[এক বছর আগে এইদিনে চিরবিদায় নিয়েছিল বন্ধু সঞ্জীব চৌধুরী। তাকে নিয়ে এই লেখাটা সামেহায়ারইনে গতবছর এইদিনে দিয়েছিলাম। লেখাটায় কোনো পরিবর্তন না করে এই ভূমিকাটুকু যুক্ত করে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে দিলাম।]
জীবন একটাই, আর সেটাকে পুরোপুরি উপভোগ করে আমাদের চোখের আড়ালে চলে গেল সঞ্জীব চৌধুরী। আমার বন্ধু। আমাদের কাছে এই মৃত্যু ভাবনায় ছিল না, কামনার তো নয়ই। মাত্র ৪৪ বছরের জীবন! কেউ এই সময়টাকেই যথেষ্ট মনে করেন, আবার অন্যরা হয়তো না।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, পরে কর্মেও তাকে পেয়েছিলাম- সবসময় একজন প্রাণবন্ত মানুষ হিসাবে। হাসিখুশি, আনন্দ-উচ্ছল, সৃজনশীল এক মানুষ। স্বল্প সময়েই নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছে সঞ্জীব। আজ টিএসসিতে তার চিরতরে ঘুমিয়ে পরা মুখ দেখার আগ্রহ ছিল না আমার। সেখানে গেলেও তাই ওকে শেষ দেখা হয়নি। আমি চাই আমার স্মৃতিতে সঞ্জীব বেঁচে থাকুক তার প্রাণবন্ত মুখটি নিয়েই।
কদিন আগে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। নতুন একটা চাকরির জন্য আক্ষেপ ছিল তার। বলিনি ওর জীবনটা দাসত্বের নয়, সৃজনশীলতার। যদি বলি ও যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই জীবনকে উপভোগ করে গেছে, তাহলে কি ভুল বলা হবে? সাংবাদিকতা করেছিল সঞ্জীব, কিন্তু ওটা তার জায়গা ছিল না। সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে দ্রুত জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠেছিল বন্ধু আমার। সাফল্যের এরকম এক উঁচু অবস্থানেই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল সে।
কেউ কেউ বলবেন, চিরতরে চলে যাওয়ার জন্য ৪৪ বছর বয়সটা কোনো সময় নয়। ঠিক। তার স্ত্রী, কন্যা, তার পিছুটান! এরকম যাওয়াটা তাই অনেকের কাছে দায়িত্বহীন ঠেকবে। এটা স্ত্রী-কন্যা-পরিবার-সমাজের অবস্থান। তাদের কাছে সঞ্জীবকে তাই দায়িত্বহীনই মনে হবে।
কিন্তু সঞ্জীবের নিজের কাছে? চরম একরোখা, অনিয়ন্ত্রিত, বাউন্ডুলে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত-সন্তুষ্ট বন্ধুকে এ প্রশ্ন কখনো করা হয়নি। কিন্তু জীবন-যাপন নিয়ে কোনো অভিযোগওতো তার ছিল না। বলা যায় জীবনটাকে প্রতি বিন্দুতে উপভোগ করেছে সে।
সঞ্জীবের জন্য তাই আসুন আমাদের হুইস্কির গ্লাসটাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে বলি, “বন্ধু বিদায় বলো না, বলো জীবন ভালবাসি”।
নভেম্বর ১৯, ২০০৭, ঢাকা
ইস, কি প্রানবন্ত লোক ছিলেন একজন।
যদিও আমার দেখাটা অনেক দূর থেকে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
সারাক্ষণ মজা করা, ঠাট্টা করা, গান গাওয়া, খোঁচাখুঁচি- এই চলতো সঞ্জীবের। সবসময় প্রাণশক্তিতে ভরা। উচ্ছল, আমুদে। জীবন নিয়ে হেলাফেলা করা। নইলে এইভাবে কেউ চলে যেতে পারে??
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
খুব কম মানুষ পারে সমাজের সাজিয়ে দেয়া নিয়মের ঊর্ধে উঠে নিজের নিয়মে চলতে,নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে কুর্নিশ না করতে।সঞ্জীব চৌধুরী এমন বিরল একজন মানুষ।
বিদায় বিদ্রোহী!
মেধাবী ছিল, কিন্তু কোনো নিয়ম-কানুন মানতো না। অফিসে দিনেদুপুরেও মাতাল হয়ে আসতো। এ কারণে ভোরের কাগজ থেকে অনেকে প্রথম আলোতে এলেও ওর ব্যাপারে মতি ভাই (সম্পাদক মতিউর রহমান) ছিলেন বেশ কঠোর। ও নিজেও সেটা জানতো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আবার বেদনার্ত হলাম।
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ওর জন্য বেদনার্ত হতে পারি, সেটা ঠিক। কিন্তু ওর সৃষ্টিগুলো আমরা উপভোগ করি। দারুণ সব গান আমাদের জন্য রেখে গেছে সঞ্জীব।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
পাগল রাগ করে চলে যাবে ফিরেও পাবে না
পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে ফিরেও আসবেনা।
সঞ্জীব দা'কে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সঞ্জীব কি নিজেকে নিয়ে এটা বলেছিল?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সঞ্জীব চৌধুরীকে :salute:
গতকাল রাত থেকে আমাদের এবিসি রেডিওতে সঞ্জীবের অনেকগুলো গান বেজেছে। কী দারুণ গলা ছিল ওর!! :salute:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সঞ্জীব দা’কে :salute:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
মুসতাকীম
তোমার কমেন্টগুলিতে অন্য সাইট থেকে স্মাইলি এনে দেয়ার কারনে বারবার স্প্যাম হচ্ছে।
স্মাইলি দিতে চাইলে সিসিবির স্মাইলি গুলি ইউজ করো।
ওকে বস। 😛 😛 😛
তবে সিসিবির স্মাইলি আরো বৃদ্ধি করলে ভালো হয়। 🙂 🙂 🙂
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
সঞ্জীব দা কে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সবকিছুতে ব্যতিক্রম ছিল সঞ্জীব। কোনো নিয়ন্ত্রণে বাঁধা যেত না ওকে। এমনকি ছোট্ট যে মেয়ে 'কিংবদন্তী' সেও তার বাবাকে বাঁধতে পারেনি!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সঞ্জীবের জন্য তাই আসুন আমাদের হুইস্কির গ্লাসটাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে বলি, “বন্ধু বিদায় বলো না, বলো জীবন ভালবাসি”।
সঞ্জীবের বিশাল বিশাল ফ্যান আমি...
সঞ্জীবের মধ্যে একটা আত্মধ্বংসী প্রবণতা ছিল। অনেকেরই কমবেশি সেটা থাকে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
যাদের আমরা ছাড়তে চাই তাদের মধ্যে এটা থাকে না...অথচ যাঁদের আমরা বেঁধে রাখতে চাই-তাঁদের এই প্রবণতা কেন বেশি থাকে????
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভালো বলেছ।
হয়তো তারা আরো ভালোবাসা চায়, হয়তো ভালোবাসার কাঙাল তারা। অথবা তারা বিরক্ত থাকে আমাদের ওপর, বিরক্ত আমাদের ভন্ডামিতে। কিম্বা আত্মরতিতে ভোগে তারা, ধ্বংসেই সুখ পায়!
হায় সে উত্তর কি আমরা জানি?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
তাঁকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
জীবিত সঞ্জীবকে 'শ্রদ্ধা' শব্দটা বললে সম্ভবত ও এটা নিয়েও ঠাট্টা করতো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সঞ্জীব দা কে শ্রদ্ধাঞ্জলি। :salute:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শফিক রেহমানের 'যায়যায়দিন'-এ ভালো বেতনে ফিচার এডিটর হিসাবে যোগ দিল। বেশ কিছুদিন পর আরো অনেকের সঙ্গে ভালো ক্ষতিপূরণসহ বেরিয়ে এলো। শুনেছি, যায়যায়দিন থেকে পাওয়া টাকায় সে সময় ৬০/৭০ হাজার খরচ করে মদের পার্টি দিয়েছিল। একসময় সেই টাকাও শেষ হলো।
মারা যাওয়ার দিন পনের আগে ফোন এলো। কি খবর। আর ভালো লাগছে না। রেডিওতে চাকরি চাই। চিন্তায় ছিলাম। এই পাগলকে কিভাবে না করি? কিন্তু আমাকে জবাব দেয়ার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো সঞ্জীব।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সঞ্জীব দা’কে শ্রদ্ধাঞ্জলি। :salute:
আর কিংবদন্তীর জন্য অনেক অনেক আদর।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আচ্ছা ভাইয়া, শুনেছি উনি ভালো গল্প লিখতেন। কাছের অনেক মানুষ তার গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন। সত্যি?
লেখার হাতটা দারুণ ছিল ওর। ভোরের কাগজে অসাধারণ কিছু ফিচার লিখেছিল। কিন্তু লেখার বেলায় ভীষণ অলস। ধুম আড্ডা ছিল ওর সময় কাটানোর প্রিয় উপায়। জুনিয়র-সিনিয়রের বালাই নেই- যে কারো সঙ্গে মদ খেতে বসে যেত। ওটাই সম্ভবত ওর প্রিয় খাদ্য (??) ছিল।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
তার গান গুলিই তো একেকটা গল্প।
সানাউল্লাহ ভাইকে ধণ্যবাদ ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
১৯৯৬ এর কোন সময় "আহ" এ্যালবামটা হাতে আসলে তার কাজের সাথে প্রথম পরিচয় হয়।
এরপর অনেক দিন আমার অনেক নিঃসঙ্গ সময়ের সঙ্গী ছিল তার গান।
তার জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলী।
Life is Mad.
সঞ্জীবদা মরে গিয়ে বাংলা গানের একটা বড় ক্ষতি করে দিয়ে গিয়েছেন। তার থেকেই শুরু কবিতাগুলোকে গান বানানো। পূর্ণাংগ শিল্পী ছিলেন, গীতিকার, সুরকার, গায়ক। হালের পপ গায়ক গায়িকারা তো তার তুলনায় গর্ভস্রাব শ্রেণীয়। মনে আছে, তার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর খুব খারাপ লেগেছিল, অফিসের দরজা বন্ধ করে "আমি তোমাকেই বলে দেব" বাজিয়ে তাকে নিজের মতো করে বিদায় জানিয়েছিলাম।
সঞ্জীবদা বেঁচে থাকলে আরো অনেক কালজয়ী গান পেতাম হয়তো।
"তুমি কান্নার রং, তুমি জোছনার ছায়া।"
সানা ভাই, এরকম একটা লেখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
যথার্থ বলেছ তৌফিক। অসাধারণ সব কবিতা, গীতিকবিতা! আর কেউ কি এমন লিখতে পারবে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
নিজের মত করে জীবন সাজিয়ে উপভোগ করার মত সাহস এবং ভাগ্য সবার হয়না। সঞ্জীব চৌধুরী আমাদের সামনে "স্বাধীনচেতা"র এক অনন্য উদাহরণ।
সালাম সঞ্জীব চৌধুরী :salute:
সাহসটাই আসল বাকি সব মেকি। এভাবে নিজের মতো, নিজের আনন্দে বাঁচাটা খুব কম লোকই পারে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"