নামায পড়ি সচরাচর আমরা সবাই। আর ক্যাডেট কলেজে থাকতেও পড়তাম। কিন্তু জানাযার নামায? এমনিতেই প্রায়শঃ এই নামাযটি পড়ার সৌভাগ্য কারো হয়না, ঘটনাক্রমে হয়ত কখনো পড়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্যাডেট কলেজের ৬ বছরে এই নামায পড়ার অভিজ্ঞতা ক’জনের আছে?
আমি সেই ৬ বছরে কলেজে একটাই জানাযা অনুষ্ঠান পেয়েছি। তা ছিল আমাদের কলেজের বুকবাইন্ডার কাজেম সাহেবের। অশীতিপর বৃদ্ধ এই লোকটির পেশা ছিল লাইব্রেরির বই বাঁধাই করা, সাথে কলেজের যাবতীয় কাগজপত্র সম্পর্কীয় কাজে তাঁর ভূমিকা ছিলো। কলেজ লাইব্রেরি-সংলগ্ন ছোট্ট একটা কামরায় বসে নিশ্চুপ সারাবেলা কাজ করে যেতেন এই খর্বকায় লোকটি। কারো সাথে বাক-বিতন্ডা নেই, নির্বিবাদ, নিস্পৃহ। কাগজ সেলাইয়ের সুঁই-সুতা আর আঠার সাথে বসবাস।
একদিন রাতে খবর এলো তিনি মারা গেছেন। পরদিন সকালে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠানের আয়জন হলো, কলেজ প্যারেড গ্রাউন্ডে। ক্লাস টাইমে আমরা নেমে এলাম নিচে, ওযু করে গেলাম গ্রাউন্ডে। কফিনে শোয়ানো তাঁর চেহারাটা দেখলাম, নির্মলিন, নির্ঝঞ্ঝাট। তাঁর সেই পরিচিত শ্বেত শ্মশ্রুমন্ডিত মুখ, “জীবনের হাটে সকল কেনাবেচা শেষ করে” কোথায় যেন চলে গেলেন তিনি।
আমি বোধকরি তখন ক্লাস নাইনে বা টেনে। সেই হিসেবে তারেক/তানভীর/সাইফুদ্দীন/আশরাফ ভাইরা অথবা হাসনাইন/ফুয়াদেরাও উপস্থিত ছিলো সেই নামাযে।
সবাই আমরা খালি পায়ে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম, মুনাজাত করলাম একজন সহজ-সরল মানুষের চিরন্তন কল্যাণ কামনায়। এরপর তাঁকে বিদায় জানিয়ে আমরা ফিরে এলাম আমাদের ক্লাসে, আর একজন নির্মোহ মানুষের স্মৃতিটা পিছুটান হয়ে রইলো কিছুদিন।
এই ছিলো কলেজে আমার দেখা একমাত্র জানাযা নামায।
ব্লগে কলেজের অনেক বিষয় নিয়ে লেখালেখি হয়। তবে এই বিষয়টা একটু ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে এখনও আলোচনা হয়নি। এখানে আমরা আলোচনা করবো কলেজে জানাযার নামায পড়ার অভিজ্ঞতা কার কার আছে এবং সেটা কোন প্রেক্ষাপটে।
আলম, ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
আমি কেন জানি ঘটনাটা মনে করতে পারছিনা।
আমিও মনে করতে পারতেছি না। ইন ফ্যাক্ট, এটা আমি মাত্রই জানলাম, মন খারাপ হলো। ওনারে খুব ভাল মতন মনে আছে। বোর্ড ফাইনালগুলার সময় খাতা বাঁধাই করতে আসতেন হলে।
সম্ভবত আমরা বের হয়ে আসার পরের কাহিনি এটা।
www.tareqnurulhasan.com
আমারো মনে হয় আমরা বের হয়ে আসার পর। মনে করতে পারতেসি না। আমরা একবার জানাজা পড়ছিলাম মসজিদে। কার সেটা মনে করতে পারতেছি না।
কলেজে জানাজা নিদারুণ কস্টের স্মৃতিগুলোর একটা। বিশেষ করে যদি সেটা সতীর্থের হয়.....। আমার ৬ বছর জীবনে একবারই এই কস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেটা আগেও শেয়ার করেছি:
৫১ একরে সীমাবদ্ধ জীবন (শেষ পর্ব)
আমার জীবন, আমাদের জীবন : হৃদয় ভাঙ্গার কাল
Life is Mad.
হ ভাই মনে আছে।
জীবনের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত্য একমাত্র জানাযা নামাজ।
আমাদের কলেজের একজন অফিস সহকারী মারা গিয়েছিলেন। তার জানাযার নামাজ আমরা কলেজে আদায় করেছিলাম। তার নাম ভুলে গেছি, আরসিসির কারো যদি নাম মনে থাকে তবে জানাবেন।
আলম ভাই,আমার মনে আছে।নামায পড়ে আমার খুব খারাপ লাগতেসিল তখন।উনার মুখটা এখনো মনে আছে আমার।
আমাদের কলেজ মাইক্রোবাসের ড্রাইভার হামিদ ভাই কলেজের তেলডিপো থেকে গাড়িতে তেল নেয়ার সময় দূর্ঘটনাবশতঃ আগুন লেগে দগ্ধ হওয়ার কয়েকদিনপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। উনার জানাযা আমরা পড়েছিলাম কলেজে।
ক্যাডেটদের সাথে উনার খুব খাতির ছিলো। আমরা বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম মর্মান্তিক ঘটনাটায়।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আমরা কি গিয়াস ভাইয়ের জানাযা পড়েছিলাম? তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে। রবীন্দ্র হাউসে আমাদের রুমমেট দুই ব্যাচ সিনিয়র গিয়াস ভাই বন্ধুদের নিয়ে কলেজ দীঘিতে সাঁতার কাটা অথবা নৌকা চালাতে গিয়ে ডুবে মারা গিয়েছিলেন। উনার জানাযা কলেজে হয়েছিল কিনা মনে নেই। তবে এই মৃত্যুর প্রভাবে পরবর্তী একমাস কলেজে 'ভুতের ভয়' নামে আতংকের কারণে সব হাউসেই খাটগুলো একসঙ্গে লাগিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস হয়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল রবীন্দ্র হাউস!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মাগ্রেব পড়ছি অনেক গুলা, টুকটাক ডজিং বাদ দিলে জুম্মাও পড়ছি অনেক।
কলেজে কখনও জানাযা পড়া হয় নাই ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
খারাপ লাগছিল মনে আছে...
একবার জানাজা পড়েছি, কেমিষ্ট্রি স্যারের ওয়াইফ, প্রেগন্যান্ট ছিলেন, কি এক জটিলতায় মারা গেলেন, নামাজ পড়েছি রাত দশটার দিকে বা পরে। (যতটুকু মনে পড়ে)
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমার কলেজে একবার জানাজা পড়তে হয়েছিল, আমাদের আর্টস এন্ড ক্রাফটস-এর রুমে যিনি বসতেন উনি মারা গিয়েছিলেন। নামটা মনেই আসছে না... উনি টিচারকে সাহায্য করতেন, আর বিভিন্ন ডেকরেশন-এ হাত লাগাতেন। উনি মারা যাবার পরে উনার ছেলে সেখানে চাকরি নেয়।