“সত্য” সমগ্র

আজকাল ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের ফলে কলেজের স্মৃতিচারন করা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। কোন কাহিনী লিখতে গেলে তা স্যার অথবা এডজুট্যান্টের চোখে পরার সমূহ সম্ভাবনা। 😕 কিছুদিন পূর্বে বন্ধু দিবসের এই পোস্টের ম্যাডাম তার পোস্ট খানা পড়ে বড়ই লজ্জ্বাগ্রস্থ হয়ে পরেছে বলে খবরে প্রকাশ। :grr: তাই “নাম বলব না” খালি অর্থনীতির এক শিক্ষকের কাহিনী বলে ক্ষান্ত দিব।

ক্লাশ নাইনে থাকতে স্যারের এফসিসি থেকে বিসিসিতে আগমন। তো অর্থনীতির ছাত্র হবার সুবাদে আমাদের স্যারের ক্লাশ করতে হত নিয়মিত। আর স্যারের ক্লাশটা ছিল আমাদের কাছে বহু আকাঙ্ক্ষিত। স্যারের গল্পের ভান্ডার ছিল অফুরন্ত। তো তেমনই কিছু গল্পের নমুনা

১. “আরে ক্যাডেট তোমাদেরতো পড়াশোনার প্রতি কোন আগ্রহই নাই। ১৯৯১ সালে ঘূর্নিঝরের পর এফসিসির ক্যাডেটরা ইলেক্ট্রিসিটির অভাবে “সাঙ্গু”র (সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড) আলোতে পড়াশোনা করত।” 😮

২. “আরে একবার হল কি শোনো। গেছি এক ক্যাডেটের বাসায়। বাসায় ঢুকেতো আমি দেখি বাসার মেঝে পুরাটা “একুরিয়াম।” আমিতো অবাক। আমি হাঁটি আমার পায়ের নিচে মাছও হাটে।” 😉

৩. “একবার হইল কি এফসিসির কলেজ প্রিফেক্টের রুমে ঢুকে আমিতো অবাক। দেখি রুমের মাঝে ছোট ফ্রিজ। আর ক্যাডেট তা থেকে বের করে ঠান্ডা কোক খাচ্ছে।” :bash:

৪. “এক ক্যাডেট। খুউব দুষ্টু। যখন তখন কলেজ আউট হয়ে যায় অবস্থা। তো একদিন সন্ধ্যার পর কলেজের বাইরে আমার সাথে দেখা। আমাকে দেখেই আমার পা জড়িয়ে ধরল। স্যার আপনি রিপোর্ট কইরেন না প্লিজ। আমি শুধু তাকে কলেজে ফেরৎ যেতে বললাম। পরদিন খুব ভোরে দেখি আমার বাসায় এক গাড়ি আসল। গাড়ী থেকে নামল বোরকা পরা এক মহিলা। আমি বাসায় এনে বসালাম। বোরকা খুলতেই দেখি এক পুরুষ মানুষ। আমাকে বলে কিনা স্যার আমি ক্যাডেট অমুকের ফাদার। ও নাকি কলেজের বাইরে গিয়ে আপনার কাছে ধরা খেয়েছে। স্যার প্লিজ আপনি ওকে বাঁচান। আপনি আমার এই গাড়ীটা রাখেন। ওর নামে রিপোর্ট কইরেন না প্লিজ। আপনি ছাড়া আমাকে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। আমি বললাম ভাই আপনি সম্মানিত মানুষ। আমার বাসায় এসেছেন। নাস্তা করেন এরপর আপনার গাড়ী নিয়ে সোজা বাসায় চলে যান। ওর কিচ্ছু হবে না।” 😕

৫. “এক ক্যাডেট এর ফাদার একবার আমার বাসায় দুই গাড়ী ভর্তি আপেল পাঠাল। ড্রাইভার এসে আমাকে সালাম দিয়ে বলল স্যার আপনার কাছে অমুকে আসতে বলেছে। দুই গাড়ী আপেলের এক গাড়ী আপনাকে রাখতে বলেছে আরেক গাড়ী অমুক ক্যাডেটকে পৌঁছে দেবার জন্য আপনাকে অনুরোধ করেছে। আমারতো সন্দেহ হল ক্যাডেটের কাছে পাঠানো আপেল চেক করে দেখি ভিতরে ফাঁপা। একটা খুলে দেখি আপেলের ভিতরে নেশা ভরে তা আবার আঠা দিয়ে লাগানো।” 😮 😮 😮

(বিদ্রঃ স্যারের সব কাহিনীর ক্যাডেটরাই খুউব দুষ্টু আর তাদের ফাদার বিশাল বড়লোক 😛 )

৬. স্যারের বিশেষ এক গুন ছিল তা হল মোটামুটি সব ক্যাডেটের ক্যাডেট নং তার মুখস্থ ছিল। আর স্যারও সবাইকে নম্বর ধরে ডাকতো। “নাম বলব না” ছিল স্যারের আরেক বিশেষত্ব। যেমন স্যার বলতেন, “তোমাদের সিনিয়র, নাম বলব না। ক্যাডেট নম্বর ১১৭০, দেখি কি লুকিয়ে লুকিয়ে হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে। আমি পিছন থেকে বললাম কি মাকজুম হাত দিয়ে খাওয়া হচ্ছে নাকি?” =)) =)) =))

{ স্যারের কাহিনী এত্ত বেশী তা লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে তাই আজ এই পর্যন্তই}

৫,৯৫০ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : ““সত্য” সমগ্র”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    =)) =)) =))
    নাজমুল ওরফে লুমযান আমারে কিছু কিছু কাহিনী কইছিলো।
    যাই হোক পইড়া আবার =)) =)) =))
    স্যাররা ছিলেন বলেই ক্যাডেট কলেজ এতো আনন্দের ছিলো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. নাজমুল (০২-০৮)

    উপরের পয়েন্ট গুলো নিয়ে হালকা আলোচনা করতে চাই,

    পয়েন্ট ৩: ফ্রিজটা দেখলে মনে হতোনা ওইটা একটা ফ্রীজ, মনে হতো কলম দানি, কিন্তু আসলে ফ্রীজ। তবে স্যারের প্রতি আমার সম্মান বেড়ে গিয়েছলো এই ভেবে যে উনি বলেছিলেন ক্যাডেটরা কোক রাখে, যদি বলতো ফ্রীজে বিয়ার রাখে তাহলে অবস্থাটা বুঝেন!!

    পয়েন্ট চার: খুব ভোরবেলা, স্যার মাত্র মর্নিংওয়াক করে বাসায় আসলেন এমন সময় নিচে একটি গাড়ি তার বাসার সামনে থামতে দেখলেন। গাড়ির পিছনের দরজা লাগানো ছিলনা। অনেক জিনিসের কারণে সেটা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছিলনা।
    ভদ্রলোকঃ স্যার আমি ক্যাডেট ''ক'' এর বাবা।
    স্যারঃ তো আমার কাছে কি চান?? কলেজে প্রিন্সিপাল আছে, এডজুট্যান্ট আছে সেখানে না গিয়ে একজন প্রভাষকের কাছে আপনার কি ??
    ভদ্রলোকঃ না স্যার আমি জানি আপনি ছাড়া আমার ছেলেকে কেউ বাচাতে পারবেননা।
    স্যারঃ আপনি কি করেন ??
    ভদ্রলোকঃ স্যার আমি যশোর ক্যান্ট এর জিওসি, মেজর জেনারেল ''খ''।
    স্যারঃ আপনি জিওসি হোন কিংবা আর্মীর প্রধান হন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।
    ভদ্রলোকঃ না স্যার আপনি এভাএ ভাববেননা, স্যার আপনি আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন, ন্নিচে আমার গাড়ি রাখা আছে ব্রান্ড নিউ, আর পিছনে বাচ্চাদের জন্য কিছু গিফট।
    স্যারঃ তাহলে আপনি যাবেন কিভাবে।
    ভদ্রলোকঃ তাহলে আপনি যাবেন কিভাবে।
    স্যারঃ বাইরে আমার অফিসিয়াল গাড়ি আছে স্যার।
    স্যারঃ আপনি ভদ্রলোক, যেভাবে এসেছেন যা যা নিয়ে এসেছেন সব নিয়ে এখনেই চলে যাবেন। আপনার ছেলে আমার ছাত্র আমি তার কিছু হতে দিবনা।

    আরো কিছু কথা না বললেই নয়ঃ

    কঃ স্যার তখন ঢাবি থেকে অনার্স এ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন,
    ইডেনে পার্ট টাইম টিচার হিসেবে সকালে কিছু ক্লাস নিতেন।
    ছাত্রীরা তাকে এত ফুল দিত যে ক্লাস শেষে উনি যখন কাটাবন দিয়ে হেটে যাতেন তখন ফুলের দোকানদাররা তার কাছে ছুটে আসতেন।
    কারণ??
    কারণ তারা ভাবতো স্যার ফুলের পাইকারি ব্যাবসা করে।

    খঃ স্যারের একটি বুদ্ধিমান এবং কথা বলা ময়না ছিল, সে ছিল খুব রসিক।
    স্যারের বাসায় যদি কেউ আসতো তখন ময়নাটি বলতো , ''স্যার নাই, স্যার নাই''। লোকটী যখন চলে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতেন তখন বুদ্ধিমান ময়নাটি আবার বলতো, ''স্যার আছে, স্যার আছে''। এই বুদ্ধিমান ময়নার কাছে হার মেনেছিল বিভিন্ন ক্যান্ট এর জিওসি এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধাণরা।

    আশারাখি আমিও একদিন একটা ব্লগ দিব, সবাই দোয়া করবেন

    জবাব দিন
  3. নাজমুল (০২-০৮)

    একটা কমেন্টস না করলেই নয়,
    গতবছরের দিকে, মুস্তো আমারে বললো স্যার আমাকে ফোন দিতে বলসে খুব আর্জেন্ট।
    আমি তাড়াতাড়ি স্যারকে ফোন দিলাম।
    স্যার স্লামুয়ালাইমুক আমি নাজমুল।
    হ্যালো হ্যালো, ক্যা নাজমুল!!! লাল হাউজের তুমি, ইংল্যান্ড থেকে ফোন দিস।
    কি খবর কেমন আছো?? কত টাকা যায় পার মিনিট??
    কি চার পাচ পাউন্ড পার মিনিট !! তুমি ফোন রাখো? আমি পরে ফ্রী হলে তোমাকে কল দিব।
    বোকা এত টাকা খরচ করে স্যারকে ফোন দেয় ??

    আমি কোনো কথা বলার সুযোগ পাইনাই। এমনকি কত টাকা যায় সেটাও না 🙁

    আর স্যারের পাশে আরো কিছু স্যার কিংবা ক্যাডেট ছিল মনে হয়েছে

    জবাব দিন
  4. রাকেশ (৯৪-০০)

    ২. “আরে একবার হল কি শোনো। গেছি এক ক্যাডেটের বাসায়। বাসায় ঢুকেতো আমি দেখি বাসার মেঝে পুরাটা “একুরিয়াম।” আমিতো অবাক। আমি হাঁটি আমার পায়ের নিচে মাছও হাটে।”

    টিভিতে এমন একটা ম্যাজিক দেখছিলাম, সুইমিংপুলের ওপর দিয়ে হাটে।

    থাক মনে কি আসতেছে কইলাম না

    জবাব দিন
  5. মুশফিকুর রহমান তুষার

    আরো কয়েকটা কাহিনী শেয়ার করি..

    ১. স্যার তখন ডাইনিং হল ওআইসি। টেবিলে কিছু ক্যাডেট গরুর মাংস খায়না। স্যার এসে ধরলো, "ক্যাডেট, তোমরা বিফ খাওনা। বরিশালেতো গরু পাওয়া যায়.. মর্ম বোঝোনা। এফসিসিতে গরুর মাংস পাওয়া যায়না। যাবে কিভাবে আশে পাশে তো সব খালি পাহাড়!" :))

    ২. স্যার ১৯৯২-৯৩ পর্যন্ত ঢাবি'র জগন্নাথ হলে থাকতেন। ২০০৭ সালে একদিন বলেন, "আরে কিছুদিন আগে তো একটু ঢাকা গেছিলাম। তো ভাবলাম জগন্নাথ হল দেখে আসি। যাওয়ার সাথে সাথে দেখি দৌড়াদৌড়ি শুরু। আমি তো বুঝিনাই কি হইছে।শুনলাম সবাই বলাবলি করতেছে, "দত্ত আসছে" "দত্ত আসছে".. একটু পর দেখি আমার জন্য একটা রুম ফাঁকা করে দিছে! বুঝতা হ্যায় ক্যাডেট..ঐখানে এখনও আমার এরকম সুনাম!"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।