(আমার আমেরিকা-প্রবাসী বন্ধু শাহেদ। গত লেখায় সে মন্তব্য করেছিলো, আমার “ভালো” লেখা পড়তে পড়তে সে খুব “বোর” হয়ে গেছে, তাই এই “খারাপ লেখা”টি ওর-জন্যে উত্সর্গ করলাম।)
ক্যাডেটে ভর্তির লিখিত পরীক্ষায় অপ্রত্যাশিতভাবে চান্স পেয়ে যাই আমি। এরপর শুরু হয় ভাইভার প্রস্তুতি, সাথে থাকে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার সময় দু’পায়ের মাঝে একটা বালিশ। ‘সাবধান’ পজিশনে আমার দুই হাঁটুতে গ্যাপ হতোনা, সেজন্যে এই বাড়তি কসরত। O:-)
ওদিকে মিরপুর ক্যাডেট কোচিংয়ে যেতাম ভাইভার প্র্যাক্টিস ক্লাস করতে। বাবা কিনে দিলেন “গ্রাফোসম্যানের নতুন ভূচিত্রাবলী”, ভূগোল-গ্রামার-সাধারন জ্ঞানের রাজ্যে ডুব দিলাম। আর আম্মু আমাকে পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে দিত, কানের ময়লা সাফ করে দিত, স্মার্টলি কথা বলতে শিখাতো। আম্মু বলতো, “তুমি এমন বাঁকা হয়ে দাঁড়াও কেন? সোজা হয়ে দাঁড়াবা, বুক উঁচিয়ে। Face everyone smartly.”
অবশেষে এলো পরীক্ষার দিন।
দুপুরে যখন শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুলে পৌঁছলাম, বুকটা দুরুদুরু করছিল। প্রথমেই জনৈক মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা করে টেস্টটিউব, বললেন “এটায় করে অল্প একটু প্রশ্রাব নিয়া আসবা”। আমরা সুবোধ বালকের মত ঢুকে পড়লাম টয়লেটে। দেখি খালি হলুদ প্রশ্রাব আসতেছে, তাই পুরোটা বাইরে ফেলে শেষ অংশটা টেস্টটিউবে ঢুকালাম।
টেস্টটিউব জমা দিয়ে এসে বসে রইলাম। স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ডাকা হচ্ছে একেক করে। চুপচাপ বসে আছি, কী আর করবে, নাক-কান-গলা-পেট-পা সবইতো সুস্থ আছে, টেনশনের কারণ নাই। এদিকে হেলথটেস্ট দিয়ে যে-ই বের হচ্ছে, দেখি এসে চুপচাপ বসে থাকে, কী কী করলো জিজ্ঞেস করলে কিছু বলেনা!!
যাহোক, আমার টার্ণ এলো অবশেষে। বীরদর্পে প্রবেশ করলাম, আর্মির ড্রেস পরা দুজন বসে আছেন আরেকজন দাঁড়িয়ে। ওঁরা আমার কানের ভেতর লাইট মেরে কী যেন খুঁজল, চোখের পাওয়ার চেক করলো, ওয়েট নিল, গলাটলা কী কী যানি পরীক্ষা-টরিক্ষা করলো, এরপর বললো প্যান্ট খুলতে।
আমি সাগ্রহে প্যান্টটা নামিয়ে দিলাম। একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে, এতগুলা চোখের সামনে অর্ধনগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছি!
এবার আমাকে আরেক প্রস্থ অবাক করে দিয়ে একজন বললেন,”ওটাও খোল”, আমি কী যানি ভাবছিলাম মনে নাই, এক পর্যায়ে নামিয়ে দিলাম শেষ সম্বলটুকুও। :((
তাঁরা যেন গোগ্রাসে উপভোগ করলেন নাবালকের সম্ভ্রম; নড়েচড়ে বসলেন একজন, এরপর শুধালেন “কাশি দাও”- দিলাম। কেন? জানিনা। বললেন, “উল্টা ঘোর…নিচু হও”, আমি নামাজের রুকু স্টাইলে গেলাম, কে একজন টর্চ মারলো আমার পেছনটায়। কীজন্য? আমি জানিনা।
এবার কাপড় পরে নিতে বললেন কেউ। ততক্ষণে আমি যেন এই অবস্থাতেই বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম, কাপড় পরাটা খুব অপরিহার্য অনুভূত হলোনা (এখন যে-সম্পদভান্ডার লুকোতে যাচ্ছি, সেসবতো অলরেডি ওঁদের জানা হয়ে গেছে)! 😉 লজ্জা বিষয়টা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তবুও পরলাম।
এবার আমাকে দাঁড় করানো হলো হাইট দেখতে, আমি তখন ৪’৭”, বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মাপার পর আমার দু’পায়ের গ্যাপ দেখতে গেলেন, আমি করলাম কি, পা-দু’টোকে শক্ত করে টেনে রাখলাম পরস্পরের বিপরীতে। এর ফলে দু’হাঁটুর মাঝের গ্যাপটাও গেল বেড়ে, ব্যাটা মনে হয় বুঝতে পারলো, বলে কি, “ছেলে, তুমি কিন্তু আমার সাথে চালাকি করতেস।” এই বলে দু’পাশ থেকে বাড়ি দিলেন আমার হাঁটুতে, যেন আমি ওগুলা নরমাল করি। আবার বললো, “তুমি কিন্তু আমাকে বোকা মনে করবানা। আমি তোমার চেয়ে অনেক বড়।” আমি সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম, যেন কিছুই হয়নি।
এভাবে শেষ হলো স্বাস্থ্যপরীক্ষা। একদফা বস্ত্রহরণের বিনিময়ে ক্যাডেট কলেজ আমাকে তার যোগ্য মেনে নিল!
এরপর গেলাম মৌখিক পরীক্ষায়, আমার প্রশ্নকর্তা ছিলেন রংপুরের প্রিন্সিপাল বাচ্চি খান সাহেব, সে গল্পটা আরেকদিন হবে। আপাততঃ টাটা।
আলম, ‘৯৭-‘০৩, ককক।
এই কাহিনীটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই সত্য। তবে এটা এভাবে গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করাটা ঠিক হলো কিনা জানিনা।
বাইরের কারো সাথে এই ঘটনা শেয়ার করা হয়নাই!! তাই সিসিবি'র সাথেই করলাম। B-)
দোস্ত তোর পাকিস্তান লাইফ নিয়ে একটা ব্লগ লিখ না প্লিজ...অনেক জানতে ইচ্ছা করে ওখানে তুই কেমন আছিস......কিরকম মজা করছিস মাথামোটাগুলোকে নিয়ে...অনেক মজার মজার জোকস শুনেছি বাঙ্গালির বুদ্ধি আর ওদের বোকামি নিয়ে......সেগুল কতটা সত্যি তাও জানা যেত তোর ব্লগ থেকে...
কাশি দাও!!!!
আহহ...।আহহ...।।আহহ। 🙁
আর স্টাফ বলেন...... =D>
আর আমাদের :(( :(( :((
কেন ভাই সেই করুণ কাহিনীটা মনে করিয়ে দিলেন? 🙁
আমি জানতাম না যে মেডিক্যাল এই রকম হয়। 😮
আমি তাই প্যান্ট খুলতে বলায় খুব বেশি ঘাবড়ে গেছিলাম। 😕
ফলাফল , ভাইভা দেযা শেষে আমার ভালো রকম জ্বর চলে এল। কত ডিগ্রী মনে নাই। :((
বাসায় আর যেতে পারিনি ওই দিন।
অবস্থা খারাপ দেখে খিলগাঁওয়ে আমার খালার বাসায় পড়ে থাকতে হল তিন দিন। =((
স্মৃতি তুমি বেদনা =((
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ
কথা সত্য।
আলম ভাই কেন যে কথাটা মনে করাই দিলেন...
যাউজ্ঞা আপনি এমসিসি এর ছাত্র ছিলেন? আমিও ছিলাম। মেহেদী স্যার এর কথা মনে আছে নাকি...বেচারা খুব অসুস্থ...
নামটা খুব মনে আছে, চেহারা মনে নাই। আসলে আমি শুধু ভাইভার কোচিং করসিলাম, সেটাতো অল্পদিন, তাই মনে নাই।
ওনার জন্য দোয়া করবো।
আর..."সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস" থেকেই এই ব্লগটা লেখা।
আমার ভাইভার সময় টেস্টটিউব ধরিয়ে দিলো ইউরিন স্যাম্পল আনার জন্য । এতক্ষন আমার টেনশনে টয়লেট পাচ্ছিল । কিন্তু যখন টেস্টটিউব ধরিয়ে দিল তখন কিছুতেই প্রসাব বের হয় না । অনেক চেষ্টা করে একটু বের হলো তাও আবার হলুদ । ভয় পেয়ে আমি আবার বাকিটুকু পানি দিয়ে ভরে দিলাম। পরে মেডিকেল টেষ্ট রুমে ঢোকার পর দেখি আফাজ ভাই ( এটেনডেণ্ট) ডাক্তার স্যারকে বলছেন, "স্যার এই ছেলের ইউরিনে তো কোন গ্লুকোজই নেই"। স্যার যেন কেমন করে আমার দিয়ে তাকালেন...........
আমাদের সময় একজন একজন করে মেডিকেল টেষ্ট রুমে ঢোকানো হচ্ছিল। কিন্তু আমাকে তাড়াতাড়ি করে আরেকজনের সাথেই ঢোকানো হলো কারন একটু পরেই টি ব্রেক ছিল। আমাকে এক কোনায় চোখের কানের টেষ্ট করা হচ্ছিল, আরেক কোনায় আমি অবাক হয়ে দেখলাম আরেক ছেলে বেমালুম ল্যাংটা হয়ে ডাক্তার স্যারকে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছে " কুলি বলে এক বাবু সাব তারে ঠেলে দিলে দূরে ফেলে" । দৃশ্য দেখে আমি ভাবলাম আহা নজরুল ইসলাম যদি একবার তার কবিতার ব্যবহার দেখত !!!!!!!!!!!
দারুণ মজা।
একটু পরে কি অই ছেলে আপনাকে দেখলো... কবিতা আবৃত্তি করতে, নাকি?? 😛
আমি টি ব্রেকের আগে লাস্ট ম্যান ছিলাম। তাই কোনমতে ইজ্জত রক্ষা।
আপনাদের তো সিস্টেম ভালোই ছিলো দেখছি। আমাদের সময় দুইজনকে একসাথে করেছে। :shy:
:shy: :shy: :shy:
হা! হা! হা!
ভয়ঙ্কর সত্যি কাহিনী!!!!!!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: :goragori: