শিশু বিকাশের স্বাভাবিক পর্যায়সমূহঃ

” The infant is a growing action system.” -(Gesell)

মাতৃগর্ভে ভ্রূনের আগমনের সাথে সাথেই যে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে মানবসন্তানের বৃদ্ধি ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সবাই কমবেশী জানি। তাই এতো বিজ্ঞ আলোচনায় আমরা না যাই। প্রাকজন্ম বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের ডাক্তার আপা এবং ভাইয়েরা ভালো লেকচার দিতে পারবেন, আমি জন্মপরবর্তী বৃদ্ধি বা বিকাশ নিয়ে কিছু তথ্য দিচ্ছি। যারা বর্তমানে ১-৫ বছরের সন্তানের মাতা-পিতা বা ভবিষ্যতে হতে ইচ্ছাপোষন করছেন তাদের জন্য এই পোষ্টটি বিশেষভাবে প্রয়জন হবে বলে আমার ধারনা। আমি নিজে মিলিয়ে দেখেছি, সামান্য কিছু ভ্যারিয়েশান ছাড়া আমার নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও এই গ্রোথ-চার্টটি বেশ ভালোভাবে মিলে গেছে এবং যাচ্ছে। মজাও পেয়েছি এই ভেবে যে যুগযুগ ধরে আমাদের দাদী নানীরা নিছক অভিজ্ঞতা থেকে বলে এসেছে, “এইত চার মাস হল তোর বাচ্চাটার, এখন খিল খিল করে হাসা শুরু করবে”, “পাঁচ মাস তো, এখন পাশ ফিরে যাবে” বাচ্চার সামনে এসে সামান্য অনুযোগের সুরে নানীরা বলবেন “আমি এতো আদর যত্ন করি আর সারাক্ষন বলে আব্বা, আব্বা করে!” নয় মাসের পর থেকে শিশুটি একটু রঙ্গঢঙ্ করা শুরু করবে, অভিমান দেখান, লজ্জা পাওয়া…আর আমরা গর্বিত মাতা পিতা আহ্লাদে আটখানা হয়ে সবার কাছে নিয়ে সেই গল্প শুনাবো। এসব তো যুগযুগ ধরে চলে আসছেই, আর আজকাল কিনা এসব জিনিস নিয়ে গবেষনা হচ্ছে! আর আমারা আজকালকার মা বাবারা এসব গবেষোনার উপর ঝাপ দিয়ে চেটেপুটে খেয়ে নিচ্ছি। বিশেষ করে নতুন মায়েরা বই পত্র, ইন্টারনেট ঘেটে ঘুটে, একাকার করে ফেলছি, কিভাবে আরো বেশী ভালোবভাবে সন্তানের যত্ন করা যায়, কিভাবে আরো বেশী ওদের শারিরীক ও মনস্তাতিক বিকাশ সম্পর্কে জানা যায়।
এখন আমি মূল লেখায় প্রবেশ করি, এতোক্ষন ধরে অনর্থক বাক্যব্যায় করেছি সুতরাং আপনাদের অসীম ধৈর্য্যের আর চ্যুতি ঘটাতে চাই না। আমি যে বিষয়ে লিখতে যাছি, সে বিষয়ে আসলে অনেক অনেক কিছু লেখা যায়, আমি যতদুর সম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে দিচ্ছি। য়ামি কেবলমাত্র শারিরীক, ভাষাগত, মনস্তাত্বিক এবং সামাজিক বিকাশের ব্যাপারে উল্লেখ করছি। এখানে বলে রাখা ভাল, যে এই গবেষনাটা গড়পরতা শিশুদের উপর করা হয়েছিল তাই অনেক শিশুই উল্লেখিত সময়সীমার আগে কিম্বা কিছু পরে উল্লেখিত আচরন করতে পারে। উল্লেখিত তথ্য কেবলমাত্র অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের কাছ থেকে কতটুকু বিকাশ আশা করতে পারেন সেই বিষয়ে আলোকপাত করলাম।

শিশু বিকাশের (১-৫ বছর পর্যন্ত) স্বাভাবিক পর্যায়সমূহঃ
১. ০ – ১ মাসঃ
>শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) সাধারনত দৈনিক ৮-১২ বার খাদ্য গ্রহনে ইচ্ছাপ্রকাশ করে।
২) ২০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় কাটায়।
৩) ইন্দ্রিয় সচেতনতা যেমনঃ সাদা-কালো বা এজাতীয় রঙ এর চরম বৈপরীত্য, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ, তাপমাত্রায় তারতম্য এবং শারিরীক ব্যাথা অনুভুতি জাগ্রত হওয়া শুরু করে।
>মনস্তাত্বিকঃ
ক্ষুধা এবং শারিরীক ব্যাথা জানান দেবার মাধ্যম হিসেবে কান্নাকে বেছে নেয়।
>সামাজিকঃ
১) আসহায় সামজিক জীব।

২. ২-৩ মাসঃ
>শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) রঙ এর প্রাথমিক পার্থক্য বোধগম্য হয়।
২) কান্নার পাশাপাশি ক্ব বা ক্বু এবং গ্ব বা গ্বু বা গ্বা স্বর তৈরী করা শুরু করে।
৩) চোখের পেশির উপর আয়ত্ব আসা শুরু হয়। জোরে শব্দে পলক ফেলে।
৪) পায়ের হাড় ও পেশিতে শক্তি বোধ হবে, পায়ের সঞ্চালন হাত অপেক্ষা বেশি হয়।
> মনস্তাত্বিকঃ
১) খুশি, আনন্দ ও ব্যাথার প্রাথমিক আবেগের সাথে পরিচয় হয়।
২) মুখে হাসির রেখা স্পষ্ট হয়।
৩) দুলুনি বা ঝুলুনি উপভোগ করে।
> সামাজিকঃ
১) অন্যদের মুখভঙ্গী বঝার চেষ্টা করে।
২) হাশি মুখ দেখে স্বস্তি বোধ করে।

৩. ৪ – ৬ মাশঃ
> শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) ডান বা বাম কাতে পাশ ফিরে উলটে যাবার চেষ্টা করে।
২) আশপাশের ধ্বনি বা শব্দের সাথে নিজেকে পরিচিত করে নেয়।
২) আওয়াজ করে হাসা শুরু করে।
৫) ব ধ্বনি দিয়ে শব্দ তৈরী করা শুরু করে যেমন বাব্বা, আব্বা, বু…, বেবে ইত্যাদি।
৩) বেশিরভাগ স্বরধ্বনি বা vowel sound উচ্চারন করতে পারে।
৪) ৬ মাসের দিকে এসে নিজে নিজে উলটে গিয়ে মাথা উঠানোর চেষ্টা করে।
৫) হাতে মুঠোয় শক্ত করে কিছু ধরার চেষ্টা করে।
৬) সবকিছু মুখে দেবার চেষ্টা করে (শিশু মনবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে বলে থাকেন যে, শিশুরা এই সময় তাদের একমাত্র অ্যাকটিভ বা সচল ইন্দ্রিয় জিহ্বা তথা স্বাদ দ্বারা যেকোন কিছুর চরিত্র বা বৈশিষ্ঠ্য বোঝার চেষ্টা করে থাকে)।
>মনস্তাত্বিকঃ
১)কোলে উঠতে বেশি পছন্দ করে।
২) চলমান বস্তু বা “moving object” এর প্রতি অধিকতর আকৃষ্ট হয়।
>সামাজিক
১) অন্যদের মুখভঙ্গী দেখে অনুভুতি পড়ার চেষ্টা করা শুরু করে।
২) মা অথবা যিনি সর্বাধিক যত্ন নেন (খাবার খেতে দেন) তার সাথে অন্যদের পার্থক্য করতে শেখে।
৩) খাওয়া, গোছল করা, পোষাক বদলান… ইত্যাদি এসবের চাহিদা তৈরী হয়।

৪. ৭-৯ মাসঃ
> শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) হাতের উপর আয়ত্ব আসে। কোন জিনিস হাত দিয়ে ধরে তা আবার মুঠো ছেড়া ফেলে দিতে শেখে এবং এটাকে তারা একটা খেলা ভেবে মজা পায়।
২) নিজে নিজে বসতে শেখে।
৩) হামা দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারা হামা নাও দিতে পারে।
৪) দুই হাতমিলিয়ে হাতে তালি দিতে চেষ্টা করে।
> মনস্তাত্বিকঃ
মায়ের প্রতি বা যিনি সর্বদা যত্ন নেন তার প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। মা বা যিনি সর্বদা যত্ন নেন তার সাথে সামান্য বিচ্ছেদেও অভিমান প্রকাশ করা শুরু করে।
>সামাজিকঃ
১) নিজের নাম চিনতে শিখে।
২) এই সময় “লুকচুরি” খেলায় বিশেষভাবে আনন্দিত হয়। (শিশু মনবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, চাদরের বা ওরনার আড়ালে যখন কেউ লুকিয়ে যায়, শিশুদের মনে একপ্রকারের হাড়ানোর ভীতি কাজ করে।তাই যখন “টুকি” বা “বুঃ” বলে আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসে মানুষটি, শিশুটি তখন স্বস্তিতে আনন্দিত হয়)

৫.১০-১২ মাসঃ
>শারিরীক ও ভাষাগলঃ
১) পায়ে জোড় আসা শুরু করে, দাড়ানোর চেষ্টা করে এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিজে নিজে কারো সাহায্য ছাড়া অনেকখন দাঁড়িয়ে থাকে, কিছু কিছু এ্যাডভান্স শিশুরা গুটি পায়ে হাটা শুরু করে।
২) একটি দুটি শব্দ পুরোপুরি উচ্চারণ করতে শিখে যায়।
৩) অন্যদের কথা অনুকরণ করতে চায়।
৪) ছোট ছোট কমান্ড, আদেশ বা নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যেমনঃ এদিকে তাকাও, ওদিকে যেও না ইত্যাদি।
৫) খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অন্যদের বিশেষ করে বড়দের খাবারের প্রতি আগ্রহ আসে।
৬) ঘুম কমে আসে।
৭) একটি কি দুটি দাঁত উঠতে পারে।
>মনস্তাত্বিকঃ
১) রাগ, লজ্জা, ভয় ইত্যাদি আনুভুতিগুলো প্রকট হওয়া শুরু করে।
২) “stanger anxiety” অর্থাৎ” অপরিচিত কাউকে দেখলে ভয় বা অনিশ্চয়তা কাজ করে।
৩) নতুন জিনিস সম্পর্কে আগ্রহী ও উৎ”সাহীত হয়ে উঠে, আবিষ্কার করার আগ্রহ জন্মায়।
> সামাজিকঃ
১) নিজের নাম বলার চেষ্টা করে।
২) টাটা বা বাই বাই বললে হাত উল্টিয়ে ঘুড়িয়ে নাড়ায়।
৩) কোন কিছু দেয়া বা নেয়ার কমান্ড বঝে।

৬. ১ বছর- ১.৫ বছরঃ
>শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) দু-একটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে।
২) সর্বচ্চ ১০-২০ মিনিট পর্যন্ত হাটতে পারে।
৩) পেনসিল বা কলম হাতের মুঠোয় দ্গিরে কাগজে এলোমেলো দাগ দিতে ভালবাসে।
>মনস্তাত্বিকঃ
১) নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
২) গানের বা সুরের প্রতি ভালবাসা জন্ম নেয়।
৩) গোসলের প্রতি হয় আগ্রহ বাড়ে না হয় কমে।
> সামাজিকঃ
১) কমান্ড বুঝতে শিখে।
২) কিছু কিছু কথা শুনে সেগুলো বলার চেষ্টা করে।
৩) প্রিয়জনদের ডাকতে চায় বা পারে।
৪) আয়নায় প্রতিচ্ছবি দেখে খুব আনন্দিত হয়, নানা রকমের মুখভঙ্গী করে।

৭. ১.৫ বছর – ২ বছরঃ
>শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) বলে হালকা লাথি দিতে পারে।
২) একটার উপর আরেকটা জিনিস রাখতে সক্ষম হয়।
৩) পরিবেশভেদে শিশুর শব্দভান্ডার ২০০ বা ততাধিক অর্থপুর্ণ শব্দে উন্নিত হয়।
৪) tense বা কালের ব্যাবহারে শুদ্ধতা আনার চেষ্টা করে।
৫) নিজের কথা বল্লেও “বাবু খাবে” এ জাতীয় সেকেন্ড পারসন ব্যাবহার করে।
> মনস্তাত্বিকঃ
১) “temper tantrums” রাগ, ক্ষভ, হতাশা জাতীয় অনুভুতি বিশেষভাবে পরিলক্ষীত হওয়া শুরু করে যা ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২) নবজাতক শিশুদের প্রতি আকাংক্ষা বাড়ে, সংসারে দ্বিতীয় শিশুর আগমন কামনা করে।
>সামাজিকঃ
১) নবজাতক শিশুর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
২) স্ট্রেঞ্জার এঞ্জাইটি কমা শুরু করে।

৮. ২ বছর -৩ বছরঃ
> শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) লাফ দিতে পারে।
২) তিন চাকার সাইকেলে চড়তে পারে।
৩) রঙ পেনসিল ব্যাবহারের প্রতি ঝোক বাড়ে।
৪) মোটামোটি পুরোপুরি অর্থবহ দুই-একটা বাক্য তৈরী করে কথা বলা শুরু করে।
৫) নতুন নতুন শব্দ শিখে সেগুলোকে বারংবার প্রয়গের প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
৬) সব কাজ নিজ হাতে করার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
>মনস্তাত্বিকঃ
১) আবেগ বৃদ্ধি পায়
২) “fear of separation” বা বিচ্ছেদের ভয় জন্মায়।
৩) “negaativistic” হয়।
৪) ধ্বংসাত্বক মনভাব জন্ম নেয়।
৫) রসবোধ জন্ম নেয়।
৬) আত্ম নির্ভরশীলতা বাড়ে।
> সামাজিকঃ
১) সমাজে তার নিজের অবস্থান আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। নিজের বাসস্থান, ছোটখাট সম্পত্তি যেমন জামা, জুতা, চিরুনী, খেলনা, আপন-পর ইত্যাদি বুঝতে শিখে।
২) অভিভাবকদের আচরন আনুকরন করে, রোল প্লে জাতীয় খেলা খেলতে আনন্দ পায়।
৩) আদেশ দেওয়া উপভোগ করে।
৪) জোড়পুর্বক দাবী আদায়ের প্রবনতা প্রকাশ পায়।
৫) বাহিরমুখী প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
৬) সমবয়সীদের সাথে মেলামেশা করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়।

৯. ৩ বছর -৪ বছরঃ
> শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) এক পায়ে লাফাতে পারে।
২) নিজের জামা স্যান্ডেল পরতে পারে।
৩) চামচ দিয়ে বা হাত দিয়ে খাওয়া শিখে।
৪) ছোট টুল বা চেয়ার তুলতে পারে।
৫) নিজের সব রকম চাহিদার কথা স্পষ্ট ভাবে বোঝাতে পারে।
৬) মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য কোন ভাষার বহুল ব্যাবহার দেখলে সেই ভাষা বোঝার বা বলার চেষ্টা করে।
৭) ৪ বছরের শেষের দিকে এসে শব্দভান্ডার ১৬৪০ শব্দে উন্নীত হয়।
৮) পেনসিল ধরে গোল দাগ, বাঁকা দাগ, সোজা দাগ দিতে পারে, ডট দিয়ে দিলে, সেই ডটের উপর হাত ঘুরাতে পারে।
>মনস্তাত্বিকঃ
১) মা বাবা দুইজনের প্রতি ভালবাসা জন্মায়।
২) বিপরীত লিঙ্গের অভিভাবকের প্রতি রোমান্টিক অ্যাটাচমেন্ট বৃদ্ধি পায়।
৩) সম লিঙ্গের অভিভাবকের প্রতি হিংসার জন্ম নেয়।
৪) কল্পনাপ্রসুত ভীতি তৈরী হয় যেমন অন্ধকারের ভূত ইত্যাদি।
৫) নিজের কি ছেলে না মেয়ে সে ব্যাপারে জানতে শিখে।
৬) সমগত্রীয় পদার্থ, তথ্য ইত্যাদি আলাদা করতে পারে।
> সামাজিকঃ
১) সমবয়সী শিশুদের সাথে সঙ্ঘবদ্ধ খেলাধুলা ভালবাসে।
২) অন্যদের সামনে জড়তাবোধ কাটিয়ে উঠা আরম্ভ করে।
৩) কাল্পনিক চরিত্র তৈরী করে সঙ্গী বানায়।
৪) সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করে।
৫) কথা বলা বেড়ে যায়।

১০. ৪ বছর- ৫ বছরঃ
> শারিরীক ও ভাষাগতঃ
১) এক পা দিয়ে বেশ অনেক্ষন লাফাতে পারে।
২) কারো কোন সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে জামা পড়তে পারে।
৩) পেশী শক্তির উপর অনেকাংশে আয়ত্ব চলে আসে, কাঁচি ধরা ইত্যাদি স্মল মটর কাজগুলোতে তুলনামুলকভাবে দক্ষতা চলে আসে।
৪) শব্দভান্ডার ২০৭২ এ উন্নীত হয়।
৫) ভালভাবে নির্দেশনা গ্রহন করতে পারে।
৬) গননায় দক্ষতা আসে।
> মনস্তাত্বিকঃ
১) সঠিকভাবে কোন কাজ করতে পেরে গর্ববোধ করে।
২) নিজের মধ্যে ভারিক্বি আসা শুরু করে।
৩) দায়িত্ব নিতে ভালবাসে।
৪) নিয়ম সম্বৃদ্ধ খেলায় উত”সাহীত হয়।
৫) আবহাওয়া এবং পরিবেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
> সামাজিকঃ
১) সহযোগিতামূলক খেলায় আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
২) যেকোন কাজ আগের চেয়ে গুছিয়ে করার চেষ্টা করে।
৩) “বোর্ড গেমস” বা “টেবিল গেমস” এর প্রতি ঝোঁক বারে।
৪) প্রতিযোগীমূলক মনভাব তৈরী হয়।

… … … … … … … … … … …

আমরা বোধহয় আজকাল একটু বেশীই সচেতন। জানা অবশ্যই ভাল জিনিস, তবে পুথিগত বিদ্যা যতই থাকুক না কেন, যতখন পর্যন্ত না আপনি সেই জ্ঞ্যান কাজে লাগাচ্ছেন আপনার সব জ্ঞ্যানই বৃথা। আপনার সন্তানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে জিনিসটি সেটি হচ্ছে আপনার সান্নিধ্য, কাজেই আমাদের অবস্থা যেন কখনই নীচের ছবিটির মত না হয়ে যায়…
<%

৫,০৬৫ বার দেখা হয়েছে

৮৩ টি মন্তব্য : “শিশু বিকাশের স্বাভাবিক পর্যায়সমূহঃ”

  1. আয়েশা ( মগকক) আয়েশা

    দরকারী পোস্ট।ছবিটা তো হেভ্ভি হয়েছে! =)) =)) :)) =)) =))
    আমার ছানাপোনা জন্মের প্রথম মাসে ১৮ ঘণ্টাই জেগে থেকেছে..তুই তো ব্যাপক জ্ঞানী! আমার ছানাপনাগুলো কি মানুষ না ভিনগ্রহ থেকে আগত বলতো? :grr: :grr:

    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      ছবিটা দেখে আমিও ব্যাপক মজা পেয়েছিলাম!
      আর অনেক চিন্তা করে দেখলাম, ভিন গ্রহের মানুষ তো হয়ার চান্স নাই, নিশ্চই তুই তোর ছানাপোনাগুলো কে গান শুনাতি। তোর এত্ত সুন্দর সুন্দর গান মিস করে ফেলবে এই ভেবে ওরা আর ঘুমাত না।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

  2. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    এই পোষ্ট পড়ার সময় আমার হয়নি তাই ডিস্ক্লেইমার পড়লাম। :grr:

    তাই আগের পোষ্টে নিজের যেরূপ ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছিল, তার পুনরুদ্ধারের জন্য, বড় ভাইদের রক্তচোক্ষু এবং ছোট ভাইদের অতিমাত্রায় লম্ফঝম্ফ কমানোর লক্ষ্যে এই পোষ্ট।

    ১।ভাঙ্গা হাড়ি জোড়া লাগেনা।আর লাগলেও সিমেন্টের যে প্রলেপ দেয়া হয় হয় সেটি দৃশ্যমান থেকে যায়।
    ২। পোলাপাইনদের লম্ফ কমাতে পারবি।তোর প্রিয় আঁতেল ইমেজে যে কালিমা লেপন করেছিলি সেখান থেকে বের হয়ে আসার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। :thumbup:

  3. হাফিজ (১৯৯১-১৯৯৭)

    আমার এক কাজিনের কথা মনে পড়ে গেল। শিশুবস্থায় ভাষা শেখার একবারে গোড়ার দিকে সে কোনভাবে খুব খারাপ একটা বাংলা গালি রপ্ত করে ফেলে। বড়রা সবাই মিলে চেষ্টা করছিল কোনভাবে তার মাথা থেকে ঐ শব্দটা দূর করতে...কিন্তু যতই চেষ্টা করা হচ্ছিলনা কেন, তত-ই তার মধ্যে ঐ শব্দটা উচ্চারণ করার প্রবণতা আরো বেড়ে যাচ্ছিল...এক পর্যায়ে অনেকটা না পেরেই, ওর বাবা-মা এ ব্যাপারে মাথা ঘামনো ছেড়ে দেন।পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সে নিজে থেকেই ঐ শব্দটা বলা বন্ধ করে দেয়। ২-৩ বছরের এই বাচ্চার জিদ দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে হয়েছিল, সবাই যেভাবে ওকে প্রেশারাইজড করেছিল, তাতে ওর মধ্যে এরকম জিদ ওঠাটা হয়তোবা স্বাভাবিক ছিল। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ignore করা ছাড়া alternative কি করা যেত, তা বলা খুব মুশকিল।
    যাইহোক, চমৎকার এই লেখার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    (তয় ব্যক্তিগতভাবে আমি কইলাম পোলাপানগো ধইরা পিডানোর পক্ষে...বাংগালী পোলাপাইন মাইর না খাইলে মানুষ হয়না :grr: )

    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      আরে... এতো দেখি আমাগো বরণ ভাই!!! ইয়াং হিরু মার্কা ছবি দেখে প্রথমে একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম।
      আমার কন্যাধরটি কারো কাছ থেকে "শালা" কথাটির কুব্যাবহার শুনে বার বার বলা শুরু করল যখন ওর ২ বছর হওয়ার কিছু সময় বাকি আছে। আমি বাসার সবাইকে বলে দিলাম ও যখন এই কথাটি বলবে, কেউ যেন ওকে নিষেধ না করে, আর অন্যদিকে আমি ওকে বললাম, এটা "শালা" না, "ছালা" মানে হচ্ছে ব্যাগ। খুব কম সময়ের মধ্যে ও শব্দটি বেমালুম ভুলে গেল। আমরা আসলে এসব আজেবাজে শব্দ শিশুদের মুখে শুনে খুব বিচলিত হয়ে উঠি। বারবার মানা করে করে ওদের মনের ভিতর শব্দটি আমরা গেঁথে দেই। এটা না করে আমাদের :just: ইগনোর করা উচিত"। আর সেই সাথে খুব ভাল হয় যদি রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে অন্য কোন শব্দের সাথে মিল দেখিয়ে দেওয়া যায়।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

  4. আহমদ (৮৮-৯৪)
    এভাবে নিজের ইমেজ নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক না

    তার মানে কি জিতু আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেল? =))

    খুব ভাল একটা পোষ্ট। অনেক কিছুই শেখার আছে।

    ১। আমার ছোট বোনের প্রথম পূর্ন বাক্যটি ছিল সম্ভবতঃ আমাকে উদ্দেশ্য করে, "বাইয়া কি কল?" (ভাইয়া কি কর?)

    ২। আমার এক কাজিনকে মাম-এর পরিবর্তে পানি বলানোর চেষ্টা চলছিল। ঘটনাটা এরকম --- বল 'পা'; সে বলল 'পা'। বল 'নি'; সে বলল 'নি'। বল 'পানি'; সাথেসাথে তার রেসপন্স, 'মাম'।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

  5. তানভীর (৯৪-০০)

    জীবনের রহস্যই এখনও ভেদ করতে পারলাম না, আর তো বাচ্চাদের বিকাশের স্বাভাবিক পর্যায়সমূহ 🙁

    আপু, গবেষনা ভালো ছিল, কিন্তু কাজে লাগাইতে পারলাম না! দুই দিনের দুনিয়া..... 🙁 🙁

  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    মনযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম। অর্ধেক পড়ার পর ছক আকারে অনেক তথ্য আমার মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারলো না আর ক্রমবিকাশটাও ভালো মতো বুঝলাম না। এভাবে ছক আকারে না দিয়ে আলোচনা ধর্মী মানে এসব আচরণ তার পিছনের কারণ উদাহরণ দিয়ে বুঝালে আমার মত নিম্ন বুদ্ধির পাঠকরা উপকৃত হতো। অথবা কোনভাবে এই বিষয়ক গবেষণা রিলেটেড কোন ডকুমেন্টের লিংক দিলে উপকৃত হতাম।
    পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      আমিন, তোমার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছি। খুবই দুঃক্ষিত। আসলে আমি এই রিসার্চটা কিছু সহায়িকা বই থেকে সাজিয়েছিলাম। আর উদাহরণসহ আলোচনাধর্মী লেখা দিলে পোষ্টটার দৈর্ঘ্য আরো বেড়ে যেতো... সবাই মিলে তখন আমাকে :chup: :chup: :chup: দিতা 🙁
      তবে আমি নিশ্চিত যে তুমি গুগুল সার্চ দিলে অবশ্যই আরো ভাল তথ্য পেতে পার।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    ০ – ১ মাসঃ
    ১) সাধারনত দৈনিক ৮-১২ বার খাদ্য গ্রহনে ইচ্ছাপ্রকাশ করে।

    আমাদের মাস্ফ্যুর বয়স জানি কত হইলো? ;;)


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

  8. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    হ, অখন তো এইসব আমিনেরই পড়ার সময়!! আমার নাতি-পুতি হইলে পড়ুমনে.............

    লেখা ভালো হয়েছে জিতু। তবে তোমার ইমেজ পুনরুদ্ধার চেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম মনে হয় 🙁 🙁 🙁


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

  9. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    জিতু,

    আমার মেয়ের বয়স তখন ২ বছর কয়েক মাস। ঢাকার রাস্তায় গাড়ীতে ঘুরছি। একটা বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে ইংরাজীতে 'Cute' লেখা দেখা (প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন) মারিয়া হঠাৎ বলে উঠল 'কিউট'। ভীষন অবাক হয়ে গেলাম। পরে চিন্তা করে বুঝলাম সে একই বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখেছে যেখানে ছবির সাথে গান করে ৩ বার 'কিউট কিউট কিউট' বলা হতো।

    মারিয়া এখন নিউরোসায়েন্সে ডিগ্রী নিয়ে কম্পুউটার সায়েন্স পড়ছে।

    • সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

      শহীদ ভাই, এই ব্যাপারটাকে বলে হয় conservation বা storing up. ওডিও-ভিসুয়াল সেন্সরিকে কাজে লাগিয়ে মেমরি স্টোরিং করা, আর এই পদ্ধতিটি খুব বেশি কার্যকর শিশুদের মনে রাখার জন্য। আমি নিশ্চিত যে নিওরোসায়েন্সে পড়া মারিয়া ব্যাপারটি আরো অনেক সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে পারবে 🙂 ।


      You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

  10. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আচ্ছা,জিতুয়াপ্পপি জুক্স বা আঁতলামি যেই টাইপ পোস্টই দেয় সেইটায় এত হিত হয় আর কমেন্ট পড়ে কেন? হিট এবং কমেন্টখেকো জিতুয়াপ্পির আইপিসুদ্দা ভ্যাঞ্চাই x-(