গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন

(প্রথমেই একটা কথা বলে নেই।- পাঠকের সুবিধার্থে আমি সর্বনিম্ন সংখ্যক তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছি। আমি কোন তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে নেই নাই, নিয়েছি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল আর স্বীকৃত একাডেমিক সংকলন থেকে। আর ইচ্ছে করেই কিছুটা পেছনের দিকের রেফারেন্স ব্যবহার করেছি এই কারণে যে, কেউ যেন ভাবতে না পারে যে এই গবেষণা পেপারগুলো ডঃ ইউনূসের নোবেল পুরষ্কারের খ্যাতির কারণে ইর্ষান্বিত হয়ে লিখা হয়েছে।)

গ্রামীন ব্যাংক কি, কবে কোথায় এর শুরু হয়েছে, কিভাবে বিস্তার লাভ করেছে গ্রাম থেকে উপজেলায়, সেখান থেকে সারা দেশে, এখন তৃতীয় বিশ্বের প্রায় ৬০/৭০টা দেশে সেই কাহিনী মোটামুটি সবারই অল্প-বিস্তর জানা। তাই এসব আলাপ বাদ দিয়ে সরাসরি আসল প্রসঙ্গে আসি।- গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ সফল কিনা? কি হিসেবে সফল?- ব্যবসা, না জনসেবা (দারিদ্র্যের সেবা)? নাকি দুই ক্ষেত্রেই সফল? অথবা দুই ক্ষেত্রেই ব্যর্থ?

সাফল্যের সুচক কি? ঋন পরিশোধের অবিশ্বাস্য হার, শতকরা ৯৮% (কোথাও আবার পাওয়া যায় ৯৬%; কিন্তু এই পার্থক্য নগণ্য, কাজেই এটা গোনার বাইরে রাখি)। এই তথ্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়িক সাফল্যের সূচক হিসেবে গ্রহনযোগ্য হলেও এখান থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে কোন ধারনাই পাওয়া যায় না। তাই এই তথ্যের পাশাপাশি ডঃ ইউনূস তার দ্বিতীয়+মূল দাবিটা উত্থাপন করেন যে, যেহেতু প্রায় সকল ঋণগ্রহীতাই সুদে-আসলে ঋণ ফেরত দিতে সমর্থ হয়+যেহেতু ঋন বিতরন করা হয় শুধুমাত্র দরিদ্র্যদের মাঝে যাদের কোল্যাটারাল (ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত) দেবার মত কোন সম্পদই নেই, কাজেই তারা অবশ্যই ঋণের টাকা সফল ভাবে উৎপাদনমূলক কাজে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়-উপার্জন করতে পারে বলেই সেখান থেকে ঋণ শোধ করে। এই দাবির স্বপক্ষে তিনি প্রমাণ হিসেবে সাক্ষী হাজির করেন জনৈক সুফিয়া, বা জমিলা, বা নূরজাহান, বা আর কোন সফল মহিলা ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তাকে যিনি গ্রামীনের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন। (এ রকম অসংখ্য রিপোর্ট, ফিচার, ডকুমেন্টারি আছে প্রিণ্ট+ডিজিটাল মিডিয়াতে, তাই আমি আর এই বিষয়টা বর্ণনায় গেলাম না)। কাজেই, ব্যবসা বলি আর সমাজসেবা বলি, দুই ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্রঋণ সফল। এটা ঋণ-প্রদানকারীর বিনিয়োগ সুদে-আসলে তুলে আনছে, আবার দরিদ্রদের মাঝে, বিশেষ করে দরিদ্র ‘মহিলা’দের, অর্থনৈতিক+সামাজিক মুক্তি অর্জনের পথে সহায়তা করছে।

ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়িক সাফল্যের প্রমাণ কি?- ঋন পরিশোধের হার, যা কি না ৯৮%। এটা একটা ম্যাক্রো+ কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য। এটা অবশ্যই ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়িক সাফল্যের একটা খুবই শক্তিশালী প্রমাণ। এবার দেখা যাক, এই তথ্য কিভাবে সংগ্রহ+বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Morduch (1999) দেখিয়েছেন যে, এই তথ্য আসলে খানিকটা ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা, নন-স্ট্যান্ডার্ড একাউন্টিং পদ্ধতি অনুসরন করে। সেটা কি রকম?- তিনি দেখিয়েছেন যে, Grameen calculates the value of overdue loans by dividing one-year-old amounts in arrears by the current portfolio. Because their portfolio has expanded so rapidly, it is much greater than the one that existed when these same loans first became “at risk.” Correcting the denominator to the one-year-old portfolio, as done in standard banking practices, produces an average default rate of 7.8%, a figure still impressive for a development bank but not for a commercial bank. (বিজনেস টার্মস অনুবাদ করতে গিয়ে কি লিখতে কি লিখে ফেলি।- তাই পুরা বাক্যটা ইংরেজীতেই তুলে দিলাম)।- ১৯৮৫-৯৬ সাল পর্যন্ত গ্রামীনের যে “দেড় মিলিয়ন” ইউএস ডলার মুনাফা দাবী করা হয়, ব্যাংকিং খাতে প্রচলিত একাউন্টিং এর রীতি অনুযায়ী ‘বিতরনকৃত ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদের হিসাব’ সূত্রে তা প্রকৃতপক্ষে ৩৪ মিলিয়ন ডলারের ‘লস’ হিসেবে পাওয়া যায়। এখানে প্রশ্ন আসে, তাহলে গ্রামীন ব্যাংক চলছে কি করে?-

বিদেশী অনুদান গ্রামীনের ফান্ডের একটা বড় সোর্স। তারা অনুদানের অর্থকে তাদের হিসাবের মধ্যে ‘ইনকাম’ এর খাতে ধরে। আরেকটা বড সোর্স হল নামমাত্র সুদে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি ঋণ নিয়ে তা মাত্রাতিরিক্ত সুদে বিনিয়োগ করা। এছাড়াও পুর্বোক্ত সময়কালে গ্রামীন ব্যাংক ৪৭+ মিলিয়ন ডলারের ‘অপ্রদর্শিত ভর্তুকি’ পেয়েছে ইকুইটি-মানি ব্যবহার করে। কাজেই, নন-স্ট্যান্ডার্ড একাউন্টিং+ অনুদানের অর্থের অনুল্লেখ দ্বারা গ্রামীন ১৯৮৫-৯৬ সময়ে ব্যালেন্স শিটে সর্বমোট ৮১+ মিলিয়ন ডলারের একটা ‘গোজামিল’ দিয়েছে যাতে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা-সফল মডেল হিসেবে দেখানো যায়। (এই বিষয়ে এইখানে সাংবাদিকের লিখা একটা সহজপাঠ্য প্রবন্ধ পাওয়া যাবে http://online.wsj.com/public/resources/documents/pearl112701.htm)

এবার গ্রামীনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যাক এটাকে একটা বিজনেস-সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা যায় কি না। গ্রামীনের সর্বমোট ডিপোজিটের ৫৪% আসে সদস্যদের ‘সাপ্তাহিক জমা’ থেকে (ঋণের কিস্তি নয়)। মোট ইকুইটি’র (শেয়ার) ৯৪% এর মালিক সদস্যরা (২০০৬ সালের হিসাব, গ্রামীন ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া)। কিন্তু তারা কি কখনো ‘ডিভিডেন্ট’ পায়? তারা কি কখনো তাদের তাদের শেয়ার বিক্রী/হস্তান্তর করতে পারে? এই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড-অব-গভর্ণরস কি শেয়ার-হোল্ডারদের ভোটে নির্বাচিত হয়? এই প্রতিষ্ঠান কি অন্যান্য কমার্শিয়াল ব্যাংকের অনুরূপ ঋন-ব্যবসা বাবদ সরকারকে নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করে?- যদি এই প্রশ্নের উত্তরগুলো ‘না’ হয়, তাহলে গ্রামীন কে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বলা যায় কি?

কিন্তু গ্রামীনকে কিছু ছাড় দেওয়া যেতে পারে এই বিবেচনা থেকে যে, গ্রামীন দরিদ্র জনগনের সেবা করছে। কাজেই গ্রামীনকে বিশেষ কিছু ছাড় দিয়ে হলেও ঋণ-সেবা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। সরকার তা দিয়েছেও। ১৯৮৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি (চাচামিয়া) এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যাংকিং-এর প্রচলিত নিয়মকানুন থেকে অব্যাহতি (immunity) দান করেন। এ ব্যাপারে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বিশেষ সহায়তা করেন (অতি সম্প্রতি ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এই অর্থমন্ত্রী আবার খবর হয়েছেন ১৭ এপ্রিল, ইত্তেফাকের প্রথম পাতায়)। যেহেতু দরিদ্রদের জন্য ঋণদান কর্মসূচী চালাবে, তাই দেশি-বিদেশী দাতাদেরও উচিত গ্রামীনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তারাও বিপুল উদ্যোমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। -আসুন, এবার দেখি দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা।

যেকোন দরিদ্রকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরনের বহুল-প্রচারিত কথাটা আসলে পুরাই চাপাবাজি। ঋণ পাওয়ার জন্য ধনীদের যেমন ব্যাংকের কাছে নিজেদের ‘ঋণ পাবার যোগ্যতা” প্রমাণ করতে হয়, ক্ষুদ্রঋণের বেলাতেও সেটা আছে। সেটা কি রকম?- গ্রামীনের ওয়েব সাইটেই আছে, ক্রেডিটের তিন ‘সি’। এগুলো হলোঃ
এক, ক্যারেক্টার- এর মানে হল, ঋণ প্রত্যাশীর আর্থিক লেনদেনের পূর্ব-ইতিহাস, যা থেকে নির্ধারন করা হয় ঋণ-পরিশোধে প্রার্থির সততা+নির্ভরযোগ্যতা,
দুই, সামর্থ- এর মানে হল, তার আয়ের ধারা+আইনগত বাধ্যবাধকতা (যা কি না ঋণ আদায়ে ইন্টারফেয়ার করতে পারে) অনুযায়ী কি পরিমাণ ঋণ পেতে পারে,
তিন, পুঁজি- এর মানে হল, ঋণ-প্রত্যাশীর বর্তমান সম্পদ, যেমন, বাড়িঘর, মজুত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ যা ঋণ-পরিশোধে ব্যর্থ হলে “ব্যবহার” করা যাবে।
(টার্মগুলোর এইসব বিশেষ ডেফিনিশনগুলোও গ্রামীনেরই দেওয়া, আমি শুধু অনুবাদ করেছি)।

এখন দেখা যাক, কারা কারা গ্রামীনের নির্ধারিত এইসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে উৎরে যায়। – প্রথমত, ঋণ লেনদেনের পূর্ব-ইতিহাস কার থাকতে পারে বলে মনে হয়? যার কখনোই কিছু ছিলোনা? নাকি যে আগে থেকেই কিছু কিছু ঋণ নেওয়া-ফেরত দেওয়া করেছে? অতএব, যারা এই মাপকাঠিতে উৎরে যাবে, তারা নিশ্চয়ই নিঃস্ব নয়। তার সেই পূর্ব-ইতিহাস কেমন হতে হবে? নিশ্চয়ই ভালো, অর্থ্যাত সফলভাবে ঋণ পরিশোধ করেছে। সফল+ব্যর্থ দুই দলই উৎরে গেলে ত এই শর্তই থাকার কথা না।
দ্বিতীয়ত, একজন সামর্থবান ঋণ-প্রার্থী সে’ই যার একটা নির্দিষ্ট আয়ের উৎস বিদ্যমান+এমন কোন আইনী বন্ধন/সুবিধা নেই ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষ্যণীয় যে, আয়ের একটা উৎস থাকা লাগবে। (আইনী ব্যাপারটা আমি বুঝি নাই, তবে সেটা না বুঝলেও আপাতত কাজ চলবে)।
তৃতীয়ত, পুঁজি থাকতে হবে ( 😮 ) । তবে সেটা নগদ অর্থ না হয়ে বসত-বাড়ি, মজুত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ হলেও চলবে।
(বাস্তবে ক্ষুদ্রঋণের মাঠকর্মীরা একটু এদিক-সেদিক করে অন্যান্য কিছু নিয়মকানুন অনুসরন করে ফয়েজ ভাই যা’র কয়েকটা উল্লেখ করেছেন তার পোষ্টে)।

যারা যারা এইসব শর্ত পূরণ করে তাদের “ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা” প্রমাণ করতে পারে, তারা কতটা দরিদ্র? তারা নিশ্চয়ই নিঃস্ব, হতদরিদ্র না। তাদের থেকেও কি আরো দরিদ্র মানুষ দেশে আছে যারা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না? পূর্বোক্তদেরকে দরিদ্র বললে শেষোক্তদের কি বলবো? একারণেই Develtere and Huybrechts (2005) মন্তব্য করেছেন যে, ক্ষুদ্রঋণ ‘বটম পুওর’ কে গোনার বাইরে রাখে। তবে এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, গ্রামীনের এইসব “ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা” অর্জন করতে খুব বেশি অর্থের দরকার হয়না। একারনে, অনেক গরীবের পক্ষেই এই পরীক্ষায় উৎরে যাওয়া সম্ভব। তবে তারা কোনমতেই ‘কোন কিছু নাই’ এই দলে না, বরং “সামান্য কিছু হলেও আছে” এই দলের গরীব। কিন্তু সামান্য কিছু থাকলেও ত তারা দরিদ্রই। অবশ্যই। তাহলে এখন দেখা যাক, এই ভাগ্যবান দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কি করে।-

ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতারা প্রায় সবাই দরিদ্র+মহিলা+গ্রামে বাস করে। দরিদ্র+মহিলাদের জন্য গ্রামে ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগের কি কি সুযোগ আছে? তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার আছে কি? তারা কি অন্য কোন সরকারী/বেসরকারী সোর্স থেকে সহায়তা পাচ্ছে? ক্ষুদ্রঋণের ফলাফল নির্ধারনে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা জরুরী। – তারা মূলত যেসব খাতে বিনিয়োগ করতে পারে, তা হল- শাকসব্জি চাষ, গরু-চাগল-হাস-মুরগী পালন, ধান থেকে চাল, গম থেকে আটা, বা সড়িষা থেকে তেল (এই জাতীয় আরো কিছু), ইত্যাদি। আমার এলাকায় আমি এগুলোই দেখেছি। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আবাদী-চাষাকে কৃষিকাজে বিনিয়োগ করতে দেখিনি কখনো। পাঠককেও চেষ্টা করতে বলি আর কোন কোন খাত তাদের বিনিয়োগ দেখেছেন তা স্মরণ করতে। এখন ভেবে দেখুন ত, যদি বৃষ্টিতে/বন্যায় শাক-শব্জি মরে যায়, অসুখে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী মরে যায়, বাজারে কোন কারণে যদি চাল-গম-তেল বিক্রী না হয় বা দাম পড়ে যায়, তখন কি ঘটে সেই ঋণগ্রহীতার? ঋণ কিন্তু ফেরত দিতেই হবে, এক্ষেত্রে কোন ছাড় নাই। এই অবস্থায় Sharif (1999) তার গবেষনায় দেখেছেন যে, তারা নীম্নোক্ত পাঁচটি পথ অবলম্বন করেঃ
এক, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেয়,
দুই, বসত-বাড়ি বিক্রী করে বা পূর্বের মজুত/বিনিয়োগে হাত দেয়,
তিন, জীবনযাত্রার মান কমিয়ে অর্থ জমা করতে শুরু করে,
চার, ঋণ পূণঃতফসিলীকরণের (রি-স্কেজ্যুল) চেষ্টা করে (সাফল্য বিরল),
পাঁচ, কিছুই করতে না পারলে ঋণ খেলাপী+ড্রপট-আউট হয়।

১৯৯৩ সালের বার্ষিক রিপোর্টে গ্রামীন ব্যাংক উল্লেখ করেছিলো যে, পূর্ববর্তী বছরে তাদের সদস্যদের মধ্যে ড্রপট-আউটের হার ছিলো ১৫%। কিন্তু ঋণ পরিশোধের হার কিন্তু ঠিকই ৯৫%। এর মানে হচ্ছে, ঋণ খেলাফিরা ড্রপট-আউট হলেও তাদের কাছ থেকে ঋণ ঠিকই আদায় হয়েচ্ছিল। সেটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল? এটা কল্পনা করা লাগবে না, হাতের কাছেই টাটকা নজীর আছে। ২০০৭ এর নভেম্বরে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ঘটে যাওয়া প্রলংকরী ঘূর্ণীঝড় ‘সিডর’ শুধু মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, গাছপালাই উড়িয়ে নিয়ে যায় নি, সেই সাথে ক্ষুদ্রঋণের মহামানবদের “গরীবের বন্ধুনামক” মুখোশটাও উড়িয়ে নিযে উলংগ করে দেখিয়েছে তাদের আসল চেহারা। (দেখুন ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়, ১১ ডিসেম্বর, ২০০৭)। এক্ষেত্রে হতভাগ্য সেই তুলনামূলক-গরীব ত অবধারির ভাবেই নিঃস্ব হয়ে পড়ে! পুরো ডিসেম্বর-জানুযারী মাস জুড়েই প্রায় সব পত্রিকার পাতায়ই আছে ক্ষুদ্রঋণ-ওয়ালাদের হাতে নিঃস্ব ঋণগ্রহীতাদের নির্যাতনের করুণ কাহিনী। কোন কথা শোনা যায়নি দরিদ্রদের বন্ধুদের। তাদের অত্যাচারে অনেকেই নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যখানে পালিয়ে গেছে। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটা! – সেনাবাহিনীর প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপে+ত্রাণকার্যের জন্য মাঠে সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে কেবল সাময়িক মুক্তি মিলেছিলো কিছু কিছু ভুক্তভোগীর। কিন্তু তারপরে তাদের কপালে কি ঘটেছে, সেই খবর আর নেই নাই আমরা। আর্তের করুন আর্তনাদ মিলিয়ে গেছে। আবার সরব হয়েছে “গরীবের বন্ধু”রা।

গ্রামীন ব্যাংক ও তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের সুবিধাবাদী চরিত্র ধরা পড়ে একটা সাধারণ প্রবণতার মধ্যেঃ যখন ক্ষুদ্রঋণের দুঃস্থ গ্রহীতাদের পক্ষ হয়ে তাকে বলা হয় ঋণ/সুদ মাফ করতে, তখন সে দাবি করে যে, সে ত দাতব্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে না, ব্যবসা করছে। কাজেই কোন মাফ নাই। আবার যখন বলা হয় যে, কমার্শিয়াল ব্যাংকের মত ট্যাক্স দিতে, শেয়ার-হোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিতে, তখন বলে যে, সে ত ব্যবসা করছে না, জনসেবা করছে!

– উপরে রইলো আমার বিশ্লেষণ। এবার পাঠকের হাতেই দিলাম ক্ষুদ্রঋণের ‘দারিদ্র-বিমোচন+সমাজসেবা+গরীবের বন্ধু’ হওয়ার দাবি বিবেচনা করার ভার।

এখন আসি, ব্যক্তি ডঃ ইউনূস স্যারের সম্পর্কে আমার মূল্যায়নে। ফয়েজ ভাইয়ের পোষ্টে আমি তাকে বলেছিলাম একজন ‘সচেতন মিথ্যুক’ (conscious liar). কেন বলেছি সেই কথা বলি এবার।-

ইউনুস স্যার ১৯৭৬ সাল থেকে গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে লেগে আছেন। চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে শুরু, তারপর পর্যায়ক্রমে টাঙ্গাইলের একটা থানা, তারপর পুরো জেলা, সেখান থেকে সারা দেশ এবং সম্প্রতি সারা বিশ্বে (আমেরিকাতেও!) তার এই ক্ষুদ্রঋণ ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি কি জানেন না এটা গ্রহীতার কি কি উপকার+অপকার করে? তিনি সব সময় শুধু উপকারের কথাই শুধু বলেন কেনো? ঋণ-পরিশোধের সামষ্টীক+কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য সংগ্রহ করেন, কিন্তু ঋণ-গ্রহীতাদের লাভক্ষতির পরিমাণ দেখাতে গিয়ে তিনি কেনো সামষ্টীক+কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য না দিয়ে কেবল কিছু ব্যক্তিগত সাফল্যের কাহিনী শোনান? ঋণ-গ্রহীতা কোন একটি গ্রুপের ৬/৭ জনের মধ্যে একজন সুফিয়া, বা জরিনা, বা নূরজাহান সফল মানেই কি গ্রুপের বাকি সবাই সফল? বাকিদের খবর কি তিনি জানেন না? তিনি সব যায়গায় বক্তৃতায় বলেন যে, ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে দরিদ্রের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই দারিদ্র্য যাদুঘরে যাচ্ছে। অথচ দেশের হতদরিদ্রের হার গত দুই বছরে প্রায় ১৫% বেড়ে গেছে (প্রথম আলো সহ অনেক পত্রিকাই এটা প্রথম পাতায় ছেপেছে)। এই সময় কি ক্ষুদ্রঋণ বন্ধ ছিলো? আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই যে, দেশে দারিদ্র্য আসলেই কমছে, সেটা কি ক্ষুদ্রঋণের জন্য? দেশে কি ক্ষুদ্রঋণ ছাড়া দরিদ্রদের জন্য সহায়ক আর কোন সরকারী/যেসরকারী/আন্তর্জাতিক প্রকল্প নেই?

গ্রামীণ শুধু আর্থিকই উন্নয়নই না, সামাজিক উন্নয়নেরও দাবি করে। হিলারী ক্লিনটন যশোরে গ্রামীনের কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে তাকে যে গ্রামে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো, সেই গ্রাম হিলারী গ্রাম বলে পরিচিত। সেখানে দুই কন্যাশিশুকে ঘটা করে উপস্থাপন করা হয়েছিলো গ্রামীনের আর্থিক সহায়তায় বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হিসেবে। প্রথম আলো সেই বালিকাদেরই একজনের ১৩ বছরে, আরেকজনের ১৪ বছরে বিয়ের সংবাদ ছেপেছে। ডঃ ইউনূস কি এসব জানেন না?

তার প্রতি আমার সব থেকে বড় অভিযোগ, তিনি প্রয়োজন মত তথ্য বিকৃত+গোপন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর ফলাফল উপস্থাপন করেন যা একজন একাডেমিক হিসেবে প্রফেশনালিজমের মারাত্নক অবমাননা। তিনি আশা’র শফিকুর রহমান বা প্রশিকা’র কাজী ফারুক হলে এই প্রসংগ আসত না। কিন্তু তিনি আমেরিকার একটা টপ-৫০ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রীধারী। তিনি কি বোঝেন না কোন তথ্য দিয়ে কোন দাবী করা যায়? –

উপরোক্ত এইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আমি তাকে সচেতন মিথ্যাবাদী বলেছি। তিনি শুধরে নিলে আমিও বক্তব্য প্রত্যাহার করবো।

তথ্যসূত্রঃ
Develtere, P. and A. Hyubrechts (2005). “The Impact of Microcredit on the Poor in Bangladesh” in Alternatives, 30:165-189.
Morduch, Jonathan, (1999). “The microfinance promise” in Journal of Economic Literature 37.4: 1569-1614.
Sharif, I. A. (1999). “Role of Microcredit in Capacity Development for Poverty Alleviation: Case Study from the
Non-government Sector of Bangladesh”. In Banerjee, Report for Canadian Partnership Branch, CIDA (Ottawa).

৭,৫৮৪ বার দেখা হয়েছে

৫৮ টি মন্তব্য : “গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন”

  1. আলম (৯৭--০৩)
    যখন ক্ষুদ্রঋণের দুঃস্থ গ্রহীতাদের পক্ষ হয়ে তাকে বলা হয় ঋণ/সুদ মাফ করতে, তখন সে দাবি করে যে, সে ত দাতব্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে না, ব্যবসা করছে। কাজেই কোন মাফ নাই। আবার যখন বলা হয় যে, কমার্শিয়াল ব্যাংকের মত ট্যাক্স দিতে, শেয়ার-হোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিতে, তখন বলে যে, সে ত ব্যবসা করছে না, জনসেবা করছে!

    উটপাখিকে যদি বলা হয় "উড়", বলে "আমি উট, উড়বো কি করে"
    যদি বলা হয় "বোঝা নিয়ে চল", সে বলে "আমি পাখি, উড়ে যাব কিন্তু"

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    দেশের হতদরিদ্রের হার গত দুই বছরে প্রায় ১৫% বেড়ে গেছে (প্রথম আলো সহ অনেক পত্রিকাই এটা প্রথম পাতায় ছেপেছে)।

    এটা দুই বছরের আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ের তথ্য। তেলের দাম যখন ব্যারেল প্রতি ১৫০ ডলারের বেশি, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল আক্রা হয়ে উঠেছিল, টন ১০০০ ডলারেও মিলছিল না। সেই সময়ের পরিসংখ্যান এটা। এর আগে গত দুই দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশে দারিদ্র কমছে মাহমুদ।

    আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই যে, দেশে দারিদ্র্য আসলেই কমছে, সেটা কি ক্ষুদ্রঋণের জন্য? দেশে কি ক্ষুদ্রঋণ ছাড়া দরিদ্রদের জন্য সহায়ক আর কোন সরকারী/যেসরকারী/আন্তর্জাতিক প্রকল্প নেই?

    আমি বলি না একমাত্র ক্ষুদ্রঋণ এর কারণ। তবে অবশ্যই অন্যতম একটা কারণ। প্রবাসী অর্থ, সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাওয়া, কৃষিতে নির্ভরশীল মানুষের হার কমে আসা- এরকম অনেক কিছুও এখানে প্রভাব ফেলেছে। তবে ক্ষুদ্র ঋণ কেবল গ্রামীণ ব্যাংক দেয় না, আরো আরো প্রচুর এনজিও, এমনকি পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারি অর্থও ক্ষুদ্রঋণে বিনিয়োগ হয়েছে।

    আর গ্রামীণ ব্যাংক কি আর দশটা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো একটা? তার মুনাফা কে খায়? চার হাজার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ঋণ প্রদানকারীদের খরচ কতো পড়ে? কোনো একক প্রকল্পে চার কোটি, চল্লিশ কোটি বা চারশ কোটি বিনিয়োগ আর চার হাজার টাকা বিনিয়োগের রিকভারি ব্যয় কি কম-বেশি হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের লাভের টাকা কি ড. ইউনূসের পকেটে যায় নাকি পুনর্বিনিয়োগ হয়।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      ভালো লাগল আপনার মন্তব্য দেখে। তবে কিছু বিষয়ে আমার দ্বিমত করি। কিছু মনে নিয়েন না।

      রেমিট্যান্সের কারণে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে ঠিক। কিন্তু কৃষিতে নির্ভরশীলতা কমায় তা আবার কমে যাচ্ছে। কারণ, মূল সূত্রটা হলো,
      কৃষি নির্ভরতা হ্রাস+শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি একসাথে ঘটতে হবে। তা না হয়ে শুধু কৃষি-নির্ভরতা কমলো, কিন্তু শিল্পে কর্মসংস্থান হলোনা, তাহলে ত উতখাত হওয়া মানুষ গুলো না খেয়ে থাকবে (আমাদের দেশে এখন হচ্ছেও তা'ই)। আর এ' জাতীয় বেকার মানুষের (কৃষকের) সংখ্যাধিক্য ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় তা দেশের সামগ্রিক জীবনযাত্রায় নেতিবাচক ফল নিয়ে আসবেই। দেশের জীবনযাত্রার মান শুধু ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তের দিকে তাকিয়ে পরিমাপ করা যথার্থ না। শহরের দ্রুত বর্ধিষ্ণু বস্তিবাসী+ভাসমান জনতা এবং গ্রামের মানুষের সামগ্রিক অবস্থাও বিবেচনা করা জরুরী জাতীয় জীবনযাত্রার মান নির্ণয়ে।

      "গ্রামীনের টাকা পুনর্বিনিয়োগ হয়।"- আমি আপনার সাথে একমত। ধরি, পুরোটাই হয়, সব সময়। কিন্তু তার ফলে কি হয়?- যে সদস্যদেরকে গ্রামীনের মালিক বলে দাবী করা হয়, তারা কি কখনো চোখে দেখে সেই মালিকানা থেকে সরাসরি প্রাপ্ত কোন সুবিধা? তাহলে সেটা কোন ধরনের মালিকানা? এমনকি তারা কোনদিন জানতেও পারেনা তাদেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কে চালায়। বাস্তবে এমন কোন উপায় নাই যে, তারা উপলব্ধি করবে যে তারা গ্রামীনের সূক্ষাতিসূক্ষ একটা অংশের মালিক। বরং, ঋণগ্রহীতা হিসেবে সব সময়ে তারা থাকে দৌড়ের উপর, তাদেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ভয়ে! বিচিত্র নয় কি?

      "ঋণ প্রদানকারীদের খরচ কতো পড়ে?"- কমার্শিয়াল ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হলেও ক্ষুদ্রঋণের বেলায় সমস্যা আছে। কমার্শিয়াল ব্যাংক ঘোষনা দিয়ে নামে ঋণের ব্যবসা করতে। তাই তারা জেনেশুনেই নামে ব্যবসাতে যেখানে আয়ের সাথে খরচটাও হিসাব করে, তার উপর ভিত্তি করে মুনাফার হিসাব করে, সেই মুনাফার একটা সর্বস্বীকৃত অংশ সরকারকে ট্যাক্সও দেয়। ক্ষুদ্রঋণ কি তা' করে?

      কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে আরেকটা পার্থক্য আছে? - ক্ষুদ্রঋণের জন্য কি কেউ আবেদন করে? না কি ক্ষুদ্রঋণ নিজেই যায় মানুষের দ্বারে দ্বারে? কেন যায়? সেবা করার জন্য? না কি ব্যবসা করার জন্য? সেবা করার জন্য হলে ত খরচের হিসাব, মুনাফা এসব প্রশ্ন আসার কথা না। গ্রাহকের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে, গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য করার কথা না। আর যদি ব্যবসাই করে থাকে, তাহলে প্রচলিত নিয়মনীতি মেনে ঠিকঠাক মত ব্যবসা করুক, ট্যাক্স দিক, বছব বছর ১০০০% প্রবৃদ্ধির উপর আনুপাতিক হারে শেয়ার হোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিক (২০০৬ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ১০০০+%, ২০০৭ এ ছিলো ১৩৯৮%), মুনাফা পূণর্বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে শেয়ার-হোল্ডারদের মতামত গ্রহনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুসরন করুক।

      বারবার গ্রামীনের কথা বলছি এই কারনে যে, এই মডেলটা গ্রামীনের এবং গ্রামীনই এটার মূল পৃষ্ঠপোষোক, বাকিদেরকে সাব-কন্ট্রাক্টর বলা যায়। ক্ষুদ্রঋণের সব কৃতিত্ব তাই যেমন গ্রামীনের, কোন খারাপ প্রভাব থাকলে তা'ও গ্রামীনেরই হবার কথা।

      সানা ভাই,
      কোন ভাবে ভুল কিছু বলে থাকলে শুধরে দিবেন। আর কোথাও যদি মনে কষ্ট দেওয়ার মতো কোনকিছু বলে থাকি, প্লিজ দেখিয়ে দিবেন। ক্ষমা চেয়ে নিবো। জুনিয়র হিসেবে ত এই সুবিধাটা পেটেন্ট করা, তাই না ? 😛


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  3. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    তর্ক শুরু হলে আমি আবার আসব। এখন বলে যাই, অসাধারন সহজবোধ্য করে লিখেছে। কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে আরেকটু টেকনিক্যাল একটা পোস্ট আশা করছিলাম(ভাই মাইন্ড খাইয়েন না)।

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)
    এই মডেলটা গ্রামীনের এবং গ্রামীনই এটার মূল পৃষ্ঠপোষোক, বাকিদেরকে সাব-কন্ট্রাক্টর বলা যায়

    আমি অর্থনীতির ব্যাপারগুলো একেবারেই বুঝি না। কিন্তু আমার সোজা বুদ্ধিতে যা মনে হয়, প্রচলিত ব্যবসায়ী আর জনসেবাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝামাঝি একটা মডেল হিসাবে গ্রামীন ব্যাংক ভিন্নতার দাবীদার। শুধু জনসেবাকারী হলে কিছুদিনের মাঝেই জনসেবাকারী প্রতিষ্ঠান নাই হয়ে যেত, আবার ব্যবসায়ী হলে প্রায় নিঃস্বদের যা কিছু ঋন মিলে তাও মিলত না।

    গ্রামীন ব্যাংককে আমি স্যোসালিজম ও ক্যাপিটালিজমের হাইব্রিড মডেল হিসাবেই দেখি। তাই অবাক হইনা যখন গ্রামীন ব্যাংককে স্যোসালিস্ট ও ক্যাপিটালিস্ট দুই পক্ষেরই সমালোচনার স্বীকার হতে হয়। আপনিও ভাইয়া গ্রামীন ব্যাংককে এই দুই ক্যাটাগরীতেই ফেলার চেষ্টা করেছেন, এর মাঝের হাইব্রিড মডেলটার দিকে একটু আলোচনা করলে ভাল হতো।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      স্যোসালিজম ও ক্যাপিটালিজমের হাইব্রিড মডেল হিসাবেই দেখি

      গুলায়া ফালাইলা মিয়া। :grr:

      এইখানে স্যোসালিজম-ক্যাপিটালিজম কোনটাই আসে নাই, আমিও ঐ লাইন থেকে কিছু কই নাই। আমি কোন ডেফিনিশনও দেই নাই ক্ষুদ্রঋণের। আমি বরং জানতে চাইছি, এটা আসলে কি?- একেকবার একেক দাবী করে, সুবিধামত এক বার কয় সমাজসেবা, আরেকবার কয় ব্যবসা। কিন্তু আসলে তো পুরোপুরি ভাবে কোনটাই না।

      ব্যবসা আর সমাজসেবা- এই দুয়ের মধ্যে কোনটা? স্যোসালিজম ও ক্যাপিটালিজমের মধ্যে না। বোঝা গেলো? 🙂


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
      • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

        আমি পিওর ব্যবসাটাকে ক্যাপিটালিজম ও পিওর জনসেবাকে স্যোশালিজমের সাথে তুলনা করে বলতে চেয়েছি মাত্র। গ্রামীন ব্যাংক জনসেবা ও ব্যবসার মাঝামাঝি কোন একটা মডেল মনে হয়েছে আমার কাছে, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বলেই আমার ধারনা।

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

          কি বলতে চাইছো তা' বুঝছি। 🙂

          কিন্তু তোমার একটা ভুল ভাঙ্গায়া দেইঃ
          পিওর ক্যাপিটালিজম ও পিওর স্যোশালিজম দুইটাই ব্যবসার কথা বলে। জনসেবা+জনকল্যানের কথাও বলে। এদের মধ্যে পার্থক্য এখানে নয়। -পার্থক্য হলো, কে সেই ব্যবসা 'অরগানাইজ' করবে, তা নিয়ে। সোসালিজম বলে রাষ্ট্র, আর ক্যাপিটালিজম বলে ব্যক্তি। দুই দলেরই নিজ নিজ মতের পক্ষে যুক্তি/ব্যাখ্যা আছে। 😛


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
      • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

        আমি মনে করি এটা এসেন্সিয়্যলি ব্যাবসাই। মুনাফা অর্জন করছে এটা। তবে এটা সেবামুলক ব্যাবসা আমি বলবো। এটা উপকার করছে কিছু। তবে এটার ট্যাক্স এক্সেম্পশনের যে ব্যাপারিটা আপনি বললেন এটার সাথে একমত। ট্যাক্স এক্সেম্পশন এটার পাওয়া উচিত না। মুনাফা অর্জন করলে ট্যাক্স দেওয়া উচিত আমি মনে করি। ট্যাক্স ক্যাপিটালিজমের সামাজিক চালিকাশক্তি।তবে অবিবেচনাপ্রসুত ট্যাক্সের আমি সমর্থক না। যেমন গাড়িতে ২০০% ট্যাক্স, আবার ট্যাক্স এক্সেম্পশন যেমন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এটারও সমর্থক না। যাই টাকা উপার্জন করছে তারই ট্যাক্স দেওয়া উচিত রিগার্ডলেস, যেই টাকা খরচ করছে তারও ভ্যাট দেওয়া উচিত রিগার্ডলেস।

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

          ভালো লাগল তোমার মন্তব্য দেখে। আর সব ব্যবসাই কিন্তু সেবামূলক, তা' যেকোন ধারার দর্শন থেকেই দেখোনা কেন। মুক্তবাজার দর্শন বলে যে, নৈর্ব্যক্তিক বাজার স্বয়ংক্রিয় ভাবে উতপাদিত কল্যান/সেবা জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, আর মার্ক্সিস্টরা (সমাজতান্ত্রিক বা কম্যুনিষ্ট না কিন্তু) বলে বাজার তা ছড়িয়ে না দিয়ে উল্টো কতিপয় ব্যক্তির হাতে পুঞ্জিভূত করে।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন
          • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

            হ্যা এটা সত্য যে সব ব্যাবসাই সেবামুলক। আমি ঠিক ঐ সেন্সে কথাটা বলিনি। আমি বলেছি সেবামুলক এভাবে যে এটা খুবি খুবি এলিমেন্টারি একটি মানবাধিকার নিশ্চিত করে। মানে, যেমন ধরুন এইচআইভি ভ্যাক্সিন যে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী বানাবে তারা কিন্তু ব্যাবসাই করবে এবং ব্যাবসা করবে একটি সেক্স-শপও তাই না? কিন্তু, প্রথমটিকে আমি বেশী সেবামুলক বলবো এই কারণে যে এটা ডিফেন্ড করে প্রাণ ধারণের অধিকার যেটা একটি খুবই এলিমেন্টারি মানবাধিকার। আর গ্রামীন ব্যাঙ্কের কর্মকান্ডকে এই একই কারণে সেবামুলক বলেছি আমি যে, ,এটা ডিফেন্ড করে ঋণের অধিকার- ডঃ ইউনুসের আইডিয়া কিন্তু এইটা যে ঋণ একটি মৌলিক মানবাধিকার। আর, একটি স্বচ্ছল জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা এটাও মানবাধিকার যা গ্রামীন ব্যাঙ্ক ডিফেন্ড করে।

            সোস্যালিজম, মার্ক্সিজম, কম্যুনিজম এদের মধ্যে পার্থক্য আছে জানতাম কিন্তু স্পষ্ট বর্ডারলাইনটা জানি না, এ ব্যাপারেও একটি পোস্ট নামিয়ে ফেলেন, উইকএন্ড তো- কয়েকটা ঘন্টা ব্রেইকতো নিবেন নাকি। 😀 এটা কিন্তু আমিও মানি যে পুঁজিপতিদের হাতে ক্যাপিটালিজম মুনাফা জমা করে, কিন্তু এটা মানিনা যে এই সমস্যার সমাধান ব্যক্তিমালিকানার বিলোপ। কারণ, ব্যক্তিমালিকানার বিলোপ কিন্তু আবার গনতন্ত্রের সাথে কনফ্লিক্ট করে। গনতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ধারণার সাথে কনফ্লিক্ট করে না এমন কোন অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা কেউ নিয়ে আসতে পারলে আমিই কিন্তু বলবো যে ঐটা ক্যাপিটালিজমের চেয়ে ভালো।

            জবাব দিন
            • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
              ডঃ ইউনুসের আইডিয়া কিন্তু এইটা যে ঋণ একটি মৌলিক মানবাধিকার। আর, একটি স্বচ্ছল জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা এটাও মানবাধিকার

              আপাততঃ তোমার সাথে এই বিষয়ে একমত।

              কিন্তু ডঃ ইউনূস স্যার+ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম এইটা কে "ডিফেন্ড করে" এটার প্রমাণ কই? ওদের কার্যকলাপ ত দেখি উল্টা এই মৌলিক অধিকার হরন করে।

              উইকএন্ড তো- কয়েকটা ঘন্টা ব্রেইকতো নিবেন নাকি।

              নারে ভাই। :no: কপাল খারাপ আমার। উইকএন্ডেই বেশি ব্যাস্ত থাকি। সক্কালে উঠে চলে যেতে হয় বাংগালী-পাড়ায়। তারপর সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় রুমে ফিরে ফিল্ডনোট লেখা লাগে ৬/৭ ঘণ্টা। ~x( আর অন্য দুইটা ক্লাসের জন্য প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই বা কয়েকটা আর্টিক্যাল (সর্বমোট ৪০০+ পৃষ্ঠা) পড়া ত আছেই। :bash: :bash:

              প্রতিদিন মনে হয় নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছি। জাপানে কত ভালা আছিলাম!

              সোস্যালিজম, মার্ক্সিজম, কম্যুনিজম এদের মধ্যে পার্থক্য আছে জানতাম কিন্তু স্পষ্ট বর্ডারলাইনটা জানি না

              যাক আর কিছুদিন। তারপরে এটাও দেখা যাবে। 🙂


              There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              জবাব দিন
            • রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

              প্রথমেই মাহমুদকে ধন্যবাদ বিশ্লেষণসমৃদ্ধ এই পোস্টটির জন্য। অনেক কিছু জানতে পারলাম। বিষয়গুলো আসলেই চিন্তা করার মত।

              জুবায়ের এর মন্তব্য থেকে উদ্ধৃত: "ডঃ ইউনুসের আইডিয়া কিন্তু এইটা যে ঋণ একটি মৌলিক মানবাধিকার"।

              ড. ইউনুসের এই কথাটা শুনতে বেশ চমৎকার। কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা রয়ে গেছে সেটা আমার ধারণা ড. ইউনুসও বিলক্ষণ জানেন। মানবাধিকারের ধারণাটা সার্বজনীন (Universal)। সেটার সুবিধa সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বা হওয়া উচিত। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর প্রতিষ্ঠানে ঋণ গ্রহিতাদের ক্ষেত্রে "ট্রিপল-সি" (সম্ভবত character, capability, capital বোঝাতে চেয়েছেন) এর অর্থ কি? সার্বজনীন ঋণ লাভের মানবাধিকার কি ড. ইউনুস নিজেও স্বীকার করেন বা মানেন? মনে তো হলো না! একে আমি হিপোক্রেসি বলবো না, অন্তত এখনই না। তবে মার্কেটিং এগজিকিউটিভের সেলস পিচ এর সাথে এধরণের শ্লোগানের কোথায় যেন একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে!

              জবাব দিন
              • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

                জ্বী, মাহামুদ ভাই তার পোস্টে বলেছেন যে এর ফলে একেবারে নিঃস্ব গরীবেরা ঋণের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন, তবে ঋণসুবিধার অধীনে এসেছে গরীবদের আরেকটা শ্রেণী যার উনার ভাষায় "কিছু হলেও আছে" কিন্তু যা আছে তা একটি ম্যাক্রোফাইনান্স পাওয়ার জন্য তাকে কোয়ালিফাইড করে না। এটা ঠিক, আমিও মানি যে একেবারে নিঃস্বরা এর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তবে, ঐযে গরীবদের একটা শ্রেণী এর আওতার ভেতর এসেছে এটাই বোধহয় ডঃ ইউনুসের কৃতিত্ব। তিনি ঋণের মৌলিক অধিকার সবার জন্য হয়তো নিশ্চিত করতে পারেননি, তবে কিছু মানুষের জন্য পেরেছেন। যাদের জন্য পারেননি তাদের জন্য অবশ্যই আমরা চাইবো যে তারাও ঋণসুবিধা পাক, আর যারা পেয়েছেন তাদের জন্য কি ডঃ ইউনুসকে আমাদের একটু হলেও কৃতিত্ব দেওয়া উচিত না? বাই দ্য ওয়েই, আপনার ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বছর আর আমার জন্মসাল একই 😛 । সন্মানিত বোধ করেছি যে আপনি আমাকে কোট করলেন।

                জবাব দিন
                • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
                  গরীবদের একটা শ্রেণী এর আওতার ভেতর এসেছে এটাই বোধহয় ডঃ ইউনুসের কৃতিত্ব।

                  অর্নব, তোমার কথা আপাততঃ মানছি যে তিনি "কিছু সম্পদ আছে" দলের গরীবদেরকে সিস্টেম্যাটিক ঋণের আওতায় এনেছেন।

                  কিন্তু আরেকটু খেয়াল করে দেখো ত এদের মধ্যে যারা ড্রপড-আউট হয়ে যায়, তাদের ভাগ্যে কি ঘটে? তারা ত নিঃস্ব, মানে "কিছুই নাই"দের দলে নেমে যায়!- এটা ক্ষুদ্রঋণের সব থেকে বড় দূর্বলতা।ড্রপড-আউটের কারণে শুধু অভাগা ঋণগ্রহীতারই ক্ষতি হয় না, ক্ষুদ্রঋণ মডেলটাই আন-সাসটেইনেবল হয়ে পড়ে, কারন এতে ঋণ সার্কুলেশন থেমে যায়। ( "ড্রপড-আউট>নিঃস্ব হওয়া" দরিদ্র মানুষের স্বেচ্ছায় ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আগ্রহী না হবার একটা কারণ।)

                  ইদানিং অফিসিয়ালী দেখানো হচ্ছে যে, ড্রপড-আউটের হার ক্রমশঃ কমছে। আসল ঘটনা হল- ঋণ-কার্যক্রমের বাইরে থেকে আয়ের উতস বাড়ছে, যেখান থেকে ড্রপড-আউটের ইফেক্টকে ধামা চাপা দেওয়ার সুযোগও বাড়ছে।


                  There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

                  জবাব দিন
                  • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

                    হ্যা মাহামুদ ভাই, ফয়েজ ভাই যখন উনার পোস্টে এভিডেন্স নিয়ে আসলেন যে ডিফল্টারদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে আমি কিন্তু সাথেসাথেই বলেছি যে এটা অগ্রহনযোগ্য, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আবশ্যই আমি মনে করি যে এটার আরও ফলপ্রসু সমাধান তাদের বের করতে হবে। যেই কুকর্মটা তারা করছে এটার জন্য যে তাদের গঞ্জনা প্রাপ্য রয়েছে তা কিন্তু আমি অস্বীকার করছি না। সেই গঞ্জনা এই পোস্টে আপনি করলেন, ফয়েজ ভাইও করেছে, অনেক পাঠকেরা করেছে, আমিও করলাম। কিন্তু, আমি বলছি ঐ ডিফল্টাররা তো আপনার দেয়া জোনাথান মর্ডুসের গননা অনুযায়ী ৭.৮%। এটার বিরোধীতা অবশ্যই আমরা করি যে এই ১০০ জনের মধ্যে ৮ জন লোকের ভাগ্য পরিবর্তনের পরিবর্তে ভাগ্য রসাতলে যাচ্ছে। কিন্তু, তারপরও তো বাকী ৯২ জনের এটা হচ্ছে না। বাকী ৯২ জনতো টাকা ঠিকই দিতে পারছে।১০০ জনে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশী যদি এই ডিফল্টার রেইট না হয় আমার মনে হয় একে আমরা সঙ্গতীপুর্ণ বলতে পারি। তবে, যেই অল্প কয়েকজনের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে তাদের জন্য আমাদের সহানুভুতি এবং এর প্রতিবাদে গ্রামীন ব্যাঙ্কের প্রতি নিন্দা আমরা জানাই অবশ্যই। আপনার পোস্টটাকে আমি সফল মনে করি এজন্যই যে এটা এই কনসেনসাস অদায় করতে পেরেছে। কিন্তু তাই বলে ঐ ৭.৮ জনের জন্য যে পুরো গ্রামীন ব্যাঙ্কের সম্পুর্ন কার্যক্রমই আমরা নির্বিচারে বাতিল করে দেব তা কিন্তু ঠিক হবে না।

                    জবাব দিন
                    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
                      বাকী ৯২ জনতো টাকা ঠিকই দিতে পারছে

                      অর্নব, আমি তোমাকে ঠিক এইখানেই লক্ষ্য করতে বলছি। ঋণ-পরিশোধ/আদায়ের মেকানিজমটা'তে। এটা মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা'র মিউচ্যুয়াল বার্গেইনের মাধ্যমে হচ্ছে না (যেটা হওয়ার কথা মুক্তবাজার দর্শন অনুযায়ী), হচ্ছে ঋনদাতাকর্তৃক 'শক্তি প্রয়োগে' (প্রিমিটিভ একুমুলেইশন)। মুক্তবাজার, গণতন্ত্র, মানবতা- এইসব ভ্যালুজ তাই ক্ষুদ্রঋণের সাথে কন্ট্রাডিকটরি।


                      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

              • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
                মানবাধিকারের ধারণাটা সার্বজনীন (Universal)। সেটার সুবিধa সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বা হওয়া উচিত।

                রায়হান ভাই, সালাম।

                অনেক দিন পর সিসিবি'তে দেখলাম আপনাকে 🙂 ।

                আপনি কন্ট্রাডিকশনটা ভালোই ধরেছেন। ডঃ ইউনূস স্যারও বোঝেন এটা, সন্দেহ নেই। ক্ষুদ্রেঋণের পুরা মডেলটাই কন্ট্রাডিকশনে ভরা।


                There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

                জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

          @ জুবায়ের অর্ণব

          ট্যাক্স এক্সেম্পশন এটার পাওয়া উচিত না। মুনাফা অর্জন করলে ট্যাক্স দেওয়া উচিত আমি মনে করি।

          :thumbup: :thumbup: :thumbup:

          যাক আমার দুঃখটা বুঝলো 😀


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
  5. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    খুব ভালো বিশ্লেষণ। অর্থনীতি খুব জটিল একটি ব্যাপার বলে মনে হয়। আর এ কারনেই মনে হয় কোন নির্দিষ্ট মডেল নেই যা তুমি ব্যবহার করবে আর তা নিশ্চিত কাজ দিবে। আমার কিছু বিষয় জানার ছিল। একটি দেশের অর্থনীতি কিভাবে চলে? একটি দেশের আয়ের উৎস কি কি? তার প্রধান ব্যায় কি কি? একটি দেশ কিভাবে বাজেট এ ঘাটতি নিয়ে চলে? কিভাবে আমাদের মত ১৫ কোটি মানুষের দেশের অর্থনীতির উন্নতি সম্ভব? বিভিন্ন গবেষকদের অভিমত কি এই ব্যাপারে? তোমার নিজের কি ধারনা? কখনো সময় হলে একদিন একটি পোষ্ট দিও এই বিষয়ে, খুশি হব। তুমি কোথায় এবং কি বিষয় নিয়ে পড়ছো?

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      মোস্তফা ভাই,

      আসলে অর্থনীতি আমারও আসল বিষয় না, আমার বিষয় সমাজবিজ্ঞান, স্পেশালাইজেইশন করার চেষ্টা করছি 'উন্নয়নের সমাজবিজ্ঞান'এ, গবেষনার মূল বিষয়বস্তু হবে 'মাইগ্রেশন, রেমিটেন্স ও উন্নয়ন'।- উন্নয়ন বিষয়ক পড়ার সূত্রেই ক্ষুদ্রঋণ পড়তে হচ্ছে। আর নোবেল পুরষ্কারের পর ত বাংলাদেশী হিসেবে এটা জানা ফরজে আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। :grr:

      সামগ্রিক অর্থনীতি'র সম্পর্কে ধরণা কম থাকলেও 'মুক্তবাজার অর্থনীতি'র মৌলবাদিতা বিষয়ে হালকা-পাতলা পড়াশোনা চালায়া যাচ্ছি। 😛 দোয়া রাইখেন।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  6. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    আমাদের মাঝে ভাল অর্থনীতিবিদ কে আছে?

    তোমার লেখাগুলো পড়ছিলাম। মাত্র জনপ্রিয় জ্ঞান বিষয়ে লেখাটি শেষ করলাম। এত কমেন্ট আর এত বড় লেখা মনে হচ্ছিল শেষ হবে না। তোমার উন্নয়ন ভাবনা বিষয়ক লেখাটিও পড়লাম। হিংসে হচ্ছে যে তোমার বিষয় সমাজবিজ্ঞান। আমার আগ্রহ সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে। সব মিলিয়ে বলা যায় দর্শণ নিয়ে। কিন্তু পড়ি হল প্রকৌশল নিয়ে। তার উপর বিবাহিত মানে মৃত। পিএইচডি র কাজের বাহিরে যে বাড়তি পড়া পড়বো তার সময় পাই না। তাই ব্লগে আসি। তোমার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। তোমার উন্নয়ন ভাবনা বিষয়ে আরো কিছু লেখা দিতে পারো। আমরা সম্মিলিত ভাবে কি কি করতে পারি আমাদের পক্ষ থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে?

    জবাব দিন
  7. তৌফিক

    মাহমুদ ভাই, আমি আপনার গুণমুগ্ধ ভক্তদের একজন। সত্যি বলতে কি, আর্টসের একমাত্র ইতিহাস ছাড়া অন্যকোন বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল না। ইতিহাস বাদে অন্য বিষয়গুলা তো আর গল্পের মতো পড়া যায় না। তবে, আপনার লেখা পইড়া সমাজবিজ্ঞান পড়ার প্রতি বিরাট আগ্রহ জন্মাইতেছে। ব্যস্ততার জন্য রিডিং ফর প্লেজার বন্ধ আছে। কাজ কিছু গুছাইতে পারলে আপনার কাছ থেকে লিস্টি নিয়া পড়া শুরু করুম। 🙂

    জবাব দিন
  8. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    মাহমুদ, তুমি দেখি আমার মনের না বলা অনেক দুঃখ বইলা দিলা। আমার এই রকমই মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল ব্যাপারটার মাঝে বিরাট ফাঁক আছে, তুমি যেমনে রেফারেন্স সহ দিলা একটা খাওয়া পাওনা রইল তোমার।

    তোমারে খাওয়াবো, তবে শর্ত হইলো গিয়া, বউ সহ খাইতে আইবা, নাইলে নাই। 😀


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      মাহমুদরে জিগাও ক্যান? আমরা উত্তর জানি না নাকি? 😀

      শান্তিতে পাইছেন কারন এই পোষ্ট খালি ছিল, অর্থনীতি বুক হইয়া গেছিল আগেই। 😉


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
    • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
      ড. ইউনুস ক্ষুদ্রঋণের ফর্মুলার জন্য “অর্থনীতিতে” নোবেল না পেয়ে “শান্তিতে” কেন পেলেন?

      আসলে মাইক্রোফাইনান্সের ধারণাটা টেকনিক্যলি এতটা উতকর্ষপুর্ন না যেটা এককভাবে একটি নোবেল দাবী করতে পারে। আর মাইক্রোফাইনান্স ডঃ ইউনুসেরও কোন ধারণা না, ডঃ ইউনুসের বহু আগে থেকেই এটার কথা অর্থনীতিবিদেরা জানতো। মুলত ডঃ ইউনুসের কৃতিত্ব বোধহয় এটার একটি প্র্যাকটীক্যল, এ্যাপ্লিকেইবল প্যাথওয়েই আবিষ্কার করা সাবসিকোয়েন্টলি যা পৃথিবীর ১০০টিরও বেশী দেশ গ্রহন করে।

      জবাব দিন
      • আলম (৯৭--০৩)

        মাহমুদ ভাইয়ের জবাব শুনতে চাইসিলাম... ওকে, ব্যপার না, থ্যাংকু।

        অর্ণব, তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট। কাইন্ডলি ইংরেজি শব্দগুলো ইংরেজিতেই লিখো, ওগুলো বাংলায় পড়তে কেমন যেন দাঁত ভাঙ্গার জোগাড় হয়। কথাটা অনেকদিন ধরেই তোমাকে বলবো বলবো করছিলাম! প্লিজ, হ্যাঁ?

        জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
        ডঃ ইউনুসের বহু আগে থেকেই এটার কথা অর্থনীতিবিদেরা জানতো।

        একশ তে একশ। 😀

        এটা বহু পুরানা কনসেপ্ট। রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্প মনে আছে?


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

      নোবেল শান্তি পুরষ্কার নিয়ে প্রায়শঃই রাজনীতি হয়। দেখা যায়, বিশ্ব-রাজনীতির ক্ষমতাকেন্দ্র মনোনয়ন দেয় তাদের পছন্দের কাউকে, বিশেষ করে যদি তারা কোন ইস্যুকে জনসমক্ষে নিয়ে আসতে চায়। তবে এটা সব সময়ই খারাপ, আমি সেটা মনে করি না। যেমন, পশ্চিম চীনে উইঘুরদের নেত্রীকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দিয়ে তাদের ইস্যুটা বিশ্ববাসীকে জানান দেওয়া গেছে।

      গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের নোবেল পাওয়াও এরকমই। ২০০৩/০৪ থেকেই ক্লিনটন-দম্পতি অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য একে প্রাথমিক মনোনয়নে অন্তর্ভূক্ত করে চলেছিলেন। কিন্তু পেরে উঠেন নাই। অর্থনীতির 'ক খ' জানা লোকজনেও বোঝে যে, এটা আনসাসটেইনেবল।

      সম্প্রতি জাতিসংঘ "হিউমেন সিকিউরিটি" নামে উন্নয়ণ-ডিসকোর্সে একটা 'নপুংশক' কনসেপ্ট চালু করার চেষ্টা করছে যা'র একটা সিদ্ধান্ত হল এই যে, দারিদ্র্য সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। কোন এম্পিরিক্যাল এভিডেন্স ছাড়াই। কাকতালিয়ভাবে এটা আবার 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদে'র মূল বক্তব্যের সাথে মিলে যায়।- এই দুয়ের সম্মিলনে একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যেখানে ক্ষুদ্রঋণকে মহিমান্বিত করার সুযোগ এসে পড়ে।

      এই পলিটিক্সটা স্পষ্ট হয়ে পড়ে যখন দেখি সর্বত্র ডঃ ইউনূসকে পরিচয় করানো হয় 'নোবেল বিজয়ী' অর্থনীতিবিদ হিসেবে। তারপর তিনি শুধু করেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন-বিষয়ক তার বয়ান। আর "নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ" টাইটেলটা তার নসিহতকে জাষ্টিফাই করে।- কিন্তু তিনি কি অর্থনীতি'তে নোবেল পেয়েছেন?

      আমার দেশের দারিদ্র্য দূর হলে আমি ত খুশিই হব, তাতে কি সন্দেহ আছে? কিন্তু যখন দেখি দারিদ্র্য দূর করার নামে এমন কিছু চাপায়া দেওয়া হচ্ছে যেটা নিজের স্ট্রাকচারের মধ্যে নিজেই হত-দরিদ্র তৈরী করছে, তখন কেমন লাগে?


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  9. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    মাহমুদ ভাই অনেক সুন্দর করে কথা গুলা বলেছেন। আমি কখনো এইরকম করে বলতে পারি না কেন??? এই জন্য সবাই আমাকে বলে আমি নাকি সব সময় বড়বড় মানুষদের ভুল ধরি।
    তবে তারপরও ভাইয়া যেদিন শুনেছিলাম উনি নোবেল পেয়েছেন কি যে খুশি হয়েছি জীবনে চিন্তা করিনাই আমাদের দেশ থেকে কেউ নোবেল পাবে।

    জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      কি যে খুশি হয়েছি

      যেদিন পুরষ্কারটা ঘোষনা করা হল, সেইদিন সসিগায়া ডর্মে আমরা ৬ জনে একসাথে বসে খুশিতে কেঁদেছি। বিদেশি ছাত্ররা, জাপানীজরা আমাদের এসে অভিনন্দন দিয়ে গেছে। এমন একটা ভাব নিচ্ছিলাম যেন আমরাই পুরষ্কারটা জিতেছি। 😀

      কিন্তু সত্যি বলতে কি, ডঃ ইউনূস স্যারের নোবেল বক্তৃতাটা খুবই লজ্জায় ফেলে দিছে। সময় পেলে নেট থেকে ডাউনলোড করে শুনে দেখো। মনে হয়, একজন বিজ্ঞানী নয়, সাঈদি-টাইপের কেউ বয়ান করছে। ~x( আজগুবি কল্পনা আর স্বপ্নের বর্ণনায় ভরা, যেন বেহেস্তের বর্ণনা করছে।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  10. হ্যালো আমি স্টিভেন O\'Brian ঋণের স্টিভেন সীমাবদ্ধ করছি. জীবন সময় সুযোগ দেয় যারা একটি ব্যক্তিগত ঋণ ঋণদাতা আপনি আপনার সমস্ত বিভাগের পরিষ্কার করার জন্য একটি জরুরী ঋণ প্রয়োজন loans.do অথবা আপনি উন্নত করার জন্য একটি মূলধন ঋণ প্রয়োজন. আপনি একটি একত্রীকরণের ঋণ বা বন্ধকী প্রয়োজন আপনার ব্যবসা? আপনি? ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে? Stevebrianme@gmail.com ... নাম ................ পরিমাণ মাধ্যমে নিচের তথ্য দিয়ে আজ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ................ ..... স্থিতিকাল .................... দেশ ....................... রাজ্য ........................ সেক্স ........................ ... বয়স ......................... বৃত্তি .................... ..... মাসিক আয় ............................. ঋণ উদ্দেশ্য ........... ........ উল্লেখ্য: সমস্ত প্রত্যুত্তর Stevebrianme@gmail.com ধন্যবাদ এবং ইশ্বর মাধ্যমে পাঠানো হবে

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।