তোমার প্রতিশ্রুতি
বৈজ্ঞানিক সত্য যেন
আবহাওয়ার পূর্বাভাষ
~ দুর্মূল্যের ভুল ~
নীতা, পরমিতা,
তোমার পেলব পিঠের
কোমল চাতুর্য ভেঙে
কৌশলী তাঁত
তুলেছে নির্মম দেয়াল।
খেয়ালী চুল
যেনো সে দৈর্ঘ্য শুন্যতায়
হয়েছে সংক্ষিপ্তে আকুল।
পূর্ণ চোখ
আর চন্দ্রাপ্লুত ওষ্ঠ।
ফ্রেমে ধরেছে
মোহিনী হাসির ধাঁধায়
বাঁধা পড়া ছবিখানা স্পষ্ট।
কানের শেষে
ঝুলে আছে দুল, চঞ্চল ফুল।
আহা ! হৃদয় আকুল !
অভিসার
১
বাধন ছুড়ে বাইরে এস
জড়িয়ে ধর বুক
মাতাল ঝড়ে ঝরুক পড়ে
স্বপ্ন ধোয়া সুখ।
ছোয়ায় ছোয়ায় কাপবে ধরা
মদির ঢলে নেশা
সতেজ ফুলের মধু বনে
বহ্নি জলে মেশা।
২
লজ্জা ভুলে বাড়িয়ে দাও
কোমল দুটি ঠোঁট
অণল দোহে ভস্ম হউক
হৃদয় ক্ষত চোট।
চপল চপল চোখের ভাষা
জারি সারি গান
কৃষ্ণ রাধার কুনজ বনে
বষর্া বাদল বান ।
খইমুদ্দির খাট
খইমুদ্দি কখনো কোনদিন খাটে শোয়নি।
এবাড়ী ওবাড়ী গেছে দিনমজুর হিসেবে,
গায়ে গতরে খেটেছে। কাঠমিস্ত্রীর সাথে
শ্রমিক হিসেবে ফুট ফরমাস খেটেছে,
একটা একটা করে অংশ জোড়া লাগিয়েছে।
এভাবেই সে তাদের ঘুমের ব্যবস্থা করেছে।
আনমনে খইমুদ্দি অবাক বিস্ময়ে ভেবেছে,
কি করে এমন খাটের উপর মানুষ ঘুমায়!
খইমুদ্দির জীবনের আধেক রাত কেটেছে
একটি গোয়াল ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে কোণে,
বাকী আধেক বাঁশতলার একটি ছাপড়ায়,
নিঃসঙ্গ এক ফুল
বনের মাঝে কত রঙের ফুল ফোটে,
নীল-বেগুনি, লাল-সাদা আর হলদেটে।
রঙ্গিন ফুলের রঙ্গিন শোভার মাঝখানে,
কোনটা হাসে, কোনটা কাঁদে কে জানে?
প্রজাপতি, ফড়িং এর দল সব ছোটে,
রঙের নেশায়, মধুর আশায়, তা বটে।
পাখনা মেলে হাওয়ায় ভেসে যায় উড়ে,
ফুলের মধু খেয়ে বেড়ায় ঘুরে ঘুরে।
পুষ্পরেনু জড়িয়ে তাদের হাল্কা গায়ে,
বয়ে নিয়ে পাখায় পাখায়,
বাসর
বলবো না কথা আর কারো সাথে এখন গভীর রাত
চামচিকি বাদুর উড়ছে আঁধারে আকাশে বুড়ো চাঁদ ,
চুপচাপ বুকের ভিতরে মুখ সুখে অকাতরে বিভোর
জোছনার লুটোপুটি প্লাবিত জোয়ারে পরান দুয়োর।
শুভ্র কামিনি জেগে সারারাত সোহাগে গন্ধ মাতাল
বাহূডোরে বাঁধা আকসিলতা পোড়া মন মগ্ন উথাল,
জোনাকির আলো নিভে জ্বলে মিটিমিটি তারার হাসি
হাস্নাহেনার সুবাস মদির দখিনা বাজায় মরমি বাঁশি।
সহজ কথা
সুনয়না, তোমাকে আমি শোনাবোনা ভালবাসার গান কোন,
সব গান যুগে যুগে উৎসর্গ করে দিয়েছে, প্রেমান্ধ যুবকের দল।
তোমার হাতে এনে দিতে পারবনা সুগন্ধি কোন উজ্জ্বল রঙের ফুল,
ফুল শুকোলে বড় কদর্য দেখায়!
তোমার ললাটে আঁকবোনা প্রগাঢ় চুম্বন কোনও রূপকথার রাজপুত্রের মত,
তন্দ্রালোকের রূপকথা, প্রথম সূর্যালোকে ধুলোয় মিলায়।
তোমার হাত ধরে করবোনা আজীবনের সাথে থাকার প্রতিজ্ঞা
সেসব যে অনেক আগেই অযুতবার করা হয়ে গেছে।
বিস্তারিত»শেকড়
কখনো কখনো আমি ইউক্যালিপ্টাস গাছের মত
তরতরিয়ে বেড়ে উঠি।
সতীর্থদের ছেড়ে মাথা উঁচু করে আকাশ দেখি,
সবার আগেই আকাশ দেখি।
তবে যতই উপরে উঠিনা কেন, আমার পাতারা
সব ভূমিমুখী হয়ে ঝুলে থাকে,
আমার ডালপালাগুলো হঠাৎ হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে,
আমি শেকড়ে ফিরে আসি।
কখনো কখনো আমি লতাগুল্মের ন্যায় কান্ড খুঁজি,
উপরে ওঠার পথ খুঁজি।
মহীরুহকে আঁকড়ে ধরি,
সত্যাশ্রয়ী প্রার্থনা
পেছনে ফেলে এসেছি অনেকটা পথ,
জানা অজানায় করা অনেক শপথ,
কুসুমাস্তীর্ণ ছিলোনা অনেকটা তার,
শ্বাপদ সংকুল ছিল কখনো আবার।
বরাভয় ছাড়াই তবু হেঁটে এসেছি,
ভুলে ভ্রান্তিতে প্রভু তোমায় স্মরেছি।
যা কিছু সত্য, ঋজু, ন্যায় ও সুন্দর,
হে প্রভু, বেঁধে রেখো মোরে নিরন্তর
তারই সাথে। আর যা কিছু অসত্য,
বক্র, ভ্রষ্ট ও অসুন্দর, প্রভু রচে দিও
তা থেকে আমার ব্যবধান দুস্তর।
বিরহ
বিজন রাত চাদঁ ঝরা ছাদ তুমি আমি পাশাপাশি
কত কথা কব ভেবে মরে যাই,
বীনা তারে গান আকুলি পরান তুমি আমি কাছাকাছি
কত সুর বেধে স্বর সাধি হায় ।
স্থবির আকাশ মৌন বাতাস বাধা তোমার হাতে হাত
জড়াব মন অনুখন মরমে মরি,
শ্রান্ত ধরা সুধা ভরা নির্মল তুমি আমি নিশ্বাসে নিশ্বাস
কত খেলা খেলিতে কি পারি।
এহেন সময় তুমি কাছে নাই নীল জোছনা চুয়ে পড়ে
নদীর অশ্রুজল শ্রোতে ভাসে
অপলক চোখে শুধু ধুধু চর শুকনা বালুর ধুলি উড়ে
খা খা মরু ঢাকা সাদা কাশে।
দুই জীবন
দু:খ হয় দেখে তোর এই
পাথুরে ককর্ষ জীবন মোজাইক টাইলসে মোড়ান
চকচক ফকফক মেঝে ঝকঝক কাচের দেয়াল
চারদিক ফিটফাট ইট কাঠ চৌকাঠ
লোহা ও ইস্পাত গড়া ঘরের দরজা জানালা দেয়া
ব্যাংকের ভল্টের মাঝে বসবাস, হাসফাস নিশ্বাস
প্রানটা বুঝি যায়।
বলতো ঘর কাকে বলে ? সে কি দালান কোঠা
ফ্লাট বাড়ী, কোটি টাকা ব্যাংকের দেনা কেনাবেচা
১০০০ বা ২০০০ স্কয়ার ফুট বেডরুম,
ইচ্ছা
ইচ্ছে করে একটুখানি আকাশ ছুঁয়ে দেখি,
ইচ্ছে হলেই ঐ অধরে ঠোঁট ডুবিয়ে রাখি।
ইচ্ছে করে তোমার সাথে সুর মিলিয়ে গাই,
ইচ্ছে হলেই জীবনের আরো অর্থ খুঁজে পাই।
ইচ্ছে হলেই তোমার হাতে রাখি আমার হাত,
ইচ্ছে করে এমনি করেই কাটাই দিন-রাত।
ইচ্ছে হলেই কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলি,
“এই ভাবেই ইচ্ছেডানায় চল ভেসে চলি”।
ইচ্ছেডানায় ওড়ার যখন চলছে আয়োজন,
বিস্তারিত»ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছা সেই মেয়ে
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছা এক মেয়ে
প্লে গ্রুপে পড়তো যখন প্রিপারেটরী স্কুলে,
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনেটুনে রেডী করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে পানি,
তাইনা দেখে বাকী সবাই করতো কানাকানি।
ঐটুকু এক মেয়ে, তার মনেও কত মায়া,
সাথীর চোখের অশ্রু তাকে করতো অসহায়া।
পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে মুছাতো চোখের জল
তার নরম কথায় ছিঁচকাঁদুনে মনে পেতো বল।
জন্মে ও মৃত্যুতে বেদনা
শিশু জন্মের বেদনার কথা প্রসূতি জানে,
বুনোফুল ফোটানোর ব্যথা বনভূমি জানে।
পিয়ানোর মূর্ছনার ব্যথা বেটোফেন জানে।
কবিতার বেদনার কথা শুধু কবিই জানে।
হলুদ পাতা ঝরার ব্যথা মালিনী বোঝে,
পরিত্যক্ত পিয়ানো তার বাদক খোঁজে।
তটিনীর যে স্রোতধারা মরুতে হারায়,
উৎস গিরি বারে বারে তার পানে চায়
বেদনা ছাড়া সৃষ্টি হয় না,
বেদনা ছাড়া ধ্বংস হয় না।
দুঃখবিলাস
দুঃখ পেতে কেমন লাগে?
দুঃখ আমার নাই,
সুযোগ পেলে দুঃখীজনের
দুঃখ বেচে খাই।
গাড়ি বাড়ি আছে আমার
আছে হালের ফ্যাশন
দুঃখ বেচার দোকানদারী
আমার লেটেস্ট প্যাশন।
পান্তা ইলিশ বড়ই মজা
হালের সাথে যায়,
নুন আর ঝালে সারাবছর
কেমন করে খায়?
বিস্তারিত»