আমাদের ছোট বেলায় মে জুন মাসের দিকে ১ মাসের একটা ছুটি পাওয়া যেত। সেই ছুটি আমাদের কাছে আম কাঠালের ছুটি নামে পরিচিত ছিল। নানা বাড়ী গিয়ে আম কাঠাল খাওয়া ছাড়া আরো যে কাজটি আমরা তখন করতাম সেটা হল নিজের এলাকায় গাছ গাছালির নিয়মিত খোজ খবর রাখা। কোন বাড়ীতে কয়টা আম গাছ আছে, কয়টাতে এবার আম এসেছে, কোন গাছের আম কেমন এসব বিষয়ে আমরা তখন বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতাম। সারাদিন যযেহেতু স্কুল আর পড়াশুনার ঝামেলা নাই তাই দল বেধে হাতে চাকু নিয়ে পুরা পাড়া টহল দিয়ে বেড়াতাম। আমাদের অত্যাচারে খুব কম আমই পেকে উঠতে পারত। মগডালের ২/১টা আম পাকতে পারলেও সেগুলো চুরি করার ফন্দি বের করতে দেরী হত না।
তারপর ক্যাডেট কলেজ, আম কাঠালের ছুটিটা এবার সামার ভ্যাকেশন নামে পরিচিত হতে থাকল। চাক্কু হাতে পাড়া বেড়ানো ছেলাটা ছুটিতে এসে খুব একটা আর বাইরে বের হয় না। নিজের এলাকায় অপারেশন আম কাঠাল বন্ধ। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের আম গাছতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কাজেই এবার অপারেশন আর নিজের এলাকায় না, অপারেশন চলে ক্যাডেট কলেজে। ডাব, কাঠালের পাশাপাশি চলে আম চুরি। মনে আছে এইচ এস সি পরীক্ষার আগের দিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিলেট শহরে শাহ জালাল (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করার জন্য। এর ফলে সবার পরীক্ষা ভাল হবে, কলেজ কর্তপক্ষ হয়তো এমনটই ভেবেছিল। যাই হোক এই মাজার জিয়ারতের ফলে আমার একটা লাভ হয়েছিল, সেটা হল শহর থেকে নিজের পছন্দমত একটা চাক্কু কিনে এনেছিলাম। আম, কাঠাল আর ডাব খাওয়া সংক্রান্ত সকল সমস্যা এতে অনেকখানিই সমাধান হয়েছিল।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আম চুরি করার প্রয়োজন পড়ে নাই। ইচ্ছে হলেই হল, কলাভবন, সেন্ট্রাল মসজিদ এলাকা থেকে দল বেধে আম ছিড়ে খেতাম।
সমস্যা হল চাকরী করতে গিয়ে। এখানে আম কাঠালের ছুটি নাই, তার থেকেও বড় কথা, ঢাকা শহরে এমন কোন অফিসও বোধ হয় নাই, যেখানে আম গাছ আছে। অগত্যা কি আর করা, আমি ভুলতেই বসেছিলাম যে আমি একদিন সশশ্র আম চোর ছিলাম। অতঃপর একদিন আমি সুযোগ পাইলাম। বছর খানেক আগে একটা অফিসে জয়েন করলাম। চারিদিকে গাছ গাছালিতে ভরা। কৃষ্ণচূড়া, রাধা চূড়া, কলা, বেল, আম, কাঠাল, ডাব সহ দেশী প্রায় সব গাছই এখানে আছে। মাঝে মাঝে আবার এখানে কোকিল ডাকে। এত গাছের ভীরে আমার অফিস বিল্ডিংটা প্রায় দেখাই যায় না। এইবার সেই মার্চ মাস থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম, আম গাছ গুলি মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছিল। তারপর কেটে গেল ২/৩ মাস। অফিস কম্পাউন্ডের ভিতরে আম গাছগুলোর দিকে তাকালেই পুরানো নেশাটা বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠত। খালি মনে হত একটা বার যদি গাছে উঠতে পারতাম! অবশেষে কাল এল সেই দিন। গাছে চড়ি নাই, কিন্তু গাছের ডালে ডালে ঝুলে থাক পাকা আমগুলা নিজের হাতে ছিড়লাম। আহা, কি যে শান্তি! কত্তদিন পর নিজের হাতে আম পেড়ে খাইলাম।
:guitar:
আম খেলে মনের মাঝে গান বাজে।
ভালো লাগলো পড়ে। দারুন।
ভালো থাকা অনেক সহজ।
:clap:
আম পেড়ে খাওয়াতে সাধুবাদ জানলাম।
সৈয়দ সাফী
এরকম অফিস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম