এইমাত্র জেগে উঠেছি, একটি স্বপ্ন অসমাপ্ত রেখে। দিবাস্বপ্ন ছিলো সেটা, অতএব বেশ একটা সত্যতার দাবি রাখেনা, তথাপি স্বপ্নের একটা মধুর সমাপ্তি না হলে অতৃপ্তিটা রয়েই যায়। তাও যদি হয় প্রিয় কিছু মানুষকে নিয়ে, তবে তো আফসোসের অন্তই থাকেনা।
হ্যাঁ, আজ আমার স্বপ্নে এসেছিলো এই ব্লগের দু’টি প্রিয় মুখ। ফুয়াদ আর সামিয়া।
ওরা এসেছে আমাদের বাসায় বেড়াতে! আমি সারাদিন আজ বাইরে ছিলাম, ইজি কাজে বিজি। বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি এই অবস্থা। দুটি প্রতিভাধর মানুষ এসে বসে আছে আমার প্রতীক্ষায়, বিস্ফারিত নয়নে দেখছি তাদের।
ফুয়াদের সাথে আজ ৫ বছর পর দেখা, কলেজের সেই নিষ্পাপ জুনিয়রটা আজ এতো বড়ো হয়ে গেছে। বিশেষত হাইটে, কিভাবে কখন পেরিয়ে গেছে আমাকে, বেসামাল। আর সামিয়া, ওকে এই প্রথম দেখছি আমি, জীবনের প্রথম। ফর্সা সুন্দর মুখে হেসেই চলেছে, প্রতিটি হাসির সাথে একবিন্দু টোল পড়ছে দুপাশের গালে। সিসিবিতে তার লেখা পড়া ছাড়া ওকে কখনো রক্তমাংসের চেহারায় ভাবিনি, আজ সচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
ওরা এসেছে একটা চমত্কার খবর নিয়ে। সিসিবি থেকে একটা ম্যাগাজিন প্রকাশ হয়েছিলো গত বৈশাখে, সেখানে আমার একটা গল্পও ছিলো। ওরা খবর নিয়ে এসেছে, “নয়া দিগন্ত” নামে পত্রিকাটি তাদের বাত্সরিক সেরা গল্প পদকের জন্য মনোনীত করেছে এই গল্পটি!
আজ কদিন ধরে বাসায় বেশ হৈচৈ, ছোট মামা কাল ইটালি যাচ্ছেন, মায়ের দিকের তিন পুরুষ পর্যন্ত এসে ভিড় জমিয়েছে আমাদের বাসায়। এমন একটা ঝামেলার সময়ে এলো পিচ্চি দুইটা, ঠিকমত সমাদর করা গেলোনা। আম্মু পিঠা বানিয়েছে ওদের জন্য, সুজি ও ডিম মিশিয়ে তেলে ভাজা পিঠা, গরম গরম বেশ মজাদার, সেগুলো এনে দিলাম। এরপর আমার কম্পিউটারে সিসিবির সাইটটা খুলতেই সামিয়া দেখায় ওর প্রিয় কবিতা কামরুলতপু ভাইয়ের “অপলাপ”;
“সকালের নতুন সূর্য,
আমাকে আশার আলো দেখায়না।
বরং মনে করিয়ে দেয়
এটি আরেকটি দিন ঠিক গতকালের মত।
আমি কবি নই
শূন্য চারপাশে তাই ভালোবাসা খুঁজে পাইনা।”
এই লাইনগুলো নাকি ওর কাছে অভাবনীয় ঠেকে, ও বারবার পড়ে আর বিমোহিত হয়। আমি তার চোখে এক স্বর্গীয় আনন্দের আভা দেখতে পাই। এ সকলি যে সিসিবির অবদান, সবাই আমরা এক দেহে এক প্রাণ হয়ে মিশে গিয়েছি এই সিসিবিরই কল্যাণে।
আসর পড়ে ঘুরতে বেরোই আমরা। আমাদের বাসার অল্প দূরে কালসী কবরস্থান, এখানে আমার বাবা শুয়ে আছেন, আমি দেখাই ওদের। আর কিছু দূরেই আসে লেক। বাওনিয়া বাঁধ ধরে এগুই আমরা। উন্মুক্ত অবারিত জলরাশি বহমান। ওপাড়ে দূরে দাঁড়িয়ে ঢাকা এয়ারপোর্ট। অপূর্ব নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, খুশিতে ঝলসে উঠে সামিয়ার মুখ।
আমরা একটা ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বসি, অল্প পানিতে এগোয় মাঝি। পানিতে হাত ডুবাই আমরা, অসম্ভব আনন্দ লাগে। হেসে কুটিকুটি হয় সামিয়া, হাসির তোড়ে ভেঙ্গে পড়ে বন্ধু ফুয়াদের পাশে। ফুয়াদ আজলা ভরে পানি তুলে, ছিটিয়ে দেয় আমাদের দিকে। আমার মুখে পানির ঝাপটা লাগে। আর অমনি ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
স্বপ্নটা শেষ করে দেখা হলোনা। রুমমেটকে বলে রেখেছিলাম আমি না জাগলে পানি ছিটিয়ে দিতে, সে তাই করেছে। ফলে আর দেখা গেলনা স্বপ্নের শেষটা, জানা হলোনা ওরা কখন বুয়েটে ফিরলো, বুঝা গেলোনা প্রিয় মানুষগুলো কিভাবে বিদায় নিয়ে যায়।
অসমাপ্ত স্বপ্নের অতৃপ্তির তাড়া; তাই নিয়ে লিখতে বসেছি সিসিবিতে, নগদ নগদ। কারণ একটাই। সিসিবি আমাদের এই ভালবাসার জন্ম দিয়েছে, দিয়েছে পারস্পরিক অনুভবের সঞ্চারণ। জাগরণে যেমন, স্বপ্ন আর কল্পনায়ও তাই কেবল সিসিবির পদচারনা।
বাস্তবের সামিয়াকে আমি জানিনা। এখানে কেবল স্বপ্নে দেখা চেহারাটাই অংকিত হলো।
বর্তমানের ফুয়াদকেও আমি ঠাহর করতে ব্যর্থ। তাই কেবল স্বপ্নেরই রূপায়ন হলো এখানে।
উল্লেখিত লেকের চিত্রটি আজ থেকে ১০ বছর আগের স্মৃতি কল্পনা। পল্লবীর প্রান্ত ঘেঁষে আজো দাঁড়িয়ে আছে এই বাওনিয়া বাঁধ, তবে তার লেকভিউ হারিয়ে গেছে নগরায়নের জোয়ারে..
খাইসে,আলম ভাই আপনে তো সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখেন!! তবে,বাস্তব হইল আমার মুখ মোটেও ফর্সা সুন্দর না, আর আমি হাসলে মোটেও টোল পড়েনা। আর সন্ধ্যার আগেই বুয়েট ফিরসিলাম, প্লেনে করে। বড় সাইজের প্লেন, আপনের স্বপ্নে আঁটে নাই, এইজন্য ঘুম ভেঙ্গে গেসে। দুঃখ করেননা।
এই সুন্দর স্বপ্নটাতে আমিও ছিলাম, এহহহ ভাব বেড়ে গেল তো!!
তুই একটা গুন্ডা।
????????????????
রায়হান
স্বপ্নের উপর যদি আমার কোনো কন্ট্রোল থাকতো, তাইলে কি আমি এই গুন্ডারে নিয়া স্বপ্ন দেখতাম নাকি? 😀
(মন্তব্য শুধু লেখাটির জন্য...)
আলম ভাই সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। এই যেমন ধরেন,
আসর পড়ে ঘুরতে বেরোই আমরা। আমাদের বাসার অল্প দূরে কালসী কবরস্থান, এখানে আমার বাবা শুয়ে আছেন, আমি দেখাই ওদের। আর কিছু দূরেই আসে লেক। বাওনিয়া বাঁধ ধরে এগুই আমরা। উন্মুক্ত অবারিত জলরাশি বহমান। ওপাড়ে দূরে দাঁড়িয়ে ঢাকা এয়ারপোর্ট। অপূর্ব নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, খুশিতে ঝলসে উঠে সামিয়ার মুখ।
আমরা একটা ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বসি, অল্প পানিতে এগোয় মাঝি। পানিতে হাত ডুবাই আমরা, অসম্ভব আনন্দ লাগে। হেসে কুটিকুটি হয় সামিয়া, হাসির তোড়ে ভেঙ্গে পড়ে বন্ধু ফুয়াদের পাশে। ফুয়াদ আজলা ভরে পানি তুলে, ছিটিয়ে দেয় আমাদের দিকে। আমার মুখে পানির ঝাপটা লাগে। আর অমনি ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
ব্লগের মাধ্যমে না দেখা অনেক মানুষ আসলেই এইভাবে প্রিয় হয়ে যায়। সেটা হয়তো কাছাকাছি থাকলে, প্রতিদিন দেখা হলে যা হতো তার থেকে বেশী...
আই সেকেন্ড ইউ রায়হান..............
Life is Mad.
বুঝলাম না ভাই, কী বললেন। বুঝাইয়া বললে খুশি হই।
--গাধা আলম।
@রায়হান আবীর
তোমার মন্তব্যটা আরো সুন্দর।
"ব্লগের মাধ্যমে না দেখা অনেক মানুষ আসলেই এইভাবে প্রিয় হয়ে যায়। সেটা হয়তো কাছাকাছি থাকলে, প্রতিদিন দেখা হলে যা হতো তার থেকে বেশী…"
সত্যি, এ সবের কৃতিত্ব সিসিবির। Long live CCB.
খুব সুন্দর লিখছেন আলম ভাই। ঠিক আপনার স্বপ্নটার মতোই সুন্দর!!
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আলম...তোর ভাল লিখা পড়তে পড়তে বোর হয়ে গেসি...এখন কয়েকটা খারাপ লিখা লিখ...হা হা হা...খুব শুন্দর হইসে...proud to have u as my classmate buddy...
😳
বিশাল শরম পাইলাম।
দোস্ত, তুইইতো আমারে এই ব্লগের দাওয়াত দিসিলি। so all credit goes 2 u.
valo hoise Alam bhai.
Thanx 2 Zihad, Samia, Raihan, Shahed & Monjur.
ভাইরে আমার ও তো ভাব বেড়ে গেল। টি শার্ট পরা নইলে কলার তুলে দিতাম, পিছনে হাত দিয়ে দিতাম আর টাই এর নড ঢিলা করে দিতাম। (সবই কলেজের ভাব মারার স্টাইল) আমার কবিতা কি আসলেই সামিয়া তোমার পছন্দ নাকি আপু?
মাহমুদুল আলম , খুবই ভালো হইছে লেখাটা।
thanku.
কামরুল ভাই, কোন এক বিচিত্র কারণে আপনার কবিতাটা আমার চোখ এড়ায়া গেসিল!!
সামিয়ার কথা জানিনা, কিন্তু আমার ব্যাপক লাগছে লাইন চাইরটা 🙂
আরো বেশি বেশি কবিতা লিখেন...
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভালো লাগছে খুব।
সুন্দর
Thanx 2 Mr. Rashed and Ishtique.
very well written alam...khub vala lagse...
আমরা একটা ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে বসি, অল্প পানিতে এগোয় মাঝি। পানিতে হাত ডুবাই আমরা, অসম্ভব আনন্দ লাগে। হেসে কুটিকুটি হয় সামিয়া, হাসির তোড়ে ভেঙ্গে পড়ে বন্ধু ফুয়াদের পাশে। ফুয়াদ আজলা ভরে পানি তুলে, ছিটিয়ে দেয় আমাদের দিকে।
=))
মিছে দুনিয়া...
হুমমম। এ শুধু স্বপ্নেই সম্ভব!!
(কীরে, আবার ঝগড়া হইসে নাকি?)
না না আপনের এই প্রেডিকশন্টা বিশাল ভুল। যেদিন লিখছিলেন সেইদিনই কইতে চাইছিলাম। কিন্তু তখন ঐ যে আপনারা কি সব কন না, ওইটা চলতেছিল। এখন ঠিক...তাই কইলাম।
তার মানে বাস্তবেও এইসব সম্ভব নাকি?? আমারতো সাহস হয় না!!
(মিলেমিশে সুখে থাক, এই দোয়াই করি।)
বাস্তবে সম্ভব হবে ক্যান? ধুর মিয়া...
http://www.prothom-alo.com/index.news.details.php?nid=Mjk=
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=94300&sec=1
নিউজটা নিশ্চয়ই সবাই পড়েছেন। এই সেই লেক, কাল এখানে নৌকায় ঘুরতে বেড়িয়ে ডুবে মারা যায় ৫ কিশোর-কিশোরী। ঠিক এই গল্পটার মতোই ঘটনাটা।
(ওদের এই MDC institute স্কুলে একদিন আমিও পড়তাম। আর স্কুলটার ঠিক পাশেই আমাদের বাসা।)
দোয়া করি, এই স্বপ্নটা যেন কখনো সত্যি না হয়! তাহলে ওদের মতো পরিণতি আমারও হইতে পারে, কারণ আমিও সাঁতার জানিনা। ফুয়াদ, সামিয়া কি সাঁতার জান??
আমি জানি্না। ভাগ্যিস আপনের স্বপ্নে আমি নাই। >:)