ওয়েলকাম টিউন

১.
-হ্যা রনি বল
-কিরে তুই এইটা কি ওয়েলকাম টিউন লাগাইছিস?
-ক্যান দোস্ত ভালো হয় নাই?
-নাআআ…ভাল হইছে…কিন্তু..”সখীগো নিলানা খবর যতনে..”এইটার মানে কি??ছ্যাক ট্যাক খাস নাইতো আবার।
-আরে ধ্যাত।তোর খবর বল।
-বুঝছি,বুঝছি।শোন সখীরা কখনো খবর নেয় না,বুঝছো।খালি মিসকল দেয়।সো সখী খবর নেয় না বলে মন খারাপ করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।সবেতো এক উইকেট।
-না বুইঝা টিজ করা তোর একটা স্বভাব।কি বলবি বল।
-দোস্ত বেইলী রোডে ক্যামনে যামু বলতো?
-মালিবাগ আইস্যা রিকশা নিবি।ওইখান থেকে একদম কাছে।ক্যান ডেটিং আছে নাকি?
-আরে নাহ।আছা দোস্ত রাখি।পরে কথা হবে।
-হ্যা দোস্ত বাই।

ফোনটা রেখে মনটা ভালো হলো।রনি আমার কলেজের ফ্রেন্ড।খুবই কাছের বন্ধু।আমাকে কেন জানি ও অসম্ভব পছন্দ করে।ওর সব সমস্যা,সুবিধা অসুবিধায় আমার মতামত নেয়।আমাদের বন্ধুমহলেও রনি খুবই জনপ্রিয়।কারণটা হলো ওর সরলতা।সবাই ওকে নিয়ে মজা করে,ও কখনো মাইন্ড
করে না।মনে হয় যেন ও নিজেও মজা পাচ্ছে।ওর সরলতার একটা উদাহরন দেই।
সেদিন আমাকে ও ফোন করছে-
-দোস্ত আমার একটা সমস্যা।
-হ্যা দোস্ত বল।
-দোস্ত আমার একটা বান্ধবীর কথা তোকে বলছিলাম না,নওরিন।আমাকে যে অফার দিছিলো,আমি রাজি হই নাই….
-হ্যা বলছিলিতো।
-ও আজকে আমাকে বলতেছে আমার নাকি সমস্যা আছে।
-সমস্যা আছে মানে কি?
-নাহ ও আসলে আমার সাথে অনেক ক্লোজলি মিশতে চায়।রিকশায় আমার সাথে বসলে একদম গা লাগায় বসে।আমি পাত্তা দেই না।
সেদিন একবার আমাকে ওর বাসায় নিয়ে গেছিলো,বাসায় কেউ ছিলো না।আমি আর বাসায় ঢুকি নাই।পরে ওই মেয়ে আমাকে ফোন করে
বলতেছে আমার নাকি সমস্যা আছে।ডাক্তার দেখাইতে বলেতেছে।দোস্ত কি করবো বলতো?আসলেই কি আমার সমস্যা…..

এই হলো আমাদের রনি।কদিন হলো ও আমার নাম্বারটা “মাই-ইজি”করেছে,তাই এখন দিনে চারপাঁচ বার ফোন না দিলে ওর হয় না
২.
রনিকে আমি একটা টিউশনী দিয়েছিলাম।আমার সম্পর্কে খালাতো বোন।ভিকি।
ও গত তিন বছর ধরে ওই মেয়েকে পড়াচ্ছে।
মাঝে মাঝে আমি পড়ালেখার কথা জিজ্ঞাসা করলে ও বলতো-“পুরা ডাল স্টুডেন্ট,দেখি কি করা যায়,আমি ট্রাই করতেছি।”
আর মাঝে মাঝে আমরা ফ্রেন্ডরা ছাত্রীর সাথে প্রেম করা নিয়ে ওর সাথে দুস্টামি করলে ওর কথা ছিলো…” ওই পেত্নির সাথে প্রেম করবো আমি?”

আমি মনে মনে আশ্বস্ত হই।
ছাত্রীর মা’ও ওর পারফরম্যান্সে বেশ স্যাটিসফাইড।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কখন যে পেত্নি ছাত্রীর সাথে ওর মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে আমি জানি না।তিন মাস আগে একদিন হঠাত বাসায় এসে হাজির।বলতেছে দোস্ত তোর সাথে আমার জরুরী একটা কথা আছে।কিন্তু বলতে ভয় লাগতেছে।আমি বললাম কিরে তাসনিয়ার প্রেমে পড়িস নাইতো আবার?ও চুপ করে আছে।বুঝলাম ঘটনা এটাই।পরে ওর কথায় যা জানতে পারলাম সেটা হচ্ছে-
গত তিন মাস ধরেই তাসনিয়ার সাথে ওর প্রেম।রাতে কথা হয়।কিন্তু এখন ওর দুইটা সমস্যা।ও বুঝতে পারতেছে না ওই মেয়েটা ওকে আসলেই পছন্দ করে কিনা কারন প্রায় রাতে ওই মেয়ের মোবাইল “কল ওয়েটিং”এ থাকে।ওকে জিজ্ঞসা করলে বলে ওর ফ্রেন্ড মিথিলার সাথে কথা বলে।কিন্তু রনি কিছুতেই এইটা বিশ্বাস করতে পারছে না।
আর দুই নাম্বার সমস্যা হলো মেয়ের বাসা থেকে কিভাবে এই প্রেমকে রাজি করানো যাবে।

যাই হোক ওকে আমি কিছু বুদ্ধি দিলাম।জানি মানবেনা তাও দিলাম।

এর কদিন পরেই আবার ও আমার বাসায়।মন খুবই খারাপ।অনেক চাপাচাপি করার পর কাহিনী জানলাম।
তাসনিয়ার আম্মু ওকে সেদিন ফোন করে বলতেছিলো-” আমার মেয়েকেতো তুমি অনেক দিন ধরেই পড়াও,আচ্ছা বলতোওর সাথে কি কারও কোন সম্পর্ক আছে?ওকে দেখি প্রায়ই রাতে ফোনে কথা বলতে।”
তো আমার সত্যবাদী বন্ধুটা আন্টিকে বলে দিছে ওর সাথে তাসনিয়ার রিলেশনের কথা!!(আমি জানিনা ওকে কোন ভুতে ধরছিলো!!)

ফলাফল…. ওর টিউশনী থেকে অব্যহতি।
তবে ওর মন খারাপ নাকি অন্য কারনে।তাসনিয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ড মিথিলার থেকে ও জানতে পারছে তাসনিয়া নাকি রাতে অন্য এক বন্ধুর সাথে
কথা বলে।আর বাসায় নাকি তাসনিয়া বলছে রনি ভাইয়া ওকে ডিস্টার্ব করে।
বেচারা!!কিছু বোঝার আগে ওর এক উইকেট নাই…
৩.

-হ্যালো দোস্ত কি খবর?
-দোস্ত মনটা ভালো নাই।
-কেন কি হইছে??
-দোস্ত তোকে আমি একটা কথা বলি নাই।আমি অনেক দিন ধরে একটা মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতাম।একজন আমাকে ওর ছবি
দেখাইছিলো,আমার কাছে ভালো লাগছিলো।তাই ওই মেয়ে যখন আমাকে অফার দিলো আমি আর না করি নাই।অনেক দিন ধরেই এটা
চলতেছিলো।তোকে সকালে বললাম না বেইলী রোডে যাবো আসলে আজকে ওর সাথেই দেখা করতে গেছিলাম।
-তো কি সমস্যা?
-আরে কইস না,আমি যেই ছবিটা দেখছিলাম আসলে ও ওইটা না।মেয়েটা একদম সুন্দর নাই।ওই মেয়ে এখন আমাকে খালি ফোন দিচ্ছে
আর কান্নাকাটি করতেছে।আমাকে নাকি ওর পছন্দ হইছে।আমি এখন কি করবো বলতো?
-মেয়েটা কে ?
-তাসনিয়ার ফ্রেন্ড মিথিলা,ওই তাসনিয়াই তো আমাকে ওর মিথ্যা ছবি দেখাইছিলো।দোস্ত আমি এখন কি করবো তুই বল।।
-কি আর করবি।তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর।আমি কিছু বললে তো আর সেইটা শুনবি না। দ্যাখ কি করবি…আমি রাখলাম।
-দোস্ত একটা কথা
-বল
-আমারে একটা ওয়েলকাম টিউন ঠিক করে দিবি……মনটা ভালো নাইরে…

এই হলো আমার বন্ধু রনি।আপনাদের মাঝে কেউ কি ওর জন্যে একটা ওয়েলকাম টিউন ঠিক করে দিতে পারেন??

৪,৯৭৩ বার দেখা হয়েছে

৪৯ টি মন্তব্য : “ওয়েলকাম টিউন”

  1. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    ব্যিপক মিজা পিলাম :khekz:
    তবে শুধু মিজা পাওয়াটা ঠিক হইল কিনা-বুঝতে পারতেসিনা; রনির জন্য একটু মায়াও লাগতেসে...

    অফটপিকঃ তোমার ভাই কিন্তু জরে পুরা হিট উইকেট 🙁


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    "যা চেয়েছি আমি তা পাই না,
    যা পেয়েছি আমি তা চাই না..."


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)
    কদিন হলো ও আমার নাম্বারটা “মাই-ইজি”করেছে,

    নওরীন মনে হয় ঠিকই বলছে, এত মাইয়া থুইয়া যেই পোলা তোরে 'মাই ইজি' করে তার আসলেই সমস্যা আছে। :-B

    তাই এখন দিনে চারপাঁচ বার ফোন না দিলে ওর হয় না

    কি হয় না ?? কোথায় যেন পড়েছিলাম, "ওরে খগেন, শেষ কর, আমার তো হয়ে এল" ... :-B


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ঘটনা সত্য বুঝাই যাইতেছে, একখানে লিখছ "ভিকি" আরেকখানে "তাসনিয়া"।

    এত তাড়াতাড়ি টেষ্ট খেলা ঠিক হবেনা। আরও কিছু টুয়েন্টি-টুয়েন্টি খেলতে বল। 🙂


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।