শহরের সব পার্ক, উদ্যান,
সুদূর অতীত গন্ধ মাখা
প্রাচীন বৃক্ষ কিংবা জলাশয়,
মৌ মৌ আড্ডার ক্যাফে,
থিয়েটার, নাট্যশালা, আর্ট গ্যালারী,
ছায়ামাখা ফুলার রোড,
ভার্সিটির কড়িডোর, ক্যান্টিন,
সর্বত্রই স্মৃতির ব্যপক সন্ত্রাসী বাড়াবাড়ি।
নাট্যমঞ্চের আধো আলো চেয়ারে,
চীনে রেঁস্তোরার টেবিল কাভারে,
বা ধরো যতনে ভাঁজ করা ন্যাপকিনে
স্পর্শের আভা, এমন কি সেই চেনা
সুরভির রেশ, লেগে আছে বেশ।
সেইসব স্মৃতির নাগরিক সমুদ্রে
বিরামহীন ঘুরছি কেবলি। শহরের
আনাচ কানাচ, অলি গলি, তস্য
চায়ের পেয়ালাগুলি।
ঘুরছি আমি অন্তহীন
নেশারু পরিব্রাজকের মতো।
যদি পেয়ে যাই কিছু চেনা ক্ষত !
ওটাই নিশ্চিত আরাধ্য অমৃত।
প্রত্নতত্ববিদের মতো এর পর
খুঁড়তে শুরু করবো সমস্ত শহর।
আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে
ফেলে যাওয়া প্রাক শীত বিকেল প্রহর।
আংগুলের নিপাট বন্ধনীতে বাঁধা শেকল,
শহরের সমস্ত বাতাস ও ধুলিকণার গায়ে
লিখে রাখা যতো আলাপন রত
ফাগুন সময়, বুকের উন্মুল কথকতা
পিঠে যুগল সন্ধ্যার মৌণব্রত।
না পেলে আঁতি পাতি চষবো সব
ট্রেন স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, যাত্রী ছাউনি যতো।
কোথাও মেলে যদি আমাদের প্রস্থানের
করুণ ছোঁয়াময় নীল চিহ্নটুকু অন্তত।
জানি এসব শুনলে তুমি একটু হলেও কাঁপবে,
স্মৃতির শরীর হাতড়ে চেনা ওম, চেনা গন্ধ,
চেনা স্পর্শের কিছু উত্তাপ গড়িয়ে পড়া
মোম ছুঁয়ে লহমার জন্যে হলেও হাসবে।
মনে মনে আওড়াবে শেষ চেনা শ্লোক
স্মৃতির তোরংগ থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখা
শেষ নভেম্বরের অমোঘ শব্দলোক।
আমি নিরন্তর শুধু সব জাবর কাটি
অতীত দিনের ভেতর একা একা হাঁটি।
বেয়াড়া ইচ্ছেগুলো কেবল মেলে ডালপালা
যুগল কন্ঠে একবার হোকনা বলা
অমোঘ বিচ্ছেদের সে অরণ্যলোক –
“এমনও বিকেল আসে, তুমি যাও বাইপাসে, কোন
অচেনা লোকাল বাসে, সন্ধ্যে কাবার” হয়
অপেক্ষায় মগ্ন দিনশেষে আমার।
না হোক অন্য কিছু অন্তত এটুকু জানি
এখনো দুজনই আমরা এ’ একই শহরের
আলো বাতাস ছানি।
নাহোক ছায়ার সাথেও আর দেখা
বুকের ভিতর ধূলোর পরতে পরতে
চেনা সেই একবেমা অতীতখানি
মাতিসের ছবির মতোন রয়েছে আঁকা।
১৮ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম প্রহর
যথারীতি অসাধারণ, লুৎফুল ভাই ! :clap: :clap: তবে জিজ্ঞাসা একটাই-
হৃদয় খুঁড়ে আজকাল কেউ বেদনা জাগিয়ে তোলে স্বেচ্ছায়?
বেদনার ক্ষতগুলো সব যেনো
মারিজুয়ানার তীব্র হাতছানির মতো
সারাক্ষণ আমাকে সেই দহনের কাছে
পৌঁছে দেবার বা নিমজ্জিত করবার মতো
অসাধারন কবিতা হয়েছে এটা !
অগুন্তি ধন্যবাদ আসাদ ভাই।
অনুপ্রাণিত হলাম।
সর্বত্রই স্মৃতির ব্যপক সন্ত্রাসী বাড়াবাড়ি।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
সেই সন্ত্রাসী থাবাতে
জীবন অবিন্যস্ত
নিত্য নিত্য দিনে রাতে
😛
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
কী যে সুখপাঠ্য একটা লেখা দিলেন!
প্রাণ ভরে গেল একেবারে।
'পিঠে যুগল সন্ধ্যার মৌনব্রত' যদি বিশদে বলতেন! 🙂
বুকের উন্মুল কথকতা
পিঠে যুগল সন্ধ্যার মৌণব্রত।
~ সম্পর্ক যখন প্রাণের তারে বাজে সত্যিই এক সুরে, তখন যতোই গভীরতায় যায় তা ততোই কথাহীন ভাবানুভূতির আদান-প্রদান হয়ে ওঠে সহজ সাবলীল ও অবশ্যম্ভাবী।
অমন সম্পর্ক গভীর কোনো সন্ধ্যায় কথকতার বিপরীতে মৌনতা ভাগাভাগি করে নেবার চে আর কি থাকে অধিক আরাধ্য বা সুখের।
যথারীতি
বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতই লাগলো আরেকবার...
বিচ্ছেদ বড়ই নির্মম!!!
ভাবালো।
অনেক ভাবালো.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
অপার ধন্যবাদ বন্ধু।
মন্তব্যে উদ্বেলিত ও অনুপ্রাণিত।
সর্বত্রই স্মৃতির ব্যপক সন্ত্রাসী বাড়াবাড়ি -- চমৎকার কথা!
বা ধরো যতনে ভাঁজ করা ন্যাপকিনে
স্পর্শের আভা, এমন কি সেই চেনা
সুরভির রেশ, লেগে আছে বেশ -- বাহ, বাহ! বেশ, বেশ!
মনে মনে আওড়াবে শেষ চেনা শ্লোক
স্মৃতির তোরংগ থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখা
শেষ নভেম্বরের অমোঘ শব্দলোক -- এসব সুবাসিত শব্দাবলী মন ছুঁয়ে যায়।
খুব সুন্দর হয়েছে কবিতা, লুৎফুল।
অপার ধন্যবাদ খায়রুল ভাই।
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হই।