প্রেমের চিঠি

প্রেমিকা,
ভেবেছিলাম নীল কাগজে চিঠিটা লিখে, নীল খামে ভরে তোমাকে দিবো। যাপন করা জীবনের চালচিত্রে তা হয়ত হয়ে উঠবে না। মনস্থির করলে হয়ত সম্ভব। শুধু শুধু জটিলতা বাড়িয়ে লাভ কি বলো? বছর চারেক আগে একটা ফেইক পুরুষের এ্যাকাউন্ট দিয়ে সোশাল মেডিয়াতে তুমি আমাকে খুঁজে বের করলে। অন্যথায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যার সহচার্যে কলমে নিয়েছি কাব্য তুলে। গীটারে সদ্য তোলা তিনটি কর্ডের সুর সাজিয়ে যাকে নিয়ে করা প্রথম গান, তাকে বুঝি হারিয়ে ফেলেছি। এই তোমার আমাকে খুঁজে বের করাটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কতটা মনের গহীনে আমাকে যত্ন করে রেখেছিলে তুমি। চেতনার মন মলাটে কতটা প্রলেপ দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলে রূপকথার উপাখ্যানের মত। তিরিশটা বছর কোনো ছোট সময়কাল নয়। এত দিনের দূরত্বের পরেও কি নিখুত ভাবে বোঝো তুমি আমাকে, বর্ণনা দুস্কর। হেয়ালী আমাকে, দূরন্ত চিতাকে কি যাদুর পরশে ছিমছাম করে ফেলতে পারো তুমি।বাস্তবতা আর অবাস্তবতার মিশেল তুমি করো না। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। অযথাই জ্ঞান দিতে আসো না। তারমানে কিন্তু এই নয় ছিটেফোঁটা ভাল তুমি আমাকে বাসো না? এত বছর পরে তোমাকে শুধু একবার দেখেছি। নতুন করে নিখাদ অভ্যাস করিনি তোমাকে।দারুন ভাবে সুখ-দু:খে অন্তত হাই হ্যালোটা আমরা বিনিময় করেছি। সাধারনত প্রায় সকল ব্যার্থ প্রেমেই বিবাদ থাকে, অভিযোগের বস্তা থাকে। দু’জন দু’জনকে ঘৃনা করারও প্রবল উদাহরণ সমাজে আছে। অথচ দ্যাখো, আমাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই। সারস পাখীর মত ভালবাসাবাসি না থাকলেও মনের শেষ প্রান্তের অন্ধকারের পরেই আলোক বিন্দুর প্রস্ফুটন।নীল নামে ডাকা কিশোরী তুমিটা এখন দুই সন্তানের দক্ষ জননী। প্রায় রোবটের মত একজন পুরুষের আরাধন্যের রমনী। সবকিছু কি পারফেক্ট। তাহলে নির্জনে বারান্দায় দাড়িয়ে আম গাছটার পাতায় পাতায় কিসের এত মর্মবেদনা? বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেলে কেনো তোমার নিদ্রার জন্য যুদ্ধ? আমি হয়ত বুঝি। হয়ত না। অনুধাবনতো করতে পারি!
মনে আছে, রমজানে সেহেরীর পরে আমি ছাদে যেতাম সিগারেট খেতে। অন্ধকারে কিছু ঠাওর করা যেতো না। তুমি তবুও জানালার পাশে বসে আগুনের জ্বলা নেভা দেখতে। আগুনের ফুলকিটা ছুড়ে ফেলে দিলে তুমিও পর্দাটা টেনে দিতে। সেই যুগটা কত আবেগের ছিলো।প্রেমে কি সাংঘাতিক পবিত্রতা ছিলো!
তুমি খুব ভালো থেকো। মার্চ মাসের শুভদিনে যে তোমার জন্মদিন সেটা আমৃত্যু মনে রাখবো।
বাপ্পী খান
০৮/০৪/২০১৮ইং

৭০৬ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “প্রেমের চিঠি”

  1. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "সেই যুগটা কত আবেগের ছিলো।প্রেমে কি সাংঘাতিক পবিত্রতা ছিলো!" - সত্যিই তাই।
    সুন্দর চিঠি। এটা প্রাপকের দৃষ্টিগোচর হবে কিনা জানিনা, তবে পাঠকের মনে এটা ঠিকই কিছু ভাবনার রেশ রেখে যাবে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।