার কারণে। অনুবাদ করার কষ্টটা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
    ..................................................................................

    Rittik, son of Major Humayun Hayder passed away in the afternoon of July 17 at Labaid hospital, of multiple cardiac arrests. He was 13 years old. Humayun died just four months ago on the first day of the BDR carnage. Rittik did not have a normal life even before his father's death; he had a congenital disorder since early childhood. Because of post-encephalitis syndrome with seizure disorder, he had some permanent damages in areas of his brain. He spent the last few years of his life on a wheelchair. His already weak spirit could no longer bear the grief of the death of his father.

    In the past year Humayun was preparing to retire from the army. He served his 21 years of army life sincerely and uneventfully, so there are no glorious stories to tell. Instead, here are some personal reflections. Humayun, I and 45 others started our student lives together at Momenshahi Cadet College exactly 30 years ago. We spent six memorable years together. He was the son of one of our most liked and respected professors, Mr. Shuja Hayder. Professor Hayder was one of the early graduates of Dhaka Art School and taught us fine arts. Humayun inherited his father's aesthetic senses; he drew and painted well, had beautiful handwriting, and always spoke in a mild voice. We were mildly surprised when he chose to join the army. Rittik also inherited his grandfather’s and father’s artistic abilities. He won a prize at a nationwide arts competition when he was only five, just before the onset of his illness.

    Humayun was a remarkably cheerful fellow; in six years together, we never saw him without a smile. In later life he suffered with great dignity some very testing times, including the ordeal of his son’s grave illness. He was plain, happy, well-spoken, and well-mannered, through and through a gentleman. He was looking forward to a quiet life outside the army, may be going abroad for better treatment of his son, hoping to see his children living normal lives. Small dreams!

    A mere four months make such a difference. Father and son are together now, beyond the realm of illness or unfulfilled dreams, beyond regret or grief. It is said that the heaviest burden for a parent is the body of a dead child. Humayun was spared that pain by a thin margin of four months.


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  13. তৌফিক

    লাবলু ভাই, আপনার অভিজ্ঞতা পড়ার পর দেশে গিয়ে যা যা করবো তার তালিকায় আরেকটা কাজ যুক্ত হলো। বাবা-মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতাটা জানতে চাইব।

    জবাব দিন
  14. এহসান (৮৯-৯৫)

    সানা ভাই,

    অনেক দেরীতে পড়লাম। আসলে আধা পড়ে বাকীটা মাত্রই শেষ করলাম। আমি অনেক বেশী ব্যস্ত গত কিছুদিন। কে যেনো আগেই বলেছে... জটিল বিষয়গুলো আপনি খুব সহজ ভাবে বলছেন। ঘটনাগুলোর বর্ণনাগুলো নিরপেক্ষ লাগছে এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে। :clap: এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কোনো বই আমি পড়ি নাই। নানা, বাবা, চাচা থেকেই যা শুনেছি... কিন্তু সবাই এন্টি-আওয়ামী ঘরানায় (Pre-occupied হয়ে) বলেছে তাই একটা সময় আর শুনতে ইচ্ছা করেনি।

    ভালো লাগছে আপনার এই সিরিজ। প্লিজ একটু সময় নিয়ে হলেও চালিয়ে যান। আমি জানি চাকরী, সংসার কিংবা অন্য অনেক কাজ থেকে সিসিবির জন্য লেখালেখির সময় বের করা দুরূহ একটা ব্যাপার। কিন্তু লাগে রাহো লাবলু ভাই। ফয়েজ ভাই এর মত আমার কাছেও মনে হচ্ছে আপনি যত্ন নিয়ে লিখছেন। রায়হান আবীরের ই-বুকের প্রস্তাবও আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে। কিন্তু তার আগে আমরা আরো অনেক পর্ব চাই।

    জবাব দিন
  15. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ৭১-৭৫ সম্বন্ধে আরো অনেক জানতে চাই ভাইয়া। আপনার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখছি। তবে আমি আরো বড় ক্যানভাসে জানতে চাই। ভাল বই থাকলে নাম দিয়েন ভাইয়া। আর ৭৫ এর ক্যু সম্বন্ধে তখনকার সেনাবাহিনী প্রধান এর ভূমিকা কি ছিল কখনো তেমন ভাবে শুনিনি।

    জবাব দিন
  16. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    পরের পর্ব কই লাবলু ভাই? 🙂

    আপেক্ষায় আছি- কামরুল। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  17. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    গাজী গোলাম মোস্তফা সেই ব্যাক্তি যিনি ও তার পুত্র মেজর ডালিমের বৌএর ঘটনায় জড়িত।
    মাঝখান থিকা হুদাই শেখ জামাল- শেখ কামাল রে জড়ানো হইছে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  18. রশিদ (৯৪-০০)

    অনেকদিন পরে লিখছি এখানে! ভাইয়াকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

    দুর্ভিক্ষ '৭৪ হয়েছিল কেন এর জন্য বাস্তবিক কোন গবেষণা সম্ভবত হয়নি। কিন্তু এর কারন খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই "ব্যক্তি" বঙ্গবন্ধুর শাসক হিসেবে ব্যর্থতার কথা বলে আসলে একটা সহজ সমাধান আমরা করে ফেলি যা সত্যিকার কারণগুলো থেকে আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে যথেষ্ট। অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যর্থতা, সমন্বয়ের প্রকট অভাব, দুর্নীতি না থাকলে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি না-ই হতে পারতো কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখিতো আমরা ঐ তিনটি বিষয়ে আমাদের দেশের উন্নতি ঠিক কতটুকু হয়েছে এই ৪৫ বছরে! তাহলে বছর বছরই কেন অমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছেনা?

    আমি জানিনা ঠিক বলছি কিনা, আমার মনে হয় ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণগুলো হলো খাদ্য মজুদের সঠিক তথ্যই না থাকা আর সার্বিক সাপ্লাইচেইনের ধস। দুর্গত এলাকায় খাদ্য পৌঁছানোর মতোন পরিবহন ব্যবস্থার অবস্থা কতটা খারাপ ছিল হয়তো কল্পনাই করতে পারবোনা, স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা, মজুতদারি আর গুদাম লুট বা অগ্নিসংযোগের ব্যাপকতা তো ছিল ই, শুনতে পানসে লাগলেও জাতীয়, আঞ্চলিক অথবা বৈশ্বিক রাজনীতিটা যেন আমরা তুচ্ছ করে না দেখি...

    জবাব দিন
  19. ইতিহাসের সত্যকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে তুলে এনেছো, দোস্ত। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, ৭১ থেকে যা দেখেছি, তা লিখে রাখি। ছেলেদের সাথে মাঝে মাঝে গল্প করতাম।

    একটা শ্লোগান তখন অনেক শুনেছি-
    হাফ রুটি হাফ ভাত,
    তার নাম মজিববাদ!

    ভালো লাগলো পড়ে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।