বৃষ্টিমুখর মিষ্টি ক্ষণে…

১.
রওশন বেগম শুয়ে পড়েছিলেন, হঠাৎ ঘুম ভাঙলো ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, বেশি জোরে নয়, তবে খোলা জানালা গলে সবেগে ঢুকে পড়ছে দক্ষিনা বাতাস। পায়ের কাছ থেকে কাঁথাটা টেনে নিলেন গায়ে, হাল্কা শীত শীত লাগছে তাঁর, জানালাটা বন্ধ করা দরকার।
রওশন বেগম মশারী থেকে বেরিয়ে এলেন, লাইট জ্বালিয়ে জানালা আটকালেন। দেয়াল ঘড়িতে সবে ১টা বাজে, ছোট ছেলেটা হয়তো এখনো ঘুমোয়নি, বউদের রুমেও দেখে আসা দরকার।

ছোট ছেলেটা কম্পিউটারের সামনে হা করে বসে আছে। সামনে ইন্টার পরীক্ষা, ও এখন এতসব কী করে? তিনি ওর রুমের জানালাগুলো লাগিয়ে দিলেন, তাগাদা দিলেন জলদি শুয়ে পড়তে। লাইট নিভিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
বড় ছেলের দরজায় আওয়াজ করে বললেন, “বৌমা, বারান্দার দরজাটা লাগানো আছে? জানালা সব বন্ধতো? বারান্দায় কোনো কাপড় থাকলে নিয়ে এসো। মেয়েটাকে ঠিকমতো ঢেকে-ঢুকে দাও, ঠান্ডা লাগেনা যেন।”
এবার এলেন ছোট বউয়ের রুমে। ভেতরে লাইট জ্বালানো ছিল, দরজায় আলতো কড়া নেড়ে ডাকলেন, “দিপু, জেগে আছিস এখনো? সুমি শুয়েছে নাকি? ওর শরীর খারাপ করবে, কাঁথা গায়ে দিস কিন্তু, জানালা-লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড় জলদি।”
নিজের ঘরে এসে ফের ঢুকেন মশারীতে, কাঁথা গায়ে শুয়ে পড়েন আবার। তাঁর কোনো মেয়ে নেই, স্বামী মারা গেছেন দু’বছর হলো। গত ৩ বছরে বড় দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন, এখন ছোটটাকে নিয়েই তাঁর সব চিন্তা। এসব ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যান রওশন বেগম।

২.
মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে উঠে বসে লিপু ও তার বউ। ব্যালকনিতে কোনো কাপড় নেই, দরজাও লাগানো। তাই মশারী থেকে নামতে হয়না তাদের। মেয়েটার গায়ে ভাল করে কাঁথা গুঁজে দেয় ওরা। এক বছরের বাচ্চাটি সামান্য নড়ে-চড়ে উঠে, নিজের দু’পাশে বাবা-মায়ের স্পর্শ পেয়ে তৃপ্তিতে ঘুমিয়ে যায়।
লিপুর মাথায় হাত রাখে বউ, ধীরে ধীরে বিলি কেটে দেয় ওর চুলে।

৩.
শোবার আয়োজন করছিলো নবদম্পতি দিপু-সুমি। দিপু ঢাবি’তে পিএইচডি করছে, আগামী সপ্তাহে থিসিস জমা দিতে হবে, তাই একটু ব্যস্ত। টেবিলে বসে লিখছিলো, সুমি বাথরুমে, এমন সময় দরজার ওপাশে মায়ের ডাক। দিপু চেঁচিয়ে বললো, “এখুনি শোব মা।”
সুমি বেরিয়ে এসেছে, আড়চোখে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখে দিপু, আজ সে সাদা নাইটি পরেছে, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে। তাড়াতাড়ি কাজ গুটিয়ে নেয় দিপু। সুমি ওর চেয়ারের পেছনে এসে দাঁড়ায়, নিচু হয়ে হেলান দেয় স্বামীর পিঠে, দিপু হেসে ফেলে “আসছি বাবা।”
টিউবলাইট অফ্‌ হয়, ডিমলাইট জ্বলে। মৃদু শীতের আমেজে গায়ের উপর একটি কাঁথা তুলে নেয় ওরা। বাইরে বৃষ্টির রিমঝিম স্বর ক্রমেই বেড়ে চলে, গভীর আবেগে উষ্ণ আবেশে জড়িয়ে যায় ওরা।

৪.
বিপুর আজ মনটা কিছুটা খারাপ। রাতের খাওয়া সেরে নিজের রুমে ঢুকতেই একটা একাকিত্বের অনুভূতি ঘিরে ধরে তাকে। কম্পিউটার খুলে বসে এটা-সেটা ঘাঁটাঘাঁটি করে, কিছুতেই মন বসেনা। এমন সময় বাইরে বৃষ্টির শব্দ শোনা যায়, মৃদুমন্দ হাওয়া ঢুকে রুমে, পর্দাগুলো দুলতে থাকে মনিটরের স্ক্রীনে। সে হাওয়ায় শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠে তার, মনটা হয় আরো উদাস। এমন মুহূর্তে একান্ত আপন করে কাছে পেতে মন চায় কাউকে। কাকে, সে জানেনা।
মা এসে ঘুমুতে বলে যান বিপুকে। সে পিসি অফ্‌ করে বেডে শুয়ে পড়ে, অন্ধকার রুমে গভীর একটা নির্জনতায় ছেয়ে আসে চারপাশ, থাকে কেবল একটানা বৃষ্টির করুণ শব্দ।

১,৪৩০ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “বৃষ্টিমুখর মিষ্টি ক্ষণে…”

  1. রকিব (০১-০৭)

    গল্পের চরিত্রগুলো আরেকটু বিকশিত হলে আরো ভালো লাগতো। এত্তো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন কেন 😕 😕 :boss: :boss:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।