এটা আমার নিজের গল্প।[ অন্য কারো সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় !!]
আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। বিশ্বাস করেন একটাই। আমাদের অনেক দিনের রিলেশন। প্রায় ৭বছর হল আমরা প্রতিাদিন ঝগড়া করি। প্রতিদিনই প্রায়। এই ৭বছরে খুব বেশী হলে ৭দিন আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া হয় নাই। তাও সেটা এক টানা ৭ দিন হবে না। এক ঘন্টার মধ্যে কখনো কখনো ৩-৪বার ঝগড়া হয় ৩-৪টা ভিন্ন ইস্যু তে।
ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু চিন্তায় পরলাম।পকেটে মাত্র একশ টাকা।সম্বল বলতে এটুকুই।কাল নীরার জন্মদিন।তিন বছর ধরে একসাথে আছি।মেয়েটাকে কখনোই কিছু দেয়া হয়নি।পৃথীবিতে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা অল্পতেই খুশী।নীরাও তাই।ও এমন একটা মেয়ে যার কাছে কিছুই লুকানো যায়না।আর তাই তিন বছরের মধ্যে ওর সামনে কখনো মন খারাপ করতে পারিনি।এম্মিতেই ও অনেক বেশি কেয়ারিং।
নীরার সাথে আমার পরিচয় ফার্মগেটে।ইউ সি সি তে কোচিং করার সুবাদে।ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে প্রথমেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগে।জীবনের বড় একটা অংশ মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে মেয়েদের প্রতি তীব্র কৌতূহল ছিল।যদিও ছেলে হিসেবে আমি বেশ লাজুক প্রকৃতির।একবার কোচিং এর সামনে বসে ফুচকা খাওয়ার পর টাকা দিতে গেলে খেয়াল করলাম পকেটে মানিব্যাগ নেই।এক প্রকার অস্বস্তির মধ্যে পড়লাম।ছোটবেলা থেকেই আত্মসম্মান বোধটা আমার প্রচন্ড।ফুচকাওয়ালাকে বললাম ‘মামা,মানিব্যাগ ফেলে এসেছি।আমার কাছে টাকা নাই।এই ঘড়িটা রাখুন।দোকানী বিজয়ীর হাসি দিল।স্টিভ জবস আইপড আবিস্কার করে যেমন হাসি দিয়েছিলেন অনেকটা সেরকম।জীবনের সেই চরম অপমান জনক অবস্থা থেকে নীরাই আমাকে রক্ষা করেছিল।সেই থেকে একসাথে আছি।জীবনের বাকীটা পথ ও এভাবেই থাকার ইচ্ছা।
ভিতরটা লাল,নীল আর হলুদ এই তিন রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আসলে এই তিন আলোর মিশ্রণে তৈরি নতুন একটা আলোয় আলোকিত,আবছা ভাবে। ভিন্ন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এই ভিন্নতা মনে হয় চোখের ক্লান্তি ডেকে আনার ব্যাপারে বেশ পারদর্শী। সে কারণেই বুঝি কোনার টেবিলে বসা ছেলেটি রীতিমত হাই তুলেই চলেছে। অথচ পাঁচ মিনিট আগেই যখন এখানে এসে বসল বেশ তরতাজাই দেখাচ্ছিল। এরই মধ্যে ছেলেটার মধ্যে টাংগাইল- ময়মনসিংহের লোকাল বাসের একটা ভাব চলে এসেছে।
রেহনুমাদের হলের গেটে অসংখ্য পোস্টার সাঁটা।চিত্র প্রদর্শনী,নাট্যোৎসব,আবৃত্তি কোর্স,বিতর্ক প্রতিযোগীতা –এসব তো আছেই,সেই সাথে টিউশনি আর পার্ট টাইম চাকরীর পোস্টারও অনেক।আজকাল টিউশনির বিভিন্ন মিডিয়া আছে।তারা বিশাল তালিকা ঝুলিয়ে দেয়-‘অমুক অমুক জায়গার তমুক তমুক ক্লাসের ছাত্র/ছাত্রীর জন্য শিক্ষিকা প্রয়োজন!’ অবচেতন মনেই এতদিন সেসব পোস্টারের দিকে তাকিয়েছে রেহনুমা।খুব একটা গা করেনি।শুধু টিএসসিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর কোন পোস্টার থাকলে সেদিকে আগ্রহ নিয়ে তাকায়।সময়-সুযোগ মিলে গেলে দু’একটা সিনেমা দেখা হয়ে যায়।কিন্তু গত চার-পাঁচদিন ধরে গেটের পোস্টারগুলো খুব ভালভাবে খেয়াল করছে ও,বিশেষ করে টিউশনিগুলোর।একটা টিউশনির খুব দরকার।ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা ট্যুর আয়োজন করা হয়েছে বান্দরবানে।হাজার চারেক টাকা লাগবে।কিন্ত মার কাছে টাকার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস নেই তার।ছোট চাকুরে মায়ের ঘাড়ে বেশি বোঝা চাপাতে ইচ্ছে করেনা ।তাছাড়া সামনে আছে ঈদ।মা আর ছোট ভাইকে কোন কিছু উপহার দেয়ার শখটা উথলে উঠছে মনে।গতমাসে শুধু ডাল-ভাত-ভর্তা খেয়ে খাবারের খরচ থেকে বেশ কিছু টাকা বাঁচিয়েছিল সে।ভেবেছিল সেটা দিয়ে মা আর ভাইয়ের জন্য কিছু একটা কিনবে।কিন্তু মার্কেটে গিয়ে একটা সালোয়ার-কামিজ এত পছন্দ হল যে মা-ভাইয়ের কথা বেমালুম ভুলে হুট করে কিনে ফেলল সেটা।এখন মনে মনে নিজেই নিজেকে দুষছে-রেহনুমা,তুমি বড় স্বার্থপর মেয়ে!নিজেরটা খুব ভাল বোঝ!এত্ত বড় একটা মেয়ে তুমি,অথচ এখনো মায়ের টাকায় চল!কখনো মাকে দিয়েছ কিছু ?
রাত যৌবনবতী হবার অনেক আগেই শহরের আলোকবিন্দুগুলো তাদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করে। উপর থেকে তাকালে আকাশের তারার মতোই অসীম মনে হবে ছোট ছোট বিন্দুগুলোকে। এই তারকাসম আলোকে ঘিরে সতত সঞ্চারণমান মানুষগুলো আবর্তিত হয় আপন নিয়মে। ব্যস্ত শহরের মানুষগুলো বয়ে চলে নিজেদের পেছনে একেকটি গল্প। মানুষগুলোর সাথে গল্পগুলো ছুটে চলে,হেঁটে বেড়ায় ক্রমাগত। তাই শত গল্পের মাঝেকার ছোট সাবসেট এই গল্পের আরিফের নেশায় টলায়মান হয়ে বাসে উঠা,
সন্ধ্যার পর থেকেই টিনের চালে রিমঝিম আওয়াজ তুলে আশেপাশের কোন কিছুকে বিন্দুমাত্র দাম না দিয়ে আপন চপলতা আর ছন্দ বজায় রেখে আষাঢ়ের টানা বর্ষণ চলছে। একেবারে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি যাকে বলে। বারান্দায় বসানো হারিকেনটা বৃষ্টির ঝাঁপটা আর বাতাসের সাথে প্রাণপন যুদ্ধ করতে করতে এখনও পর্যন্ত বারান্দা সহ সামনের আরো কিছু অংশে কোমল আলো ছড়িয়ে আলোকিত করে রেখেছে। পাশে নীরা অপেক্ষমা্ন একটি দৃষ্টি নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ধ্যুৎ!এই প্রজেক্টটা খুবই ঝামেলার!অনেক রিসার্চ করতে হচ্ছে ।এত কাজ আর ভাল লাগেনা!’ স্যান্ডউইচে কামড় বসাতে বসাতে বলল লুবনা।
‘অত ঝামেলায় যাচ্ছেন কেন ? এখানে তো ফাঁকিজুকির অনেক স্কোপ আছে।আপনি জাস্ট…’ এতদূর বলে কথাটা আর শেষ করেনা রোহান।নোমানের উপস্থিতি টের পেয়ে চুপ মেরে যায়।ইঙ্গিতটা বুঝতে পারে লুবনা।সাথে সাথে কথা ঘোরায়।
‘হুম… রোহান ভাই।এই ক্যাফের স্যান্ডউইচটা একেবারে বাসি! এখন থেকে বাসার খাবার আনা ছাড়া গতি নেই।’
তাদের অফিস লাগোয়া এই ক্যাফেটার একটা ফাঁকা টেবিলে বসে পড়ে নোমা্ন।ইচ্ছা করেই সে তার কলিগদের সাথে অন্য টেবিলগুলোতে বসল না।এর কারণ দু’টো।অফিসের সবার সাথে তার মৌখিক সদ্ভাব থাকলেও অন্তরঙ্গতা নেই তেমন।আর কিছুটা গোপণ কোন আলোচনা থাকলে কেউই তা নোমানের সামনে করতে চায়না।অফিসে তাকে ‘স্পাই’ নামে ডাকে অনেকে।এসব নিয়ে সবসময় অস্বস্তিতে ভোগে নোমান।পারতপক্ষে অন্যের ব্যাপারে নাক গলায় না।কেউ সাহায্য চাইতে আসলে সাধ্যমত সাহায্য করে ঠিকই,কিন্তু আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে যায়না।কে জানে,যদি এর মাঝেও ওরা সন্দেহের গন্ধ খোঁজে!কেউ কেউ আবার দরকারের বেলায় ওর সাহায্য নেয়,আবার আড্ডায় বসলে অন্যদের সাথে সমান তালে বদনাম করে যায়।নোমান মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবে চারপাশে এত শত্রু নিয়ে সে টিকে আছে কীভাবে !
কাল থেকে আবার ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে।নতুন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হবে।আমি আবার ওদের ক্লাস টীচার।সকাল সাতটায় প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত থাকতে বলেছেন।বুঝতে পারছিনা কী হবে।আমি মানুষ হিসেবে বেশ এলোমেলো স্বভাবের।এতগুলো বাচ্চাকে একসাথে কন্ট্রোল করতে পারবো কিনা জানিনা।কিন্তু চাকুরীর প্রয়োজনে করতেই হবে।ঢাকা শহরে বর্তমানে চাকরীর খুব আকাল।এছাড়া ব্যাচেলরদের কেউ বাড়ি ভাড়াও দিতে চায়না।সেক্ষেত্রে এই চাকুরীটার একটা সুবিধা আছে।স্কুল কর্তৃপক্ষ দুই রুমের একটা বাসাও ঠিক করে দিয়েছে।মোটামুটি আরামের চাকরী।প্রতি মাসে বেতনের এক অংশ চলে যায় মৌরীর শখ পুরন করতে।যদিও মৌরী আমার কাছে নেই আজ দশ বছর।তারপরেও ওর শখটা যত্ন করে আমি টিকিয়ে রেখেছি।খুব অদ্ভুত স্বভাবের ছিল মেয়েটা।
ইদানীং কোন লেখকের লেখা পড়তে যতটানা আগ্রহ বোধ করি তার চাইতে কেন জানি বেশি আগ্রহ জাগে ঐ লেখকের নিজের সম্বন্ধে, সেই সাথে তার লেখা সমূহের পেছনের ইতিহাস সম্বন্ধে, যা বেশির ভাগ সময় আমাদের কাছে অজানাই থেকে যায়। কল্পজগতের নাটকের চাইতে লেখকের নিজের জীবন যে ভাবনা তা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি নাটকীয় মনে হয়। সেই সব অজানা কাহিনী যতই একের পর এক পাপঁড়ি মেলে ধরে ততই বিস্মিত হই।
বেশ অনেক দিন ধরেই সিসিবি’র নীরব পাঠক।জায়গাটা এখন এতই আপন হয়ে গেছে যে মন ভাল লাগলেও এখানে আসি,খারাপ লাগলেও এখানে আসি।দেশ,বিদেশে কোন আলোচিত ঘটনা ঘটলে অপেক্ষা করি সিসিবি’র কেউ কখন এই বিষয়ে কিছু লিখবে।শুধু লেখাই না,মন্তব্যগুলোও অনেক মনযোগ দিয়ে পড়ি।মাঝে মাঝেই লিখতে মন চায়,কিন্তু সাহস হয় না কখনো।আজকে অনেক সাহস করে কিছু একটা লিখেই ফেল্লাম।লেখাতে অনেক ভুল আছে জানি।ভাইয়া এবং আপুরা সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন বলে আশা করছি।
তখন কেবল নতুন নতুন পড়া শিখেছি। “অ তে অজগর আসছে তেড়ে”। “আ তে আমটি আমি খাব পেড়ে”। প্লাস্টিক বইয়ের পাতার রঙিন ছবিগুলো, শব্দগুলো, আর এলোমেলো অক্ষরগুলো নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছিল আমার মস্তিষ্কের অন্তর্জালগুলোতে। অনুভূত পৃথিবীটাকে, আশেপাশের কাছের-দুরের মানুষগুলোকে, অনুভূতিগুলোকে ধীরে ধীরে প্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জন করছি। এমন সময় জানলাম, বাসার চিরচেনা জগতটাকে পাশে রেখে, প্রিয়জনগুলোর সান্নিধ্য ছেড়ে কোন এক জায়গা, স্কুলে নাকি যেতে হবে। ছোট্ট আমি,
ইলেকট্রিসিটি একবার ড্রপ করতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২য় জেনারেটর চালু হয়েছে। টেকওভার করার আগে এত নিখুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেয়ার পরেও কিভাবে এমন অঘটন ঘটলো কারো মাথায় আসছে না। জ্বালানী হিসেবে এখনকার আধুনিক যানগুলোতে টেনটিনাম-৩ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে আমাদেরটায় টেনটিনাম-৫ ক্যাটাগরি ব্যবহার হচ্ছে। এত সহজেই ফুরিয়ে যাবার কথা না।