টুকিটাকি

১. কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ক্লাস সেভেনের এক অতি সরল বালকের গাইড হলো ক্লাশ ৮ এর এক বিশাল ভাবিষ্ট সিনিয়র। গাইডের ভয়ে কম্পমান সেই বালকের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান ছিল গাইডকে খুশী করা, আর গাইড সুযোগ খুজতেন কিভাবে তার ফলোয়ারকে দৌড়ের উপর রাখা যায়। ফলাফল তাদের মধ্যে সবসময়ি লেগে থাকা ইদুর বিড়াল খেলা । উদাহরণটি দেখুন –

-ভাইয়া স্লামুয়ালাইকুম (গদ্গদ হয়ে)
ওয়ালাইকুম (অন্যদিকে তাকিয়ে)
ভালো আছেন ভাইয়া (কাচুমাচু হয়ে)
তুই কি চাস আমি খারাপ থাকি ? (এবার কড়া চোখে তাকিয়ে)

২। সাঈদ আহমেদ স্যার ইংরেজী পড়াচ্ছিলেন । হঠাৎ খেয়াল করলেন পিছন দিকে বসা একজন শার্টের পিছন দিকে হাত ঢুকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে পিঠ চুলকাচ্ছে, স্যার পড়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন – “এই যে আপনি কি করছেন ? চুলকান ?”
-না স্যার খাউজাই। আমাদের বন্ধুর ভাবলেশহীন উত্তর।

৩। আমরা তখন ১২ এ। ভূগোল ক্লাশে একদিন ম্যাডাম বললেন আমি তোমাদের কাছ থেকে একটা পরামর্শ চাই, তোমরা কি কিছু মনে করবে?
ম্যাডাম এর সাথে যদিও আমাদের কখনোই তেমন একটা ভাল সম্পর্ক ছিল না, তারপরো একজন ম্যাডাম আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, আমাদের গুরুত্ব দিয়েছেন কাজেই আমরা খুব উৎসাহ নিয়ে বললাম “না ম্যাডাম, আমরা কিছু মনে করবো না, আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন।
আশ্বস্ত হয়ে ম্যাডাম বললেন আচ্ছা আমি যদি এখন থেকে পর্দা করি মানে পর্দা করে আসি তাহলে কি তোমরা সহজভাবে নিতে পারবে বিষয়টাকে ?
আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম ম্যাডাম আসলে কি বলতে চাইছেন; কারণ কলেজে ম্যাডামরা শাড়ী পড়েন আর এর মধ্যেতো পর্দাহীনতার কিছু নাই। আমরা সমস্বরে বললাম ম্যাডাম ক্লীয়ার না, একটু বুঝিয়ে বলবেন ? ম্যাডাম এবার একটু গলা খাকরি দিয়ে, লাজুক হেসে বললেন “না, মানে আমি যদি এখন থেকে বোরখা পড়ি মানে বোরখা পড়ে আসি, সেটাই বলছিলাম আরকি” ।
মতামত দিব কি, কলেজের ভিতরে আপাদামস্তক কালো কাপড়ে মোড়া কেউ একজন আমাদের সাথে ডাইনিং হলে খাবে, ক্লাস নিবে, সময় সময় ঝারিও মারবে, এই পুরো প্যাকেজটা বুঝে উঠতে আমাদের বেশ কিছুক্ষণ লেগে গেল। তারপর যখন কিছু একটা বলব বলব করছি ঠিক তখনি দেখি আমার পাশ থেকে শফিক উঠে দাড়িয়ে বলছে, “ম্যাডাম আপনি কম্বলিং করে আইসেন, কোনো সমস্যা নাই”। ওর কন্ঠ থেকে ঝরে পড়ছিল বিরক্তি।

৪। হাউস মাষ্টার ইন্সপেক্টশন চলছিল । পুরো রুম টিপটপ, কোথাও কোন ময়লা নাই। হাউস মাষ্টার স্যার সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যাবেন, ঠিক এই সময় মকবুল হোসেন স্যার শাওনের (ছদ্ম নাম) লকারের দিকে এগিয়ে গেলেন। মুখে চকচকে হাসি। রুমমেটদের চোখে মুখে উদ্বেগ।
লকার থেকে নীল রঙ্গের একটা বস্তু বের করে স্যার চিতকার করে উঠলেন “শাওওওওওওওওওওওওন এইটা কি? ”
-স্যার আন্ডার ওয়্যার।
-তাতো বুঝলাম, কিন্তু জিনিস্টা কি কটন না সিল্ক? (এক হাত দিয়ে ধরে আছেন আর অন্য হাত দিয়ে পরীক্ষা করছেন)
– স্যার পিওর সিল্ক আমার চাচা রাজশাহী থেকে কিনে আনছেন। শাওনের তরিৎ উত্তর। ক্লাস সেভেনের শাওন তখনো সিল্ক আর কটন এর পার্থক্য জানতো না। আর স্যার যেভাবে গর্জন করেছেন তাতে ও ভেবেছে সিল্ক বলাটাই সম্ভবত নিরাপদ।

৪,৩১৩ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “টুকিটাকি”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মনটা ভাল ছিল, তোর লেখা পইড়া খারাপ হইল... 😛
    কলেজের টুকিটাকি মজার ঘটনাগুলো পড়তে ব্যাপক লাগে... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দারুন মজা পেলাম লেখাটা পড়ে :)) :))

    ( ভূগোলের ম্যাডাম কি বরিশাল থেকে গিয়েছিলেন?)


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. শিরীন (৯৬-০২)

    হায়রে স্যার ! একবার ইনস্পেকশনের সময় প্রিন্সিপাল স্যার ব্লকের মাথায় দাঁড়ায়ে হাউস প্রিফেক্টের সাথে কথা বললেন অনেকক্ষণ । আসলে উনি নাকি টবের গাছের পাতায় কোন ময়লা আছে কি না তাই দেখতেছিলেন 😕

    জবাব দিন
  4. তানভীর (১৯৯৫-২০০১)

    কলেজের টুকিটাকি পড়তে বরাবরই ভাল লাগে। ধন্যবাদ ফ্রিদ।
    অফ টপিক, ঐদিন কাজিপাড়ায় রেজা, আমি আর সারোয়ার ভালই জমাইছিলাম, তুই তো বেটা ঘুমাইয়া পড়লি। সারোয়ারের অনেক গোপন গল্প মিস করছিস। 😉 😉 😉 😉

    জবাব দিন
  5. মাহবুব (৯৯-০৫)

    আমার ছোট একটা গল্প শেয়ার করি
    এক প্যারেন্টস ডে'র পরে গাইড রুমে আসছে খবর নেওয়ার জন্য ।ভাবলাম তারে একটু পাম দিয়া ফুলাই যাতে পানিশমেন্ট একটু কম দেয়। ~x( ~x(
    যথারীতি ।। ভাইয়া আম্মু আপনার জন্য এই চিকেন ক্রাম গুলা আনছে। 😡
    তিনি ।। কই দেখি B-) B-)
    দেওয়ার পর পুরাটাই সাবার করল 😡 , আর আমিও ভাবলাম যাক আজকে একটু শান্তি
    কিন্তু না ক্লাইমেক্স তখনো বাকি :((
    কিছুখন পর আমদের এক ক্লাস মেট তোমাকে না**** ভাই ডাকছে ১১২ তে
    যাওয়ার পর কোনো কয ছারাই আমার ক্যাডেট জীবনের মোটামুটি সরনীয় একটা মাইর খাইলাম......।
    জুনিয়রের পাম সব সময়ই ব্রিথা যায় 😛 😛

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।