কতই বা বয়স ছিল আমাদের। ১১/১২/১৩? ঐ অতটুকু বয়সে ছাড়লাম ঘর। আর ফেরা হয়নি। মা-বাবার আদরের সান্নিধ্য ছেড়ে শতাধিক ক্রোশ দূরে এক অজানা অচেনা জায়গাকে কি সহজেই আপন করে নিলাম। আসলেই কি আপন করতে পেরেছিলাম? হোম-সিকনেস আর ‘কলেজ ফিলিংসের’ একটা দ্বৈতস্বত্বা কি বাস করেনি আমার মাঝে? কলেজে থাকতে বাড়ির টান, আর ছুটিতে থাকতে কলেজের টান – এই দুইয়ের মাঝে পার করে দিলাম শৈশব-তারুণ্যের ছয় ছয়টি বছর। কি পেলাম বা কি হারালাম ঐ ছয় বছরে? এই সমীকরণের ফলাফল আমি জানিনা, জানতে চেষ্টা করিনি, জানতে চাইওনি কখনও। তবে একটা জিনিস জানি। এই ছয় বছর আমার জীবনের রাশ টেনে ধরে প্রায়ই। স্মৃতির পাতায় বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দিনগুলি হঠাৎ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠে, মনে হয় – এইতো সেদিন….
অথচ এক কুড়ি বছর আগে ছেড়ে এসেছি আমার প্রথম ভালবাসাকে।
আমার মত অনেকেরই নিশ্চয়ই এমন হয়। মাঝে মাঝে কিছু গন্ধ চট করে কলেজের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
এখনও মাঝে মাঝে ঝাঁঝালো দুপুরের পীচগলা রাস্তার গন্ধ মনে করায় নভিসেস ড্রিল প্র্যাকটিসের ভয়ংকর দিনগুলি। বৃষ্টির মাঝে তপ্ত মাটির সোঁদা গন্ধ মনে করায় আফটারনুন প্রেপের ঘুমজড়ানো অলস দুপুরগুলোকে। আলমারি খুলে হঠাৎ নাকে আসা তীব্র ন্যাপথালিনের গন্ধ মনে করায় হাউস ইন্সপেকশণের জন্য প্রস্তুত কাবার্ডের (কাপ-বোর্ড) কথা। জুতার কালি থেকে এখনও ভেসে আসে প্রিন্সিপাল প্যারেডের আগের রাতে জমা হওয়া সিনিয়রদের একগাদা জুতার গন্ধ। লণ্ড্রী থেকে নিয়ে আসা কাপড়ের মাঝে আমি এখনও ‘কে-২২’ সীল মারা ধূপির কাপড়ের গন্ধ পাই। মাঝে মাঝে রাতে রুটি খেতে গিয়ে পাই কলেজের বিখ্যাত রাবারসম চাপাতির গন্ধ। মশার অসহ্য উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে যখন ট্রাংক থেকে মশারী বের করি, তখন নাকে আসে ক্লাস টেন পর্যন্ত নিয়মিত লাগানো সেই গাঢ় রঙের মশারীটার গন্ধ। কোন এক দাওয়াতে পেয়ে যাই কলেজের বিখ্যাত মাটন-কারির গন্ধটা। জুম্মার নামাজে টুপি পরতে গিয়ে পাই কলেজের সেই কালো ‘রামপুরী’ টুপির পরিচিত গন্ধ। ব্রান্ডহীন কোন কোন চানাচুরের প্যাকেটে আমি আজও কলেজ ক্যানটিনের একটা গোটা কুপন খেয়ে ফেলা চানাচুরের গন্ধ পাই। হঠাৎ বাথরুমে কাপড়-কাঁচা সাবানের মধ্যে পাই কলেজে ছুটির দিনে ধোবার জন্য জমে থাকা কাপড়গুলোর সাথের সাবানটির গন্ধের এক আশ্চর্য সাদৃশ্য। নতুন বছরে গিফট পাওয়া কোন এক ডায়েরির মাঝে আমার মেরুন রঙের ডায়েরিটার প্রিয় গন্ধটা প্রায়ই ধরা দেয়। এমনই অনেক গন্ধ আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায়। ইচ্ছা করে এগুলোকে ভরে রাখি না শেষ হওয়া কোন ক্যানিষ্টারে।
যতদিন আছি, এই পরিচিত গন্ধগুলোর মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। বার্ধক্যে যখন আমি অচল, অথর্ব, বাকশক্তিহীন কিংবা দৃষ্টিহীন হব, আমি চাই শুধু আমার ঘ্রানেন্দ্রিয়টা কাজ করে যাক নিরন্তর এক রাডারের মত। হঠাৎ ভেসে আসা এই গন্ধগুলোর কোনটাই যেন মিস না হয়।
অতি চমৎকার স্মৃতিচারণ।
বেশ ভাল লাগল।
কেম্নে কেম্নে ১ম হইয়া গেলাম B-) B-)
ধন্যবাদ
আপনার ডি,পি, দেখে আমারও জ়েসিসির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে :(( :((
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
:clap: :clap:
:guitar: :guitar:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
বস একেবারে কলিজায় চাক্কু মাইরা দিলেন... :(( :(( :((
নস্টালজিক হয়ে গেলাম... :(( :(( :((
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
রকিব, একটু তাড়াতাড়ি আয় তো রে ভাই, জুনায়েদের চাক্কুটা বের করি। শেষে আমি বিপদে পড়ব। স্টেটমেন্ট লিখতে লিখতে জান কাবার হয়ে যাবে।
আইয়া পড়ছি বস, খালি অর্ডার করেন, চাক্কু এখনি সিন্দাবাদের সুলেমানী তরবারীর সাথে রিপ্লেস করমু। :grr: :grr:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
অনেক জোস হইসে... কলেজের কিসু কিসু জিনিস খুবই নারা দেয়!
কই কই নারা দেয় ??
'নাড়া' শব্দটা আমার কাছে বড়াবড়ই কমশ্লীল মনে হয় ... :-B
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলতেছি লেখাটা পড়ে 🙁 । আমার স্বর্ণালী অতীতের স্বাক্ষী রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। :dreamy:
এত স্মৃতিময় সময় .....বার বার ফিরে পেতে চাই .....
সকাল বেলা দিলেন তো মনটা খারাপ করে । কলেজ টা তো আমার আত্মার একটা অংশ হয়ে আছে । এতদিন ঘুমিয়ে ছিল । ধন্যবাদ সিসিবি আমার আত্মার ঐ অংশটাকে আবার জাগিয়ে তুলেছে । আর ধন্যবাদ অনুরক্ত ভাইকে আবার মির্জাপুরে ফিরিয়ে নেবার জন্য । :salute:
তোমাকেও ধন্যবাদ লেখাটা কষ্ট করে পড়ার জন্য।
১...
গন্ধের এই ব্যাপারটা সাইকোলজিকালি প্রমাণিত ঘটনা। তথ্যসূত্র দিতে পারব না, কিন্তু এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, যেসব মহিলারা চামড়ার গন্ধে আনমনা হয়ে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক কাজকর্ম করতে চান, তাদের প্রথম বয়ফ্রেন্ডরা চামড়ার জ্যাকেট পড়ত। 😀
২...
লেখাটা ভালো লাগছে। চালিয়ে যান অনুরক্ত ভাই।
😀 😀 😀
থ্যান্কু।
লেখাটা পড়ে খুবিই ভাল লাগল... :thumbup: :thumbup: :thumbup:
এটা জেনে আমারো ভাল লাগল
তৌফিক কি আজকাল আনমনা হয়ে যায় নাকি । =))
খেলুম না... 😐 :no: 😕
আমি তো একটা ফ্যাক্ট বললাম খালি... :(( :(( :((
তৌফিক ভাই নাকী একা একরুমের এ্যাপার্টমেন্টে থাকেন ???? :-B :-B
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ফ্যাক্ট আ্যাক্ট হইতে কতক্ষন =))
x-( x-( x-(
হোসেন ভাই, আপনি কতদিন ধইরা বিদেশ থাকেন?? 😀
আমি তো সবে এক বছর হইলো আছি, এখনও রাস্তার ডান বাম চিনি না। আ্যাক্ট করার সব সুযোগ তো আপনারই কাছে। :(( :(( :((
@ তৌফিক হাহা আরে চ্যাতস কেন? আমিও তো :just: একটা ফ্যাক্ট কইলাম । :khekz:
কি কস তোর হাতের ডান পাশে ডান আর হাতের বাম পাশে বাম :khekz: ।
রকিব ভাল একটা ফ্যাক্ট বলছে :-B
রকিব তুই রায়ারসনে না? টরন্টো গেলে তোরে খুইঁজা বাইর কইরা বরফের উপর সাইডরোলিং করামু। x-( x-( x-(
:frontroll: :frontroll: বস মাফ কইরা দেন... আর কুন্দিন হাটে হাড়ি ভাংমু না :(( :((
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তৌফিক ভাই, টরন্টো কবে আসবেন? আসার আগে একটা খবর দিয়েন প্লীজ 😀 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
খুব ভাল লাগল লেখাটা।
শীতের বিকেলের হাওয়া আমাকে সবসময় কলেজের এথলেটিক্সের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
নষ্টালজিক করে দিলেন ভাইয়া। :(( :((
🙂
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, বুড়া বয়সের অলস সময়ের জাবর কাটার মত অনেক কিছু আছে এই কলেজকে জড়িয়ে।
আমি গোলাপ ফুল দেখলেই তাজ-মহল গোলাপ খুজি, আমাদের হাউস গার্ডেনে একটা ছিল, এত বড় গোলাপ আমি আর দেখিনি। কি বড় বড় পাপাড়ি ছিল
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
পাপড়ি 😛
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
'পারফিউম' মুভিটার কথা মনে পইরা গেল ...
অণুরক্ত ভাই দেখি কলেজের গন্ধ গুলা সযত্নে বেশ ভালই সংরক্ষণ করে রেখেছেন ... :-B
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
পড়তে গিয়ে অনেক কিছু মনে পড়ল। :(( :(( :((
:salute: :salute: :salute:
চমৎকার স্মৃতিচারণ :clap:
নষ্টালজিক করে দেয়ার মতো লেখা :boss:
অনুরক্ত ভাই, :salute:
জোস লেখা
বস,
অসাধারণ লাগলো...
সবগুলা গন্ধ খুব আপন লাগে...
কলেজের মত করে কিছুই তো আর এখন করতে পারিনা 🙁 ...আমি তবুও খুব চেষ্টা করি নাপিতের কাছে গেলে ক্যাডেট টাইপের একটা হেয়ারকাট দিতে...ভিনদেশী নাপিতকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি ঘাড়ের চার আঙ্গুল উপর পর্যন্ত পুরাপুরি চেঁছে ফেলার জন্য...ব্যাটারা যথাসাধ্য চেষ্টাও করে, কিন্তু আমার মন ভরাইতে পারেনা...
চুল কেটে বাসায় ফিরার পর বৌয়ের তীব্র প্রতিবাদের নিষ্ঠুর প্রকাশের কথা আর নাই বললাম 😕
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
আহ, কত যে আপন এই ঘ্রাণগুলা !!!!
রঞ্জনা আমি আর আসবো না...
যেকোন স্মৃতির সঙ্গেই গন্ধ জড়িয়ে থাকে অবচেতন ভাবে। কলেজে বৃষ্টির দিনে কাদা আর ঘাসের একটা মিশ্র গন্ধ একেবারে নাকে লেগে আছে এক্সট্রা ড্রিলের সুবাদে। ডাইনিং হলে সকালের পরটা ভাজার গন্ধ তো চৌদ্দ মাইল দূর থেকে পাওয়া যাইতো!