মিথিলা বেঁচে উঠুক

এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘হাউসফুল’। পারিবারিক জীবনের অত্যন্ত বাস্তব ঘটনাগুলো সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ নাটকে। এ-পর্যন্ত ৬০টি পর্ব প্রচার হলো এর। :party:

রাজধানীর পল্লবীর একটি বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি বসবাসরত দুই ফ্যামিলি। উভয় ফ্ল্যাটের কর্তার নাম একরামুল, এদের একজন রুচিশীল ভদ্রলোক ইঞ্জিনিয়ার আরেকজন বিল্ডার্সের কাজ করেন।
দ্বিতীয়জন মোটামুটি গেঁয়ো, তার সাথে বাসায় থাকে তার ভাগিনা সিদ্দিক। সিদ্দিক নাটকের সবচে মজাদার চরিত্র, তার সব এক্সপ্রেশনই দর্শককে হাসির উদ্রেক করবে। তারা মামা-ভাগ্নে মিলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকদের বিরক্ত করে, কারণে-অকারণে তাদের দরজায় কড়া নাড়ে।
প্রকৌশলী একরামুল সাহেবের (আবুল হায়াত) ২ মেয়ে, শিমু ও মিথিলা, আর ১ ছেলে, মিশু। জুঁই নারকেল তেলের তাহসান-ঘরণী ম্যাচিউর্‌ড মিথিলা এখানে বিংশী কুমারী। তাদের সাথে বাসায় থাকে ওদের এক মামা ইফতি আর এক চাচা সুমন, বেকার বলে সারাদিন ঘরে বসে থাকে তারা, দুই বেয়াইয়ের মাঝে অনবরত কাটা-ছেঁড়া চলে। বিশেষতঃ ইফতির অভিনয় নাটকে একটা চরম কৌতুকময় পরিবেশ এনে দেয়।
ইফতি হঠাৎ একদিন বাসায় বেশি পাত্তা পাবার জন্য সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। নানা অবস্থায়ও সে কথা বলেনা, একদিন সিদ্দিক তাকে বাসার ছাদে খুব জ্বালাতে থাকে, ইফতি তখন কদিনের জমানো কথা একত্রে উগলে দেয় ছড়া-কবিতার মাধ্যমে। এই অংশটা সত্যি এক অপূর্ব সৃষ্টি, এখানে একটা অভিনব জিনিস দেখা যায়- দেড়ের ঘরের নামতা। মোশাররফ করিমের সুন্দর অভিনয়ে এ-অংশটা নাটকের একটা আকর্ষনীয় মুহূর্ত হয়ে থাকে।
ইফতি ঢাকা ভার্সিটির ফিজিক্সের স্টুডেন্ট হাসান ভাইকে নিয়ে আসে মিথিলাকে পড়াবার জন্য, কাল কুচকুচে হাসান ভাই আবার সোশ্যোলজির এক মেয়ের সাথে প্রেম করে, স্মার্ট সুন্দরী ফারিয়া, মেয়ের ভাই তাকে ফলো করে এবং বোনকে ফ্রি রাখার জন্য তাকে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতায় লাগিয়ে দেয়। ওদিকে কোচিং সেন্টারের পরিচালক মেয়েটি (নিশু) হাসান ভাইকে পছন্দ করে ফেলে।

সুমাইয়া শিমুর প্রেম দুঃসম্পর্কের ফুফাত ভাই মেডিক্যাল স্টুডেন্ট নিয়াজের সাথে, মিথিলার প্রেম জমে উঠতে পারেনা। এদিকে ওদের ছোটভাই মিশু প্রেম করতো যার সাথে, মেয়েটির মা বেঁচে নেই তাই খালার সাথে থাকে, মেয়েটি একবার খালার সাথে বেড়াতে যায় নানাবাড়ী ফরিদপুর। মিশুও যায় পিছুপিছু, তার সাথে দেখা করবে বলে। গ্রামের লোকজন দেখে ফেলে তাদের, খবর দেয় বাড়ীতে, ওদের ধরে নিয়ে যায়। তারপর ঢাকায় ফোন দেয় বিয়ে করিয়ে দিতে। শেষত’ক তাকে ছাড়া হয়, কিন্তু শিগগির বিয়ে করবার শর্তে।
শিমু-মিথিলার বিয়ে না-হলে এই পিচ্চি ছেলে বিয়ে করে কীকরে? জমিজমা-সহ আরো অসংখ্য ঝক্কি-ঝামেলায় ঝগড়া হয় একরামুল সাহেবের, স্ত্রীর সাথে। সবাই বুদ্ধি করে ওদের পাঠিয়ে দেয় কক্সবাজার, কদিন ঘুরে আসুক একসাথে, তাতে যদি সম্পর্ক ঠিক হয়।
মা ছাড়া বাসার অবস্থা অগোছালো। ইফতি নিচে গিয়ে হোটেলে নাস্তা করে আসে।
কদিন পর বুড়ো-বুড়ি ফেরেন, এখন তাদের দারুণ সম্পর্ক, একসাথে সিনেমা দেখতে যান, হোটেলে খেতে যান, যাত্রায় যান। ছেলেমেয়ে মুখ টিপে হাসে। এদিকে ইফতি IELTS-এ ফেল মারার পর ভর্তি হয় TOEFL-এর জন্য। ব্রিটিশ কাউন্সিলে পরিচয় হয় মিষ্টি-মেয়ে জেনির (প্রভা) সাথে। মোটাসোটা সুমনও তার নতুন চাকরিতে গিয়ে সন্ধান পায় সুহাসিনী মডেল মোনালিসার।

অত্যন্ত হাসি-খুশি ডায়লগের ভেতর দিয়ে নাটকের এতগুলো পর্ব এগিয়ে চলে, ব্যাপক দর্শক সাড়া, ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হলো, পরিচালক ফাহমিকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ চতুর্দিক। এমনি সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো বাসার সবার আদরের মেয়ে মিথিলা, প্রচন্ড মাথাব্যাথা। ডাক্তারী পরীক্ষায় পাওয়া গেলো ব্রেন টিউমার। হাসি-আনন্দে ভরপুর একটি পরিবারের সবাই এখন কাঁদছে, পাশের ফ্ল্যাটের সিদ্দিকও জায়নামাযে বসে দোয়া করছে মিথিলার সুস্থতার জন্য।
এভাবে শেষ হলো ৬০তম পর্ব। আমরা অপেক্ষায় আছি একটা গ্রহণযোগ্য সমাপ্তির। আমরা চাই ‘হাউস’টা সবসময় full থাকুক। 😉
মিথিলার সুস্থতা দেখানোর জন্য প্রবল আক্ষেপ চলছে দর্শকদের মাঝে। ঠিক অনেকটা সেই বাকের ভাইয়ের অবস্থাটা যেন, ফাহমি এখানে হুমায়ুন আহমেদের মত একটি হৃদয়গ্রাহী চরিত্র উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। :hatsoff:
সবার জন্য শুভকামনা। এমন সুন্দর সুন্দর নাটক তৈরি হয় বলেইতো আমরা বাংলা নাটক নিয়ে গর্ব করতে পারি। :tuski:

২,৯৪১ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “মিথিলা বেঁচে উঠুক”

  1. হাউসফুল ই বোধহয় একমাত্র ধারাবাহিক যেটা আমি দেখি। বাকি গুলা পুরাই অখাদ্য। দৈনিক তোলপাড় নামের একটা ভাড়ামি হয়, যেটা দেখে মনে হয় মুখের উপর গিয়ে ইয়ে করে দিই।

    মনে হয় না মিথিলা কে ভাল করবে, তাহলে নাটকের কথাটা সবাই তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে।

    সিসিবির বিশেষ নাট্যকার কাম্রুল্ভাই এই বিষয়ে ভাল বলিতে পারিবেন।

    জবাব দিন
  2. তৌফিক

    বাংলা নাটক দেখি না। ভালো লাগত না। গত ঈদে বাংলাদেশ সুডেন্ট এসোসিয়েশানের মজলিশে ফারুকীর রাজাকার নিয়ে করা টেলিফিল্মটা দেখলাম। এখন বুঝতাছি, বাংলাদেশি নাটকের দিন বদলাইছে। দেখতে হবে। তবে যখন দেখমু, কামরুল ভাইয়েরগুলা দিয়া ওপেনিং দিমু।

    জবাব দিন
  3. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার খুবই অপছন্দের একটা নাটক গুলশান এভিনিউ। বাংলা নাটকের খুবই খারাপ অবস্থা হইছে তা ওই নাটক দেখে মনে করছিলাম। কিন্তু হাউসফুল আর ইট কাঠের খাচা-র মত নাটকগুলা এখনও আশা জাগায়। :clap:

    জবাব দিন
  4. সাজিদ (২০০২-২০০৮)

    নাটকটা আমাদের সামনের বিল্ডিন্গে শুটিং করে, নাটকের টিম আসলেই ছাদে অথবা বারান্দায় চলে যাই 😀 😀 😀 😀
    নাটকটা (মিথিলাকে আমিও খুব ভালা পাই) :boss: :boss:

    জবাব দিন
    • আলম (৯৭--০৩)

      (তাড়াতাড়ি না জানানোর জন্য দুঃখিত।)

      মিথিলা সুস্থ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ডায়াগনস্টিক ব্যবস্থায় সমস্যাটা (অনিয়ম, ভুল চিকিৎসা, রোগী নিয়ে ব্যবসা ইত্যাদি) দেখানো হয়েছিল সেখানে, এ বিষয়ে পরবর্তী কিছু পর্বে প্যাঁচাল পারা হয়েছে।

      তারপরের কাহিনী একদম ফাউল। মারজুক রাসেলকে নিয়ে আসা হয়েছে মিথিলার বিপরীতে, বিরক্তিকর প্রেম-গল্প।
      আর কিছু বলা হবেনা, নিজে দেখে নিয়েন।

      জবাব দিন
    • আলম (৯৭--০৩)

      পুরানরাই পুরানদের মিস্‌ করবে, এইটাই স্বাভাবিক। 😛

      ভাল আছি ভাই, সব ঠিকঠাক আছে। ক্যারিয়ার নিয়া একটু চোটের উপর আছি। তাই এদিকে ঢুকা হয়না। একটা গুড নিউজ নিয়ে তবেই বাড়ী ফিরবো। 😉

      জবাব দিন
  5. আলম (৯৭--০৩)

    আচ্ছা, নওরীন আপুর একটা ৪-৫ লাইনের কবিতা ছিলনা? অনেক আগের, গত বছর, মাঝের দিকের। "পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘগুলো ছুঁয়ে যেতে ইচ্ছে করে"-- এরকম কী যেন! ২ ঘন্টা ধরে খুঁজে যাচ্ছি, কোথাও পাচ্ছিনা। 'কবিতা' ট্যাগেও নাই, 'ময়মনসিংহ' ট্যাগেও নাই! কী আজব... উধাও হয়ে গেল লেখাটা?

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।