ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু চিন্তায় পরলাম।পকেটে মাত্র একশ টাকা।সম্বল বলতে এটুকুই।কাল নীরার জন্মদিন।তিন বছর ধরে একসাথে আছি।মেয়েটাকে কখনোই কিছু দেয়া হয়নি।পৃথীবিতে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা অল্পতেই খুশী।নীরাও তাই।ও এমন একটা মেয়ে যার কাছে কিছুই লুকানো যায়না।আর তাই তিন বছরের মধ্যে ওর সামনে কখনো মন খারাপ করতে পারিনি।এম্মিতেই ও অনেক বেশি কেয়ারিং।
নীরার সাথে আমার পরিচয় ফার্মগেটে।ইউ সি সি তে কোচিং করার সুবাদে।ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে প্রথমেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগে।জীবনের বড় একটা অংশ মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে মেয়েদের প্রতি তীব্র কৌতূহল ছিল।যদিও ছেলে হিসেবে আমি বেশ লাজুক প্রকৃতির।একবার কোচিং এর সামনে বসে ফুচকা খাওয়ার পর টাকা দিতে গেলে খেয়াল করলাম পকেটে মানিব্যাগ নেই।এক প্রকার অস্বস্তির মধ্যে পড়লাম।ছোটবেলা থেকেই আত্মসম্মান বোধটা আমার প্রচন্ড।ফুচকাওয়ালাকে বললাম ‘মামা,মানিব্যাগ ফেলে এসেছি।আমার কাছে টাকা নাই।এই ঘড়িটা রাখুন।দোকানী বিজয়ীর হাসি দিল।স্টিভ জবস আইপড আবিস্কার করে যেমন হাসি দিয়েছিলেন অনেকটা সেরকম।জীবনের সেই চরম অপমান জনক অবস্থা থেকে নীরাই আমাকে রক্ষা করেছিল।সেই থেকে একসাথে আছি।জীবনের বাকীটা পথ ও এভাবেই থাকার ইচ্ছা।
মনে মনে একটা হিসেব দাঁড় করালাম।কাল নীরার একুশতম জন্মদিন।শাহবাগ থেকে একুশটা সাদা গোলাপ কিনতে হবে।আর সাথে নীরার সবচেয়ে পছন্দের কৃষ্ণপক্ষ বইটা।সবমিলিয়ে দেড়শ টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।বিকেলে অবশ্য হাতে কিছু টাকা আসবে।প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় গত সপ্তাহে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল।তার সম্মানী হিসেবে কিছু পাওয়ার কথা।আসলে ঢাকা শহরে অর্থের কষ্টটা কাউকে বুঝতে দেয়া যায়না।প্রিয় মানুষ গুলোকে তো না ই।আর নীরা যদি জানতে পারে আমার এ অবস্থা তা হলে নির্ঘাত খুন করে ফেলবে।হাতে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলবে ‘ধুর গাধা।ফ্রেন্ডদের কাছে কিছু লুকোতে হয় ?গত তিনবছরে অনেকবার এমন হয়েছে।যদিও নীরা আমার শুধু বন্ধু ই না,বন্ধুর চেয়ে কিছুটা ওপরে।আর প্রেয়সীর চেয়ে কিছুটা নিচে।তবে আমার ইচ্ছে কাল ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো।
আগে থেকেই প্লান করা।সকালে ও টি এস সি তে আসবে।সেখান থেকে দু জন ধানমন্ডী যাবো।বিকেলে আশুলিয়া।নীরার সাথে ঘোরার একটা আলাদা মজা আছে।সারাক্ষন পাগলামী করবে।কখনো চুল ধরে,কখনো শার্ট ধরে টান মারবে।আর সবসময় হাসির কথাবার্তা।দামী কোন রেস্তোরায় খেতে গেলে বলবে ‘ধুর বোকা,তুই কি অনেক টাকা আয় করিস?তার চেয়ে আয় বাদাম খাই।শোন বাদাম হলো ভালোবাসার ফল।দেখিস না খোসার মধ্যে দু টো ফল।একটা তুই আর একটা আমি।আর আবরন হয়ে আছে ভালোবাসা কিংবা বন্ধুত্ব।বলেই জোড়ে হাসত।ঢাকা শহরের আকাশ বাতাস কাঁপানো সে হাসি দেখে মনে হত এই মেয়ের কোন দুঃখ নেই।থাকতে পারেনা।
বিকেলে কাওরান বাজারে প্রথম আলোর অফিসে গেলাম।যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অল্প কিছু টাকা বেশি পাওয়া গেলো।হলে ফেরার পথে একুশটা সাদা গোলাপ কিনলাম।ইচ্ছে ছিল লাল গোলাপ কিনবো।কিন্তু নীরা এখনো আমার বন্ধু।লাল গোলাপ দেয়ার সাহস হলোনা।ফুল কেনার পর গেলাম আজিজ মার্কেটে।অনেক খুঁজে কৃষ্ণপক্ষ বইটা কিনলাম।হাতে কিছু টাকা বেশি থাকায় একটা কবিতার বই ও কিনলাম।নীরার আবার সুনীল খুব পছন্দ।মাঝেমাঝে ক্লাসের ফাঁকে ও বলত “এই গাধা,তুই কি কিছুই লিখতে পারিসনা?দেখিস না সুনীল কি সুন্দর করে লিখেছে,এ হাত ছুঁয়েছে নীরার হাত।আমি কি এ হাতে কোন পাপ করতে পারি?ইস যদি কেউ আমার হাত ধরে এভাবে বলত. . . .দেখতাম নীরার অভিমানী চোখ দুটো ছলছল করে উঠতো।আমার খুব ইচ্ছে হত নীরার হাত ধরে বলি ‘আমি আর কখনো পাপ করবোনা নীরা,তোর হাত টা একটু ধরতে দিবি???
গত চৌদ্দই ফেব্রুয়ারীর কথা।খুব সকালে নীরার ফোন।ঘুম জড়ানো কন্ঠে মোবাইল রিসিভ করে বললাম ‘কি রে,তুই এত সকালে?ওপাশ থেকে নীরা শাষনের সুরে বললো ‘আমি কলাভবনের সামনে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আয়।আমি স্বভাবতই একটু ঢিলেঢালা।নীলা জানতো আমার আসতে আধঘন্টা লাগবে।তবুও অসহায় মেয়েটি আমার পথের দিকে তাকিয়ে থাকতো।কিছুক্ষন পর এসে দেখি নীরা দাঁড়িয়ে আছে।নীল শাড়ী পরা নীরাকে দেখে মনে হল এক টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মুগ্ধ চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘তুই আসলেই অনেক সুন্দর
নীরা অভিমানের স্বরে বললো ‘তুই আসলেই গাধা,এতো দিনে খেয়াল করলি?শুধু আমার মনের ভেতর কোথাও বেজে উঠতো “ভালোবাসি তোমাকে. . .
সকাল থেকেই নীরার জন্যে অপেক্ষা।কখনো ও এত দেরী করেনা।মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা কাজ করছে।আজ আবার হরতাল।কখন কি হয় বলা যায়না।আজ অনুধাবন করলাম অপেক্ষার কষ্ট আসলেই অনেক।প্রতিবার ই নীরাকে যা আমার জন্যে সহ্ করতে হয়।এসব ভাবতে ভাবতে সামনে আগালাম।গোলাগুলির শব্দ।নীরার মোবাইলে ফোন দিলাম।অনেক আওয়াজের মধ্যে অপরিচিত একটা কন্ঠ বলল ‘একটা মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে,শাহবাগ মোড়ে আসেন।আমি অবাক বাকরুদ্ধ হয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটলাম।ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখি নীরা।মাটিতে লুটিয়ে আছে।ফিনকি দিয়ে পরা রক্তের অজস্র ধারায় সাদা শাড়ী খানা খয়েরী হয়ে গেছে।. . . .
তানভীরের ডাকে তন্দ্রা ভাঙলো।এই ওঠ বারোটা বাজে।নীরাকে Wish করবিনা?হঠাত্ করেই নিজেকে আলাদা এক জগতে আবিস্কার করলাম।কি দুঃস্বপ্নটাই না দেখেছি।এক মুহুর্ত দেরী না করে নীরাকে ফোন দিলাম।এক রিং হতেই নীরা ফোন ধরল।’কি ব্যাপার হাঁপাচ্ছিস ক্যানো?কি হয়েছে
আমি বললাম ‘নীরা আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমাকে ছেড়ে যাবিনাতো. . . .?
নীরা বললো কি পাগলের মত কথা বলছিস,কি হয়েছে বলবিতো?
আমি বললাম “শোন কাল তোর আসতে হবেনা।দেশের অবস্থা ভালো না।কাল হরতাল
নীরা অবাক হয়ে বলল ক্যানো?
মুখ থেকে মনের অজান্তেই বের হয়ে গেল ‘আমি তোকে হারাতে চাইনা. . .I love u neera,i love u so much. . . ……………….
শেষটায় একটু তাড়াহুড়া করলে বলে মনে হলো। বিল্ড আপ সুন্দর ছিল। মাঝখানে একবার মনে করছিলাম, নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাই লিখছো; উপরে গিয়ে পরে দেখলাম তুমি ১ বছর হয় নাই কলেজ থেকে বের হয়ে, তার মানে এইটা গল্প।
চালিয়ে যাও :thumbup:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
thanx vai..............:)
খুব ভাল লাগছে ভাইয়া... অতীত মনে করায়ে দিলা... ;;;
🙂 🙂 🙂
পিচ্চি, খুব সুন্দর হইসে :clap:
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
:clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:
:brick:
🙂 ভাল লাগল।
🙂 :frontroll:
:clap: :clap:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
🙂 😉
অনেক সুন্দর 🙂
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
🙂
গল্পের শুরুটা সন্দর, মাঝখানটাও ভাল, কিন্তু শেষটা ভাল লাগল না।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
kano vaia?????naika mere felle valo hoto???????????plz janaben..............
"নীরাকে দেখে মনে হল এক টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।" - এই কথাটুকু যে লিখতে পারে তাকে কোনো কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। :boss:
:just: :salute:
🙂
:frontroll: :frontroll:
:clap:
:brick: :guitar:
লেখা ভালো হইসে........চালায় যাও.......শেষটা হুট করে শেষ না করলে আরো ভালো হতো। :clap:
গল্পের গল্প বলাটা আরেকটু বাড়াও তাহলে আরো গল্প লেখা হবে। সংলাপগুলো খুব তাড়াহুড়ো করেছে। এমনিতে ভাল!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
thankz vai//
ঐ।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
😀
নীরা তো দেখি তোমার মাধবীলতা। আচ্ছা তোমরাও সুনীল পড়ে মোহিত হও?
একটু তাড়াহুড়ো আছে কিন্তু চরিত্রগুলো স্পষ্ট। সিসিবিতে নিয়মিত থাকবে আশা করি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
🙂 🙂 hm..apa pori....onnek valo lage.....ami pc theke type korte parcina...tai mob theke blog lekhi......jar letter limit 5000.tai eto tarahura. 🙂
অনেক সুন্দর....:) ভাল লাগল।..
“নীরাকে দেখে মনে হল এক টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।”.....
Goddamnit!!! মাথা ঘুরায় গেছে রে! হেব্বি লাগলো!! আচ্ছা এই নীরা কি ইকোনোমিক্স এ পড়ে?? 😛
আমারে কী এরম কইরা কেউ বলবো না???? :(( :(( :((
যাইহোক খুব ভাল্লাগসে রে!!!
:boss: :boss: :boss: :boss:
নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!