আহসান ভাই রিটার্নস

ভাই,কেউ বলতে পারবেন কি,ব্যাঙের শুক্রাণু আর সাপ এর ডিম্বাণু মিলে যে জীব সৃষ্টি হবে তা কেমন হবে?!? :dreamy:

সেই কাহিনী আজ শুনুন তাইলে……

আমি তখন ক্লাস এইটে।সবেমাএ জীববিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয় বুঝতেছি,আর কিছু বিষয় মাথার মধ্যে ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রায় ফুটতো।(বি:দ্র: আমার মাথার গলনাঙ্ক কক্ষ তাপমাত্রার একটু বেশি!)।এর প্রমাণ আমি আমার বালিশ ও হাউজের বাথরুমে পেয়েছি।পাঠকগণ,কথাটাকে প্লিজ অন্যভাবে নেবেন না।মাথার চুল যে হারে উঠছিল,তাতে ঘুম থেকে উঠেই আগে বালিশ ঝাড়তে হত;আর বাথরুমে গোছলের সময় পানি যেন না আটকায় তার ব্যাবস্থা করতে হত।তবে এটুকু ঠিকই বুঝতাম,হাওয়া থেইকা ক্যামনে একটা জ্বলজ্যান্ত প্রাণী(মানুষ,বিড়াল,কুকুর,…প্রমুখ) এই সুজলা সুফলা ধরণীতে আগমণ করে।আর রিসেন্টলি সুকুমার রায়ের হাইব্রিড নামগুলার(বকচ্ছপ,সিংহরিণ…)সংস্পর্শে এসে কোনভাবেই একটা ইকুয়েশন মিলাইতে পারছিলাম না।ব্যাঙের শুক্রাণু আর সাপ এর ডিম্বাণু মিললে কি হবে?ক্লাসমেট প্রায় সবাইকে জিজ্ঞাসা করছি,কিন্তু কারো ‘লিমিটেড ব্যাঙ্ক একাউন্ট’এ আমার এই সহজ সরল চেকটা ভাঙ্গাইতে পারি নাই।অগত্যা,আমার প্রাণপ্রিয় বড় ভাই,আমার জন্ম জন্মান্তরের শুভাকাঙ্খী,আমার সব প্রশ্নের উত্তর জানা একমাএ ‘ওরাকল’,আহসান ভাইয়ের(৩৫তম ইনটেক,মকক) সরণাপন্ন হলাম।তিনি ডাইনিংয়ে আমার বাম পাশে বসেতন।একদিন ডিনারে সবাইকে ডিমের কারি দিছে।কারি বলতে,ঠান্ডা পানির সাথে বিশ্বের তাবৎ মশলার সংমিশ্রণে যে অদ্ভুত যৌগ তৈরী হয়,তা।ডিমটা ফুল সিদ্ধ,গরম তেলে একটু ভাজা।সবার সামনে প্লেট আর প্লেটের বামপাশে হাফপ্লেটে কারি থাকতো।ভেজিটেবল দিয়ে খাওয়া শেষ করে,যেইনা কাটা চামচের মাথা দিয়ে ডিমটা হাফ প্লেট থেকে ফুল প্লেটে ট্রান্সফারের উদ্যোগ নিয়েছি,রাস্তার মধ্যে কোন এক দুর্নিবার আকর্ষণে ডিমটা নিউটনের সূত্যের প্রমাণ স্বরূপ হাফপ্লেটের বুকে যেয়ে পরল।কোন যুবতী মেয়ে আমার বুকে ২০০ কিমি স্পিডে ধাক্কা খাইলেও এতটা ‘ইয়ে’ হতাম না।মুহূর্তে বিস্ফোরণ,স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আহসান ভাইয়ের হাত।খাওয়া রেখে সাবধান হয়ে বললাম,”কাইন্ডলি,সরি,আহসান ভাই”।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”কি ব্যাপার.কি হইছে?”।”কিছু না”,আমার সরল উত্তর।পাঠকগণ,বুঝতেই পারছেন,তিনি আমার অপকর্মটি ধরতে পারেননি।আসলে তিনি ক্লাসমেটদের সাথে গল্পে মশগুল ছিলেন,তাই বুঝতে পারেন নি।২ সেকেন্ডে মাথা ‘ডিফ্রাগমেন্ট’ করলাম।বাঁচতে চাইলে তার মাথা অন্য দিকে ঘুরাতে হবে।বললাম,”কাইন্ডলি,আহসান ভাই,একটা কথা..”।”কি কথা???”।”কাইন্ডলি,আহসান ভাই,কাইন্ডলি,ব্যাঙের শুক্রাণু আর সাপ এর ডিম্বাণু মিলে যে জীব সৃষ্টি হবে তা কেমন হবে?”।বুঝলাম না,আমার কথা শুনে টেবিলের সবাই ‘স্টাচু’ হয়ে গেল কেন!উনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি এইমাএ সাঁতরে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এসে ওনার সাথে ডিনার করছি!কাঁপা গলায় বললেন,”ক্লাস ১০ এ তোমার স্কড(গাইড,আমর স্কড এর স্কড) কে?”।”কাইন্ডলি,ওয়ালিদ ভাই”।ওয়ালিদ ভাই ডাইনিংয়ে আমার সামনেই বসেছেন।”কাল ওয়ালিদের কাছে থেকে ক্লাস ১০ এর বায়োলজি বই নিয়ে ব্যাঙ চ্যাপ্টারটা ফুল মুখস্ত করে ২ দিন এর মধ্যে আমাকে জানাবা।””কাইন্ডলি,জ্বী,আহসান ভাই,কাইন্ডলি,’সাপ’ চ্যাপ্টারটা কোথায় পাব?””সাট আপ…ফা** শিট”।”কাইন্ডলি,জ্বী”।

পরদিন ব্রেকফাস্টে আমাকে দেখেই বললেন,”কাল আমার জামায় রঙ লাগাইছে কে?”।”কাইন্ডলি,আমি…মানে…আমি না..”করুণ চোখে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে।”স্টুপিড,ওইটা পড়ছ?””কাইন্ডলি,পড়ছি”। আজও ওই চ্যাপ্টারটা শেষ করতে পারি নি।তবে মনের মধ্যে একটা কথা বারবারই উঁকি দেয়…

ব্যাঙের শুক্রাণু আর সাপ এর ডিম্বাণু মিলে যে জীব সৃষ্টি হবে তা কেমন হবে?!?

৭,৯০০ বার দেখা হয়েছে

১০৬ টি মন্তব্য : “আহসান ভাই রিটার্নস”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    তুমি ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ছ...ভালো! :clap:
    তবে তোমার যে অবস্থা... 🙁
    যাই হোক দোয়া করি, ভবিষ্যতে তুমি যেন খুব ভাল একজন উকিল হও... B-)

    অফ টপিকঃ সিনিয়রের সাথে (তাও আবার অল্টারনেটিভ) এভাবে কথা বলা- আমাদের ক্ষেত্রে ছিল অকল্পনীয়... :no:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    =)) =)) =)) বহুত মিজা পাইলাম


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. তৌফিক

    একটু আতঁলামি করি। ডিম্বানুর প্রবেশপথে মলিকিউলার একটা প্যাটার্ন আছে যা ওই প্রজাতির শুক্রানুর সাথেই মিলে। না মিললে ডিম্বানুর ভেতর শুক্রানু যাইতে পারে না। অবশ্য খুব কাছাকাছি প্রজাতির হইলে পারে। যেমন কইরা ঘোড়া আর গাধায় হয় খচ্চর। বাঘ আর সিংহে হয় লাইগার।

    লেখা ভালো হইছে জাবীর। এখন তোমারে চিনতে পারছি। যতোদূর মনে পড়ে, তুমি তো ভদ্র পোলাই ছিলা। বানরামি কম করতা।

    জবাব দিন
  4. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    কমেন্ট পইড়া ভুলাই গেলাম মূল লেখায় কি লেখা ছিল। :((

    জাবীর হিব্বি মজা পাইছি- তয় দোস্ত লেখার মধ্যে একটু প্যারা প্যারা করে লিখিস। তা না হলে আমার মতো দূর্বল পাঠকরা হারিয়ে যায়। 🙁

    জবাব দিন
  5. জাবীর রিজভী (৯৯-০৫)

    ব্লগের সকল গডফাদার,পাতি গডফাদার,অখ্যাত-বিখ্যাত লেখক এবং যারা খাইয়া না খাইয়া প্যত্যেক লেখার পোস্টমর্টেম করেন,সবার অবগতির জন্য আমার বিনীত আর্জি:

    আমি অভিভূত,উদ্বেলিত এবং অতিশয় আনন্দিত।আমার ক্ষুদ্র হস্তের অতি সাধারণ এক পোস্টের অতিশয়ক্তি করার জন্য সবাইকে অনে................ক ধন্যবাদ।এতটা উচ্ছ্বাস আমার কল্পণা বহির্ভূত(পহেলাবার ব্লগ লিখছি তো :shy: )।

    আমি সত্যিই ভুলে গেছি,what m i now & what will be my profession 😐 😮 ~x( :bash:

    কাইন্ডলি,কেউ সাহায্য করুন ~x( ~x( 😡 😡

    জবাব দিন
  6. জুবায়ের (১৯৯৯-২০০৫)

    তোর কাহিনী শুনে (???) আমাদের এক পোলার কথা মনে পড়ে গেল।
    ক্লাস নাইনের কথা। রসায়নের রসালো ক্লাস হচ্ছে। ক্লাস নিচ্ছেন রসায়ন শাস্ত্রের জনক,হিব্রু ভাষায় রসায়নের প্রথম বক্তা,যাহার নামে এলুমিনিয়ামের নামকরণ(পরে অবশ্য দুষ্ট লোকেরা ন এর জায়গায় ল প্রতিস্থাপন করে), সেই বিখ্যাত স্যার। হঠাৎ ছেলেটি বলে উঠল,
    "স্যার একটা প্রশ্ন ছিল।"
    স্যার তো মহা খুশি। উনার ক্লাসে প্রশ্ন :-B
    অতি উৎসাহে ,"বল বল"
    -"স্যার, বিশুদ্ধ পানি তড়িৎ অপরিবাহী,আবার শুকনো কাঠ তড়িৎ আপরিবাহী। তাহলে শুকনো কাঠকে বিশুদ্ধ পানিতে ডুবালে সেটা তড়িৎ পরিবহন করে কেন?"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।