আমার শিক্ষকেরাঃ
জনাব মাসউদ হাসান
সপ্তম শ্রেণীতে যাঁরা পড়াতে আসতেন, তাঁদেরকে বিষয় বিশেষজ্ঞ না হলেও চলতো। মনে আছে প্রথম দিন কিংবা প্রথম দিকের কোন একদিনে ভূগোলের শিক্ষক জনাব মাসউদ হাসান স্যার এসেছিলেন আমাদের পৌরনীতি পড়াতে। যেহেতু ইংরেজী মিডিয়াম, পৌরনীতিকে বলা হতো সিভিক্স। Civics, Geography এবং History, এই তিনটি বিষয়ের একত্রিত নাম ছিল সোশ্যাল স্টাডীজ। মাসুদ হাসান স্যার ক্লাসে এসে প্রথমে সংক্ষেপে তাঁর পরিচয় তুলে ধরলেন,

পকেট মানি’র অবিশ্বাস্য বরকতঃ
প্রতি টার্মের শুরুতে আমাদের অভিভাবকদেরকে আমাদের পকেট মানি বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট ৫০.০০ (পঞ্চাশ টাকা মাত্র) পাঠাতে হতো। আজকের দিনে কি এটা বিশ্বাস করা যাবে, যে তিন মাসের জন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা হাতখরচ? অথচ তখন এই ক্ষুদ্র এমাউন্ট থেকেও কিছুটা হলেও বাঁচানো সম্ভব হতো। কোন দুষ্টামির কারণে কিংবা কোন কিছু হারিয়ে ফেলার কারণে কারো কোন মাইনর ফাইন হলে সেটাও এখান থেকে মিটানো হতো।

প্রথম কোন শিক্ষকের বিদায়ঃ
যে শিক্ষক আমাদের প্রথম পাক্ষিক পরীক্ষাটি নিয়েছিলেন এবং যাঁর পরীক্ষায় আমি আমাদের সেকশনে প্রথম পরীক্ষাতেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম, তিনিই দুর্ভাগ্যক্রমে সবার আগে আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জনাব হাফিজ উদ্দিন খান। মূলতঃ পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক হলেও তিনি সপ্তম শ্রেণীতে আমাদের অঙ্ক ও জ্যামিতির ক্লাসগুলো নিতেন। তিনি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। ঐ অল্প ক’দিনেই আমরা তাঁর কাছ থেকে অনেক ভালো ভালো উপদেশ পেয়েছিলাম।

চলনে বলনে, পোষাক পরিচ্ছদে, কথা বার্তায়, সব কিছুতেই উইং কমান্ডার কীয়ানির একটা সফিস্টিকেশন ছিলো। অত্যন্ত সুদর্শন এই এয়ারফোর্স অফিসার চিত্রজগতে প্রবেশ করলেও যে তিনি বক্স অফিস তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতেন, সে কথা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায়। ঐ সময়ে দেশের সিনেমাহল গুলোতে একটা জনপ্রিয় ইংরেজী ছায়াছবি The Night Of The Generals চলছিলো। সেই ছবির অন্যতম নায়ক Peter O’ Toole এর সাথে তাঁর চেহারা, চালচলন এবং স্বভাবের অনেক মিল ছিলো।