প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা-১

কয়েকদিন থেকে মনটা খুব খারাপ ছিল। সিসিবি থেকে নীরব নির্বাসনে চলে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা আর পারলাম কই? শওকত ভাইয়ের সেরা ১০ মুভি নিয়ে লেখায় ঠিকই কমেন্ট করে ফেললাম। ওখানে আবার সামিয়ার সাথে হালকা ভুল বোঝাবুঝি। বোনের সাথে এরকম হলে কি কারো ভাল লাগে? তাই সিসিবির আমাদের সবার পছন্দের বোনটার জন্য লিখে ফেললাম এই গল্পটা।

স্বাতী নিঃসন্দেহে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে নয়, কিন্তু ওর চেহারার লাবন্যটুকুই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল। আমি মফস্বলে বেড়ে উঠা সাধারণ একজন বোকাসোকা, অনুভূতিপ্রবণ ছেলে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর আর সব মফস্বলের ছেলের মতই ঢাকায় চলে এলাম এবং কেমন করে জানি হলে একটা সিটও ম্যানেজ করে ফেললাম। হলে উঠতে না উঠতেই ক্লাস শুরু। ভার্সিটির প্রথম ক্লাস, কেমন যেন একটা অদ্ভূত অনুভূতি! আমি কখনই প্রথম সারিতে বসার মত সিরিয়াস ছাত্র ছিলাম না। তাই ক্লাশে ঢুকে চতুর্থ সারিতে বসার জন্য উদ্যত হতেই প্রথম সারির বামদিকে চুপচাপ বসে থাকা মেয়েটার দিকে কেমন করে যেন চোখ চলে গেল। লাবন্যমাখা মুখটা নিয়ে নিচে খাতার দিকে তাকিয়ে কি যেন করছে! আমিও চুপচাপ গিয়ে বসে গেলাম চতুর্থ সারিতে, পরে আমার একান্ত নিজের করে ফেলা সেই জায়গাটাতে। ক্লাস শুরু হতে বেশীক্ষণ লাগল না! প্রথম ক্লাসে স্যার সবার নাম, কোথা থেকে এসেছে জানতে চাওয়ার পর জেনে নিলাম প্রথম সারির বামদিকে বসা সেই চুপচাপ মেয়েটির! স্বাতী।

তখনও ক্লাসে আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। প্রতিদিন একরাশ জড়তা নিয়ে ক্লাসে আসি, স্যার কি বলেন বুঝার কিংবা লিখার চেষ্টা করি। আর স্বাতীর দিকে বারেবারে তাকাই। ওর সামনে রাখা খাতাটায় যে কি আছে আল্লাহই জানে, সারাক্ষণ ওটার দিকে তাকিয়ে থাকে। একবারও পিছন ফিরে তাকায় না, আমার দিকে তাকানো তো দূরের কথা! কত ইচ্ছা করে ক্লাসে স্যারকে বুদ্ধিমানের মত একটা প্রশ্ন করি, যাতে স্যারের প্রশংসা পাওয়ার সাথে সাথে ক্লাসমেটদের সম্মান ও বিষ্ময়মাখানো দৃষ্টি পাওয়া যায়। সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয়না,আমাকেও দিয়ে ওরকম কোন প্রশ্ন করা হয়ে উঠেনা! এমনকি ক্লাসে ল্যাবগুলোতে যখন গ্রুপ করা হচ্ছিল তখন স্যাররা একবারও আমাদের দুইজনকে এক গ্রুপে ফেললেন না! স্যার ঐ মেয়েঘেঁষা আরাফাতটাকে স্বাতীদের গ্রুপে না দিয়ে আমাকে কি দিতে পারতেন না? মনটাই খারাপ হয়ে যায়!

আহ্নিক গতির সাথে দিনের আবর্তন কিংবা বার্ষিক গতির সাথে বছরের আবর্তন- সবকিছুই হয়ে যায়। কিন্তু ভীরু, বোকাসোকা কিংবা লাজুক এই আমার আর কথা হয়ে উঠেনা প্রথম সারির বামদিকে বসা সেই চুপচাপ স্বাতীর সাথে! ক্লাসে কতবার যে ওর দিকে তাকাই তার কোন ইয়ত্তাই নেই, কিন্তু ও তো আর ফিরে তাকায় না। চুপচাপ ক্লাসে আসা, এসে অধিকাংশ সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা এই মেয়েটার সাথে কি আমি কখনই কথা বলতে পারব না? ফাজিল জামিলটাও দেখি ওর সাথে হেসে হেসে কি কথা বলে, স্বাতীও ওর লাবন্যমাখা মুখটা নিয়ে মিষ্টি করে হেসে যায়। দেখেই তো পিন্ডি জ্বলে যায়! মনে মনে বলি, শালা মেয়েদের সাথে কি এত হাসির কথা তোর? নাহ! আমাকে দিয়ে মনে হয় ওর সাথে আর কথা বলা হয়ে উঠলো না! কিন্তু, নিয়তির মুচকি হাসি দেখার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য কোনটাই যে আমার হয়ে উঠে নি!

(চলবে)

৬,৩৫৭ বার দেখা হয়েছে

৮২ টি মন্তব্য : “প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা-১”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)

    😮
    তানভীর ভাই, এইবার আমি কেন্দে দিব সিরিয়াস :(( :((
    আমার জন্য একটা গল্প...আমার জন্য :((
    তানভীর ভাইকে :salute: :salute:
    আমি কি করব ঠিক বুঝতেসি না, পরে এসে ঠিকমত কমেন্ট করে যাবো
    আর মন খারাপ কেন?? কে আপনাকে কি বলসে?? আমাকে খালি বলেন x-( x-( একদম ঘাড় নামায় দিব না??
    কি আশ্চর্য, স্বাতী নামটাই আপনার পছন্দ হলো!!!

    জবাব দিন
  2. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    দুর্দান্ত শুরু। অপেক্ষায় রাখার জন্য তানভীর ভাইর ব্যাঞ্চাই। কান্নার জন্য সামিয়ার ও ব্যাঞ্চাই। সবাইর ব্যাঞ্চাই। কারন কেউ লগইন করেনা।

    সদস্যঃ ১ অতিথিঃ ৫
    কামরুলতপু

    মানে কি হইল?? এইরকম আর দেখিনাই আমি একাই খালি লগইন অবস্থায়।

    জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)

    তানভীর, খুব ভাল লিখছ্যাও।
    এরম হাল্কা ভুল বুঝাবুঝি হউক প্রতিদিন, আর প্রতিদিন একটা করে পর্ব বারুক ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  4. পুরাটা শেষ হইলে বলবো কেমন হয়েছে। 😀

    মন খারাপ করে লাভ নেই রে, দুনিয়া বড়ই নিষ্টুর ।
    তার চেয়ে ভালো না থাকলেও ভালো থাকার ভান করে যা , আমার মতো। দেখবি সব ঠিক-ঠাক। 😀

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    তানভীর ভাই, পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম... :thumbup:

    আপনার মন ভাল হইছে শুনে আমরা খুব...খুব খুশি হইছি... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    সামিয়া কই রে?
    আরেকটু হালকা ভুল বুঝাবুঝি কইরা দিয়া যাও...
    তানভীর এর হাত থিকা আরেকটা গুলি বাইর হোক... :gulli:

    ছুপা রুস্তম,
    পুরা গুল্লি ওপেনিং হইসে... :boss:

    'মেয়েঘেঁষা আরাফাত' ক্যারেক্টারটা আসার সাথে সাথেই অবচেতন মনে মাস্ফ্যুর চেহারাটা ভাইসা উঠল... ;))


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    আপনার “তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে”- এটার ২য় পর্ব কই?

    আমি এইটার কথা ভুইলা গেসি...তোমরাও ভুইলা যাও :grr:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  8. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    আমার নায়িকার নাম চুরি করার জন্য তানভীর ভাইয়ের...

    যাই হোক সিরিয়াস কমেন্ট করি।

    গল্প কেমন হইছে বা হবে জানি না, ভালো হোক খারাপ হোক- আপনার লেখা পড়তেই আমার ভালো লাগে... সুতরাং নো চিন্তা, যা মনে আসে লিখে যান...

    জবাব দিন
  9. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    কি সুন্দর লেখে তানভীর পোলাটা :hug:
    শুন বেশি কইরা ডিভিডি দ্যাখ আর এরম লেখতে থাক ;;;
    লেখা নিয়া কমেন্ট পরের পর্বে করুম 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  10. রকিব (০১-০৭)

    সেই সিরিজ, যেখানে রুমকীর আম্মুকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
    শুনে এলাম, রুমকীর আম্মুকে নাকী আসলেই খুঁজে নিয়েছেন তানভীর ভাই :grr:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।