~ বইমেলা প্রাণের মেলা, তার প্রাণভোমরা সেথায় জোর দেখাক খেলা ~

বইমেলা প্রাণের মেলা। দীর্ঘ একটা মাস ধরে এমন বইমেলা পৃথিবীর কোথাও হয়না। লেখক-কবি-প্রকাশক-পাঠক সবার জন্য এমন একটা মেলা নিঃসন্দেহে দারুন প্রাণসঞ্চারী ভাব বিনিময়, কৃষ্টির চর্চা এবং প্রসারের এক মহামঞ্চ হবারই কথা। তা হবার জন্য এর চেয়ে বড় কোনো আয়োজন-উৎসব এদেশে নেইও। এক সময় বাঙলা একাডেমীর প্রাঙ্গন জুড়ে বসতো এ সৃজনশীলতার মেলা। গোটা প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টল নিয়ে প্রকাশকরা সাজিয়ে তুলতেন নতুন পুরোনো সব প্রকাশনার এক আলোকজ্জ্বল গ্রন্থসমাবেশ। সাথে তারার মেলা নক্ষত্রের আলোকচ্ছটা হয়ে মেলাময় ছড়িয়ে থাকতেন সব কবি লেখকরা। তারুণ্যের ভীড় মেলায় যোগাতো সবুজের সমারোহ প্রাণের দ্যোতনা। মেলার এক কোণায় ছিল খাওয়ার স্টলের সমাহার। মেলায় ঘুরে ঘুরে বিরতি নিতে কিংবা ক্লান্তিতে এখানে বসে খানিক সময় কাটাতেন সমাগত পাঠক জনতা। জমিয়ে আড্ডা পিটাতেন সাধারণ-অসাধারণ সবাই। মণি-মানিক্যের মতোন কোনো কোনো টেবিলের চারপাশ ঘিরে বসে থাকতেন খ্যাতিমান কবি ও লেখকরা। বই বেরুতো শত শত, বিক্রি হতো হাজার হাজার।

সময়ের সাথে সাথে জনতার, পাঠকের, প্রকাশকের, কবি-লেখকের ব্যাপ্তি সংখ্যায় ক্রমাগত ছাপিয়ে গেছে তার অতীতকে। বাঙলা একাডেমির নিজস্ব প্রাঙ্গন ছাড়িয়ে তা বেরিয়ে এসেছে সহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তাও দশক পেরুলো। এক সময় টিএসসি থেকে দোয়েল চত্তর পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো খোলা দোকানের ভীড়। সেখানে বৈশাখী মেলার মতোন নানান খেলনা মুড়ি মুড়কির খোলা দোকান, ফুটপাথ জুড়ে পুরোনো আর পাইরেটেড বইয়ের দোকানের ভীড় জমতো। একুশে মেলা তার দেহ সৌষ্টবে বেড়ে উঠছিল বটে, তবে তার স্বকীয়তা সঙ্গীন হবার শঙ্কায় নিমজ্জিতও হচ্ছিল। ঢোকার মুখে ভীড় জটলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটা একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুরো মেলা জুড়ে প্রাণচাঞ্চল্যের প্লাবন বইলেও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাহুটি ছিলো শিথিল। তা বাদে কোথাও তাল লয় কাটবার মতোন বিষয় সেভাবে দৃশ্যমান ছিলনা। নিরাপত্তার জন্য সচেতন তারুণ্যই ছিল যথেষ্ট সজাগ ও ক্রিয়াশীল।

মেলার ব্যাপ্তি ক্রমশ শিথিল করেছে উদ্যোক্তা বাঙলা একাডেমির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে। সেই সাথে এই এলাকায় গত কয় বছরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা, হত্যাপ্রচেষ্টা সব মিলিয়ে কেমন একটা গুমোট পরিস্থিতি তৈরী করেছিল। বিষয়টা প্রচ্ছন্ন ভাবে সাধারণের মনে সৃষ্ট কোনো ঝঞ্জাট দৃশ্যমান করে উঠতে না পারলেও তার অস্পষ্ট একটা ছায়া আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। গত এক বছরের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের দৃশ্যপট একটা অস্বস্তির কাঁটা জাগিয়ে রেখেছিল। সে বিচারে সার্থকভাবেই আয়োজিত এবং সম্পন্ন হয়েছে কুড়ি-সতেরোর বইমেলা।

শ’পাঁচেক স্টল জুড়ে প্রকাশক-পরিবেশকরা সাড়ে তিন হাজারের বেশি নতুন বইয়ের পসার বসিয়েছিলেন এবছর। বিক্রিও কম হয়নি। পঁয়ষট্টি কোটি ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় বিশ কোটি বেশি। প্রতি বছরের মতোন মেলার প্রথম দিকে বইয়ের সমাগম হবার গতি যেমন থাকে ধীর লয়ে তেমনি পাঠকরা মেলায় এসে ঘুরে ফিরেই বেড়িয়েছেন বেশীরভাগ সময়। মেলার দিন যত গড়ায় নতুন বই যেমন বাড়তে থাকে সংখ্যায় তেমনি বিক্রিও বাড়তে থাকে। ক্রেতা বিক্রেতা সবার মুখেই হাসি প্রাণবান হতে থাকে।

তবে মেলার সব সাফল্য জৌলুস শ্রম ও মেধার প্রয়োগের পাশাপাশি কয়েকটা বিষয় আমি নিশ্চিত সকল অংশগ্রহণকারী ও অভ্যাগতের চোখে পড়েছে, সবার কাছেই কম-বেশী অনুভূত হয়েছে। কথাগুলো একে একে উপস্থাপন করছি পাঠক-সাধারণ-উদ্যোক্তা-অংশগ্রহণকারী সবার বিবেচনার জন্যে।

এক। লাখো মানুষের সমাগমের এমন একটা সম্মিলিনীর অঙ্গনে প্রক্ষালনের সংখ্যা ও মান আরো উন্নত হবার প্রয়োজন।

দুই। এমন ধূলি ধূসরিত একটা আঙ্গিনায় ধূলার আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণে প্রথম দিকে যা কিছু সচেষ্ট থাকার প্রমাণ মিলেছে পরের দিকে তা ভীষণ ভাবে অনুপস্থিত বলে মনে হয়েছে।

তিন। লাখো মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে বেড়াবে, ঘুরে বেড়াবে। তাদের ক্ষুদপিপাসায় কাতর হবার কথা। তার জন্য খাওয়ার বা অন্তত চা-পানির প্রতুল ব্যবস্থা থাকাটা খুব আবশ্যক ছিল।

চার। বই কিনবার আগে ও পরে কোথাও বসে দু’দণ্ড ভাববার বা পরামর্শ করবার কিংবা সদ্য কেনা বইটা উলটে পালটে দেখবার জন্য কিছু বসবার জায়গার খুব প্রয়োজন ছিল।

পাঁচ। বইমেলাকে যদি সৃষ্টিশীলতার একটা মেলা বলে আমরা ধরিই তবে এখানে নিশ্চিত অনেক অনেক সৃষ্টিশীল মানুষের সমাগম হবার কথা। সারা দেশ থেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের এখানে আসবার কথা। তাহলে তাদের ভাব বিনিময়ের, দু’দণ্ড কথা বলবার প্রাঙ্গনটি আসলে কোনটুকু। তাদের জন্য কি কিছু বসবার জায়গা করা যেতো না!

ছয়। তড়িঘড়ি মেলায় নানান গুণীজনের নামে বিভিন্ন চত্তরের নামকরণ করা হলো। কিন্তু প্রয়াত বলে কি মলিন সমাধিস্থলের মতোন একটা নিশানা তৈরী করে আদতে কোনো সন্মান তাঁদের প্রতি প্রদর্শিত হয়! তাঁদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি নিদর্শন সম্বলিত (সাইটেশান) কিছু একটা তথ্য ও বিম্বের উপস্থাপনা সহ একটা ছাউনি করে সেখানে কবি সাহিত্যিকদের বসবার ব্যবস্থা রাখা যেতো না!

সাত। মেলার কোথায় কোন স্টল সে তথ্যটা স্টলের নাম এবং নম্বর সহ সহজবোধ্যভাবে দেবার দরকার ছিল বেশ কয়েক জায়গায়। অনেক মানুষকেই পরিশ্রান্ত হতে হয়েছে খোঁজাখুঁজির কসরতে।

আট। মেলায় সারিবদ্ধ ভাবে নারী-পুরুষের নির্দিষ্ট প্রবেশপথ এবং তার ব্যবস্থাপনা প্রশংসার দাবী রাখে। আবার সেই বিচারে প্রস্থানের পথটাতে আন্তরিকতা আর নজরের ছাপ মেলেনি।

নয়। বইমেলার ঢুকবার প্রথম তোরণ টিএসসির পাশের গেটে ঢুকবার মুখেই চোখে পড়বে হুইল চেয়ার সহায়তা প্রদানের স্বেচ্ছ্বাসেবী উদ্যোগটি। যা বিপুল প্রশংসার দাবী রাখে। উদ্যোক্তাদের অযুত সাধুবাদ। এই সুন্দর উদ্যোগের তথ্যটা এ সেবা পাওয়ার মতোন মানুষগুলোর কাছে তো পৌঁছাতে হবে যাতে করে তারা তা জেনে এ সুবিধার বদৌলতে মেলায় ঘুরে যাবার সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন। বইমেলার আয়োজকদের উচিৎ এ তথ্যটার পর্যাপ্ত প্রচার ঘটানো। তবেই এ সুবিধা নেবার মতোন মানুষ জানবেন, আসবেন।

ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বা উত্তরণের শেষ নেই, থাকবেও না। যতো দিন যাবে ততো এর ব্যাপ্তি বাড়বে। নতুন নতুন চাহিদা প্রয়োজনীয়তা এসে হাজির হবে আমাদের সামনে। তবে কেউই সম্ভবত উপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলোর বিপরীতে মত দেবেন না। অবশ্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বের দাবী আসলে মেলার মূল বিষয়, অর্থাৎ বইকে ঘিরেই আবর্তিত। বিষয়টা দ্রুত এবং জোর মনোযোগের দাবী রাখে বিশেষত প্রকাশকদের পক্ষ থেকে।

অতীতে একটা সময় ছিল যখন পাণ্ডুলিপি নিয়ে লেখক প্রকাশকের কাছে হাজির হতেন, জমা দিতেন। প্রকাশক তা পড়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতেন কোনটা ছাপবেন বা কোনটা ছাপবেন না। এটা প্রকাশকের বানিজ্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই প্রকাশক ভাববেন কোথায় তার পুঁজি লগ্নী করবেন আর কোথায় করবেন না। বিষয়টা খুব স্বাভাবিক। এখানে উল্লেখ করবার মতো বিষয় যা তা হলো এই যে, এই লগ্নী করবার ব্যাপারে কেবল বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, প্রকাশকের আবেগ ভালবাসাও ভূমিকা রাখতো। প্রকাশক নিজে লেখক বা সেই মাত্রায় শিক্ষা-প্রজ্ঞার সার্টিফিকেটধারী না হলেও সব বই তার পড়া বা তা সম্পর্কে জানা থাকতো। গোটা ব্যাপারটায় নিষ্ঠা ও ভালবাসা প্রকারান্তরে প্রকাশনার বিষয়বস্তুগত এবং গুণগত মান সমুন্নত রাখবার ব্যাপারে প্রকাশকের জোরালো ভূমিকা নিশ্চিত করতো। বিপরীতে আজ লেখকের টাকায় বই ছেপে বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিপরীতমুখী শকটে তুলে দিয়েছেন প্রকাশকেরা (হয়তো সবাই নয়)। সেই সাথে বিপণন বিষয়টা নিয়ে প্রকাশকদের মাথা ব্যাথাটাও এক অর্থে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নতুন বই নতুন লেখকের প্রকাশ বিরোধিতা এখানে প্রস্তাবনা নয়। কথা হলো প্রকাশকের উচিৎ একটা সম্পাদনা পরিষদের ভেতর দিয়ে প্রতিটা পাণ্ডুলিপিকে মুদ্রণের সীমানায় পৌঁছানো। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে লেখন নবীন-পুরাতন, বিখ্যাত-অখ্যাত যেমনই হোক না কেন, প্রতিটা পাণ্ডুলিপিকে প্রকাশকের সম্পাদনা পরিষদের বা সম্পাদকের টেবিল হয়ে যেতেই হবে এবং যথাযথ পরিসংশোধন ও পরিমার্জনের পরই কেবল তা প্রকাশিত হতে পারবে। এ চর্চাটা আমাদের দেশে প্রয়োগ অতি আবশ্যক এবং তা করা উচিৎ যথাশীঘ্র সম্ভব।

প্রকাশনা শিল্প একটা সৃজনশীলতার মঞ্চ বা ক্ষেত্র। নির্দ্বিধায় এটা সত্য। পাশাপাশি এটাও অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক বিষয় এখানে দুই দিক থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এর একটা হলো প্রকাশকের অর্থ লগ্নী করবার বিষয়। একটা ভালো বইয়ের বদলে ভালো নয় এমন কোনো বইতে লগ্নী করে ভালো বইকে প্রকাশনার মুখ দেখতে সুযোগ না দিলে তা সৃজনশীলতা, পাঠক তেষ্টা, প্রকাশক-পাঠক উভয়ের মান সব কিছুকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আর অন্যটা হলো পাঠ বা ক্রেতার অর্থনৈতিক প্রসঙ্গটি। প্রতিটি পাঠক বা ক্রেতা একটা বাজেট বৃত্তের ভেতরে অবস্থান করেন। মন যতোই চাক কারো পক্ষেই মেলার সব বই কেনা সম্ভব না, কিনলেও পড়া সম্ভব না। ক্রেতাকে যদি অনুরোধের আসরের বই বা তার চেনা ও নিকটজনদের বই কিনে তার বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় করতে হয় তবে সেই অংকের ভালো বই পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ হারাচ্ছে। ভাল বইটার প্রকাশ এবং ভালো লেখকের আরো লেখবার বিষয়টা প্রেরণা পাচ্ছে না।

গোটা ব্যাপারটাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবার প্রথম পদক্ষেপ হবে প্রকাশকের সত্যিকারের দায়িত্ব পালনে তার দায় প্রসঙ্গে সচেতন ও ক্রিয়াশীল থাকা। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বইমেলা চলাকালীন সময়টাতে কেবল মাত্র মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিক আড়ম্বরে বৃত্তাবদ্ধ না থেকে নিয়মিত ভাবে গ্রন্থ আলোচনা বা পাঠের নানান আয়োজন রাখতে পারেন। তাতে সত্যিকারের সাহিত্য-কৃষ্টির পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে, লেখক পাঠক সকলের উৎকর্ষ সাধিত হবে। বইমেলা প্রাণের মেলা হয়ে প্রকাশনা শিল্প, গ্রন্থ, রচয়িতা সবার মাঝেই সত্যিকারের প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে।

লুৎফুল হোসেন
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

৫,৪৮৮ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “~ বইমেলা প্রাণের মেলা, তার প্রাণভোমরা সেথায় জোর দেখাক খেলা ~”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:

    আমরা যারা প্রবাসে থাকি তারা অপরের মুখে ঝাল খেতে শিখে যাই। এই ঝাল খাওয়াটি যে সর্বতোমুখী তা নয়; তবুত্ত উপায়হীনের কাছে সেটিই অনেক। অন্ধের হাতি দেখার মত বইমেলার কলাকানুন দেখছিলাম বিগত মাস জুড়ে, কিন্তু সার্বিক চিত্র খুঁজে পেয়েছিলাম বলে মনে পড়ে না। এবছর দেখলাম ফেসবুকেও বইয়ের দারুণ প্রচারণা চলেছে। আপনার আলোচনায় বইমেলার দারুণ একটা ছবি পাওয়া গেল। অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া।

    ফেসবুক-স্ন্যাপচ্যাটের এই রমরমা সময়ে মানুষ যে এখনো বই পড়ে এটি ভাবতে আমার বেশ লাগে। পশ্চিমে শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমনই থাকুক না কেনো, বাসে-ট্রেনে, ডাক্তারখানা কিংবা অপেক্ষাকক্ষে এখনো মানুষ নাকের ডগায় চশমা এঁটে বই পড়ে। এখানে নতুন বইয়ের দাম বেশ, কিন্তু পুরনো বইয়ের দোকানে জলের দরে বই বিকোচ্ছে। কাউন্টি লাইব্রেরী থেকে পাঠকেরা এক একবার পচাত্তুরটি বই ধার নিতে পারেন তিন সপ্তাহের জন্য। অন লাইনে নিজের পছন্দসই বইটির জন্য অনুরোধ করে পাঠাগারকে।

    বইমেলা নিয়ে এই লেখার জন্য আবারও ধন্যবাদ। আপনার লেখালেখি জারি থাকুক নিয়মিত।

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে পাশ্চাত্যে, পথে ঘাটে - চলতে ফিরতে মানুষের বই পড়ার অভ্যাস যেমন নজর কাড়ে তেমনি নিজ দেশের তুলনামূলক চিত্র পাশে এসে পীড়া দ্যায়। সেই অননুকূলতার পিঠে বইমেলার মতোন উদ্যোগ এক মহাকাশ সুযোগ ও সম্ভাবনা। সেটার সর্বোত উপযোগ পারে পীড়ার জায়গাটাকে মনের মধ্যে এক সুখানুভূতির কেন্দ্রে পরিবর্তিত করতে। সব ভালোকে আরো আরো ভালোয় উত্তরণের জন্য আমাদে সবার সর্বান্তকরণ চেষ্টা নিশ্চিত ভাবে বাংলাদেশের লেখক - পাঠক সকলেরই উতকর্ষ ঘটাতে সক্ষম।

      মন্তব্যখানা সাম্প্রতিক নির্জন সিসিবি প্রাঙ্গনে আমার অনিয়মিত আসা-যাওয়ার বিপরীতে বিপুল প্রাণিত করলো।

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের কথা বাদই দিলাম কারণ সেটি মূলতঃ ছাত্র-শিক্ষকদের পাঠের জন্য, যদিত্ত আমাদের সন্তানেরা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে অতিথিরাও পড়াশোনা করতে পারেন সেখানে। আমি কাউন্টি লাইব্রেরীর কথা বলছিলাম। আর তুমি সঠিক শুনেছো, ছোটভাই। আমরা কাউন্টি লাইব্রেরী থেকে একবারে ৭৫টি বই কিংবা গানের বা শিক্ষামূলক যেকোন সিডি, ডিভিডি বা ব্লু-রে, অথবা অডিও বই ধার নিতে পারি। তবে যা কিছুই নাও না কেন সব মিলিয়ে ৭৫টি হতে হবে। ঈদানিং গ্রাহকের উচ্চ চাহিদার কারণে একবারে ১৫টি ডিভিডি-ব্লু রে আর পাঁচটি পিরিওডিক্যাল নিতে পারে যে কেউ। মোট কথা সব মিলিয়ে ৭৫টি হলেই হলো। লাইব্রেরী কার্ডের জন্য আমরা কোন টাকাপয়সা দিই না। এটি আমাদের আয়করের অর্থে চলে। ফোনে কিংবা অন লাইনে বই রিনিউ করা যেতে পারে। কেউ যদি চায় তার পছন্দসই বইয়ের জন্য অর্ডারও করতে পারে। প্রতিটি লাইব্রেরীতেই লোকজন কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। ছাত্রদের জন্য আছে কাঁচঘেরা ছোট ছোট স্টাডি রুমও। বাচ্চাদের জন্য আলাদা বসার জায়গা আছে। আছে লাল নীল কম্পিউটারও। খেলার ছলে কত কী শেখে বাচ্চারা। নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ মানুষেরা বইয়ের পাতায় ডুবে থাকেন লাইব্রেরীতে এসে।সপ্তাহান্তের ছুটিতে কুচোকাচা বাচ্চাদের জন্য বই পাঠের আসর বসে আর গ্রীষ্মের ছুটিতে ছেলেপিলেদের জন্য মুভির আসর বসে; চলে বই পাঠের প্রতিযোগিতাও। করবার মত কোন কাজ না পেলে খই মুড়ি না ভেজে পশ্চিমের লোকেরা আজো বই পড়ে; নিদেনপক্ষে একখানা খবরের কাগজ কিংবা একটি সিনে ম্যাগাজিন চোখের সামনে ধরে রাখে।

        জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    এখানে লেখাটা আছে তবুও রেখে গেলাম লিঙ্কটা। সবাই হয়তো নতুন একটা পোর্টালের সন্ধান পেয়ে যাবেন তাতে। আর বিশেষ করে পোর্টালটা আমার ভালোই লেগেছে, তাই।

    http://pranerbangla.com/archives/9343#.WMJUSvL8kpa

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    বইমেলা পরিণত হয়েছে একাডেমির লাঠিয়ালের মেলায়।
    হুমায়ুন আজাদ বা কেউ একজন বলেছিলেন, বইমেলা নামক বইয়ের বাণিজ্যিক মেলা আয়োজন করা ছাড়া বাঙলা একাডেমির কোন কাজ নেই।

    বস্তুত এটিও তারা ভালোমতো পারে না।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    একুশের বইমেলা যখন সারা দেশে, তথা সকল উপজেলায় একযোগে হবে তখন সেটি স্বার্থক মেলায় পরিণত হবে।কিন অবশ্য সারা বছর ঘুরে ঘুরে নানা উপজেলায় ও হতে পারে। (সম্পাদিত)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      সেই রকম একটা চেষ্টা চলছে, তবে বাংলা একাডেমির তেল ঘি নুনে নয়। বিচ্ছিন্ন ভাবে। আমাদের খ্যাতনামা অনুবাদক জি.এইচ.হাবিব এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলতে পারবে। দেখি তাকে দিয়ে এ প্রসঙ্গে একটা পোস্টের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
      আমি বেশ ক'জন প্রকাশকের সাথে কথা বলেছিলাম স্রেফ বইয়ের বিস্তৃত এবং সত্যিকারের বিপণন নিয়ে। কেউ ইতিবাচক সাড়া দেননি। যখন বললাম যে বাংলাদেশের ৫০-৬০ টা শহর বা উপশহরে অন্তত একটা করে হলেও অপাঠ্য বইয়ের দোকান আছে। সেখানে সমরেশ জয় গোস্বামী শামসুর রাহমান গুন হুমায়ুন মিলন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সবই তো কমবেশি বিক্রি হয়। হয় শহিদুল জহির কিংবা শাহাদুজ্জামান বা এমন আরো অনেকের বইই। সেই সূত্রে চট্টগ্রামের বাতিঘর প্রণিধানযোগ্য অগ্রগণ্য এক ভূমিকা রাখছে। আরো আরো মানুষ এগিয়ে আসছে। পাশাপাশি আবার জায়গায় জায়গায় বইয়ের দোকান বন্ধও হচ্ছে। যা হোক এগোনো হয়নি। শুধু জেদ করে নিজেই প্রকাশনা শুরু করবো পর্যন্ত ভাবা আর মাঠে নামা হয়েছে।
      আছে একখানা চালু অনলাইন বই বিক্রির চ্যানেল। কিন্তু ওটাও চালায় জামাত-শিবিররা। ওখানে কি বই দিতে মন চায়!?
      নতুন কেউ কেউ এগিয়ে আসছে। একটা কনসোর্টিয়াম হয়েছে নতুন শোরুম করে বিপণন বাড়াতে। কোলকাতায় পাঠক সমাবেশ গেছে। এই নতুন কনসোর্টিয়ামও শিগগিরই খুলবে আউটলেট।
      এখন জোর প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহযোগিতা। আমার একবার কনে হয়েছিলো টেলকোর মার্কেটিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন ধরনের একটা অনলাইন মার্কেটিং চালু করবার কথা। জামাতিদের একচ্ছত্র অনলাইন বই বিপণনকে ঠেকাতে।

      জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চমৎকার একটি সুলিখিত পোস্ট। পোস্টের বক্তব্য ছাড়াও মন্তব্যের আলোচনাগুলোও ভাল লেগেছে।
    পোস্টের সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণগুলোর সাথে একমত পোষণ করি। বিশেষ করে সাত নম্বর সুপারিশের সত্যতা ও প্রয়োজনীয়তা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছি।

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      কি যে উলটো পালটা ঘুরতে হলো স্টল খুঁজতে আর বই খুঁজতে। জানিনা আগামীবার কতোটা উত্তরণ ঘটবে। তবু কথাগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলে না বললে শান্তি পাওয়া যায় না। তাই বলা।
      অনেক কৃতজ্ঞতা খায়রুল ভাই - পাঠ, মন্তব্য ও (কিছুটা হলেও) সহমত প্রকাশ করায়।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।