(লেখাটি রাশেদ উদ্দীন আহমেদ তপু ভাইকে উৎসর্গ করা হলো।
সংগীত জগত সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি অল্প, অতএব আশা করবো ভুল তথ্য থাকলে সবাই হাসিমুখে ধরিয়ে দেবেন।)
আশেপাশে ফুয়াদের হিপহপ গানগুলো শুনতে পাই। কী ব্রিলিয়ান্ট এই ছেলেটা! কবি সুকুমার রায় হয়তো কখনোই ভাবেননি, একদিন তাঁর “বাবুরাম সাপুড়ে” সুরের মাল্য পরবে, তাও আবার নানারকম ব্যাকগ্রাউন্ডের সংমিশ্রণে হবে ধন্য! এই অসাধ্য সাধন করেছেন ফুয়াদের মতো সংগীতজ্ঞ। কংগ্র্যাচুলেশন ফুয়াদ।
হিপহপ মিউজিকঃ
হিপহপ একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। ১৯৭০ এর দশকে নিউইয়র্ক সিটিতে বাসরত আফ্রিকান আমেরিকানেরা এবং ল্যাটিন আমেরিকানেরা এই সাংস্কৃতিক চেতনার জন্ম দেন। সেখান থেকে আজ এর বিস্তৃতি বিশ্বজোড়া।
হিপহপ মিউজিক একটি স্বতন্ত্র ধারা যার মূল ৪টি উপাদান বিদ্যমানঃ
১) র্যাপিং/MCing (ছন্দবদ্ধ কথ্য উপস্থাপন)
২) DJing (পূর্বে ধারণকৃত মিউজিক সংযোজন)
৩) গ্র্যাফিটি (চিত্রকর্ম, সাধারণতঃ এরোসল ক্যান দিয়ে স্প্রে)
৪) B-boying/B-girling (ব্র্যাকডেন্সিং)
প্রথমদিকে র্যাপ সং উপস্থাপনের সময় খোলা রাস্তায় নির্মিত স্টেজে MC (Master of Ceremonies) এবং DJ (Disk Jockey) মিলে দর্শকদের উদ্দেশ্যে আনন্দদায়ক হৈচৈ করতে থাকতেন। একে বলা হতো টোস্টিং।
র্যাপিং হলো বীটের তালে তালে শিল্পীর ছড়াময় ছন্দবদ্ধ উচ্চারণ। এখানে MC যেকোনো ডায়লগ বা জোকস বা নৃত্য-উদ্দীপক বুলি আওড়াতে পারেন। আর এমসিদের এই ছন্দবদ্ধ কথামালায় সংগীতের মূর্ছনা যোগ করেন DJগণ। রিমিক্স মিউজিক তৈরি, বাছাই এবং সংযোজনের কাজ করেন ডিজেরা। একাধিক বীটের সংমিশ্রণ (juggling) করেন তারা। ফনোগ্রাফ টার্ণটেবল এবং ডিজে মিক্সার ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরির এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় Turntablism. তাদের এই কাজটি একজনের অথবা বহুজনের ভোকাল ব্যবহার করে হতে পারে, তারা অন্য পরিচিত গানের অংশবিশেষ ব্যবহার করতে পারেন অথবা স্বরচিত পংক্তি আবৃত্তি করতে পারেন। তাদের কর্তৃক নির্বাচিত মিউজিকটি উক্ত গানের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে যুক্ত করা হয়।
গ্র্যাফিটি বলতে বুঝায় গানের সাপোর্টে যেকোন অনর্থক চিত্রকর্ম। ছোট্ট কোনো দাগ বা আঁকিবুকি থেকে শুরু করে দেয়ালে পেইন্টিং সবই এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সাধারণত আমাদের আশেপাশে সামাজিক ও রাজনৈতিক যেসব দেয়াল লিখন দেখতে পাই সেগুলো গ্র্যাফিটির সংজ্ঞাভুক্ত। অনেক দেশে অবশ্য সম্পত্তির মালিকের সম্মতি ব্যতিত দেয়াল লিখনকে vandalism (অশ্লীল চিত্রকর্ম, বিজাতীয় শিল্পচর্চা) হিসেবে গণ্য করা হয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এক কথায়, গ্র্যাফিটি হলো র্যাপসং-এর দর্শনীয় চিত্রায়ন যেখানে ব্র্যাকডেন্স হলো তার শারীরিক অভিব্যক্তি।
হিপহপের ভালোমন্দঃ
প্রবক্তাদের উদ্দেশ্য যাই থাক, হিপহপ সংস্কৃতি যুবসমাজের কাছে কতোটা গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে সেটা আজো প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ বিশ্বায়নের বাহানায় বিজাতীয় এই সংস্কৃতি যেন গ্রাস করে ফেলছে প্রতিটি জাতিকে। সকলের হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি যেন আড়ালে পড়ে যাচ্ছে এই নবাগত উত্তেজনার।
আর অধিকাংশ র্যাপিস্টগণই শব্দ-বাক্য-ভাষা-ছন্দ-বীট নির্বাচনের ‘স্বাধীনতাকে’ কাজে লাগাচ্ছেন অনৈতিকভাবে। যুবসমাজের মাঝে যৌন উত্তেজক বক্তব্য চালিয়ে দেবারও একটা প্রয়াস এখানে চলে আসে। অনেকক্ষেত্রে এসে যায় নেশাকর শ্লোগান, ‘অপরাধকর্মের’ সুড়সুড়ি, অথবা ব্লাসফেমির মতো গর্হিত অন্যায়। যেমন খোদ ব্রিটিশ সংগীত তারকা Tricky বিষোদগার করে বলেছেন, তার দেশে বন্দুক এবং ছুরিঘটিত অপরাধের পেছনে রসদ জুগাচ্ছে এই হিপহপ সংস্কৃতি।
তদুপরি প্রচুর আশার দিকও রয়েছে এতে। যেমনটা তৈরি করেছেন আমেরিকার মুসলিম হিপহপ শিল্পীরা, সংগীতপিয়াসী আমেরিকানদের মাঝে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেবার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এই হিপহপ।
কৃষ্ণাংগদের প্রবর্তিত এই সঙ্গীতধারার মূল উদ্দেশ্য ছিলো শ্রেণীবৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান, যা কিনা ইসলাম ধর্মের বক্তব্যের সাথেও সাদৃশ্যপূর্ণ, ফলে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে আমেরিকার অধিকাংশ মুসলিম কৃষ্ণাংগই এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। সংবাদে প্রকাশ, শুধুমাত্র আমেরিকায়ই প্রতি বছর র্যাপসং ব্যবসায়ি মুসলিমরা আয় করেন ১.৮ বিলিয়নের অধিক ডলার। বিখ্যাত নওমুসলিম এবং অন্যান্যের মাঝে নাম করা যায় Mos def, Talib Kweli, Paris, Jurassic 5 প্রমুখের। আগ্রহী পাঠকগণ এমন একটি হিপহপ মিউজিক ভিডিও “Queens of Islam” দেখতে পারেন।
ফুয়াদের হিপহপঃ
শেষ করার পূর্বে ফের ফুয়াদের কাছে ফিরে না গেলেই নয়। বাংলা ভাষায় র্যাপচর্চার অন্যতম পথিকৃত বলা যায় তাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তার স্বাধীন ভাষা সংকলন (DJing, MCing) যেন আমাদের সংস্কৃতিকে বিষময় করে দিতে উদগ্রীব। উদাহরণস্বরুপ তার বিখ্যাত ‘বন্য’ থেকে নেয়া ১টি হিপহপ গানের সামান্য লিরিকস তুলে দেয়া হলোঃ
পুরুষ কন্ঠের DJing-
নাচ নাচ মেয়ে আমার পাশে/ নাচ নাচ মেয়ে IUBতে/ নাচ নাচ মেয়ে NSUতে/ নাচ নাচ মেয়ে ঘেঁষে ঘেঁষে/ নাচ নাচ মেয়ে ওড়না ফেলে…।
…অন্ধকারে আমি তোরে ডাকি/ দেখে ফেলবেতো কাকা কাকী।
অতঃপর নারীকন্ঠের MCing, “আমার লাউয়ের গাছে লাউ ধইরাছে/ লাউ যে বড় সোহাগী/ লাউয়ের পিছে লাগছে বৈরাগী”।
এই গানগুলো নিশ্চয়ই আমাদের প্রচলিত সাংস্কৃতিক জগতের প্রতিনিধিত্ব করেনা। আর এখানে এটাও চিন্তা করার অবকাশ আছে যে, এসবের মাধ্যমে আমাদের যুবসমাজের চিন্তাধারাকে দূষিত করা হচ্ছে কিনা। শ্রোতাদেরকে অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে মনস্তাত্বিক ধ্বংসসাধনের এটা কেমন পদক্ষেপ? মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশি জাতির ভাগ্যে তবে এ কী সাম্রাজ্যবাদ এসে জুটল?
দুর্ভাগ্য আমাদের যাদের পূর্বসুরি ছিলেন আব্বাসউদ্দীন লালন ফকির কাজী নজরুল ফররুখ, যাদের দিকনির্দেশক ছিলেন ড. মু. শহীদুল্লাহ কাজী মোতাহার হোসেন মুনীর চৌধুরী, যাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্যার সৈয়দ আহমদ শেখ মুজিব। অতএব আসুন সচেতন হই, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হই, চর্চা করি নিজস্বতা, পরিত্যাগ করি চরিত্রহীনতা।
ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। লেখা প্রকাশের ১ বছর ৬ মাস ২০ দিন পর আমি কেম্নে প্রথম হইলাম।???????
ফুয়াদ একটা ধাড়ি রামছাগল বলেই আমার মনে হয়-ওর যে গানটা আমার প্রিয় "নিটোল পায়ে" সেইটাও তার নিজের গান না-চুরি করা।
অট-জাতির কাছে এইটা আমারো প্রশ্ন যে সে দ্বিতীয় হয় কেমনে?
আমি 3rd 😀 😀
অল্পের জন্যে মেডেল মিস হইলো............. :(( :((
attention জাহিদ, মাসরুফ, অরপিয়া, রাহাতঃ
লেখাটি যখন প্রকাশ হয়, সিসিবি তখন ছিল ওয়ার্ডপ্রেসে। সেখানে এই লেখার উপর ২১টি মন্তব্য-আলোচনাও হয়েছিল। (তবে পরবর্তিতে নিজস্ব বাড়িতে আসার সময়ে অজ্ঞাত কারণে মন্তব্যগুলো হারিয়ে যায়!)
অতএব মেডেল পাবার দুরাশা করার প্রয়োজন নেই। 🙂
তবে এত পুরনো লেখাটি বের করে পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জাহিদকে। :boss:
x-( মেডেলের দাবী ছাড়ি নাই