শাকুর মজিদ নামের সাথে পরিচয় নবম শ্রেণীতে। আমি তখন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এ পড়ি। হঠাত্ করে খবর পেলাম কেউ একজন ক্যাডেট কলেজের সপ্তম শ্রেণীর জীবনযাত্রা নিয়ে একটি বই লিখেছে। বই এর নাম,ক্লাস সেভেন ১৯৭৮। বইয়ের নাম শুনেই বুঝলাম যে বইটা লিখেছেন তিনি হয়তো ১৯৭৮ সালে ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণীতে ছিলেন। বই এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হল। কারণ,আধাসামরিক এ কলেজের নিয়ম কানুন দেশের আর দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা।
প্রতিযোগিতা থেকে বাসায় গিয়ে ধরলাম ঢাকার বাস। খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে ঢাকায় থাকে। তাই অগত্যা কোন উপায় না দেখে আমার ছুটির শান্তি নষ্ট করে ছুতে গেলাম ঢাকা অভিমুখে। ঢাকায় থাকার অন্যান্য সহস্র সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হল – ০১। সকালের অতি আদরের ঘুম বিসর্জন করা ও ০২। মিরপুর-১ থেকে ফার্মগেট গিয়ে পড়া। অবশ্য তাতেও রাজি শুধু যদি পূরণ হয় সে আশা যার জন্য এত জলাঞ্জলি,
২৬ শে অক্টোবর,২০১১ ইং। ৩ মাসের সুদীর্ঘ প্রস্তুতি পর্ব শেষে ছাড়পত্র পেয়েছি এখানে আসার। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থায় আছি তা সহ্য করা দায়। ডিনারের আগে সর্ব সাকুল্যে ১২টা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে হয়েছে। আসলে রবীন্দ্র সংগীত ভালো লাগেনা। তা নয়, বরং সবার গাইবার ঢংটা তো আর রবীন্দ্র সংগীতের সাথে যায়না তাই ভালো লাগে না। ডিনারের পর আবার ফিরে যেতে হলো বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা মিলনায়তনে, আন্তঃ ক্যাডেট কলেজ সাহিত্য ও সংগীত প্রতিযোগিতায় এবারের ইভেন্ট আধুনিক গান।
এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে। এটা আমার খুব পছন্দের বাজে অভ্যাস। গান থেমে গিয়েছে মনে হচ্ছে। নতুন কিছু শিল্পীর সঙ্গীত নিয়ে নাড়াচাড়া করছি ইদানীং। দ্য ওয়াটার বয়েজ নামের একটা নতুন ব্যান্ড পেলাম। বেহালা আর গীটার ডুকরে কান্নার মত সুর তোলে। মেলোডি গারডট – চমৎকার জ্যাজ গায় মেয়েটি। জন কোলট্রেন – স্যাক্সোফোনের পাগলামি। থেলোনিয়াস মঙ্ক – পিয়ানোর সাদাকালো শরীর নেচে বেড়ায় ৯/৮ মাত্রায়। মুঠোফোনটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম ক্ষুদেবার্তা গুলোর দিকে।
সরকারি চাকরিতে মেধা এবং কোটার বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলছিল। গতকাল বুধবার ১০ জুলাই, ২০১৩ তার একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে। ৫৬ শতাংশ নানা ধরণের কোটার বাধায় অনেকে ভালো ফল করেও চাকরি পাচ্ছেন না। এটা দুঃখজনক। কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কিন্তু বিক্ষুব্ধরা ঢালাওভাবে কোটার বিরোধীতা করছে। যারা সব কোটা তুলে নেয়ার পক্ষে বলছেন, তারা দেশ-মানুষ সম্পর্কে কতোটা জানেন বুঝেন সে নিয়ে সন্দেহ আছে। এরা সরকারি চাকরিতে গিয়ে দেশ ও মানুষের কতোটা কল্যাণ চিন্তা করবেন সে নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
আমার কানে এখনো বেজে ওঠে সেই ভাঙ্গাচোরা বিহারী দারোয়ানটার কন্ঠ। সারা লালখানবাজার এলাকায় হয়ত একাই ডেকে ডেকে সবাইকে ওঠাতো। আমি তাকে কখনও দেখিনি। আমি শুধু তাকে শুনেছি। শুনেছি তার হাতের ঝুনঝুন লাঠির আওয়াজ – দুমদাম করে গেইটে বারি দিত। আর সবাইকে চেঁচিয়ে বলত –
মেয়েটিকে দেখলেই ভাল লাগে। সারাক্ষণ হাসে। “মুখের মাংসপেশী অবশ হয়না?” জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হয়। ইদানিং বেশ কিছু পুরোন প্রিয় রোমান্টিক গান ভাল লাগছে। মেয়েটিকে ভাল লাগার সাথে সম্পর্ক আছে কিনা ধরতে পারছি না। লাস্যময়ী সুন্দরী যেকোন মেয়ে দেখেই তো ভাল লাগে। সেদিনের কমলাপুর রেলস্টেশানগামী ট্রেনে উঠার জন্য দৌড় দেয়া মেয়েটি। সেও তো ভাল লাগা তৈরী করেছিল। শাড়ি পরে এভাবে এর আগে কাউকে দৌড়াতে দেখিনি। বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া সুগন্ধী মিলিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ভাল লাগা বজায় ছিল।
সোহরাওয়ার্দী হাউসের পোর্চ এ বসে আছি। একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। ভ্যাপসা একটা গরম পরেছিলো। এই গরমের সময় প্রেপ টাইমে অবস্থা ভয়ানক রকমের খারাপ হয়ে যায়। টাইয়ের নট লুজ করে বসলেও ঝামেলা ! স্যার এসে বারবার ডিস্টার্ব করে। ফ্যানের গরম বাতাস শরীর ও মনের উষ্ণতা আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রেপ থেকে এসে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়েছি। কালিয়াকৈরের ডিশ অপারেটর এর ওখানে কি একটা ঝামেলা হয়েছে নাকি শুনলাম।
আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তজার্তিক ছাত্র নেই তা আমার জানা নেই। উপযুক্ত বেতনের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের জন্য মার্কিনিরা বিখ্যাত। তবে বৃত্তিধারী ছাত্রের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সেটা স্নাতোকোত্তর পর্যায়ে বেশী। অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী ও শীতল এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় বলে মিশিগান টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক ছাত্র অপেক্ষাকৃত কম। তারপরেও সংখ্যাটা একেবারে কম নয়। তবে আমার কাছে মার্কিনিরাও আন্তর্জাতিক। তাই আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মাঝে যারা আমার পরিচিত তাদের নিয়েই আমার আজকের ফটোব্লগ।
ফ্যামিলির ছোট ছেলে কিংবা ছোট মেয়ে হওয়াটা যতখানি সৌভাগ্যের, মাঝে মধ্যে ঠিক ততখানিই বিড়ম্বনার। শৈশবে যেমন সবার আদরের মধ্যমণি হয়ে থাকার বিশ্বজয়ী অভিজ্ঞতা হয়, তেমনি সামান্য ভুল করলেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ার মতন চারিপাশ থেকে নিয়মিত বিরতিতে ছ্যাঁচানি চলতে থাকে। ……আদর পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠসো…… ছোটমানুষ, ছোটমানুষের মতই থাকো…… অল্প বয়সে বেশি পাকা পাকা কথা শিখসো…… তোমার ভাইয়া/আপু কোনোদিন এমন করার সাহস পায়নাই আর তুমি কিনা……
০৪/০৭/২০১৩ এই দিন টিতে আমি আমার জীবনের তিনটি নতুন আনন্দময় মুহূর্তের সন্ধান পেয়েছিলাম।
১মঃ আমি লেখক হিসেবে খুব ভাল না হলেও আমি অনেকদিন ধরেই লেখার মতো কোন প্লট পাচ্ছিলাম না। ধন্যবাদShuvro Saleh আমাকে সুন্দর একটি প্লটের সন্ধান দেবার জন্য,( যা আমার জীবনের একটি ক্ষুদ্র সময়ের সঙ্গে মিলে যায় )।
২য়ঃ আমি আমার জীবনে প্রথম বারের মতো দুর্ঘটনায় মারাত্মক অসুস্থ একজন রোগীর জন্য রক্ত দান করলাম।
বাংলাদেশে এখন গণমাধ্যম, বিশেষ করে অনলাইন গণমাধ্যমের যুগ চলছে। দেশে বর্তমানে কত শত যে অনলাইন পত্রিকা আছে তার কোনো হিসাব নেই। হাতে কিছু টাকা হলেই যে কেউ একটি মিডিয়া হাউসের মালিক হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সংবাদজগৎ এবং পাঠক সমাজের কতটা উপকার হচ্ছে জানি না, তবে হলুদ সাংবাদিকতার প্রকোপ বাড়ছে। একটাই কারন, প্রতিযোগিতা। শত শত অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে, বিজ্ঞাপন পেতে হলে অবশ্যই আলেক্সা র্যাংকিং-এ উপর দিকে থাকতে হবে।
২০০২ থেকে ২০০৮।আমার ক্যাডেট লাইফ।ভালোয় মন্দে মিশিয়ে কেটেছে জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এই ছয়টি বছর।যেকোন ক্যাডেটের এই ছয়টি বছর কাটে অনেক ঘটনাবহুল।আমিও ব্যাতিক্রম না,মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ক্যাডেট লাইফ একটু বেশিই উরা-ধুরা।কলেজের গল্প করতে কার না ভালো লাগে?ছয় বছরের ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে আমার এই সিরিজ ‘ক্যাডেট কলেজ কড়চা’।আগেই বলে নেই ঘটনাগুলো ক্রমানুসারে সাজানো নয়।যেটা আগে মনে আসবে সেটাই লিখবো আগে।
আমাদের (২০০২-০৮) ছয়টি বছর কেটেছে আফসোস করতে করতে।আমরা কলেজে গিয়েই শুনেছি বের হয়ে যাওয়া ব্যাচগুলোর দুর্ধর্ষ কাজকর্মের কথা,শুনেছি কলেজ পালিয়ে মরডান মোড়ে গিয়ে শাবনুরের সিনেমা দেখে পুষ্টির মিষ্টি নিয়ে কলেজে ফেরার কথা,শুনেছি আগের এক্স ক্যাডেটদের বীরের মতো জুনিয়র পিটানোর কথা।তারা নাকি জাম্বুরা,কাঁঠাল,পেয়ারা এমন কোন ডাল নেই যা দিয়ে জুনিয়র পিটায় নাই।আমরা না পারছিলাম আগের ক্যাডেটদের মতো দুঃসাহসী হালাকু খাঁ হতে,
একটা গান শুনছি বেশ কয়েকদিন ধরে। রবীন্দ্রনাথ এর “আমার মন কেমন করে……”। ঘুরে ফিরে বারবার শুনছিলাম গানটা। শুনতে শুনতে আমারও মন কেমন করে উঠছিলো। জানিনা গানটি লেখার সময় রবিঠাকুরের মন তার প্রেমিকা কিংবা কোন আপনজনের জন্য কেমন করছিল কিনা। কিন্তু আমার ‘মন কেমন’ করে উঠছিলো কিছু তুচ্ছ, ক্ষুদ্র জিনিসের জন্য। আমাদের সবারই এই রকম অসংখ্য মন কেমন করা স্মৃতি আছে। এই জিনিসগুলো আমরা নিজেরা ছাড়া আর কেউ বোঝেনা;