আমার ইতিহাস ভাবনা

কিছুদিন আগে আমার খুব কাছের এক বন্ধু ফোন করে বলল ওর জন্য যেকোন একটা চাকুরী দেখতে। এসএসসি পাশের পর আর পড়াশোনা করেনি। এটাসেটা করে বেশ ভালোই চলছিল। এর মাঝে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে, মেয়েও হয়েছে একটা। ভালো ব্যবসা করছিলো। কিছুদিন আগে ব্র্যাক থেকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ধরা খেয়ে গেছে। কি কারণে ঐ ব্যবসাটায় মার খেয়েছে। এখন সব বেঁচে দিয়েও পুরো ঋণ শোধ হচ্ছে না। আর তাই সে হন্যে হয়ে একটা চাকুরী খুঁজছে। আমি জানতে চেয়েছিলাম সে ব্যবসায়ে রিস্কের কথা ভেবেছিলো কি না। সে জবাব দিয়েছে যে, আমাদের আরেক বন্ধু ত ব্যবসা লাভজনক করতে পেরেছে। তাকে দেখেই সেও ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল।- ঘটনাটা বললাম এইটা বোঝানোর জন্য যে, ঋণ গ্রহন করলেই সবাই ‘বাই ডিফল্ট’ লাভজনক ব্যবসা করতে পারেনা, সম্ভবও নয়। খুদ্রঋণ নিয়ে ব্যবসায়ে লাভ-ক্ষতি দুইই হচ্ছে। লাভের ঘটনাগুলো নিয়মিত পত্রপত্রিকা, সভা-সমিতি, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে ডিসকোর্সে আসছে। ক্ষতির ঘটনাগুলোও আসছে, তবে সেগুলো খুব অনিয়মিত+স্বল্প পরিসরে। ফলশ্রুতিতে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের দিকটাই শুধু আমাদের মনে থাকছে, আর ব্যর্থতাগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে।

প্রত্যেক বছর ঈদের আগে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় যা অনেক সময় সহিংসরূপ ধারণ করে (ইদানিং এটা আরো নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে)। তাদের ঠেকাতে সরকারী পুলিশ বাহিনীকে বেশ তরিৎ গতিতে ‘পুলিশি ব্যবস্থা’ নিতে দেখা যায়। অনেক সময় কিছু শ্রমিক মৃত্যুও বরণ করে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের সহিংসতার প্রায় সবগুলো ঘটনাই গণমাধ্যমে আসে সরকারবিরোধী নাশকতামূলক চক্রান্ত হিসেবে- বিএনপি, আওয়ামীলীগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক- সব সরকারের সময়ই। কিন্তু আমরা জানতে পারিনা যে, শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ‘অতি অন্যায্য মজুরীর বকেয়া’ টাকার জন্যই তারা পথে নামে, দায়িত্বশীল কারো কাছে কোন আশার বাণী না পেয়েই সহিংসতার পথ বেছে নেয়। কারণ, পত্রিকাগুলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে নাশকতা বা জঙ্গী-কানেকশনের খবর+বিশ্লেষণমূলক কলামের জন্য যতখানি কাভারেজ বরাদ্দ রাখে, তার সামান্যতমও রাখেনা খেটে-খাওয়া এইসব মানুষের নিজেদের আন্দোলনের পক্ষে কথা প্রকাশের জন্য। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্যস্ত থাকে এডিট করা ‘ভিডিও-ফুটেজ’ প্রচারে যেখানে দেখা যায় শ্রমিকরা ভাঙ্গচুরে ব্যস্ত, পথচারীরা ভীত-সন্ত্রস্ত। কিন্তু এইসব শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত কি রকম পরিশ্রম করে, কতটাকা মজুরী পায়, কিভাবে থাকে, কি খায় সেসব বিষয় আড়ালেই থেকে যায়। এর ফলে জনসাধারণের মনে সহজেই এই ধারণাটা ঢুকে যায় যে, এইসব শ্রমিকদের আন্দোলনে নামার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই, এরা সরকারবিরোধী (এবং শিল্পায়ন তথা জাতীয় উন্নয়নের বিরোধী) ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করছে। কাজেই পুলিশের মাধ্যমে শক্তহাতে তাদেরকে দমন করা ঠিকই আছে, এমনকি বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, বুট দিয়ে মারিয়ে হত্যা করাও (গত সপ্তাহে টঙ্গিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা)!

-উপরের প্রসংগ দুটো নিয়ে আসলাম নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনা+জানার বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখতে। ইদানিং ‘নিরপেক্ষ ইতিহাস’ কথাটা আমাদের গণমাধ্যমের কল্যাণে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে, তা’ সে একাত্তরেরই হোক, আর তার পরবর্তী সময়েরই হোক। জুবায়ের অর্নবের একটা মন্তব্যের প্রতিউত্তরে আমি বলেছিলাম যে, টেক্সটভিত্তিক (পাঠ্যবই) পাঠের মাধ্যমে ইতিহাসের ‘নিরপেক্ষ পাঠ’ অসম্ভব। আসলে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, ‘নিরপেক্ষ ইতিহাস’ই অবাস্তব। আর যা অবাস্তব, তা পাঠ্যক্রমে পাওয়া ত যাবেই না।

আমেরিকার বিখ্যাত এক ইতিহাসের অধ্যাপক Howard Zinn তার পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার পেছনের গল্প বলা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, কলেজছাত্র অবস্থায় একদিন তিনি এক পল্লীগায়কের (Folk Singer) গান শুনছিলেন। গীটারের ধীরলয়ের করুণ সুরে সে পারফর্ম করছিলো একটি ব্যালlড ‘The Ludlow Massacre’। এর থিমটা ছিলো ১৯১৪ সালে দক্ষিন-কলোরাডোর কয়লাখনি অঞ্চলে রকফেলারকর্তৃক হরতালরত একদল নারী+শিশুকে পুড়িয়ে মারার নির্মম কাহিনী। গানটি তাকে সেই ঘটনা সম্পর্কে দারুনভাবে কৌতুহলী করে তোলে। কিন্তু তার কোন ক্লাসে, কোন পাঠ্যবইয়ে তিনি সেই ঘটনার সম্পর্কে সামান্য বিবরণও খুঁজে পেলেন না। অনেক খোঁজখবরের পর তিনি American Labour Struggles একটা অখ্যাত বই পেলেন। এতে দশটি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনার বিবরণ আছে ইতিহাসের কোন ক্লাসের লেকচারে বা বইয়ে যেগুলোর উল্লেখ নেই।

কলোরাডোর সেই শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয় Colorado Fuel & Iron Corporation (রকফেলারের একটি প্রতিষ্ঠান) এর ভাড়াটে খুনির হাতে এক শ্রমিক নেতার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। খনিশ্রমিকরা এর প্রতিবাদে strike বা হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাস্তায় নামে। এই হরতাল ভন্ডুল করার জন্য রকফেলার Baldwine-Felts Ditective Agency নামে একটা strike-breaking সংস্থাকে ভাড়া করে যারা শ্রমিকদের তাঁবু লক্ষ্য করে বন্দুক+শটগান+মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়। কিন্তু তাতেও আন্দোলনরত শ্রমিকদের মনোবল ভাঙ্গে না, তারা হরতালে অচল করে রাখে পুরো খনি এলাকা। স্টেট-গভর্ণর ন্যাশনাল গার্ডদের তলব করে। রকফেলার জুনিয়র নিউইয়র্কে এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেন যে, তারা হরতালের বিরুদ্ধে উক্ত শহরের সকল ব্যাংকারের সমর্থন পেয়েছে্ন। স্টেট-গভর্ণর রাষ্ট্রীয় অর্থ+লোকবল দিয়ে একটা মিলিশিয়া পাঠাচ্ছেন যারা হরতালকারীদের হটিয়ে দিয়ে মাইনারদের (!) খনি চালু রাখতে সাহায্য করবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, তারা চৌদ্দজন প্রভাবশালী পত্রিকা-সম্পাদকের সমর্থনও পাচ্ছেন হরতালের বিরুদ্ধে।

শহরে জাতীয় সেনাবাহিনীর পোষাকে আগত মিলিশিয়া বাহিনী দেখে হরতালকারীরা এই ভেবে আশ্বস্ত হলো যে, সরকারী সেনারা তাদেরকে ভাড়াটে খুনিদের থেকে রক্ষা করবে। আর তাই সেই বাহিনীকে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে শহরে প্রবেশ করতে দিল। কিন্তু হায়! তারা রকফেলারের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বেধরক পেটালো, গ্রেফতার করলো আর ভাড়াটে ষ্ট্রাইক-ব্রেকারদের খনিতে নিয়ে গেলো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা সহিংস হয়ে উঠল। তারা একজন ষ্ট্রাইক-ব্রেকারকে ব্যাপক মারধোর করল, একজনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরেই ফেলল।

রকফেলারের পক্ষ নেওয়া ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী আসন্ন শীতের অপেক্ষায় থাকল। এক শীতের রাতে তারা শ্রমিকদের তাঁবুগুলোতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করলো যেখানে এক হাজারের উপরে নারী+পুরুষ+শিশু ছিলো। তারা রাতভর গুলি চালালো। ভোর রাতে গিয়ে সব তাঁবু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল। পুরো এলাকায় মানুষজনের কোন নিশানাই থাকল না। একদিন পর এক টেলিফোন লাইনম্যান লুডলো কলোনীর পাশ দিয়ে যাবার পথে ছাইভষ্মের মাঝ থেকে একটা লোহার আবরণ তুলতে গিয়ে একটা গর্তের মাঝে দুইজন নারী+এগারো জন শিশুর পোড়া গলিত মৃতদেহ আবিস্কার করে। তার থেকেই বাইরের পৃথিবী জানতে পারে উক্ত গণহত্যার কথা। এই থেকে এই মর্মান্তিক গণহত্যাই ‘The Ludlow Massacre’ নামে পরিচিত হয়, যা নিয়ে কোন এক পল্লীকবি গান রচনা করেছেন।

এখন কথা হচ্ছে, আমেরিকার ইতিহাসের যাবতীয় সিলেবাস+পাঠ্যবই কেন এই বিষয়টা এড়িয়ে গেল? এটা ত নিশ্চিত যে, হরতালের বিরুদ্ধপক্ষের ব্যাংকার, ন্যাশনাল গার্ড, বা পত্রিকার সম্পাদকরা রকফেলারের সাথে কোন গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে এই ঘটনাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেনি। তারা এমন কোন সিদ্ধান্তও নেয়নি যে, যেকোন উপায়েই হোক রকফেলারের ইমেজকে উজ্জ্বল করে দেখাতে হবে। হাওয়ার্ড জিনের মতে এই এড়িয়ে যাওয়াটা ঘটেছে (১) আমেরিকায় প্রবলবভাবে প্রচলিত একটা অনুচ্চারিত ধারণা থেকে যে, এই শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা শ্রমিকদের আরো প্রতিবাদী হতে উৎসাহ যোগাবে, জাতীয় পর্যায়ে শ্রমিক আন্দোলনকে বেগবান করবে। আর শ্রমিক আন্দোলন মানেই কমিউনিস্ট শাসনের দিকে যাত্রা যা’ পুঁজিবাদী আমেরিকার সম্পুর্ণ বিপরীত ধারার শাসন। পাশাপাশি এই বিশ্বাস থেকে যে, (২) আমেরিকা হলো ফ্রী-এন্টারপ্রেনারদের দেশ। আমেরিকার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠিই হলো রকফেলারের মতো এন্টারপ্রেনাররা (কয়েকটি প্রচলিত ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের ভূমিকায় সরাসরি এটি উল্লেখ আছে)। তাই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে সকলের উচিত রকফেলারের (এবং সেই সাথে সকল ব্যক্তি-উদ্যোক্তার) পাশে দাঁড়ানো, তাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সাহায্য করা।

– এই যে আমেরিকার ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে ‘The Ludlow Massacre’ এর হারিয়ে যাওয়া, এবং এর ফলশ্রুতিতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আমেরিকার ইতিহাসে শ্রমিকদের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞান, তা’ কোন নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চার নমুনা নয়, বরং একটা বিশেষ মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত ইতিহাসচর্চার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একই ধারায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, নানা জাতির ইতিহাসও কোন না কোন বিশেষ মূল্যবোধ দ্বারাপ্রভাবিত; প্রত্যক্ষে, পরোক্ষেও।

এ পর্যায়ে আশা করি আমি বোঝাতে পেরেছি কেন আমি ‘নিরপেক্ষ ইতিহাস’কে অবাস্তব বলে মনে করি। এখন প্রশ্ন দেখা দেয় যে, তাহলে কি আমরা ইতিহাসকে ত্যাগ করবো?- অবশ্যই না। কিন্তু তাহলে বিশেষ একটা মূল্যবোধের দ্বারা প্রভাবিত ইতিহাসকে আমরা কিভাবে গ্রহন করবো বা গ্রহনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করবো?- এক্ষেত্রে অনিবার্য ভাবে এসে পড়ে রচিত+চর্চিত ইতিহাসের ভিত্তিতে যে মূল্যবোধ, তা’র বিচার। সেই মূল্যবোধ যদি গ্রহনযোগ্য হয়, তাহলে তা’র উপর দাঁড়ানো ইতিহাসও গ্রহনযোগ্য হবে। স্বাধীনতা, সাম্য, শান্তি, ন্যায়বিচার ইত্যাদি বিশ্বের সকল সমাজে গ্রহনযোগ্য মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। আর তাই এসবের ভিত্তিতে রচিত+চর্চিত ইতিহাসও তাই গ্রহনযোগ্য ইতিহাস।

হাওয়ার্ড জিনের মতে ইতিহাস চর্চায় ঐতিহাসিকের অসততা নয়, মূল সমস্যা হচ্ছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ঘটনাকে বাদ দেওয়া বা কম প্রাধান্য দেওয়া। আর ঘটনার এই ‘গুরুত্ব’ অবশ্যম্ভাবীরূপেই নির্ণীত হয় মূল্যবোধের দ্বারা। এইখানে মূল্যবোধ নিয়ে দু’টো কথা না বললেই নয়ঃ মূল্যবোধ বলতে আমরা কি বুঝি?- সমাজবিজ্ঞানে মূল্যবোধ বলতে সমাজে প্রচলিত যেকোন বিষয় সম্পর্কে ‘সঠিক-প্রত্যাশিত-ভালো এবং ভুল-অপ্রত্যাশিত-খারাপ ধারণাসমষ্টি’কে বোঝানো হয়, যেমন আমাদের সমাজে বয়োজেষ্ঠ্যদের সম্মান করা আর ছোটদের স্নেহ করা, গরীব-অসহায়কে সাহায্য করা, বাবা-মা’র বাধ্য থাকা, কঠোর পরিশ্রম করা, ইত্যাদি সঠিক-প্রত্যাশিত-ভালো হিসেবে বিবেচিত। আবার এসবের উল্টোটি ভুল-অপ্রত্যাশিত-খারাপ।

হাওয়ার্ড জিনের ধারায় বিশ্লেষন করলে সহজেই বোঝা যায় কেন আমাদের দেশে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যগাঁথাই শুধু পাঠ্যে অন্তর্ভূক্ত হয় আর ব্যর্থতাগুলো হারিয়ে যায়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক থেকে আমাদের মূল্যবোধ্যের মধ্যে একটা মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আগে ঋণকে খুবই খারাপ একটা বিষয় হিসেবে দেখা হতো। একারণে পাঠ্যক্রমের মধ্যেও এমন সব আলোচনা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত ছিল যেখানে ঋণের খারাপ ফলাফলগুলোকে হাইলাইট করার মাধ্যমে জনগণকে ঋণগ্রহনে নিরুৎসাহিত করা হতো। গণি মিয়া নামের এক ধনী কৃষকের কাহিনী নিয়ে একটা গল্প ছিল যেখানে দেখা যায় যে, গণি মিয়া ঋণের টাকায় ব্যাপক ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দেয়। কিন্তু সময়মতো ঋণ শোধ করতে না পেরে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় আইনেও ব্যক্তি-পর্যায়ে ঋণ লেনদেন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই মূল্যবোধ বদলে গেছে। এখন ঋণকে বিবেচনা করা হচ্ছে উন্নয়নের উপায় হিসেবে। এমনকি মাইক্রো-ক্রেডিট নামের ‘চরম-দারিদ্র্য উৎপাদনযন্ত্রের আবিষ্কারক’ ডঃ ইউনূস ঋণকে সার্বজনীন মানবাধিকারের মতো মৌলিক অধিকার (!) হিসেবে প্রচার করে চলেছেন। কারণ, তার এবং তার অনুসারীদের দাবী অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করে। যেহেতু বড় বড় ডিগ্রীওয়ালা পন্ডিতরা ক্ষুদ্রঋণকে দারিদ্র্যনাশিনী বলছে, তাই এটা আমাদের সমাজ সঠিক বলে গৃহীত; যেহেতু এটি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয় তাই এটা ভালো এবং একই কারণে প্রত্যাশিতও বটে। ক্ষুদ্রঋণের পক্ষে আমাদের এই যে মূল্যবোধগত অবস্থান, এর কারণেই পাঠ্যবইয়ে শুধুই এর জয়গান, জনৈক সুফিয়া বা জাহানারাদের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ধনী হওয়ার কাহিনী; আর পুর্বের মুল্যবোধ থেকে উৎসারিত ভুল+খারাপ+অপ্রত্যাশিত ধারণার পক্ষে যায় ক্ষুদ্রঋণের এমন সব ফলাফল অনুপস্থিত। একারণেই গণি মিয়ার মতো হাজারো মানুষের ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হওয়ার কাহিনী পাঠ্য থেকে (এবং ইতিহাস থেকেও) ক্রমশঃ হারিয়ে গেছে+যাচ্ছে।

একই ভাবে, গার্মেন্টস শিল্পকেও আমাদের জাতীয় উন্নয়ণের তথা দারিদ্র্যমুক্তির জন্য অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে আমাদের মূল্যবোধ গার্মেন্টস শিল্পকে যেকোন ভাবে টিকিয়ে রাখার পক্ষে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায়ের আন্দোলনও তাই আমাদের সাধারণের বিবেচনায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী, কাজে কাজেই ভুল-অপ্রত্যাশিত-খারাপ। একারণেই পাঠ্যবইয়ে গার্মেন্টস শিল্পে কয়েক লক্ষ দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের বিবরণ অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে একে মহিমান্বিত করা হলেও এই শিল্প প্রকৃত অর্থে সেইসব মানুষকে দারিদ্র্য থেকে কতটা মুক্তি দিয়েছে, তাদের জীবনে কতটা স্বাচ্ছন্দ দিয়েছে সেই বিষয়ে পুরোপুরি নির্বিকার!

অতএব, আমাদের দেশে ক্ষুদ্রঋণ আর গার্মেন্টস শিল্পের যে ইতিহাস রচিত+চর্চিত হচ্ছে+হবে, তা’ অনিবার্য ভাবেই বিশেষ একটা মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত। এই মূল্যবোধটা হচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি আমাদের ঐক্যবদ্ধ জাতীয় লক্ষ্য, আর এই লক্ষ্য অর্জনের পথে ক্ষুদ্রঋণ আর গার্মেন্টস শিল্প হচ্ছে কার্যকরী পাথেয়।

আমি উপরে বর্ণনা করেছি যে, কোন ইতিহাস গ্রহনযোগ্য হবে কি না তা’ নির্ভর করে তা’র পেছনে অবস্থানকারী মূল্যবোধের গ্রহনযোগ্যতার উপর। তাহলে এবার দেখা যাক ক্ষুদ্রঋণ আর গার্মেন্টস শিল্প দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে আমাদের মাঝে ‘সঠিক-প্রত্যাশিত-ভালো’ বলে মূল্যায়িত তা’ কতোটা গ্রহনযোগ্য।

ক্ষুদ্রঋণের দারিদ্র্যনাশক ক্ষমতা কতোটা বাস্তব আর কতোটা বানোয়াট প্রপাগান্ডা তা’ এখন অনেকটাই প্রকাশিত। সাপ্তাহিক ২০০০ এর মে ২২, ২০০৯ সংখ্যায়(অনলাইনে আছে) প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ধনী হওয়া সুফিয়া বেগমের বহুল প্রচারিত পাকাবাড়িটির প্রকৃত মালিক এক মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী বাংলাদেশী। উক্ত সুফিয়া বেগম ১৯৯৮ সালে অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছে। একই সংখ্যায় আরো দুটি রচনা আছে ক্ষুদ্রঋণের মিথ্যাচার নিয়ে। (এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আমার একটা ব্লগ আছে এইখানে http://www.cadetcollegeblog.com/mahmudh/8159)। দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের কথিত সাফল্যের কাহিনী আসলে যে ভুয়া তা গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও (ইনিই স্বৈরাচারী এরশাদের সময় অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৮৪ সালে অসাংবিধানিকভাবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীন ব্যাংককে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের সরকারী অনুমোদন দেন) স্বীকার করে ক’দিন আগে এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, “ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য দূর করে না, বড়জোর সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে”!

তারমানে, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করে -এই ধারণা সঠিক নয়, অতএব ক্ষুদ্রঋণ প্রত্যাশিত নয়, ভালো ত’ নয়ই। কাজে কাজেই ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে আমাদের যে মূল্যায়ন এবং তা’র উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বর্তমান পাঠ্য ইতিহাস ‘গ্রহনযোগ্য নয়’।

গার্মেন্টস শিল্পে যেসকল মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তাদের অবস্থা পর্যালোনা করলে এই শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য মুক্তির বিষয়টা পরিষ্কার হয়। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকার সাথে গার্মে্নটসের একটা মৌলিক পার্থক্য আছেঃ ক্ষুদ্রঋণ যেখানে কৃতিত্ব দাবী করে দারিদ্র্য দূর করার, গার্মেন্টস শিল্পের কৃতিত্ব সেখানে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকার। অর্থ্যাৎ, গার্মেন্টস শিল্প নিঃস্ব মানুষদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেঁচে থাকার উপায় করে দেয়। কিন্তু সেই বেঁচে থাকাটা কেমন?- প্রতিদিন ১৫/১৬ ঘন্টা অবিরাম হারভাঙ্গা খাটুনির পর মাস শেষে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, যা’ এই সময়ে এমনকি বস্তিতে থাকার জন্যও অপর্যাপ্ত।এর পরেও যখন গার্মেন্টস মালিকদের কেউ কেউ সেই সামান্য মজুরি প্রদানে টালবাহানা করে, বকেয়া রেখে অকষ্মাৎ কারখানা বন্ধ করে দেয় বিনা নোটিশে তখন শ্রমিকদের সেই পাওনা আদায়ের জন্য না আছে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন, আর না আছে ইচ্ছা। এমতাবস্থায় নিরূপায় হয়ে প্রতারিত শ্রমিকরা রাস্তায় নামা ছাড়া আর কি করতে পারে। কিন্তু তখন সেই শ্রমিকদের শায়েস্তা করার জন্য কিন্তু রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও ইচ্ছে কোনটারই কমতি নেই। আর তাই পাওনা বকেয়া রেখে গার্মেন্টস মালিকরা দুবাই কি ব্যাংকক ভ্রমনে গেলেও রাষ্ট্রের কোন মাথা ব্যাথা নেই, কিন্তু শ্রমিকরা রাস্তায় নামামাত্র পুলিশ-র‌্যাবসহ যাবতীয় শক্তি নিয়ে রাষ্ট্র ঝাপিয়ে পড়ে উন্নয়নের তথা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কথিত হাতিয়ার গার্মেন্টস শিল্প রক্ষার নামে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হুশিয়ার করেন আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।

যে ধারণার ভিত্তিতে গার্মেন্টস শিল্পে মালিকদের পক্ষে আমাদের মূল্যবোধগত অবস্থান যে, গার্মেন্টস শিল্প নিঃস্ব মানুষদের খেয়েপড়ে বাঁচার মত কর্মসংস্থান দিচ্ছে, সেই খাওয়া-পড়ার উপায় তথা মজুরী পাওয়ার নিশ্চয়তাই যদি না থাকে তাহলে সেই মূল্যবোধের গ্রহনযোগ্যতা অনিবার্যভাবেই নিঃশেষ হয়। তারমানে, যে মূল্যবোধের কারণে আমাদের শিল্পমালিকদের প্রতি সহানুভূতি আর শ্রমিকদের প্রতি ঔদাসিন্য, তা ভুল+অপ্রত্যাশিত+খারাপ। অতএব, এই বিষয়ে বর্তমান পাঠ্যসমূহের বয়ান গ্রহনযোগ্য নয়।

উপরের আলোচনায় আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি কেন নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চা সম্ভব নয় এবং আমাদের বর্তমান পাঠ্যে অন্তর্ভূক্ত ক্ষুদ্রঋণ ও গার্মেন্টস শিল্প বিষয়ক ইতিহাস গ্রহনযোগ্য নয়। তাহলে কি ইতিহাসের চর্চা ছেড়ে দিতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের জানা দরকার ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তাটা কি।

ইতিহাস চর্চার প্রয়োজন গ্রহনযোগ্য মূল্যবোধের আলোকে সমাজবদলের স্বার্থেই। মানুষের সমাজ মানুষই গড়ে, মানুষই ভাঙ্গে। এই ভাঙ্গাগড়ার খেলায় মূল নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করে সমাজে সর্বজনগ্রায্য মূল্যবোধ- শ্রমের মর্যাদা, স্বাধীনতা, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, ইত্যাদি। পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা-ঐক্য-ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে যে সমাজ, সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের উপর গড়া সমাজের তুলনায় তা’ বাস্তবিক কারণেই অধিক কাম্য। আর তাই সেইসব মূল্যবোধের ভিত্তিতে যে ইতিহাস, তথা বর্তমানে অনুল্লেখিত-অবহেলিত ইতিহাসকে যথাযথ ‘গুরুত্ব’ দিয়ে আমাদের পাঠ্যে নিয়ে আসতে হবে।

মোটকথা, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষদের কথাগুলোকে, আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথাগুলোকে যথাযথ ‘গুরুত্ব’ দিয়ে পাঠ্যক্রমে নিয়ে আসতে হবে যা’তে সার্বজনীন মূল্যবোধের ভিত্তিতে সকলের জন্য (অন্ততঃ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের জন্য) উৎকৃষ্ট একটা সমাজ গড়া যায়।

৪,৪৮২ বার দেখা হয়েছে

৪৯ টি মন্তব্য : “আমার ইতিহাস ভাবনা”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    কোন কারন ছাড়াই, এম্নেই- ট্রেড ইউনিয়ন নিয়া দুইটা কথা কই...
    কেন জানি খুব কইতে ইচ্ছা করতেছে... ;;)

    বাংলাদেশের ট্রেড-ইউনিয়নের কিছু অদ্ভূত বৈশিষ্ট্যঃ

    ১। রাজনৈতিকঃ পশ্চিমা দেশগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রভাবিত করে, অথচ বাংলাদেশে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।

    ২। দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তিঃ বেকারত্বের কারনে বাংলাদেশের ট্রেড-ইউনিয়নগুলোর সাংঘঠনিক ভিত্তি খুব দুর্বল।

    ৩। অর্থনৈতিকঃ বৈধ/ বিধিসম্মত হরতাল শ্রমিকদের অধিকার। অথচ অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারনে তারা এই অধিকারের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারে না। (অন্ততঃ দীর্ঘদিনের জন্য তো অবশ্যই নয়)

    ৪। শিক্ষাঃ শিক্ষার অভাবের কারনে বেশির ভাগ শ্রমিকই তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। তারা মূলত তাদের নেতাদের কথামতই সবকিছু করে থাকে।

    ৫। 'আপন প্রাণ বাঁচা' টাইপ নেতাঃ শ্রমিক নেতাদের বেশিরভাগই নিজের আখের গোছানোয় ব্যস্ত থাকে। সুতরাং এদের দ্বারা সাধারন শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই হয় না।

    সবচেয়ে ভয়ংকর এবং দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ট্রেড-ইউনিয়ন পশ্চিমা দেশ সমূহে শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক ফল...অথচ বাংলাদেশে এটির সৃষ্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর চাপে কিংবা শ্রমিক আইনের প্রয়োগের ফলে।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    খুব সহজ ভাষায় লেখা চমৎকার এই প্রবন্ধ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।ফুকো মাহমুদ ভাই(ক রা-ফয়েজ ভাই) বস!
    অ ট-মাহমুদ ভাই কি এখনো চিরকুমার সভায় আছেন নাকি ছুটি হয়া গেছে?জোর গুজব শুঞ্ছি আপ্নে নাকি আহসান ভাইয়ের লাইন ধরছেন?

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    শ্রমিক অসন্তোষের ফলে সৃষ্ট দাঙ্গায় মালিকের ব্যাপক লাভ হতে পারে...
    ১। এম্নিতে/অবৈধভাবে কাজ বন্ধ রাখলে (লে অফ/ লক আউট) শ্রমিকদের মজুরি, ভাতা দিতে হয়। কিন্তু বিয়াপক গিয়াঞ্জাম, ভাংচুর হলে এই ঝামেলা নাই...(আবার ইন্সুরেন্স করা থাকলে ক্ষতিপূরণও পাওয়া যায়, অর্থাৎ ডাবল লাভ!!)
    ২। ফৌজদারী মামলা খাওয়া বা মালিকের সম্পদের অনিষ্টকারী শ্রমিকদের ছাঁটাই করার সময় কোন বেনিফিট (গ্রাচুইটি, পেনশন ইত্যাদি ইত্যাদি) দেয়া লাগে না...

    এসব চিন্তা করলে গার্মেন্টস সেক্টরের দাঙ্গার পেছনে মালিকদের হাত থাকার ব্যাপারটিও উড়িয়ে দেয়া যায় না... ;;;


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    অনেকদিন পরে মাহমুদ ভাই । স্রোতের বিপরীত স্রোতটা চিনিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । আপনার লেখা সবসময়ই নতুন ধরনের চিন্তা তৈরি করে । মজার ব্যাপার আপনি কখনো সরাসরি কোন সমাধান দেন না । দোআ করি আপনার চিন্তা-ভাবনা এরকম পরিষ্কার থাকুক সবসময় । শুভকামনা রইলো ।

    জবাব দিন
  5. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    মাহমুদ
    বরাবরের মত সুন্দর লেখা। গার্মেন্টস নিয়ে যা যা বলেছো স্বীকার না করে উপায় নেই। তারা ১৫/১৬ ঘন্টা পরিশ্রম করে যা পায় নিতান্তই অপ্রতুল এবং এটা শোষন বই আর কিছু নয়। তবে তুমি যেই মুল্যবোধের কথা বলছো সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। এটা আমার মতে মুল্যবোধের ব্যাপার নয়, এটা আমাদের গণতন্ত্রের ত্রুটিগত সমস্যা। এটা নিয়ে আমি কিছুটা বলেছিলাম আমার শেষ লেখায়। এই শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা এরা সকলে মিলে দেশের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এ কারণে যে সংখ্যাগরিষ্ঠের জনগণের কথা বলছো তাদের জন্য কোন নীতি আসে না। আমাদের শুধু ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, এর বাহিরে সাংবিধানিক ভাবে আর কোন অধিকার নেই। কিন্তু ভোটের সময় আমরা প্রতারিত হই। ভোটের সময় শিয়ালের কুমিরের ছানার মত কিছু লোক ঘুরেফিরেই আসে। গত আটত্রিশ বছর ধরে এটা চলে আসছে আমাদের দেশে। এই সমস্যা অবশ্য শুধু আমাদেরই নয়। এই ডকুমেন্ট্রীটা দেখতে পারো। বেশ বড়। পুরো ডকুমেন্ট্রীর সব বক্তব্যের সাথে একমত না হলেও মুল কন্সেপ্টটা আমার ভাল লেগেছে। এই চেইনটা যদি ভাঙ্গা যায় তবে কিছু একটা পরিবর্তন আসতে পারে। না হলে এভাবেই চলতে থাকবে।
    তবে বাস্তবতার কথাও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের দেশের যা সম্পদ, উৎপাদন এবং জনসংখ্যা এ নিয়ে আমাদের পক্ষে সত্যিকার ভাবে কতটুকু করা সম্ভব আমি জানি না। আমার নিজের একটি প্রশ্ন ছিল, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু আয় কিভাবে বাড়ানো সম্ভব- এ নিয়ে যদি একটি বিস্তারিত পোষ্ট দাও খুশি হব। তুমি যেই গার্মেন্টস কর্মীদের কথা বলছো এ রকম আওক্ল ক্ষেত্রেই আছে। যেমনঃ দৈনিক মুজুরী ভিক্তিক শ্রমিক, রিক্সাচালক, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী সকলে। এমনকি মধ্যবিত্তের যা আয় তাতেও ভদ্রভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়ে উঠে না। এই পুরো দেশের আয় কিভাবে বাড়ানো সম্ভব? দেশের জিডিপি কিভাবে বাড়ানো সম্ভব?

    তারমানে, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করে -এই ধারণা সঠিক নয়, অতএব ক্ষুদ্রঋণ প্রত্যাশিত নয়, ভালো ত’ নয়ই।

    তোমার ক্ষুদ্রঋন নিয়ে বিশ্লেষনের সাথে কিছুটা দ্বিমত করছি। অর্থনীতির ভাষায়, তুমি কিছু করতে চাইলে তোমার অর্থের প্রয়োজন। তোমার যদি অর্থই না থাকে তবে তোমার সম্ভাবনা হচ্ছে শুন্য। এখন আমি অর্থ পেলে কিছু করার সম্ভাবনা থাকে, যা শুন্যের চেয়ে বেশি। কথা হচ্ছে সেখানে। তবে ঋন নিয়ে সবাই সফল হবে, লাভবান হবে, সে রকম আশা করাও বোকামী। কিন্তু ঋন কোন কাজে আসবে না এই কথাটি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এই যে এত ব্যাবসা, কারখানা, সবইতো কোন কোন ভাবে ঋন নিয়ে গড়া। তবে হ্যাঁ, প্রশ্ন হতে পারে গ্রামীন ব্যাংক যে প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালায় তা কতটুকু ফলপ্রসু, আরা তারা যতটুকু দাবী করে তা কতটুকু সত্য। সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছি, পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে।

    লেখার জন্য আবারো ধন্যবাদ তোমাকে।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      মোস্তফা ভাই,
      আপনার মন্তব্যগু্লো সব সময়ই আমার চিন্তাধারাকে আরো পরিষ্কার করে।
      গণতন্ত্রের সিস্টেমিক সীমাবদ্ধতা বিষয়ে আপনার সাথে একমত।

      কিন্তু ঋন কোন কাজে আসবে না এই কথাটি মেনে নেওয়া কষ্টকর।

      এটা আমার পোষ্টের মূল বক্তব্যের সাথে যায় না। মূল বক্তব্যটি হলোঃ ইতিহাস নিরপেক্ষ নয়+একটা দিককে হাইলাইট করে (ক্ষুদ্রঋণের সুফল), আরেকটা দিককে ইগনোর করে (ক্ষুদ্রঋণের কুফল)। এটা নির্ভর করে আবার বিদ্যমান মূল্যবোধ কোন অংশকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তা'র উপর।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)
        এটা আমার পোষ্টের মূল বক্তব্যের সাথে যায় না।

        তোমার পোষ্ট এর মূল সুরের সাথে আমি একমত। ইতিহাসের নিরপেক্ষতার কথা যা বলেছো সেটার সাথে আমি দ্বিমত পোষন করছি না। যদিও সত্যিকারের নিরপেক্ষতাও যে অবাস্তব সেটাও তুমি স্বীকার করেছো। এ কারণেই এই বিষয়ে তেমন বলার কিছু নেই।

        কিন্তু আমার দ্বিমত ছিল, তোমার উপসংহারে। তুমি ইতিহাসের নিরপেক্ষতার কথা বলেই শেষ করনি, শেষ করেছ সিদ্ধান্ত প্রদান করে। "তারমানে, ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচন করে -এই ধারণা সঠিক নয়, অতএব ক্ষুদ্রঋণ প্রত্যাশিত নয়, ভালো ত’ নয়ই।" তুমি যেই যুক্তি দিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছো সেই যুক্তি আমার কাছে বেশি জোরালো মনে হয়নি।

        জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ও হ্যাঁ, আরেকটা বিষয় চোখে পড়ল-

      অর্থনীতির ভাষায়, তুমি কিছু করতে চাইলে তোমার অর্থের প্রয়োজন।

      এখানে মনে হচ্ছে আপনি অর্থ (money) বলতে 'পুঁজি' (capital) বোঝাতে চেয়েছেন। এই দুটোর মাঝে কিন্তু মৌলিক পার্থক্য আছে। অর্থ মানেই পুঁজি নয়, আবার পুঁজি মানে শুধুই অর্থ নয়। এ বিষয়ে আরেকদিন কথা হবে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  6. নাঈম (৯৪-০০)

    মাহমুদ ভাই, খুব ভালো লেগেছে। এই দুইটা বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবা উচিত। ক্ষুদ্রঋন যে কি পরিমান মানুষকে ভোগায় তা গ্রামে গেলে বুঝা যায়। এটা একদম সত্য বলেছেন, ইতিহাস নিরপেক্ষ না।

    জবাব দিন
  7. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    এত ঝামেলা না কইরা ইতিহাস নিয়া ঘাটাঘাটি না করলেই তো হয়। ইতিহাস ব্যাটা থাকুক তার মত, আমরা আমাদের মত চলি। যা ঘটে গেছে তাতো আর বদলানো যাবে না, বড়জোড় একটা "কেস স্টাডি" টাইপ হতে পারে। কিন্তু কেসের আবার রিপিটেশন নাই, সব কেসই এক একটা ইউনিক কেস।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  8. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আপনার পোস্ট পড়লে আমার দু'টা লাভ হয়। অনেক বিষয় যা পাঠ্যে পড়ি নাই, বিশেষ করে অর্থনীতি, সমাজ নিয়ে, সেগুলো সম্বন্ধে একটা প্রাথমিক জ্ঞান পাই। এতে করে আগ্রহ বাড়লে পরের পড়াশুনাগুলো নেট ঘেঁটে করে ফেলতে পারি।

    আরেকটা লাভ হলো, স্বল্প-জানা কিছু বিষয়ে নিজের যে ধ্যান-ধারণা সেগুলো পল্‌কা থাকে। আপনার লেখা পড়ে সেটা বেশ মজবুত হয়। কেউ হুট করে বিরোধিতা করলে নিজের বক্তব্যকে জোর দিয়ে উপস্থাপন করতে পারি তখন।

    এই পোস্টটাও খুব ভালো লাগলো। ইতিহাসের পক্ষপাতের কারণ মূল্যবোধের পাশাপাশি মনে হয় ক্ষমতায়নও জড়িত। আলেকজান্ডারের বীরত্বের চাইতে তার নৃশংসতা কম উচ্চারিত/পঠিত/উল্লেখিত হয় যে কারণে।

    জবাব দিন
  9. তানভীর (৯৪-০০)

    স্রোতের বিপরীতে চিন্তা করার জন্য অনেক কিছু জানা লাগে, দুঃখের কথা আমি তেমন কিছুই জানিনা। আপনার লেখাগুলা আমাকে অনেক সাহায্য করে বিষয়গুলো জানার জন্য, বুঝার জন্য।

    অনেক ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই।

    জবাব দিন
  10. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)

    ইতিহাস ক্ষমতাসীনদের দ্বারাই রচিত হয়। তাই নিরপেক্ষতার প্রশ্নই আসেনা। আর সত্যি বলতে স্বপ্নে এই দেশকে দেখি, কিন্তু এই দেশকে নিয়ে কোন সপ্ন আর দেখার সাধ জাগেনা। যারা স্বপ্ন দেখায় তারা রাজনীতিবিদ আর ভন্ড, আর যারা স্বাপ্নিক তারা নেশাগ্রস্ত। কথাগুলো আবেগমিশ্রিত তথাপি সত্য এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাই নিজের অবস্হানকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা না করে চলুন সকলে একযোগে চেষ্টা করি এই দেশকে ন্যায় ও সাম্যের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      শিশির,
      বুঝতে পারছি আরো অনেকের মতো তুমিও ফেড-আপ আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে।

      কিন্তু একটা বিষয় সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, আর তা' হলো- নেতৃত্বের অবস্থানে (আরো নির্দিষ্ট করে বললে- ক্ষমতার কেন্দ্রে) গেলে প্রায় হুবহু একই রকম আচরণ করে; অনেকটা টাইপড, সিস্টেম্যাটাইজড। এর কারণ কি?


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  11. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপনার সব লেখাই আমি খুব যত্ন করে পড়ি। এটা একটু দেরিতে হলেও খুব যত্ন করে পড়লাম এবং যথারীতি খুব কাজে দিল।
    সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মূল্যবোধ কাকে বলে এবং সেই মূল্যবোধের সাথে ইতিহাসের সম্পর্কটা কোথায়- একেবারে ক্লিয়ার। অনেক ধন্যবাদ।
    আরেকটা কথা হল আপনার লেখা থেকেও অনেক রসদ পাওয়া যায়। এই যেমন এখান থেকে হাওয়ার্ড জিন এবং লুডলো গণহত্যা-র কথা জানলাম। নেটে নিশ্চয়ই আরও খুঁজে এগুলো নিয়ে আরও জানবো।

    কিন্তু আমাদেরে দেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এ ধরণের ব্যতিক্রমী ইতিহাস এর কথা চাইলেই পাওয়া যায় না। আপনার লেখাগুলোই সেদিক দিয়ে আমাদের পাথেয়।
    আশাকরি আপনি দেশে থেকেই এ বিষয়ে গবেষণার একটি চমৎকার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবেন।

    জবাব দিন
  12. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বস, পোস্ট টা অনেক আগে পড়ছিলাম। সময়ের অভাবে কিছু বলা হয়ে উঠেনি।
    ইতিহাস ব্যাপারটা বরাবরই আমার কাছে রহস্যময়। ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গেলে যে ভাবনা আমার মনে প্রথমে আসে সেটা আপনার পোস্টের ফোকাস থেকে একটু সরে গেছে।কিংবা হয়তো পরবর্তীতে আসবে। আপাতত আমার ভাবনা টুকু বলে যাই, ইতিহাস রচিত হয় বিজয়ীদের ড্বারা অতএব ইতিহাস বিজয়ীদের কথা বলে- বহুল প্রচলিত এই কথাটাই ইতিহাসের পুরা গেরোটা ধরিয়ে দেয়।
    একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর ইংরেজদের খারাপ দিকগুলো যতটা ফোকাস হয়েছে তারা থাকতে সেটা ফোকাস হবার সুযোগ হয়ে উঠেনি। অনুমান করা যায় ইংরেজ আমলে তার আগের শাসকদের অত্যাচারী রূপে সাজিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার মনে হয় একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব(সময়ের) গেলে বিজয়ী বিজিতের সুস্পষ্ট সীমারেখার পতন ঘটে তার ফলে ইতিহাস পরিশোধিত হবার সম্ভাবনা থাকে।
    আবার আরেকটি বিষয় , আমার কাছে দৃষ্টি কটু লাগ্বে ইতিহাসগুলো খুব সুন্দরভাবে রাজারাজরা কেন্দ্রিক হয়ে উঠে। গণমানুষের গল্পের স্থান সেখানে গৌণ হিসাবে আসে কিংবা আসলেও সেটা শাসকদের পূজা করতে যেমন " শয়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত" এখথা কিছু সেনস করে না , বুঝা যায় না সাধাড়ণ মানুষ কয়জনের এক টাকা ছিল বরং বুঝা যায় শায়েস্তাখাঁ দক্ষ শাসক ছিলেন। অনুমান করা যায় হয়তো বা শায়েস্তা খাঁর আমলে কৃষকরা বঞ্চিত ছিল। কিন্তু এই অনুমানের স্বপখ্ষে বা বিপক্ষে ইতিহাস বেত্তারা সঠিক তথ্য দিতে পারেন না যতটা পরেন কোন সম্রাট কোন মাঠে কোন রাজ্য জয় করেছিলেন।
    আমর বক্তব্য রিলেটেড আপনার ভাবনা জানতে ইচ্ছা করছে। তারপরে এই বিষয়ে আরো কিছু বলার আশা রাখি।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      আমর বক্তব্য রিলেটেড আপনার ভাবনা জানতে ইচ্ছা করছে।

      তোমার এই বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। তবে এটা আমার পোষ্টের মূল বক্তব্য থেকে খানিকটা আলাদা, তুমি ঠিকই ধরেছো।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  13. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    চমৎকার লেখা মাহমুদ!
    পুরোটা আরেকবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
    ইতিহাসের কথা আর কি বলবো ভাই? আমার চোখের সামনে দেখা অনেক ঘটনাও আমি প্রচার মাধ্যমে ভিন্নভাবে লিখতে দেখেছি।
    ইতিহাস প্রসঙ্গে আমিও অনুরূপ একটা লেখা লেখার কাজে হাত দিয়েছি। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।

    জবাব দিন
  14. মোহাম্মদ গোলাম রববানী

    মাহমুদ ভাই

    বাস্তবসম্মত ও সাহসী বক্তব্য। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আমি কিছুদিন কাজ করেছিলাম। তখন আমি যা জেনেছিলাম, তা আপনার বক্তব্যকে সমর্থন করে। লেখাটি কোনো জার্নাল বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার।

    তবে, ইতিহাসের ছাত্র বলেই হয়তো পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য ইতিহাসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে আমার খানিকটা ভিন্নমত আছে। যেমনটি এই প্রবন্ধ থেকেই উদ্ধৃত করা যায়- "হাওয়ার্ড জিনের মতে ইতিহাস চর্চায় ঐতিহাসিকের অসততা নয়, মূল সমস্যা হচ্ছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ঘটনাকে বাদ দেওয়া বা কম প্রাধান্য দেওয়া। আর ঘটনার এই ‘গুরুত্ব’ অবশ্যম্ভাবীরূপেই নির্ণীত হয় মূল্যবোধের দ্বারা।" আর অধ্যাপক হাওয়ার্ড জিন যা করেছেন সেটাই ইতিহাস বা ইতিহাসের কাজ। এভাবেই প্রতিনিয়ত ইতিহাস পুনর্গঠিত (reconstruct) হয়। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ঘটনাকে বাদ দেওয়া বা কম প্রাধান্য দেওয়া'র চলমান বিষয়গুলো যেহেতু মূল্যবোধ বা সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত, তাই এতে ইতিহাসের দায় নেই, বরং আগামী দিনের ইতিহাসই এই বিষয়টি ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানিয়ে দিবে। আর হাসান মাহমুদ এর আজকের এই লেখাটিই হবে সেদিনের ইতিহাস।

    ভাবছেন, ভাবাচ্ছেন। তার জন্য সালাম, মাহমুদ ভাই।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।