কোথায় আলো জ্বেলে অপেক্ষায় বসে আছে আমার বিদায় উৎসব তোরণ! কে জানে কোন ক্ষণে আমি পৌঁছে যাবো সেইখানে। আমার প্রস্থান লগ্নটিকে ছুঁয়ে দিতেই বুঝিবা নিভে যাবে তার সমস্ত আলোকসজ্জা।
টিকিটের গায়ে অদৃশ্য গন্তব্য স্টেশনের নামটি ঠিক ঠিক বুঝি তখনই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে – আমার যাত্রাশেষের ইংগিত আলোকবর্তিকার মতোন। অদৃশ্য ট্রাফিক হাতের ইশারা বলবে যখন, থামো। এটাই শেষ স্টেশন। নামো।
ভালোবেসে যা কিছু প্লাবন এনেছো মাটির গায়ে পাললিক আহলাদে,
~ দৃশ্যপট : দৃশ্যের পর দৃশ্য, দৃশ্যের পর দৃশ্য …… দৃশ্যের অন্তর্ধান ~
~ দৃশ্য-এক
দীনবন্ধু মিত্র যখন নীলচাষীদের কান্নার ধ্বনিকে শব্দের সৌকর্যে সাজালেন কালোত্তীর্ণ সাহিত্য উপস্থাপনায় তখন রাজা রামমোহন বললেন “নীলচাষের জমির নিকটবর্তী অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান অন্যান্য অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের তুলনায় উন্নততর। নীলকরদের দ্বারা হয়তো সামান্য কিছু ক্ষতি সাধিত হতে পারে, ……. নীলকর সাহেবগণ এদেশীয় সাধারণ মানুষের অকল্যাণের তুলনায় কল্যাণই করেছেন বেশী”। দ্বারকানাথ বাবু বললেন, “নীলচাষ এদেশের জনসাধারণের পক্ষে সবিশেষ ফলপ্রসূ হয়েছে। জমিদারগণের সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষকদের বৈষয়িক উন্নতি সাধিত হয়েছে।” বৃটিশ শাসনের কল্যাণে এভাবে পশ্চিমা সুবাতাসে যখন আধুনিক ভারত জন্ম নিচ্ছিল গ্রাম্য কৃষকদের জীবন-শ্রম-ঘামের বিনিময়ে।
বিস্তারিত»~ সেই ফাগুনের অপেক্ষাতে ~
শুকনো পাতার মতোন
কুঁকড়ে আছে অপেক্ষার সময় সব
সানকিতে সাদা ফুল
রঙধনুর চেয়ে কিছু বেশী রঙ
মেখে সবুজাভ
আসবে বসন্ত সময় নয় শুধু
মানুষের উৎসবে
কলরব মুখরিত দীপ্রতার
হুল্লোড়ে জীবনের
টক ঝাল মাখা প্রাণবান গান নিয়ে
ভাস্কর্যের মগ্নতায়
আছি স্থির সেই ফাগুনের অপেক্ষায়
(য তি চি হ্ন হী ন – তি ন)
বিস্তারিত»আমি আর উনি
আমি আর ইশ্বর
সম্মানজনক দূরত্বে থাকি
উনি বাগানে, আমি বাড়িতে…
ওনার পাইক পেয়াদারা
এই দূরত্বকে বুঝতে নারাজ
সাত বেলা বিরক্ত করে, প্রতিদিন
আমার পোশাকে, খাবারে, পানীয়ে
সর্বত্র আগ্রাসন তাদের …
উনি থাকেন বাগানে, আমি বাড়িতে
ক্রমাগত বাগান বাড়ছে
আমার ছোট্ট এক ফোটা বাড়ি
তা নিয়েও তার পেয়াদাদের
লোভের অন্ত নেই।
উনাকে যতবার জিজ্ঞাসা করি
পেয়াদাদের লোভ কি,
~ স্মৃতির আসমান সাঁতারু অভিমান ~
বাঁ বুকের পকেট থেকে
ভাঁজ খুলে চিঠিটাকে মেলতেই
ঝুপঝাপ লাফিয়ে বেরুলো
ডজন তিনেক নীল রঙের শব্দ।
ঠিক হাত ফসকে ছিটকে পড়া
ক’খানা ছুটন্ত মুড়ি-মুড়কির মতো।
সেই ছত্রিশ শব্দে গভীর বোনা ছিল
বলা না বলা প্রায় শতেক অভিযোগ।
অকস্মাৎ তিরিশ বছর পর
কোন মলাটের ভেতর থেকে
পুরোনো সেই চিঠিটা আজ
বেরিয়ে এলো হঠাৎ আবার।
~ চাঁদে জীবন কাঁদে ~
স্বপ্ন সিঁড়ি
আঁকতে
আঁকতে
গেছি উঠে
চাঁদে
ফ্রেমবন্দী এক
আকাশ
আমায়
একলা দেখে
কাঁদে
২৭ জানুয়ারী ২০১৬
বিস্তারিত»~ এই শীতে, অবশেষে – দুই ~
এই শীতে অবশেষে
কয়েক ছত্র বৃষ্টি এসে,
নগরীতে দিয়ে গেলো
প্রতীক্ষিত সেই হিম স্বাদ।
শীতের শরীর ছুঁয়ে
আহলাদী নাগরিক
উল্লাসে জানায় তার
বরফ ভাঙা উদযাপন সাধ।
মেহেগনি ইউক্যালিপটাস বা
বোগেনভেলিয়ার লাজুক
পাতাদের গায়ে ধূলার
চাদর মুছে জমা বিন্দু জলে –
শখের ডিএসএলআর তার
দীর্ঘ অক্ষিকাঁচ দিয়ে
অপূর্ব ফ্রেমের গায়ে
বুঝি শীতছবি আঁকা খেলে।
চিরুণীকথা
তোমার উচ্ছল আলাপের
কোন অনুবাদ হয়না হে
ঢলঢল লাবণী,
অন্ধকার রেশম!
দাঁত ভেঙে
পড়ে আছি দেখে
আয়নায় নিরুপম কোমরের
সে কি হাসি!
কাঁটা ক্লিপ উধাও
একে একে
ড্রেসিংটেবিল থেকে,
খোঁপাময় বেশরম
তারা হবে ব’লে।
হেলায়
প্রসাধনের বেলা যায়
নীরবে চাহিয়া রব
যদি কিছু আমারে শুধাও
ইটস ভাইটালিটি
অপোজিট অফ ডিপ্রেশন ইজ নট হ্যাপীনেস, ইটস ভাইটালিটি
অনেক কনফিউশন থাকার পরও তিনি কফিনটা কিনেই ফেললেন।
কেনাটা সমস্যা ছিল না, ঝামেলা বাধলো ওটা বাসায় নিয়ে আসতে গিয়ে। রিক্সায় নেয়া যাচ্ছে না। ভ্যান নিতে হোল। উনি দুঃখী চেহারা নিয়ে বসে আছেন, কফিন ধরে।
সস্তা কফিন, আন ফিনিশড আম কাঠের। কোথাও কোথাও পেরেক উঠেছিল। দোকান্ দারকে বলতেই চরম বিরক্তি নিয়ে তাকালো।
বরফকল
মাঝে মাঝে ঘরের দেয়ালগুলি
তরল হয়ে যায়,
আমি ইট-ভেজা হয়ে
বাইরে এসে দাড়াই।
স্বপ্ন বারান্দায়
বুক ভরে শ্বাস নেই ;
ঘরের ভেতর ক্রমাগত
জমাট বরফ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
জীবনানন্দ ক্লান্ত,
ক্লান্ত আমিও, ক্লান্ত সুবোধ বাবু
অথচ বরফকল অবিশ্রান্ত
চলছেই চলবেই …
গোলাপকথা
দুই।
‘উচ্ছ্বাস ভুলিয়াছ,
ভ্রান্তি ভুল নাই’
গোলাপ হাসিল।
আনতনেত্র যুবরাজ
তৃণ গণণা করিতে করিতে
মৃদুস্বরে কহিল —
‘তোমার বাক্য শুনিয়া
কেবল একজনের কথা
স্মরণ হইতেছে কেন?
উচ্ছ্বাস ফিরাইয়া আনিতে
তোমার নিকট
কন্টক যাঞ্ছা করি —
পাইবো কি?’
তথাস্তু –
গোলাপ কহিল
তিন।
‘পত্র লিখিত কি?
বিস্তারিত»~ এই শীতে, অবশেষে … ~
অকস্মাৎ সরিসৃপ হেঁটে গেলো দেহময়,
অস্থি-মজ্জার কেন্দ্র ও কুরুশে
মেঘের নিরাপদ আবাস থেকে
মিহিদানা জলকনা
দেরাজে তুলে রাখা লংকোট
ও মাফলারে চালালো হানা।
পারদের স্থবিরতা কাটাতে
নাভিমূল সাজালো আজ
উষ্ণতার অভয়ারণ্যে আঁকা
শিল্পের সুষম ভাঁজ।
সোনালী শিশির সুখ পানে
সুশোভন সময়ের যুবরাজ।
অনাবিল আহলাদে তুলে আনে
কম্পমান যুগল পায়ের কারুকাজ।
প্রলাপ – শ্যুবার্ত এর সিম্ফনি ৭ শুনে
সংলাপ গুনে দেখিনি তো!
মনমতো
কিছু দৃশ্য, কিছু কথা
নাজুক নীরবতা নিয়ে
নিশ্চয়
একদিন প্রচ্ছদ হবে তুমি;
অনাগত সন্তানের মত
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের প্রুফ হবে
পা-ছোঁড়া অস্থিরতা
স্কেচপেন তোমাকে এঁকে
পাবেনা কূল,
উল্টো চক্ষুশূল
হয়ে আসে
সূর্যোদয় কিংবা বৃষ্টির মতন
স্বার্থপর, মনোরম মুহূর্তেরা
এরপর চটির ওই একফালি
ছিঁড়ে যাওয়া ঢেকে দিয়ে
বিব্রত শাড়িটি
মরমে মরে গেছে —
~ বিচ্ছেদের অরণ্যলোক ~
শহরের সব পার্ক, উদ্যান,
সুদূর অতীত গন্ধ মাখা
প্রাচীন বৃক্ষ কিংবা জলাশয়,
মৌ মৌ আড্ডার ক্যাফে,
থিয়েটার, নাট্যশালা, আর্ট গ্যালারী,
ছায়ামাখা ফুলার রোড,
ভার্সিটির কড়িডোর, ক্যান্টিন,
সর্বত্রই স্মৃতির ব্যপক সন্ত্রাসী বাড়াবাড়ি।
নাট্যমঞ্চের আধো আলো চেয়ারে,
চীনে রেঁস্তোরার টেবিল কাভারে,
বা ধরো যতনে ভাঁজ করা ন্যাপকিনে
স্পর্শের আভা, এমন কি সেই চেনা
সুরভির রেশ,
~ অনিবার্য রেষারেষি ~
আবারো আসছে শীত
শুকনো পাতার গায়ে ভর করে
গাছেদের জমানো দুঃখগুলো
একে একে পড়বে ঝরে।
এরপর বসন্ত এলে, নতুন সুখের গান
রঙ্গিন পাতার চাদর মুড়ে
ছোটাবে বর্ণিল কথার বান।
গাছের শরীর জুড়ে জমবে আসর
জীবন হাসবে রঙে।
আবারো সাজাবে বৃক্ষ
তার প্রাণের ঐকতান
বাঘা অর্কেষ্ট্রার কুশলী ঢঙে।
আর এই আমি !
বিস্তারিত»