আসুন শিখি: ব্যবহৃত মোজা দ্বারা বল তৈরির পদ্ধতি (নব্য ও ভবিষ্যৎ ক্যাডেটদের অবশ্যপাঠ্য ব্লগ)

সেই ইন দি ইয়ার অফ নাইন্টিন সিক্সটিনাইন মানে ২০০২ সালের ৭ মে বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাঙ্গণে যোগদান করিয়াছিল এক নাদান আলাভোলা বাচ্চা। কলেজে ছয় বছর অবস্থানকালে সে শিখিয়াছে অনেক। তবে ৬ বৎসর কলেজে অবস্থানকালে উক্ত বালক দুর্গন্ধময় ব্যবহৃত মোজার সদ্ব্যবহার সম্পর্কিত যে বিশেষ বিদ্যা অর্জন করিয়াছে তাহার কোন তুলনা নাই। :grr:

কলেজে প্রথম ৭ দিন অবস্থানকালে একদা বালক ডাস্টবিনের আড়ালে এক আজিব কাপড়ের তৈরি গোলাকার বস্তু আবিষ্কার হেতু বড়ই চিন্তাগ্রস্ত হইয়া পরিল। :dreamy: উক্ত গোলাকার বস্তু আদতে কি জানিবার উদ্দেশ্যে তাহার কচি মন সর্বদা ছটফট করিয়া বেড়াইতে লাগিল। তার এই দুর্দিনে তাহার সাহায্যে আগাইয়া আসিল তাহারই এক সহপাঠী। :thumbup: তাহার বড়ভাই ক্যাডেট হওয়ার সুবাদে এই আশ্চর্য গোলকের কথা সে বহু আগেই শুনিয়াছে। সে জানাইল এই গোলকের সাধারণ নাম “বল” যাহা দ্বারা ক্রিকেট নামক খেলা অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। 😮

এই আশ্চর্য সংবাদ শুনিয়া বালক আরো আশ্চর্যান্বিত হইয়া পরিল। জন্মলগ্ন হইতে অদ্যাবধি এমন আচানক “বল” তাহার দৃষ্টিগোচরীভূত হয় নাই। বালক ইহার শেষ দেখিয়া ছাড়িবে বলিয়া পণ করিল। 😡

আপাতত গোলকের পূর্ণ ব্যাবহার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আরো কিছু সহপাঠীর সহিত খেলায় মাতিয়া উঠিল। কচি বালকদের এমন মাতামাতি দেখিয়া আড়ালে বসিয়া ঈশ্বর বুঝি একচোট হাসিয়া নিলেন। ;)) আর তাহার কারণেই কিনা অষ্টম মানের এক ক্যাডেটের কাছে উহারা শীঘ্রই হাতে নাতে ধৃত হইল। তিনদিন বয়সের ক্যাডেটদের এহেন কর্মকাণ্ড দেখিয়া সিনিয়র ভ্রাতা ক্রমাগত খাবি খাইতে লাগিলেন। 😮 কিছু না বলিয়া আশ্চর্য গোলকখানা হস্তগত করিয়া শুধু জানিতে চাহিলেন কে এই গোলকের আবিষ্কারক?

খেলায় জড়িত সকলেই একযোগে আলাভোলা এই মাসুম বাচ্চা খানাকে নির্দেশপূর্বক হাফ ছাড়িয়া বাঁচিল। :bash: সিনিয়র ভ্রাতা আর কথা না বাড়াইয়া গোলকখানা লইয়া নিজের বাসস্থানের দিকে অগ্রসর হইলেন আর বালকেরা বাঁচিয়া গেল বলিয়া ঈশ্বরের কৃপা আদায় করিল। এতক্ষণ যাবৎ খেলায় মত্ত অনেকে আবার এই অধমকে উপদেশবানী শুনাইয়া গেল যে ক্যাডেট কলেজের মতন শৃংখলাপুর্ণ এক স্থানে আমোদ প্রমোদের ব্যাবস্থা করিয়া কি ভুলই না এই অধম করিয়াছে। তো এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হইল না। বৈকালকালেই অধমের ডাক পরিল সিনিয়র ভ্রাতার আবাসস্থলে। বালক তৎক্ষনাৎ উপস্থিত হওয়া মাত্রই অষ্টম মানের গুটিদশেক ক্যাডেট তাহাকে ঘিরিয়া ধরিল। তাহারা তাহাকে বুঝাইতে সক্ষম হইল এইরূপ শৃংখলাকর এক স্থানে গোলক নির্মানপূর্বক বিনোদনের ব্যাবস্থা করিয়া বালক কি ভুলই না করিয়াছে। রেড বুক নামক এক স্থানে লিখিত রহিয়াছে উহার শাস্তি নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড অর্থাৎ বহিষ্কার। :gulli2:

পিতা মাতার মলিন মুখখানি বালকের সম্মুখে ভাসিয়া উঠিল। আসন্ন শাস্তির কথা ভাবিয়া তাহার চোখ ছলছল করিয়া উঠিল। এক ভ্রাতা এইবার তাহার সাহায্যে আগাইয়া আসিলেন। তিনি জানালেন বালকের সম্মুখে এখন একটি মাত্র পথ খোলা রহিয়াছে। বালক কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখিতে পাইল। তখন সিনিয়র ভ্রাতা তাহাকে জানাইল বালক যদি তাহাদিগকে ঐরূপ আশ্চর্য গোলক তৈয়ার করিয়া দেয় তবে ওনারা এ ঘটনা বেমালুম চাপিয়া যাইবেন। বালক তৎক্ষনাত রাজী হইয়া গেল। এবং পরবর্তীতে নিয়মিত ভ্রাতাদের রসদ সরবারহ করিতে করিতে তাহার হস্ত গোলক নির্মানে বড়ই কার্যকরী হইয়া উঠিল। তাহার তৈরীকৃত এক গোলক পাইয়া এক ভ্রাতা একবার আরেক ভ্রাতার উদ্দেশ্যে গাহিয়া উঠিলেন,

ভাল বেশী, বল ভাল বেশী
এর বেশী ভাল বানান যায় না
ওরে দেখ কি চমৎকার তাই না?

তো সেই অভিজ্ঞতা আজ জাতির উদ্দেশ্যে ছড়াইয়া দেওয়াই এই ব্লগের মুখ্য উদ্দেশ্য।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিঃ

১. কাগজ
২. মোজা
৩. মোটা সুতা
৪. স্কস্টেপ
৫. সুঁই-সুতা

প্রস্তুতপ্রণালী:

১. সর্বপ্রথম আমাদের দরকার হইবে কিছু কাগজ যাহা অফসেট হইলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাইবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

২. উক্ত কাগজখানা নিম্নোক্ত চিত্রের ন্যায় গোলাকার আকৃতি প্রদান করিতে হইবে।

৩. পরবর্তীতে স্কচটেপ দ্বারা উহা পেঁচাইয়া শক্ত গোলক এর ন্যায় গোলক তৈরি করিতে হবে।

৪. যাহা দেখিতে ঠিক নিম্নের ছবির ন্যায় মনে হইবে।

৫. পরবর্তীতে আমাদের দরকার হইবে একটি মোজা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় যে নিজের মোজার সংকট অনুভূত হইলে বারান্দায় রোদে দেয়া যে কোন মোজা মালিকের অগোচরে সরাইয়া ব্যাবহার করা যাইবে। মোজা সাদা রঙের হইলে তাহা রাত্রীকালীন সময়ে অধিক ব্যাবহারোপযোগী বলিয়া বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়াছে।

৬. পূর্বে নির্মিত কাগজের গোলকখানি মোজার মধ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।

৭. এরপর নিম্মের ছবির মতন করিয়া খাতা সেলাইয়ের মোটা সুতা দ্বারা মোজার মুখ ভাল করিয়া বাঁধিয়া লইতে হইবে।

৮. পরবর্তীতে মোজাখানা উল্টাইয়া ফেলিতে হইবে, যাহা নিম্মে দেখানো হইল

৯. এরপর ৭নং চিত্রের ন্যায় পুনরায় মোজার মুখ বাঁধিয়া লইতে হইবে। যতক্ষন পর্যন্ত মোজা সম্পূর্ণ রূপে গোটানো শেষ না হইবে ততক্ষন পর্যন্ত ৭ ও ৮নং পদ্ধতি বারংবার অনুসরণ করিয়া যাইতে হইবে। মোজা শেষ হইয়া আসিলে উহা দেখিতে হইবে নিম্নের ন্যায়

১০. এইবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুঁই-সুতা এর মাধ্যমে মোজার শেষ মাথা উহার দেহের সাথে ভালো করিয়া সেলাই করিয়া আটকাইয়া দিতে হইবে।

১১. সকল পদ্ধতি সফলভাবে অনুসরণ করিতে পারিলে পাওয়া যাইবে এক আশ্চর্য গোলক বা বল।

বল প্রস্তুত শেষে জুনিয়র ভ্রাতাদের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানের আদেশ প্রদানপূর্বক তৎক্ষনাত খেলিতে নামিয়া পড়া যাইবে।

(বিদ্রঃ এ বল জনিত কোন দূর্ঘটনার জন্য কোনক্রমেই লেখককে দায়ী করা যাইবে না)

৩৭ টি মন্তব্য : “আসুন শিখি: ব্যবহৃত মোজা দ্বারা বল তৈরির পদ্ধতি (নব্য ও ভবিষ্যৎ ক্যাডেটদের অবশ্যপাঠ্য ব্লগ)”

  1. নাজমুল (০২-০৮)

    হা হা হা. মুস্তো এইটা কি ব্লগ দিলি ঃ)) অবশ্যই প্রিয়তে নিতে হবে,
    বরিশাল ক্যাডেট কলেজে হঠাত করে যেন জ্বীন রূপে এক ইবলিশের আগমন হইলো
    যখন সপ্তম শ্রেণীর ক্যাডেটগ্ণ কাদিয়া বাচেনা, এমন সময় কে-পা- নামে পরিচিত মুস্তোর মুজার বল বানাইয়া ফেলিল
    হ্যা ক্যাডেট,
    বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ইতিহাসে তুমি এক ব্যাতিক্রম ক্যাডেট, এহেন শয়তানি নাই যা তোমাকে আমরা করতে দেখিনাই
    তোমার দুষ্ট বুন্ধির কাছে ইবলিশ শয়তান নাকানি চুবানি খায়।

    অসাধারণ লিখা এবং শিক্ষণীয়

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহারে, কি কথা মনে করায় দিলা ক্যাসপার, এখন আবার করিডোরে ক্রিকেট খেলতে মন চাচ্ছে...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. :)) :)) :)) মুসতাকীম, মোজার বল বানাইতে বানাইতে আমার লাইফ বরবাত হইতে যাইতেছিল। কপাল গুণে বাঁচিয়া গিয়াছি। আমার এবং আমার পূর্বের ২ ব্যাচ ইহা সম্পূর্নরুপে অবগত।

    আরো একটি টিপস দিবার ইচ্ছা পোষন করিতেছি, তোমার ৩য় ধাপের পূর্বে (স্কচটেপ প্যাচাইবার পূর্বে) ভালো করে চিকন সুতা চারিপাশে প্যাচাইয়া লইলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। ইহাতে বল ভালো বাউন্স মারিবে। তবে ফিল্ডারদের জন্য ব্যাথা পাইবার আশংকা থাকিতে পারে।

    তোমার পোস্ট পড়িয়া বহুত মজা পাইলাম।

    জবাব দিন
  4. সামীউর (৯৭-০৩)

    অসাধারণ! এই বল আইসিসির কাছে পাঠানো উচিত!
    বিঃদ্রঃ বল প্রস্তুতের পর মোজার উপরে ইলেকট্রিক টেপ (ওসাকা ব্র্যান্ড হলে সবচাইতে ভাল!) পেঁচালে টেপ টেনিসকেও হার মানাবে।

    জবাব দিন
  5. রাকেশ (৯৪-০০)

    এনএসইউতে আমাদের ব্যাচে বেশ কয়েকজন ক্যাডেট ছিল, আমাদের ব্যাচ থেকেই ভার্সিটিতে মোজার বলে ক্রিকেট খেলা ছড়িয়ে পড়ে। বিটিএ টাওয়ারের নিচ তলায়, খেলা তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গেলে সেটা আমাদের বাসায় বাসায় ছড়ায়ে পড়ে। কলেজ থেকে বের হওয়ার ৩-৪ বছর পরেও মনেহয় রুম ক্রিকেট খেলা হয়েছে !

    জবাব দিন
  6. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    এস এস সি টাইমে টেস্টপেপার ছিড়ে বাস্কেটবল বানানো হইসিলো...প্রস্তুত প্রণালী টা লিখে ফেলা দরকার!


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
  7. তপু (৯৯-০৫/ককক)

    এখন মনে পরে আমার এক বন্ধু jp থাকা অবস্থায়ে কন এক জুনিঅর কে মার ধর করিআ মুজার বল কাইরা আনলো। অই বল টা দিয়া খেলা হছিল রুমে। হঠাত জানালার ফাক গলে রুমের সাম্নে বল পরসে আর অই সময় টি ব্রেক এর জন্ন বাশি পরল ।বন্ধু ই বল তরিঘরি উঠাইবার জন্ন রুমের সাম্নে গেল দেখে যার থেকে বল টা আনা হইসে সেই জুনিঅর টার পায়ের সাম্নে বল গরাগরি খাইতেসে ।রুমে আইশা কইল মামা পুরা বেইজ্জত হইআ গেলাম। =)) =)) =))

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।