ধম্মপদ ও তাঁর কিছু বাণী
————— ড. রমিত আজাদ
ধম্মপদ (পালি; প্রাকৃত: धम्मपद; সংস্কৃত: धर्मपद ধর্মপদ) হল কবিতার আকারে লেখা গৌতম বুদ্ধের বাণীর একটি সংকলন গ্রন্থ। এটি বৌদ্ধধর্মের সর্বাধিক পঠিত ও সর্বাধিক পরিচিত ধর্মগ্রন্থ। মূল ধম্মপদ গ্রন্থটি থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থ খুদ্দক নিকায়-এর অন্তর্গত।
পালি সুত্তপিটকের (সুত্রপিটকের) পাঁচটি নিকায় বা অংশ; তার পঞ্চমটির নাম খুদ্দক নিকায়। খুদ্দক নিকায় ১৬টি পুস্তকের সমষ্টি; তার দ্বিতীয় পুস্তকখানীর নাম ধম্মপদ। অনেকে মনে করে যে, ধম্মপদ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ধর্মগ্রন্থ।
বৌদ্ধ পণ্ডিত ও টীকাকার বুদ্ধঘোষের ব্যাখ্যা অনুসারে, বুদ্ধের জীবন ও তাঁর ধর্মসংঘের ইতিহাসে এক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই গ্রন্থের বাণীগুলি উচ্চারিত ও সংকলিত হয়েছে। তাঁর ধম্মপদ অট্ঠকথা টীকায় তিনি প্রতিটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এই বইটি বুদ্ধের জীবন ও সময়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
ধম্মপদ শব্দটি “ধম্ম” ও “পদ” শব্দদুটি নিয়ে গঠিত। এই শব্দদুটির একাধিক অর্থ রয়েছে। সাধারণত, “ধম্ম” বলতে বুদ্ধের মতবাদ বা একটি “চিরন্তন সত্য” বা “সদ্গুণ” বা সবধরনের “ভাব”কে বোঝায়। এবং “পদ” বলতে “পথ” বা “কবিতা” অথবা দুটিকেই বোঝায়। ধম্মপদ-এর ইংরেজি অনুবাদে, এই জাতীয় শব্দেরই নানা জোড় ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ধম্মপদ-এর শ্লোকগুলি বুদ্ধের উক্তি। “বুদ্ধের বাণীকে তার জটিল গঠনভঙ্গিমা, তত্ত্বকথা, কাব্যিক ভঙ্গি ও আকারগত স্থূলতাকে পরিহার করে সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ কাব্যভাষায় প্রকাশ করে ধম্মপদ বুদ্ধের ধর্মকে সকলের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে… সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সশতাব্দীতে এই গ্রন্থ সংকলিত হয়েছিল ভারতের প্রাচীন বৌদ্ধসম্প্রদায়গুলির মধ্যে বুদ্ধের মূল বাণীকে সহজলভ্য করে তোলার জন্য।” এই গ্রন্থটি সুত্ত পিটকের খুদ্দক নিকায়ের একটি অংশ। যদিও এর শ্লোকগুলি অন্যান্য পালি গ্রন্থেও পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে বুদ্ধঘোষ তাঁর ভাষ্যে এই গ্রন্থের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩০৫টি গল্পের উল্লেখ করেন এবং সেই গল্পগুলির সঙ্গে ধম্মপদ-এর নির্দিষ্ট শ্লোকের সম্পর্ক দেখিয়ে দেন।
ধম্মপদ হল থেরবাদ সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মগ্রন্থ। মূল পালি গ্রন্থটিই সর্বাধিক পরিচিত। তবে এই গ্রন্থের আরও কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে।
নীচে ধম্মপদের কিছু বাণী উল্লেখ করলাম ও পাশাপাশি আমার মনের কিছু চিন্তাভাবনাও বললাম (আমি নির্জ্ঞান-মূর্খ মানুষ, তারপরেও চেষ্টা করলাম কিছু বোঝার)।
১. চিন্তা বা অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে । যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে । আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে । [যমকবগগোঃ ১-২]
(অর্থাৎ আভ্যন্তরিন ব্যাক্তিত্বই বহিঃব্যাক্তিত্ব হিসাবে প্রকাশ পায়)
২. আমাকে বকেছে, আমাকে মেরেছে, আমার জিনিষ কেড়ে নিয়েছে – এমন চিন্তা বা অভিযোগ যারা করে, ঘৃণা ও শত্রুতা তাদের চিরসঙ্গী হয় । আর যারা এরূপ চিন্তা করে না তাদের ঘৃণা ও শত্রুতা দ্রুত উপশম হয় । [যমকবগগোঃ ৩-৪]
৩. হিংসুক বা শত্রুর চেয়েও বিপদগামী চিত্ত মানুষের বেশী ক্ষতি করে । [চিত্তবগগোঃ ৪২]
(মানুষ নিজেই নিজের জন্য ব্যপক ক্ষতির কারণ হতে পারে)
৪. যার চিত্তে পাপ নাই, বাইরের পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না । [পাপবগগোঃ ১২৪]
(বৌদ্ধ দর্শনে অন্তর্মূখীতা বেশী, অর্থাৎ মানুষের বাইরের জগৎটার চাইতে ভিতরের জগৎটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। উপরের বাণীতে এটার প্রকাশ রয়েছে।)
৫. সকল মলের নিকৃষ্ট মল হল অবিদ্যা । হে ধ্যানী ! এই মল বর্জন করে নির্মল হও । [মলবগগোঃ ২৪৩]
(অজ্ঞানতা বা মূর্খতাই যে অনেক সমস্যা/দুঃখের কারণ সেই বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে)
৬. অবিদ্যার কারণে যারা অসারকে সার আর সারকে অসার মনে করে তারা কখনো সত্যের সন্ধান পায় না । [যমকবগগোঃ ১১]
(অজ্ঞানতা কখনো সত্যের সন্ধান দিতে পারেনা)
৭. সত্য সচেতনতা অসৃতের পথ আর মূর্খতা মৃতপুরীর পথ । সত্য সচেতন ব্যাক্তিরা অমর হন আর মূর্খরা তো মৃত সদৃশ । [ অপপামদবগগোঃ ২১]
(মুর্খতা চরম বিপদ ডেকে আনে)
৮. ভালো কাজ সব সময় কর । বারবার কর । মনকে সব সময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো । সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ । [পাপবগগোঃ ১১৮]
৯. মিথ্যাবাদী, ধর্মলংঘনকারী ও পরলোকে অবিশ্বাসী ব্যাক্তি যে কোন পাপ কাজ করতে পারে । [লোকবগগোঃ ১৭৬]
(ধর্ম আর নৈতিকতা শব্দ দুটি মূলতঃ প্রতিশব্দ। উপরের বাণীতে পরলোকে অবিশ্বাসী অর্থাৎ নাস্তিক ব্যাক্তিগণ যে ভয়াবহ, ইহলৌকিক প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে বা নিমিত্তে যেকারো যে কোন প্রকার ক্ষতিসাধন যে তারা করতে পারে, সেইটিই বলা হয়েছে।)
১০. সৎ কর্মে সদা তৎপর থাকো । পাপ থেকে মনকে নিবৃত্ত কর । ভালো কাজে দীর্ঘসূত্রিতা বা আলস্যের প্রশ্রয় দিলে মন পাপে লিপ্ত হবে । [পাপবগগোঃ ১১৬]
(ভালো কাজ যত দ্রুত সম্ভব করা উচিৎ, আলস্য করলে সেই কাজটি করা নাও হতে পারে)
১১. আলস্যকে প্রশ্রয় দিওনা । ধর্মকে অনুসরণ কর । ইহলোক ও পরলোক – দুই লোকেই সূখে থাকবে । [লোকবগগোঃ ১৬৮]
(আলস্য-কে অধর্ম ও পরিশ্রম-কে ধর্ম বলা হয়েছে। পরিশ্রমীরা ইহলৌকীক জীবন ও পারলৌকিক জীবন দুই জীবনেই সূখী হবেন)
১২. আলস্য ও অতিভোজনের দরুন স্হুলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে । [ নাগবগগোঃ ৩২৫]
(আলস্য ও ভোজনবিলাসীতার সমালোচনা করা হয়েছে)
১৩. মূর্খরা আলস্যে নিপতিত হয় । আর প্রাজ্ঞরা সচেতন প্রয়াসে সৎ কর্মে [ইবাদতে] সদা তৎপর থাকেন । [অপপমাদবগগোঃ ২৬]
(আলস্যের সাথে মূর্খতার সম্পর্ক রয়েছে। বস্তুত মূর্খরাই অলস হয়। কর্মঠরা হন প্রাজ্ঞ)
১৪. গন্ধহীন পুষ্পের ন্যায় কর্মবর্জিত সুন্দর বাক্যমালাও নিষ্ফল । [পুপকবগগোঃ ৫১]
(ভালো কাজ না করে কেবলই ভালো ভালো কথা বলা মূল্যহীন)
১৫. অর্থহীন শব্দমালার সহস্র বাক্যের চেয়ে মন প্রশান্তকারী একটি অর্থবহ বাক্য উত্তম । [ সহসসবগগোঃ ১০০]
(অপ্রয়োজনীয় কথা বলা মূল্যহীন। যে কথা মানুষের মনকে শান্তি দেয় তেমন কথাই বলা উচিৎ)
১৬. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর । তারপর অন্যকে অনুশাসন কর । নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে । নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন । [অত্তবগগোঃ ১৫৯]
(অন্যকে উপদেশ বা শাসন করার আগে নিজেকে শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা একটি কঠিন কাজ)
১৭. রাগের ন্যায় আগুন নাই , হিংসার ন্যায় গ্রাসকারক নাই, মোহের ন্যায় জাল নাই, আসক্তির ন্যায় খরস্রোতা নাই । [ মলবগগোঃ ২৫১]
(ক্রোধ, হিংসা, মোহ ও আসক্তি-কে ঋণাত্মক বলা হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের মন থেকে এগুলো দূর করতে হবে)
১৮. কাম বা আসক্তি থেকে শোক ও ভয় জন্মে । কাম বা আসক্তি না থাকলে শোক ও ভয় থাকে না । [পিয়বগগোঃ ২১৫-২১৬]
(কাম ও আসক্তি থেকে দুঃখ ও ভয়ের উদ্ভব হয়। কাম বা আসক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলে শোক ও ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়)
১৯. যারা সদা সচেতন, দিবারাত্র জ্ঞান অনুশীলন করেন , যারা নির্বাণ লাভের প্রয়াসী তাদের সকল আসক্তি বিনষ্ট হয় । [কোধবগগোঃ ২২৬]
(জ্ঞান অনুশীলন-এর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্বান লাভই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। আসক্তি থেকে হয় দুঃখ। জ্ঞান অনুশীলন করলে আসক্তি দূর হয়। জ্ঞান অনুশীলন-এর সাথে নির্বান লাভের সম্পর্ক রয়েছে)
২০. মার্গ বা পথের মধ্যে আর্য অস্টাঙ্গ শ্রেষ্ঠ, সত্যের মধ্যে চতুরার্য সত্য শ্রেষ্ঠ, গুনের মধ্যে নিরাসক্তই শ্রেষ্ঠ, আর মানুষের মধ্যে প্রাজ্ঞই শ্রেষ্ঠ । [মগগবগগোঃ ২৭৩]
(বুদ্ধের এই বাণিটি অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা যাবেনা। এর বিশাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রয়োজন)
২১. যিনি অস্হির চিত্ত, যিনি সত্যধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না । [ চিত্তবগগোঃ ৩৮]
(উপরের বাণীতে বলা হয়েছে প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এই বাণীতে প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি কে তা সামান্য বলা হয়েছে। অস্হির চিত্ত, সত্যধর্ম সম্পর্কে অবগত নন ও মানসিক প্রসন্নতাহীন ব্যাক্তি প্রাজ্ঞ হতে পারে না)
২২. উচ্ছৃংখল ও মূর্খ ব্যাক্তির শত বছরের জীবনের চেয়ে প্রাজ্ঞ ও ধ্যানীর একদিনের জীবন উত্তম । [সহসসবগগোঃ ১১১]
(উচ্ছৃংখল ও মূর্খ ব্যাক্তির দীর্ঘ জীবন যে অর্থহীন তাই বলা হচ্ছে। ধ্যানের সাথে প্রজ্ঞার সম্পর্ক উল্লেখ করা হচ্ছে। ধ্যান ছাড়া প্রজ্ঞা অর্জন করা সম্ভব না)
২৩. প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হন না [পন্ডিতবগগোঃ ৮১]
(মুর্খরা মুর্খতা বশত প্রাজ্ঞ ব্যাক্তির নিন্দা করতে পারে। আবার কেউ প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিকে মিছে খুশী করার জন্য প্রশংসাও করতে পারে। এর দ্বারা প্রভাবিত না হওয়াই ভালো, এবং প্রাজ্ঞ ব্যাক্তি এর দ্বারা প্রভাবিত হননা)
২৪. ওঠার সময় যে ওঠেনা, যৌবনের শক্তি থাকতেও আলস্যপরায়ণ, সংকল্প ও চিন্তায় আবসাদগ্রস্ত- এমন অলস ও দুর্বলচিত্ত প্রজ্ঞার সন্ধান পায় না ।
(যৌবন একটি উল্লেখযোগ্য সময়। এই সময় মানুষের দৈহিক শক্তি সামর্থ্য থাকে অনেক, সুতরাং এই সময়ে কাজ করার সুযোগ থাকে অনেক বেশি। কিন্তু যে তার যৌবনের এই শক্তিকে কাজে লাগায় না, অলস্য ও দুর্বলতায় কাটায় সে প্রাজ্ঞ হতে পারেনা)
২৫. শত্রুতা দ্বারা কখনো শত্রুতা বিনাশ করা যায় না । মিত্রতা দ্বারাই শত্রুতার নিরসন হয় । [ যমকবগগোঃ ৫]
(শত্রুতা কেবল শত্রুতাই বৃদ্ধি করে। শত্রুতার অবসান করাই উত্তম, আর সেটা সম্ভব কেবল মিত্রতার দ্বারাই। উল্লেখ্য: আমাদের দেশের বর্তমানে অনেকেই এই বিষয়টি বুঝতে পারেনা, তারা মনে করে শত্রু চিরকালের জন্যই শত্রু, তার সাথে মিত্রতা স্থাপন করার চিন্তা করাটাই ঠিক না)
২৬. যে ব্যাক্তি অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ পেতে চায়, সে ঘৃণার আবর্ত থেকে মুক্ত হতে পারে না [পকিন্নকবগগোঃ ২৯১]
(অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখ পেতে চায় এমন মানুষ জগতে অনেক। তারা হয়তো তাৎক্ষণিক ফলাফলটির দিকে তাকায়। কিন্তু সুদুরপ্রসারী ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, যাকে বা যাদেরকে সে দুঃখ দিলো তাদের কাছ থেকে সে কেবল ঘৃণাই অর্জন করে এর অন্তিম ফলাফল খারাপই হয়ে থাকে)
২৭. সবাই জীবন ভালোবাসে । সবাইকে নিজের মতো ভাবো । কাউকে কখনো আঘাত বা কষ্ট দেবে না । [দন্ডবগগোঃ ১৩০]
(আমি যেমন আমার জীবন ও আমাকে ভালোবাসি, তেমনি অন্য ব্যাক্তিও নিজেকে ভালোবাসে, আমার মত তারও সুখ-দুঃখ বোধ আছে। কোন ক্রমেই অন্যকে আঘাত দেয়া যাবেনা। আঘাতে আমার যেমন কষ্ট হয়, অন্যেরও তেমনি কষ্ট হয়)
২৮. কাউকে কটু কথা বলবে না । কারণ সে-ও কটু প্রতুত্তর দিতে পারে । উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তোমার জন্যও কষ্টদায়ক হবে । দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে । [দন্ডবগগোঃ ১৩৩]
(কাউকে আঘাত করলে প্রতিঘাত পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কাউকে আঘাত দেয়ার আগে বিষয়টা ভেবে দেখা উচিৎ)
২৯. রণক্ষেত্রের সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্নজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ । [সহসসবগগোঃ ১০৩]
(বৌদ্ধ ধর্মের অন্তর্মূখীতা প্রকাশ পাচ্ছে। বাইরের জগতে বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাথে জয়ী হওয়ার চাইতে নিজের রিপুকে জয় করা অনেক কঠিন)
৩০. কোন পাপকেই ক্ষুদ্র মনে কর না । ক্ষ্রুদ্র ক্ষ্রুদ্র পাপ-ই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভান্ড পূর্ণ করে ফেলে । [পাপবগগোঃ ১২১]
(পাপ পাপই তার ছোট-বড় দেখে লাভ নাই। কারণ ছোট পাপ ভেবে ক্রমাগত পাপ করে যেতে থাকলে সেগুলো জমা হয়ে হয়ে একসময় পরিমানে অনেক হবে)
৩১. পাপী ইহলোক ও পরলোক – উভয়লোকে মনস্তাপে দগ্ধ হয় । অপরদিকে পূণ্যবান উভয়লোকেই পরমমানন্দ লাভ করেন । [যমকবগগোঃ ১৭-১৮]
৩২. পাপের প্রতিফল না পাওয়া পর্যন্ত মূর্খরা পাপকেই অমৃত বলে মনে করে । মনস্তাপ শুরু হয় পাপের ফল পাওয়ার পর । [ বালবগগোঃ ৬৯]
৩৩. ক্রোধকে ক্ষমা দ্বারা, অন্যায়কে ন্যায় দ্বারা , কৃপণকে দান দ্বারা, মিথ্যাকে সত্য দ্বারা জয় কর । [কোধবগগোঃ ২২৩]
(ক্ষমা মহৎ গুন, ক্রোধ নতুন ক্রোধেরই কেবল জন্ম দেয় আর ক্ষমা ক্রোধের অবসান ঘটায়। একইভাবে ন্যায় অন্যায়কে, দান কার্পণ্যকে ও সত্য মিথ্যাকে জয় করে)
৩৪. ভালো বা সমমনা সঙ্গী না পেলে একাকী ভ্রমণ উত্তম । মূর্খ সংসর্গ সবসময় বর্জনীয় [বালবগগোঃ ৬১]
(অসমমনা ব্যাক্তি সাধারণত সঙ্গী হয়না, মন ও মতের মিল না হলে বন্ধুত্ব হয় না। তদুপরী অসমমনা ব্যাক্তির সঙ্গ পেলে ভ্রমন সুখকর হয়না)
৩৫. মূর্খরা ‘আমার পুত্র, আমার অর্থ, আমার ধন’ এই চিন্তা করে যন্ত্রণা ভোগ করে । যখন সে নিজেই নিজের না তখন পৃত্র বা ধন তার হয় কিভাবে ? [বালবগগোঃ ৬২]
(সুগভীর একটি বাণী। এই বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও অল্পকথায় করা সম্ভব নয়। আমি নিজেই নিজের না এটা আধুনিক বিজ্ঞান পড়লে কিছুটা বোঝা যায়। আমার দেহের বেশীরভাগই আমার নিয়ন্ত্রণে নাই। যেমন, রক্ত-চলাচল, হৃদস্পন্দন, হজম, কোষ থেকে কোষান্তরে তথ্য থেকে শুরু করে নানা কিছুর বহন ও রেচন। এমনকি একটি দেহকোষের যাবতীয় কার্যকলাপও আমার নিয়ন্ত্রণে নাই)
৩৬. বর্ষাকালে এখানে , শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো- মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে । শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে । [মগগবগগোঃ ২৮৬]
(আমরা অনিয়শ্চয়তার জগতে বসবাস করি। ভবিষ্যৎ পুরোটাই অনিশ্চিত)
৩৭. লোভ হচ্ছে কঠিনতম রোগ, সংস্কার চরম দুঃখ, সুস্বাস্হ্য পরম লাভ , সন্তুষ্টি পরম ধন, বিশ্বাসই পরম বন্ধু, নির্বাণ পরম সুখ । [সুখবগগোঃ ২০৩-২০৪]
(কিছুদিন আগে একজন পেশাজীবি ব্যাক্তির সাথে আলাপ করছিলাম। তিনি তার পেশাগত প্রতিষ্ঠানে নানাবিধ পশ্চাদপদতার কথা বললেন। আমি বললাম, “আপনারা সংষ্কার করছেন না কেন?” তিনি উত্তরে বললেন, “রিফর্ম ইজ ভেরীমাচ পেইনফুল।” সন্তষ্টিই সুখের মূল।)
৩৮. ধর্মশিক্ষা দান সর্বোত্তম দান, ধর্মের আলো সর্বোত্তম আলো, ধর্ম পালন সর্বোত্তম আনন্দ, আসক্তির বিনাশ সর্বদুঃখে বিজয় । [তনহাবগগোঃ ৩৫৪]
৩৯. খারাপ ও নিজের জন্যে ক্ষতিকর কাজ করা সহজ । নিজের জন্য কল্যাণকর কাজ করা সব সময়ই কঠিন । [অত্তবগগোঃ ১৬৩]
(খারাপ কাজ করা সহজ, ভালো কাজ করা কঠিন)
৪০. জন্মসুত্রে কেউ ব্রাক্ষণ হয় না । যিনি অহিংস, আসক্তিরহিত, পাপমুক্ত, ভীতিশূন্য, কপটতা বর্জিত , কাম-ক্রোধমুক্ত, বিশুদ্ধচিত্ত, ক্ষমাশীল, প্রজ্ঞাবাণ, সত্য ও ধর্মানুরাগী, সদালাপী ও সদাচারী , তিনিই ব্রাক্ষণ অভিধাযোগ্য । [ব্রাক্ষণবগগোঃ ৩৯৬-৪০৮]
(বৈদিক ধর্মে মানুষের সামাজিক অবস্থান, মান-মর্যাদা নির্ধারিত হয় জন্মসূত্রে। কিন্তু বৌদ্ধ দর্শন হেটেরোডক্স (অবৈদিক), এই দর্শনে মানুষের মান-মর্যাদা নির্ধারিত হয় কর্মসূত্রে)
৪১. প্রজ্ঞা ছাড়া ধ্যান নাই । ধ্যান ছাড়া প্রজ্ঞা সৃষ্টি হয় না । যার ধ্যান ও প্রজ্ঞার সমন্বয় হয়েছে তিনিই নির্বাণ স্তরে পৌছেছেন । [ভিকখুবগগোঃ ৩৭২]
(প্রজ্ঞা ও ধ্যানের গভীর সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। এই পৃথিবীর খ্যাতিমান সকল প্রজ্ঞাবান ব্যাক্তিই জীবনের কোন একটা সময় ধ্যান করেছেন। নির্বান লাভের শর্ত হিসাবে ধ্যান ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে।)
৪২. যিনি সত্য, ধর্ম, ন্যায়, অহিংসা, সংযমের প্রতীক; যিনি পাপমুক্ত, নির্মল ও প্রাজ্ঞ তিনিই স্হবির । [ধম্মটঠবগগোঃ ২৬১]
(স্হবিরতা বিষয়টি নিয়েও অল্প কথায় কিছু বলা সম্ভব না। দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন)
৪৩. যিনি পূর্ব নিবাস স্মৃতিজ্ঞ, যিনি স্বর্গ-নরক প্রত্যক্ষ করেছেন, যার অভিজ্ঞতা ও ধর্মজ্ঞান পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এবং সর্বকর্ম সম্পাদন করেছেন, তিনিই আলোকপ্রাপ্ত । তি্নিই নির্বাণ লাভ করেন, তার তৃপ্ত জীবন লীন হয় অনন্ত প্রশান্তিলোকে । [ব্রাক্ষণবগগোঃ ৪২৩]
(উপরের বাণীটিও অত্যন্ত গভীর। অল্প কথায় এর আলোচনা সম্ভব নয়।)
৪৪। যিনি অন্ধবিশ্বাসহীন (অশ্রদ্ধ), যিনি অকৃতজ্ঞ (নির্বানজ্ঞ), যাহার বন্ধনছিন্ন (পুনর্জন্মের) অকাশ নষ্ট এবং কামনা নিবৃত্ত হইয়াছে – তিনিই পুরুষোত্তম। ৯৭
(অককোধেন জিনে কোধং অসাধুং সাধুনা জিনে, জিনে কদরিয়ং দানেন সচচেন অলিকবাদিনং। ২২৩)
৪৫। মৈত্রীর দ্বারা ক্রোধ জয় করিবে; সাধুতা দ্বারা অসাধুকে জয় করিবে; ত্যাগের দ্বারা কৃপণকে জয় করিবে ও সত্যের দ্বারা মিথ্যাবাদীকে জয় করিবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত কিছু অনুবাদ আছে ধম্মপদের। নীচে কয়েকটি দিলামঃ
যুগ্মগাঁথাঃ
মন আগে ধর্ম পিছে , ধর্মের জনম হল মনে ১ _
দুষ্ট মনে যে মানুষ কাজ করে কিম্বা কথা ভণে ২
দুঃখ তার পিছে ফিরে চক্র যথা গোরুর পিছনে ।। ১
মন আগে ধর্ম পিছে , ধর্মের জনম হল মনে —
যে জন প্রসন্ন মনে কাজ করে কিম্বা কথা ভণে
সুখ তার পাছে ফিরে ছায়া যথা কায়ার পিছনে ।। ২
আমারে রুষিল , আমারে মারিল ,
আমারে জিনিল , আমার কাড়িল —
এ কথা যে জনে বেঁধে রাখে মনে
বৈর তাহার কেবলই বাড়িল ।। ৩
আমারে রুষিল , আমারে মারিল ,
আমারে জিনিল , আমার কাড়িল —
এ কথা যে জনে নাহি বাঁধে মনে
বৈর তাহারে ছাড়িল ছাড়িল ।। ৪
বৈর দিয়ে বৈর কভু শান্ত নাহি হয় ,
অবৈরে সে শান্তি লভে এই ধর্মে কয় ।। ৫
হেথা হতে যেতে হবে আছে কার মনে ,
বিবাদ মিটিল তার বুঝিল যে জনে ।। ৬
শরীরের শোভা খোঁজে ইন্দ্রিয় যাহার অসংযত ,
ভোজনে রাখে না মাত্রা বীর্যহীন অলস সতত ,
ঝড়ে যথা বৃক্ষ হানে ‘ মার’ তারে মারে সেইমত ।। ৭
অঙ্গশোভা নাহি খোঁজে ইন্দ্রিয় যাহার সুসংযত ,
ভোজনের মাত্রা বোঝে শ্রদ্ধাবান্ কর্মঠ নিয়ত ,
মার তারে নাহি মারে ঝড়ে যেন পর্বতের মতো ।। ৮
দমহীন , সত্যহীন , অন্তরে কামনা ,
গেরুয়া কাপড় তার শুধু বিড়ম্বনা ।। ৯
নিষ্কাম , সুশীল , দম সত্য যার মাঝে ৩
গেরুয়া কাপড় পরা তাহারেই সাজে ।। ১০
অসারে যে সার মানে সারে যে অসার
মিথ্যা কল্পনায় সার নাহি জোটে তার ।। ১১
সারকে যে সার বোঝে অসারে অসার
সত্য সঙ্কল্পের কাছে সার মিলে তার ।। ১২
ভাল ছাওয়া না হইলে বৃষ্টি পড়ে ঘরে ,
সতর্ক না হলে মন বাসনায় ধরে ।। ১৩
ভাল ছাওয়া ঘরে নাহি পড়ে বৃষ্টিকণা ,
সতর্ক যে মন তারে কী করে বাসনা ।। ১৪
হেথা মরে শোকে , সেথা মরে শোকে ,
পাপকারী দুখ পায় দুই লোকে —
ব্যথা বাজে তার হেরি আপনার
মলিন কর্ম আপনার চোখে ।। ১৫
হেথা সুখ তার , সেথা সুখ তার ,
দুই লোকে সুখ পুণ্যকর্তার —
সে যে সুখ পায় বহু সুখ পায়
শুদ্ধকর্ম হেরি আপনার ।। ১৬
হেথা পায় তাপ , সেথা পায় তাপ ,
দুই লোকে দহে যে করেছে পাপ ।
‘ এই মোর পাপ’ এই ব’লে তাপ ,
দুর্গতি পেয়ে সেও পরিতাপ ।। ১৭
হেথা আনন্দ , সেথা আনন্দ ,
দুই লোকে সুখী পুণ্যবন্ত ।
‘ পুণ্য করেছি’ ব’লে আনন্দ ,
সুগতি লভিয়া পরমানন্দ ।। ১৮
যে কহে অনেক শাস্ত্রবচন
কাজে নাহি করে প্রমাদ লাগি —
অপরের গোরু গণিয়া গোয়াল
হয় কি সেজন শ্রেয়ের ভাগী ।। ১৯
অল্পই কহে শাস্ত্রবাক্য ,
ধর্মের পথে করে বিচরণ
রাগ দোষ মোহ করি পরিহার
জ্ঞানসমাপ্ত বিমুক্তমন —
বিষয়বিহীন ইহপরলোকে
কল্যাণভাগী হয় সেইজন ।। ২০
অপ্রমাদবর্গঃ
অপ্রমাদ অমৃতের , প্রমাদ মৃত্যুর পথ —
অপ্রমত্ত নাহি মরে , প্রমত্ত সে মৃতবৎ ।। ১
অপ্রমাদ কারে বলে পণ্ডিত তা মনে রাখি
অপ্রমাদে সুখে রন জ্ঞানীর গোচরে থাকি ।। ২
ধ্যাননিষ্ঠ ধীরগণ নিত্য দৃঢ়পরাক্রম
নির্বাণ করেন লাভ যোগক্ষেম মহোত্তম ।। ৩
স্মৃতিমান , শুচিকর্ম , সাবধান , জাগ্রত , সংযত ,
ধর্মজীবী , অপ্রমত্ত — যশ তাঁর বেড়ে যায় কত ।। ৪
জাগরণে অপ্রমাদে সংযমনিয়ম দিয়ে ঘিরে
মেধাবী রচেন দ্বীপ , বন্যা ঠেকে যায় তার তীরে ।। ৫
মূঢ় সে জড়ায় পায়ে প্রমাদের ফাঁদ ,
জ্ঞানী শ্রেষ্ঠধন বলি রাখে অপ্রমাদ ।। ৬
মোজো না প্রমাদে পড়ি , ভজনা কোরো না কামরতি —
বহুসুখ পান তিনি অপ্রমত্ত , ধ্যানে যাঁর মতি ।। ৭
জ্ঞানী অপ্রমাদবলে প্রমাদেরে ফেলি দিয়া দূরে
প্রজ্ঞার প্রাসাদ হতে অশোক হেরেন শোকাতুরে ,
গিরি হতে ধীর যথা দেখেন ভূতলে যারা ঘুরে ।। ৫ ৮
অমত্ত জাগ্রত ধায় , সুপ্ত মত্তজনে
পড়ে থাকে নীচে —
দ্রুত অশ্ব যেইমত দুর্বল অশ্বেরে
ফেলে যায় পিছে ।। ৯
অপ্রমাদে ইন্দ্রদেব হয়েছেন দেবতার সেরা —
অপ্রমাদে তুষে সবে , প্রমাদে দূষেন পণ্ডিতেরা ।। ১০
প্রমাদে যে ভয় পায় ভিক্ষু অপ্রমাদে রত
পুড়িয়ে সে চলে যায় স্থূল সূক্ষ্ম বন্ধ যত ।। ১১
অপ্রমাদে রত ভিক্ষু প্রমাদে যে ভয় পায়
ভ্রষ্ট নাহি হয় কভু — নির্বাণের কাছে যায় ।। ৬ ১২
চিত্তবর্গঃ
যে মন টলে , যে মন চলে , যাহারে ধরে রাখা দায় ,
মেধাবী তারে করেন সিধা ইযুকারের তীরের প্রায় ।। ১
এই – যে চিত্ত আকুল নিত্য মারের বাঁধন কাটিতে —
জলের পদ্ম কে যেন সদ্য উপাড়ি তুলেছে মাটিতে ।। ২
চপল লঘু অবশ চিত যেখানে খুশি পড়ে —
সুখে সে রহে , এমন মন দমন যেবা করে ।। ৩
নহে সে সোজা , যায় না বোঝা , যেখানে খুশি ধায় ,
মেধাবী তারে রক্ষা করে তবেই সুখ পায় ।। ৪
দূরে যায় , একা চরে , অশরীর থাকে সে গুহায় —
হেন মন বশে রাখে মৃত্যু হতে তবে রক্ষা পায় ।। ৭ ৫
অস্থির যাহার চিত্ত সত্যধর্ম হতে আছে দূরে ,
হৃদয় প্রসাদহীন — প্রজ্ঞা তার কভু নাহি পূরে ।। ৬
বাসনাবিমুক্ত চিত্ত অচঞ্চল পুণ্যপাপহীন —
কোনো ভয় নাহি তার জাগিয়া সে রহে যত দিন ।। ৭
কুম্ভের মতো জানিয়া শরীর নগরের মতো বাঁধিয়া চিত্ত
প্রজ্ঞা – অস্ত্রে মারিবে মরণে , ৮ নিজেরে যতনে বাঁচাবে নিত্য ।। ৮
অচিরে এ দেহখানা তুচ্ছ জড় কাঠি
মাটিতে পড়িয়া হায় হয়ে যায় মাটি ।। ৯
শত্রু সে শত্রুতা করে যত , যত দ্বেষ করে তারে দ্বেষী —
মিথ্যা লয়ে আছে যেই মন আপনার ক্ষতি করে বেশি ।। ১০
মাতাপিতা জ্ঞাতিবন্ধুজন যত তার করে উপকার —
সত্যে যার বাঁধা আছে মন বেশি শ্রেয় করে আপনার ।। ১১
পুষ্পবর্গঃ
কে এই পৃথিবী করি লবে জয় যমলোক আর দেবনিকেতন —
ধর্মের পদ নিপুণ হস্তে কে লবে চুনিয়া৯ ফুলের মতন ।। ১
শিষ্য জিনিয়া লইবে পৃথিবী যমলোক আর দেব নিকেতন ,
নিপুণ শিষ্য ধর্মের পদ চুনিয়া লইবে ফুলের মতন ।।১০ ২
ফেনের মতন জানিয়া শরীর , মরীচিকাসম বুঝিয়া তারে ,
ছিঁড়ি মদনের পুষ্পশায়ক মৃত্যুর চোখ এড়ায়ে যা রে ।। ৩
সুখের কুঞ্জে তুলিছে পুষ্প চিত্ত যাহার বাসনাময়
বন্যায় যেন সুপ্তপল্লী মৃত্যু তাহারে ভাসায়ে লয় ।। ৪
সুখের কুঞ্জে তুলিছে পুষ্প চিত্ত যাহার বাসনাময়
না পূরিতে তার তৃষা বাসনার মরণ তাহারে ছিনিয়া লয় ।। ৫
বরন – সুবাস১১ না করিয়া হানি
ভ্রমর যেমন ফুলরস টানি
যায় সে উড়ে ,
সেইমত যত জ্ঞানীমুনিজন
সংসারমাঝে করি বিচরণ
পালান দূরে ।। ৬
পর কী বলেছে কঠিন বচন পর কী করে বা না করে —
তাহে কাজ নাই , তুমি আপনার কৃত বা অকৃত দেখো রে ।। ৭
যেমন রঙিন সুন্দর ফুলে গন্ধ না যদি জাগে
তেমনি বিফল উত্তম বাণী কাজে যদি নাহি লাগে ।। ৮
যেমন রঙিন সুন্দর ফুলে গন্ধও যদি থাকে
তেমনি সফল উত্তম১২ বাণী কাজে খাটাইলে তাকে ।। ৯
ফুলরাশি লয়ে যথা নানামত মালা গাঁথে মালাকর
তেমনি বিবিধ কুশলকর্ম রচনা করিবে নর ।। ১০
তথ্যসূত্রঃ
১। https://bn.wikipedia.org
২। http://www.somewhereinblog.net/blog/jamesbondbd/28911162
The Dhammapada and some verses
———————————– Dr. Ramit Azad
অতীব সহজ সরল সত্য কথাগুলো, যার প্রতিধ্বনি সকল ধর্মেই কোনো না কোনো ভাবে আছে। তবে এতোটা সাদামাটা সহজ ভাবে খুব একটা নেই।
অবশ্য আসল কথা হলো এই যে এসব সহজ সরল সত্য কথাগুলোই যাপনের মাঝে পালনই বোধ করি আমাদের কাছে কঠিনতম।
জ্বী সাইদুল ভাই।
বৌদ্ধ দর্শনটি আমাদের মাটিরই দর্শন, তাই এর সাথে মিশে আছে আমাদেরই চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি।
অথচ এই দর্শনটির বিষয়েই এখন আমাদের দেশে ঔদাসীন্য বেশী। এই সব লেখালেখির মাধ্যমে চেষ্টা করছি কিছুটা আলোকপাত করতে।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যে সকল দেশে আজ স্ট্রং মুসলিম সোসাইটি (বা মুসলিম দেশ হিসাবে পরিচিত), তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন মূলত: বৌদ্ধ। যেমন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরষ্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ইত্যাদি। বৌদ্ধ ধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মের এই অদ্ভুত যোগাযোগটি নিয়েও অনেক গবেষণা করা যেতে পারে।
কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রিয় রমিত,
অনেক সময় নিয়ে পড়েছি।
যত পড়েছি ততই চমৎকৃত হয়েছি।
একটি নিবেদন
৪০টি বাণী তারপর আবার রবীন্দ্রনাথ, বুঝে পড়লে অনেক সময় লাগে। আমার মনে হয় অল্প অল্প করে দিলে ভালো হয়।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
জ্বী সাইদুল ভাই।
আসলে আমি অনেকদিন যাবৎই পড়ার জন্য ত্রিপিটক খুঁজছিলাম। গতকাল আমার এক বৌদ্ধ স্টুডেন্ট তিন পিটকের দুইটি পিটক এনে দিলেন। আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। সাথে সাথেই গোগ্রাসে গিলতে শুরু করলাম। পাশাপাশি নেটেও খোঁজ করতে শুরু করলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম ধম্মপদের কিছু বাণীর কাব্যরূপ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (এটা আমার জানা ছিলোনা)। তাই পাঠকদের দুটো বিষয়ই জানানোর উদ্দেশ্যেই দুটি বিষয়ের সমন্বয়ে পোস্ট দিলাম।
আজ এডিট করে আমার কিছু চিন্তাভাবনাও জুড়ে দিয়েছি। বাংলার এই প্রাচীন দর্শনটি আমাকে বড় বেশী টানে!
কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
সাইদুল স্যারের সাথে আমি সহমত। অল্প অল্প করে দিলে ভালো হয়। সেই সাথে এগুলো নিয়ে আপনার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা-বিশ্লেষন-সহমত-দ্বিমত নিয়ে লিখুন।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
প্রিয় মোস্তফা ভাই,
আমার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা-বিশ্লেষন-সহমত নিয়ে লিখেছি। দ্বিমত ও ভিন্নমত আপাততঃ নাই কোন। নিজের মাটির দর্শন তো, তাই হয়তো দ্বিমত খুঁজে পাইনা। আসলে আমাদের বাংলাদেশী সমাজ বৌদ্ধ দর্শন দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত তাই এটা আমাদের হৃদয়ে আপনা থেকেই আছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, স্ট্রং বুদ্ধিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড-এর অনেক জাতিই বর্তমানে স্ট্রং মুসলিম জাতি। যেমন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরষ্ক, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইত্যাদি। আসলে বৌদ্ধ দর্শনের সাথে ইসলামী দর্শনের অনেক মিল আছে। বিষয়টি নিয়ে আমার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। চেষ্টা করছি জানার ও বোঝার। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই বিষয়ে কয়েকটি আর্টিকেল লিখবো।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
"৩. হিংসুক বা শত্রুর চেয়েও বিপদগামী চিত্ত মানুষের বেশী ক্ষতি করে" - এখানে 'বিপথগামী' কথাটা কি 'বিপদগামী' হবে?"
"৮. ভালো কাজ সব সময় কর । বারবার কর । মনকে সব সময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো । সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ" - একথা তো ইসলামও বলে, আমোলেস সালেহীন করতে। সাথে সাথে অবশ্য মন্দ কাজের বিরোধিতাও করতে বলে।
এখানে 'বিপথগামী' কথাটা কি 'বিপদগামী' হবে? - 'বিপথগামী' আর 'বিপদগামী' কথাদুটো উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে। আসলে বলতে চেয়েছিলাম,
"এখানে 'বিপদগামী' কথাটা কি 'বিপথগামী' হবে?"
অনুবাদটা এভাবেও করা আছে -- 'বৈরী বৈরীর বা শত্রু শত্রুর যতখানি (অনিষ্ট) করে, মিথ্যায় আকৃষ্ট চিত্ত মানুষের তদপেক্ষা অধিক ক্ষতি করিয়া থাকে। (চিত্তবর্গ । ৪২)
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ খায়রুল ভাই।
ইসলামী দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শনের মধ্যে অনেক মিল আছে। তাছাড়া আমাদের বাঙালী মুসলমানদের হৃদয়ে দুটো দর্শনই আছে। এই বিষয়ে আমি একটি পোস্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত দিতে পারবো।
আপনি খব সুন্দরভাবে ধম্মপদের কয়েকটি বাণী বিশ্লেষণ করেছেন সে জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
বৌদ্ধ দর্শন আমাদের মাটির দর্শন, তাই তাকে আমাদের হৃদয়ের কথা বলে মনে হয়।
point 1-45 copy-pasted right away copy-pasted from link mentioned in the ref 2. This is not the way to write an article. Simple citation doesn't give you the immunity against plagiarism.
বলো কি নূপুর! অবশ্য কে না জানে, চোরা না শোনে ধম্মের কাহিনী!
শত্রুতা দ্বারা কখনো শত্রুতা বিনাশ করা যায় না । মিত্রতা দ্বারাই শত্রুতার নিরসন হয় ।