টু হুম ইট মে কনসার্ন – চল্লিশের আত্মকথন
এটা কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটা জনসচেতনতামূলক লেখা। নিজদায়িত্বে পড়তে হবে এবং লেখার কোন অংশের জন্য লেখককে কোনভাবেই দায়ী করা যাবে না। লেখাটা কিছুটা পুরুষ মানষ থেকে লেখা; নিজের জেণ্ডার এবং বয়সের উপলব্ধির রিফ্লেকশনস মাত্র। এখানে লেখককে জেণ্ডারবিদ্বেষী না ভাবাই স্বস্তিকর, কারন এটা এই লেখাটার একটা বড় দূর্বলতা, আর নিজের দূর্বলতা কেই বা আলোচনায় আনতে চায়? তবে নারীকুল তাঁদের নিজ অভিজ্ঞতাকে মন্তব্যের খাতায় অবশ্যই সামনে আনতে পারেন, সেটাকে সাধুবাদ জানানোই যৌক্তিক মনে করছি।
আমাদের সমবয়সীদের সবাই এখন একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বয়স সবার চল্লিশ, বা তার চেয়ে দু’এক ঘর এদিক-ওদিক। এই বয়সে এসে “আগের জেনারেশন” এবং “পরের জেনারেশন”, দুটোকেই সামলাতে হয়। সেটা অবশ্যই বিরাট এক ধৈর্য্য পরীক্ষা। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। মাঝে মাঝে যে মন খারাপ হয় না, বা উভয় সংকটে পড়তে হয় না, তা মনে হয় কেউই বলবে না। আবার একসাথে আড্ডায় বসে সবাই কিছুটা হলেও পুরোনো দিনে চলে যায় – যাকে বলে “নটি এট ফর্টি”। তারপরে আবার সেই চিরচারিত রুটিনে ফিরে যাওয়া। মাঝে মাঝে হয়তোবা প্রচণ্ড কাজের চাপে, কিংবা পারিবারিক দায়িত্ববোধের ঠেলায়, কিংবা পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয়ের ব্যালান্স ঠিক রাখতে গিয়ে হিমশিমও খেতে হয়। এই বয়সের একজন পুরুষ মানুষের কান্নাকাটি করাটা বেমানান; তার ওপরে আবার গায়ে “ক্যাডেট” লেবেল দেয়া। কিন্তু অনেক সময় তো মনে হয়, ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে একা কিছুক্ষণ হাউমাউ করে কাঁদতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু সেটাও সম্ভব না; কারন সংসার, কর্মক্ষেত্র, কাঁচাবাজার, ডাক্তার-হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, টিউশন-ফি, কোমড় ব্যাথা, ব্লাড প্রেশার! সব রুটিন-দায়িত্ব-সমস্যা-কর্তব্য! নিজের জন্য সময় কোথায়?
এখন আমাদের বয়সীদের করণীয় কি? কর্পোরেটগুলোতে কাজের ফাঁকে অফিসের কলিগের সাথে ছাদে গিয়ে বিড়ি ফুঁকা। কারো আবার মাস হিসেবে দোকান ঠিক করে রাখা – অফিস যাবার আগে, বাসায় ফেরার পথে, আর ছুটির দিনে বাজারের ব্যাগ হাতে – ওই যে মোড়ের চায়ের দোকানটা! কিংবা অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে মাঝে মাঝে বাসায় কাউকে কিছু না জানিয়ে বন্ধু বা কলিগদের সাথে কাবাব-টিক্কা-ঝালফ্রাই-পরোটা-কাচ্চি-তেহারী। তারপর? আবার রুটিন-রুটিন-রুটিন! যাহোক, দোষ আমাদের না। সম্ভবতঃ দোষটা বয়সের। কারন? ওই যে, চল্লিশ! ট্রানজিশন পিরিয়ড!
এরই মধ্যে বেশ ক’জন বন্ধু, এবং আমি নিজেও, শারিরীকভাবে কিছুটা হলেও সমস্যাগ্রস্থ। কেউ অল্প, কেউ বেশি, কেউ সিরিয়াস। তাহলে আমাদের ওপরের এবং নিচের জেনারেশনগুলোর কি হবে? সবাই কিন্তু আমাদের মুখোপেক্ষী। সবাই গড়পর্তায় আমাদের এই এই “চল্লিশ”-গুলোর উপরেই ডিপেণ্ডেন্ট। কিন্তু, এদের কাউকেই কি জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে স্বাধীনভাবে থাকা যায়? নাকি সেভাবে থাকা উচিত? আর যদি এটা ফিল করি যে, কেউ না কেউ আমার বা আমাদের উপরে ডিপেণ্ডেন্ট, যেমন আমিও একসময় ছিলাম, এবং কেউ না কেউ আমাকে তৈরি করার জন্য বা আমার আরাম-আয়েশের জন্য এভাবেই তাঁদের “চল্লিশ”-এ এই একই রকমের অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাহলেই সব ঠিক। কথাটা সান্তনামূলক শোনালেও, আমার কাছে মনে হয়েছে, এই সেলফ-মোটিভেশন বা সেলফ-কাউন্সিলিংটুকু আমার মতন এই “চল্লিশ”-গুলোর জন্য আসলেই ভীষণ দরকার। আবার, কয়েক বছর পার করে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পরে হয়তো দেখা যাবে, আজকের এই লেখাটা আমাদের অনেকের কাছেই হাস্যকর হয়ে গেছে। কারন, ওই যে অভ্যাস! অতঃপর চলিবে! এরই মাঝে অনেকের বিদায় ঘণ্টা বাজবে! এটাই তো নিয়ম!
আমার এই কথাগুলো আসলে খাপছাড়া। এতক্ষণ লিখেছি, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এখন আসছি জনসচেতনতার অংশে। — ইচ্ছের ডানা হয়তো বা বাঁধ মানে না। না মানারই কথা। কিন্তু সময়মত লাগামহীন ইচ্ছেগুলোর রাশটা মনে হয় শক্ত হাতে এবং নির্মম ভাবেই টানা উচিত। গর্তের মুখে গিয়ে ব্রেক না কষে, যেখানে “সামনে গর্ত” লেখা আছে, সেখান থেকেই প্রস্তুতি থাকলে মনে হয় ভাল হয়। — এখন যেটা বলতে যাচ্ছি, তাতে হয়তো বন্ধুমহলে একঘরে হতে হবে। — ছোট বেলায় “রসনা বিলাস” পড়েছিলাম। তখন শুধুই পরীক্ষার পড়া হিসেবে পড়েছিলাম, তেমন একটা না বুঝে বাধ্য হয়েই পড়েছিলাম। কিন্তু এখন বুঝি। কিছুটা ঠেকে, আর বাকিটা বন্ধুদের দেখে বুঝি। আমাদের এই “চল্লিশ”-গুলোর রসনা বড়ই লাগামহীন। রাশ টানা জরুরী। পানাহারে সংযমী হবার কোনই বিকল্প দেখছি না। বলাবাহুল্য, নিজে ঠেকে আর বন্ধুদের দেখেই এই উপলব্ধিতে আসা।
একজন সেনাপতির নিজের আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন দেখাটা নিছক বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। সেদিক থেকে এই চল্লিশের একজন ডিপেণ্ডেবল পুরুষের নিজের শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সাপোর্ট দেয়াটাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। নিজে সুস্থ না থেকে অন্যকে সাপোর্ট দেয়ার মত কষ্টকর দায়িত্ব এই বয়সে আর কিছুই নেই। সেদিক থেকে আমাদের বয়সীদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য হানীকর বিষয়গুলো সযত্নে এড়িয়ে চলাই ভাল। যারা এরই মধ্যে এড়িয়ে চলছেন, একটা ডিসিপ্লিণ্ড লাইফ স্টাইলে নিজেকে বাঁধতে পেরেছেন, তাদের দেখে সত্যিকারর্থেই ঈর্ষাণ্বিত হই। কারন আমিও যে চল্লিশের এক না-ধোয়া তুলসি পাতা। এখনো অনেক সিনিয়রকে দেখি স্লিম-টামি সহ হার্টথ্রব-লুক (ফিমেল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে) নিয়ে চলাফেরা করেন, বুকের ভেতরে কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে, “আহারে!”
spot on...
আপনি কি সিসিআর এর ওমর আনোয়ার ভাইয়া?
যদি আপনি সেই ব্যাক্তিই হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাদের ব্যাচকে মাস তিনেকের মত পেয়েছিলাম কলেজে।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
১ম B-)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
পড়ছিস?
তুইও কিন্তু চল্লিশের কাছেই আছিস!
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ফোকাসটা কোন দিকে, বুঝলাম না।
"নটি" না হবার, নাকি খাদ্যাভ্যাস ঠিকঠাক রাখার?
যাহোক, যেটাই হোক, ব্যাপারটা মনে করানো প্রশংসনীয়।
তবে যাঁদের ওসবে অলরেডি অভ্যাস হয়ে গেছে, এই মনে করানোটায় কোন কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
কারন জান তো "ইউ কান্ট টিচ এন ওল্ড ডগ নিউ ট্রিক..."
আর যারা ওসব থেকে দূরে আছে, তাদের নিয়ে ভাবনার কিছু নাই।
তাঁরা হয় সচেতন ভাবেই তা করছেন - সুতরাং করেই যাবেন।
অথবা অপারগতা থেকে তা করছেন - এখন আর নতুন কোন সক্ষমতা অর্জনের কোন সম্ভবনা দেখছি না বলে নিশ্চিন্ত বোধ করছি...
তোমার কনসার্নটা সাধুবাদ পাবার উপযুক্ত...
তাই জানিয়ে গেলাম... :clap: :clap: :clap: :clap:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
কোন উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাটা না, ভাইয়া।
যাস্ট একটা খাপছাড়া লেখা।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
চল্লিশের আত্মকথনে মিডল এজ ক্রাইসিসের ব্যাপারটি ভুলে গেলে নাকি, ভাইয়া? জাগতিক দায়িত্ববোধের পাশাপাশি নিজে কি পেলাম আর কি পেলাম না, কেন পেলাম না অথবা কি পেতে পারতাম তারও নিকেশ চল্লিশেই কিন্তু!
অনেকদিন পর তোমার দেখা পেলাম, আহমদ! ভাল আছো আশাকরি।
ভাল আছি আপা।
আপনাকে এখানে দেখে বেশ ভাল লাগল।
ভুলছি না কিছুই আপা।
সদ্য চল্লিশে এসেছি তো।
তাই কিছু মনের কথা বেরিয়ে এলো।
এই আর কি!
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
🙂 🙂 🙂 🙂
চল্লিশ যে পার হয়ে গেছি মনে থাকেনা তো। ধুর!
খালি মনে করায় দাও। মানে হয়? 🙂 🙂
দাদা, ভাল আছেন?
আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আপনার উপলব্ধিগুলো জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। সপ্তাহ দুই-এক আগে হঠাৎ মনে হলো, আসছে জন্মদিনে কত বছরে পা দিচ্ছি একটু গুনে দেখি একবার। ভেবেছিলাম, হবে হয়তো বিশের কোঠার কোনো একটা সংখ্যা। চমকে উঠলাম যখন গুনে গুনে আবিষ্কার করলাম তিরিশের কোঠায় পা দিচ্ছি এবার!!! কাজ আর পড়াশোনা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে মানতে খুব কষ্ট হচ্ছিল আমাকেও একদিন বিশ ছেড়ে পা দিতে হবে তিরিশের কোঠায়...
শুভ তিরিশ-পদার্পন
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ওই বয়সটা আসবে কবে !
আমি তো পঁচিশেই আঁটকে আছি চিত্ত বৈভবে ।
জীবন তো মোটে একখানা
কি এতো দরকার তাতে রাশ টানা !
:duel:
ঐ
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
::salute::
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম