আগের ব্লগের মন্তব্য দেখে মনে হল যে আজকে এই পর্বে কলেজ পালানোর(ধন্যবাদ আনোয়ার,২০০০-২০০৬) যে স্মৃতিগুলো আছে তারই একটা কাহিনী বর্নণা করা উচিত।প্রথম কলেজ পালানোর কাহিনীটাই আজ বলতে চাই।
এস এস সি পরীক্ষার্থী তখন আমরা। কলেজের আগের ৩-৪ বছরে অন্যান্য ব্যাচের বড়ভাইদের কলেজ পালানোর অনেক কাহিনী তো ততদিনে মুখে মুখে অনেক শুনেছি। এমনকি জুনিয়র বা ইন্টারমিডিয়েট ব্লকে যখন ছিলাম তখন অনেক বড়ভাইদের কলেজ পালানো সচক্ষে দেখেছি।
কলেজে থাকাকালীন সময়ে আমার একটা রেপুটেশান ছিল যে আমি কখনই কোন কাজে কন্সিস্ট্যান্ট ছিলাম না। এইখানেও ব্লগ লিখতে গিয়েও সেই বদঅভ্যাসের কাছে মার খেয়ে গেলাম। আসলে তাও না। বিদেশের মাটিতে লেখাপড়া করতে এসে তো দেশের অনেক টাকা খরচ করলাম, তাই কাজ করে কিছু টাকা এইখানেই রোজগারের নেশায় নিয়মিত ব্লগ লেখা হয়ে ওঠেনি। আমার জানামতে অনেকেই আমার ব্লগ কিছুদিন নিয়মিত পড়েছেন। তাই আমি সবার কাছে( বিশেষ করে যারা নিয়মিত পড়েছেন) বিনীতভাবে মাফ চাচ্ছি।
আমার এ গল্পটা অর্থাত্ কিনা আমার জীবনের এ গল্পটা এখন পর্যন্ত কাউকে বলিনি।এমনকি যাদের সাথে “বিন্দু বিন্দু জল ” থেকে শুরু করে “সাগর অতল ” সমান দুঃখগুলো শেয়ার করেছি, কলেজের সেই ক্লাসমেটগুলোকে পর্যন্ত না । হঠাত্ কি মনে করে গল্পটা বলতে ইচ্ছে হলো …
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পরই একটা অদ্ভুত কারণে বাবার চাকরিটা চলে যায় ।আত্মীয়স্বজনেরা নাকি তখন হিসেব করা শুরু করেছিল ,
[… সেদিন আমার এক বন্ধু বলল, ”প্রতিটা ক্যাডেট ইচ্ছা করলে একেকটা আত্মজীবনী লিখে ফেলতে পারে,কাহিনী তো কম করা হয় না।” আমি বললাম, ”ক্যাডেট লিখবে আত্মজীবনী!তাইলেই হইছে,পরীক্ষার খাতাতে লিখতে গিয়েই মনে হয়, ধুর এত্ত লিখে কী হবে,মরতে তো একদিন হবেই…(কপিরাইটঃ জুনা ভাই,যদিও সবারই মনের কথা)।এমনিতেই ডজিং এর উপর বিনা সার্টিফিকেটে ডিগ্রী নেই সবাই,তার উপর ক্যাডেটদের আত্মজীবনী ক্যাডেটরাই পড়বে,আর কেউ পড়লে বউ-প্রেমিকারা পড়তে পারে!” তারপর সে বলে,
কালুরঘাটের কাছের গ্রাম উত্তর মোহরার একটি দালান বাড়ীর সামনে গাড়ী আমাদেরকে পৌঁছে দিল । আমরা তখনও ঘটনা প্রবাহের আকস্মিকতায় যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি। এতগুলি মৃতদেহ একসাথে পড়ে থাকতে আগে কখন দেখিনি। এরা সবাই এক সময় আমার সহকর্মী ছিলেন। ক’দিন আগেও আমরা এক সাথে কাজ করেছি, গল্প করেছি। কি দোষ করেছিল তারা যে এভাবে মরতে হলো তাদের?
বাবা-মা নিয়ে ক্যাডেটদের আদিখ্যেতা করতে নেই। ছোটবেলা থেকে নিজে এবং আশেপাশের পরিস্থিতির জন্য আমরা শিখেছি কিভাবে কলেজে যাওয়ার মুহূর্তে ট্রেন ছেড়ে দেবার সময়ে হাত ধরে মায়ের কয়েক পা এগিয়ে আসা আর অশ্রুসজল চোখ দেখে নিজের চোখের জল কিভাবে সবার অলক্ষ্যে মুছে ফেলা। এরপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নেওয়া কেউ দেখে ফেলল কিনা। আর তার ১০ মিনিট পরে সবার সাথে গল্প করতে শুরু করা। বাসার জন্য খারাপ লাগাটা আমরা প্রকাশ করতাম এই জেলখানাতে ঢুকতে হয় বলে কষ্ট হিসেবে ।
তারিক হাউসের সম্মুখের বাগিচায় একাদশ শ্রেণীর ক্যাডেটেরা তাহাদের জুতা ও মোজা শুকাইতে দিত। এই ঐতিহ্য বহুদিনের পুরনো বটে, বিধায় বাগিচার প্রায় ২০ বর্গমিটার ক্ষেত্র ক্যাডেটদের জুতার সুবাসে নির্দয় মৃত্যুভূমিতে পরিণত হইয়াছিল। তাই অত্র এলাকায় বৃক্ষকুলের শ্যামলিমা অনুপস্থিত ছিলো, একটি মাত্র অর্ধমৃত পামট্রি ছাড়া; যে কিনা বিপুল বিক্রমে বাঁচিয়া রহিয়াছিল একাদশ শ্রেণীর ক্যাডেটদের পাদুকাসুবাস এবং ইত্যকার পারলৌকিক আহবান প্রত্যক্ষ করিয়াও। কিন্তু ২০০৫ সালে ৩৭তম ব্যাচ একাদশ শ্রেণীতে পদার্পণ করিলে বৃক্ষটি ইহলোক ত্যাগ করিয়া যায়;
এইচ এস সি পরীক্ষার আগের এবং মাঝের ফাকা দিনগুলোর সকাল আমাদের কাটত ক্রিকেট খেলে. ক্লান্ত আমরা দুপুর টা ঘুমিয়ে সন্ধ্যা থেকে পড়া শুরু করতাম. পড়ার মাঝে মাঝে কখনো কারেন্ট চলে যেত, কিন্তু আমাদের চার্জার লাইট সেটা সামাল দিতে যথেষ্ট ছিল. পড়তে পড়তে রাত বার্ত . রাত গভীর হবার সাথে সাথে শফিক এর নেতৃত্বে একদল নিশাচর প্রাণী গাজা,
প্রতিদিনের মত আজকেও ঘুম থেকে উঠেই বল্লাম,’কেমন আছো …?’বলেই বুঝলাম ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠলো।প্রচন্ড কষ্টে মনে হলো দম বন্ধ হয়ে যাবে।বালিশে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদলাম,পাছে বাসার সবাই শব্দ শুনে ফেলে।
প্রথম যেদিন বুঝেছিলাম তুমি আর কোনদিন আমার হবেনা সেদিন যেমন আত্মাছেড়া কষ্ট হয়েছিল প্রতিটাদিন এবং আজো তেমন কষ্ট পাই।তোমাকে আলো ভেবে পেতে চেয়ে যে সারাজীবনের মত এমন অন্ধকারে হারিয়ে ফেলব…তুমি প্রথম থেকেই জানতে তাই না …?তাই আমাকে প্রতিটাদিন শক্ত হতে বলতে।কি লাভ হলো তোমার?আমাকে আগুনের কিনারে নিয়ে একা ছেড়ে দিয়ে কি লাভ হলো তোমার?কে জিতলো আর কে হারলো এই ভয়ঙ্কর খেলায়?
এই লেখাটি প্রকাশের ব্যাপারে আমার মনের দ্বন্দ এখনও ঘোঁচেনি। স্বাধীনতার পর প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছর পার হতে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের মনের গভীরে যে দীর্ঘ ক্ষত তা কি এখনও শুকিয়েছে ? নতুন প্রজন্ম যে আবেগ ভরা স্বাপ্নীল চোখে স্বাধীনতার সংগ্রামী সেনানীদের দেখে – তাদের মনে কি এই লেখা কোন ভুল ধারণার সৃষ্টি করবে? সেটা তো আমার কাম্য না। কিন্তু আমি নিজের চোখে যা দেখেছি,
শিক্ষকতা এবং মোটিভেশনঃ কিছু ব্যক্তিকথন ও একান্ত চয়ন
[এই লেখাটা আমার সকল শিক্ষক এবং ছাত্রকে উৎসর্গ করা হল।]
আমার ক্যাডেট কলেজের এক বন্ধুর দু’টি কথা আমি সবসময় মনে রাখার, পালন করার এবং অনুভব করার চেষ্টা করি। সে একদিন আমাকে বলেছিল নেশা এবং পেশা এক হওয়াটা নাকি একটা বিরাট মানসিক প্রশান্তির ব্যাপার। আবার কোন এক সময় তার মুখেই শুনেছিলাম, সেইই প্রকৃত সুখী,
সিসিবিতে এসে প্রথমেই খুব লজ্জায় পড়ি। প্রত্যেক কলেজের এত এত সদস্য-সদস্যা আর পিসিসির মাত্র কয়েকজন।তাও যারা আছে তাদের বেশির ভাগই মনে হয় কমেন্ট করতেই বেশি পছন্দ করে আমি যতদূর দেখলাম।পাবনা বিভাগে গিয়ে দেখি মাত্র অর্ধশত সংগ্রহ। খুবই হতাশ হতে হল আমাকে।
অন্যান্য কলেজের কাছে পিসিসি দেখলাম পাত্তাই পাচ্ছে না এ ক্ষেত্রে।আরে আমরা পিসিসি-কে বলছে আমরা পারিনা (আমরা পারিনা এমন কোন কাজ কি আছে নাকি!!)
অনেকগুলো ব্লগ পড়লাম কয়েকদিন ধরে।সবার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন,মতামত ভালই লাগে পড়তে।
২১ জুন ২০০৪
৬ আষাঢ় ১৪১১
মাঝে অনেকদিন ডায়েরী লেখা হয়নি বা হয়েছে সেটা আমার আপাদত মাথাব্যথা নয়। কিন্তু আজকে এই মুহুর্তে কিছু না লিখলে ব্যাপারটাকে স্মৃতির খাতায় নাম লিখাতে পারব না। আর মাত্র কয়েকটি ঘন্টা বাকি আছে। সমাপনী দিবস বলা চলে। যেই সমাপ্তি অনেকের কাছেই কাম্য নয়, যেই সমাপ্তির কথা চিন্তা করে বিষন্ন রাত কাটিয়েছি আমি, আমার মত অনেকে, যেই সমাপ্তি আবার অনেকের কাছেই প্রাণের চেয়ে বেশী কাম্য।
সিসিবিতে প্রথম না,কিন্তু আমি পাঠক থাকতেই বেশি পছন্দ করি।আজ মনটা খুব বিষন্ন হয়ে আছে তাই আমার প্রিয় মানুষগুলার সাথে বিষন্নতাটা ভাগ করলাম।আমার মন খারাপ করা লেখায় কারো মন খারাপ হয়ে গেলে আমি আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।প্রিয় মানুষগুলাকে একটুও হারাতে চাইনা……আরা হারাতে চাইনা।
জীবনের কতগুলা দিন পার হয়ে গেল। কতগুলা মানুষ এলো কতজন চলে গেল।যারা চলে গেল তারাকি সত্যি চলে গেছে? নাকি তারা নিজেদের এক একটি জায়গা পাকা পক্ত করে গেছে?মানুষ্কি সত্যি আর একটা মানুষের জীবন থেকে চলে যায়?মনে হয় যায়না।আমাদের প্রিয় মানুষগুলা কখনই চলে যায়না।
[প্রাককথাঃ
যারা জানেন না,তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে,আরসিসি বাংলাদেশের সীমানা ঘেষে রাজশাহী শহর থেকে ২৬ কি.মি. দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত।গ্রামটার নাম মোক্তারপুর।ক্যাডেট কলেজটাকে সবাই চিনেন।তাই গ্রামটাকে পরিচিত করার জন্য আমি টপিকে গ্রামের নাম দিলাম।আরেকটা কথা আমাদের অরকা’র অর্থায়নে এই গ্রামে ”অরকাপল্লী” স্থাপিত হয়েছে,যেখানে দুঃস্থ অনেকেই ঠাঁই পেয়েছে।এই সুযোগে জানিয়ে রাখলাম।।……..
অত্যন্ত পরিতাপের সহিৎ অবলোকন করিলাম যে, ডায়লগস ফ্রম জেসিসি,এমজিসিসি,এসসিসি,সিসিসি এমনকি পিসিসি পাবলিশ হইয়া গেলেও শাহী ক্যাডেট কলেজের ডজার ক্যাডুগুলা ব্লগে প্রবল প্রতাপের সহিৎ ডজ মারিতেছে।আমি এতকাল অপেক্ষা করিতেছিলাম,কোন দায়িত্ববান শাহী ক্যাডেট কলেজের অসংখ্য বাণীচিরন্তনী প্রকাশ করিবেন।কিন্তু আমার আর তর সহিতেছে না।তাই স্মৃতির গলি ঘুপচিতে পলান্টিস খেলতে থাকা ডায়লগগুলো ধরিয়া আনিয়া সিসিবি পরিবারে পেশ করিলাম।আর দেরি করিলে হয়ত,অন্য কেউ কহিয়া দিবেন,এর থেকে ক্রেডিটটা আগে আমিই লইয়া ফেলি,মাঠ ফাঁকা মনে হইতেছে………