সেই ভোরবেলা থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরেই চলেছে। মন খারাপ করে সারাদিন বসে থাকবো সে উপায় নেই। সকাল সকাল এত্তেলা, অফিস চলো। ছুটির দিনে অফিস। বসের পিণ্ডি চটকাতে চটকাতে একেকটা রেড লাইট পেরিয়ে চলেছি হঠাৎ হুডতোলা পর্দাঘেরা রিকশায় একটি যুগলকে দেখলাম অপলক দৃষ্টিতে পরষ্পর চেয়ে আছে তো আছেই, আশপাশের বৃষ্টি কাদাজল অ্যাম্বুলেন্স ট্রাফিক পুলিশ ঝাপসা সিগন্যাল বাতি গলগল বয়ে চলা ড্রেন ছলছল ঢাকা শহর, কিছুই যেন আর ওদের বিব্রত করতে পারছেনা।মনটা ভীষণ অন্যমনা হয়ে গেলো। চুলোয় যাক অফিস টফিস…
নিশার মেসেজ: ডার্লিং (পড়ুন স্যার) আমি অপেক্ষা করছি। কতক্ষণে পৌঁছাবেন।
শুট! ভুলেই গেছি! (বেশি মাথায় তুলে ফেলেছি এই মেয়েটাকে দিনে দিনে। ডার্লিং!!)
গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে ফোন দিলাম: এ্যাই শোনো, একটা ঝামেলায় পড়ে গেছি।ক্যাব পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি আড়ং এর নীচেই তো!
ভাগো ভাগো ভাগো !!!!!
পৃ। পৃ। পৃই ই ই ই! এখনো ঘুমোচ্ছিস?
নাহ্, জানলায় বৃষ্টি দেখছি।
আজ না আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, কেমন জ্বর জ্বর লাগছে।
হুম্ম্ (চাপা হাসি)…
হাসছিস? আমার জ্বর আর তুই হাসছিস?
কপাল ছুঁয়ে না দেখলে কি করে বুঝবো তোমার জ্বর, লক্ষীসোনা!
ওরে আমার….!
ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে মিথ্যুক মিথ্যুক চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে পৃ।
আজ ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা হচ্ছে নাকি মিথ্যুকের অনারে।জ্বর মাপার কোন সিন নাই।
ঝাড়া তিন সপ্তাহ পর আমাদের দেখা হচ্ছে সেটা নিয়েও দেখি এই মেয়ের কোন মাথাব্যথা নেই।
প্যাকেটে কি? আবার মদ? আজকে আবার কি হবে শুনি?
হবে কিছু একটা! আমার না জ্বর! তাই ব্র্যাণ্ডি নিয়ে এলাম। তুই খাবার বানিয়ে নে। তারপর আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিলেই হবে।
বাইরে তখন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তুমুল বেগে আছড়ে পড়ছে কাঁচে, বারান্দায়। সমস্ত চরাচর অন্ধকার হয়ে গিয়ে আমার সবটুকু উচ্ছন্নতাকে থরথর করে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো একবার।পৃ ততক্ষণে শ্রীকান্তের গান চালিয়ে দিয়ে কিচেনে ছুটেছে।
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণসন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম।
Landy Cognac টা আস্তে করে খুলে হালকা-সোনালী গরলটাকে একটু শুঁকে নিলাম। আহ্! এ আমার এক নেশার মতো। ঘ্রাণে ঘ্রাণে প্রাণ মাতাল হয়ে ওঠে আধা।
Cognac চেখে দেখার এ এক অলিখিত ভব্যতা। তাড়াহুড়ো করতে নেই। প্রতীক্ষাতে আভিজাত্যের পরিচয়।
snifter গ্লাসে কুড়ি-পঁচিশ মিলি মতো ঢেলে নিয়ে হালকা করে একটা চুমুক দিলাম। অনবদ্য। পৃ-কে নিশ্চিন্তে খাওয়ানো যেতে পারে।
Cognac চুমুকে চুমুকে খেতে হয়, ঢকঢক করে নয়। স্বাদেন্দ্রিয়ের চাই অনন্তকালের অবসর; স্বাধীন, ভাবনাবিহীন ।
চেখে দেখা শেষ করে এবার snifter এ আইসকিউব নিলাম গোটা পাঁচেক।
৫০ মিলি Cognac
৫০ মিলি পানি
৫০ মিলি tetley চা পাতার লিকার, বরফশীতল।
১ চামচ মধু
পরপর ঢেলে (খুব নাড়াচাড়া করার দরকার নেই ব্যাপারটাকে, অমনিই থাক)
পৃ-কে ডাকতে যাবো
দেখি সে আমাকে ডাকছে খিচুড়ির লবণ ঠিক আছে কি না দেখার জন্য।
আমি তখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বদলেও কনিয়াকের স্বাদ মাটি করতে প্রস্তুত নই।
অগত্যা রাজ্যের সন্দেহ নিয়ে ওকেই চুমুক দিতে হলো প্রথমে।
ওরে না আ আ আ আ আ আ আ বলে আতিশয্যে পুরোটাই ঢকঢক করে খেয়ে নেবার পাঁয়তারা করছিলো সে।
ওভাবে নয় সোনা। এখানে বোসো।
(দৌড়ে চুলা নিভিয়ে দিয়ে এলাম)।
এইখানে একটা হাত রাখো, এখানে আরেকটা
আমি যেখানে যেতে চাই যেতে দাও
কোনো কথা বলোনা
কাল স্বপ্নের কথা শোনো…।
বাইরে ততক্ষণে বৃষ্টি ধরে এসেছে। বিকেল গড়িয়ে অলস পায়ে সন্ধ্যা এগিয়ে আসছে হন্তারকের মতো।
গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে তর্জনীতে খেলা করতে করতে পৃ শুধু একবার শুধালো ‘খেতে যাবে না ?’
[কবিতা: সৈয়দ শামসুল হক ]
😛 😛 😛 😛 কঠিন জিনিস। চেখে দেখতে মন চায় 😛 😛 😛
কনিয়াক আসলেই বেশ ভালো খেতে।
একটু পুরনো হলে তো কথাই নাই।
অসাধারণ রোমান্টিক একটা লেখা ....... :boss: :boss: :boss:
থ্যাংকস মইনুল।
নুপুর ভাই ...... এলকোহল ছাড়া রোমান্টিক ড্রিঙ্কস বানানোর একটা রেসিপি দিয়েন ....
ওহ্ নিশ্চয়ই! অ্যালকোহল ছাড়াও ড্রিংক হয় তবে রোমান্স ছাড়া ড্রিংক কখনো ড্রিংক হয়না।
অনেক সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।এই সিরিজ আরো চলুক।
গল্পের চরিত্রগুলো যদি চায় তবে তো চলতেই পারে, কি বলো?
:thumbup: :thumbup:
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
শেষ হইয়াও হইল না শেষ
অতি উত্তম
সাধু সাধু
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
১ম ৫ তারাটা মনে হয় আমিই দিলাম।
সেই দিক থেকে আমি রেটিং-এ ১ম। :awesome:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
থ্যাংকু থ্যাংকু
নূপুরদা, আপনার কবিতার মত আপনার গদ্যও এতো স্বাদু...
আর যথারীতি প্রতিটা কথায় কথায় রিনঝিন রোমান্টিকতা...দারূণ মিষ্টি...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
অনেক ধন্যবাদ সাকেব এত সুন্দর সযত্ন মন্তব্যের জন্য।
অতুলনীয় একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্কের রেসিপির সাথে মোহময় মদিরার রেসিপির কি দুর্দান্ত আকর্ষনীয় সম্পৃক্ত দ্রবণ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন নূপুর ভাই!! অসাধারণ!
লেখায় মন্তব্যে সিসিবিতে আপনার সাম্প্রতিক চলাচল খুব ভালো লাগছে বস্ :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
বাহ্! 😛
কদিন একটু সময় পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে, তাই একটু হাত ঝেড়ে নিচ্ছি আর কি।
কেবল একটা শব্দঃ "সুপার্ব"
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
🙂
কনিয়াক নেই হাতের কাছে। আপাতত সম্বল হুইস্কি (রবিনকে ধন্যবাদ বোতলটা বাসায় রেখে যাওয়ার জন্য)। গত দুইদিন মাঝ রাতে বৃষ্টি হচ্ছে ঢাকায়। ছাদের চেয়ারে বসে রেলিংয়ে পা তুলে দিয়ে দুয়েক পেগ। একেবারে মন্দ লাগছে না। 😀
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
:thumbup: :thumbup:
:teacup: এর পাশাপাশি একটা পেগ-এর ইমো থাকলে মনে হয় মন্দ হইতোনা,
কি বলো!
😉 😉
ভাইয়া, খুব ক্লান্ত ছিলাম আমি আজ, অনেক বিরক্ত ও। আপনান লেখাটা পড়ে সব এক ঝটকায় কেটে গেলো। সত্যি অসাধারন।
খুব সম্মানিত বোধ করছি মামুন।
কি বলে যে ধন্যবাদ জানাই....
:shy:
দাদা, গল্পের নায়ক নায়কার কাছে সবিনয়ে নিবেদন, সিরিজটাকে আজীবন চালিয়ে নেবার জন্য।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
নিবেদন পেশ করে দিলাম।
নুপুর'দা,
আপনার রেসিপি - আপনার গল্প - আপনার ফরম্যাট !
সবই বরাবরের মত নেশা ধরিয়ে দিল।
অ - অ অসাধারন।
অফটপিকঃ
দাদা আমার বাড়ি একটু ঘুরে যেয়েন।
আপনার প্রশ্রয়ে পুরাতন পর্বটাই ঘষে মেজে নতুন করে দিয়েছি।
সৈয়দ সাফী
অনেক ধন্যবাদ হে।
এই লেখাটা পোস্ট করার পরের দু-তিনদিন পড়তে মন্দ লাগছিলোনা।
কিন্তু তোমার মন্তব্য পড়তে এসে লেখাটা ফের পড়তে গিয়ে দেখি আর ভালো লাগছেনা।
🙁