আমার বন্ধুয়া বিহনে

ক্লাস নাইনে একবার আমার খুব জ্বর হলো। রাত ২ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেলো। টের পেলাম জ্বরে সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আমি উঁহু, আহা করছি।
পাশের বেডে থাকতো মাসুদ। আমার গোঙানি শুনে ও ঘুম থেকে উঠল। বিছানা থেকে নেমে এসে আমার কপালে হাত রাখল।
-তোর তো অনেক জ্বর। চল হাসপাতালে নিয়ে যাই।
-এখন এতদূর হেঁটে যেতে পারবো না। একটু কমুক, সকাল বেলায় যাব।
-আচ্ছা দাঁড়া..
বলে ও দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। একটু পর এক বালতি পানি নিয়ে এসে ঢুকল।
-মাথাটা এইদিকে ঘুরা। পানি ঢেলেদিই।
আমি মাথা ঘুরিয়ে বিছানার কিনারে আনলাম। মাসুদ হাত বাড়িয়ে টেবিল কভারের পলিথিনটা এনে আমার মাথার নিচে দিল। তারপর মগ দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগল।
বাকি রাতটা ও আমার মাথার পাশে বসে কাটাল। কিছুক্ষণ পানি ঢালে, কিছুক্ষণ রুমাল ভিজিয়ে কপালের উপরে রাখে। পরম মমতায় গা মুছে দেয়।
ভোরের দিকে জ্বর একটু কমে আসলে মাসুদ আমাকে ধরে বিছানা থেকে তুলল। ওর কাঁধে ভর দিয়ে আমি হাসপাতালে পৌঁছলাম।
আর সারারাত না ঘুমিয়ে ও গেল পিটি করতে ।

বারো বছর পর।

মাসুদ এখনো আমার রুমমেট।
শেষ রাতের দিকে মাঝে মাঝে খুব শীত লাগে। উঠে গিয়ে পাশের রুম থেকে কাঁথা আনতে ইচ্ছে করে না। গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি।
একসময় টের পাই পাশের রুমে লাইট জ্বলল। ঘুম ঘুম চোখে কাঁথা হাতে নিয়ে আমার রুমে আসে মাসুদ। আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাঁথা দিয়ে ঢেকে দেয়। তারপর ফ্যানটা অফ করে দিয়ে আবার নিজের রুমে ফিরে যায়।

আমি সব টের পাই। গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। ভুলেও চোখ খুলি না।

কিছু কিছু ভালবাসা চোখ বন্ধ করে নিতে হয়।

৭,০১১ বার দেখা হয়েছে

৬১ টি মন্তব্য : “আমার বন্ধুয়া বিহনে”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    Count your life by smile not tears...
    Count your age by friends not years...

    কথাটা আমাদের একাডেমী ব্লকে ঢুকে ডানে তাকালেই একেবারে চোখে এসে লাগতো। ক্লাস টেন A ফর্মের পাশের দেয়ালের ওপর বড় বড় করে লেখা আছে কথাগুলো।

    আজকে আবার মনে করিয়ে দিলেন। কী চমৎকার এক সত্য!!


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. সাইফ (৯৪-০০)

    অই কেম , মাসুদ এর গায়ে কাথা না থাকলে তুই কি ঢেকে দিস নাকি.........।।হা হা হা মাসুদ অসাধারন পরিশ্রমী আর গোছালো একটা বন্ধু............he is so caring ...............আমার কখনই মনে হয় না মাসুদ আমি তুই সনেট ,মান্না,রাসেল,শোয়েব শরীফ সিরাজ রুওম্মন,তৌহিদ অন্য ক্যাডেট কলেজের.........আর সম্প্রতি মামুন ভাই ...।আজিজ এর আড্ডায়............আমি তোদের খুব মিস করি............।।বিশেষ করে একুশে হল,বুয়েট,আর আমার প্রিয় বাংলা মটর...............আর জানলার ফাক দিয়ে পাশের বাড়ির আন্টির মেয়ের রান্না করা............।হা হা হা

    জবাব দিন
  3. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    কামরুল ভাই বন্ধুয়া বিহনে এইটাকেও সিরিজ বানিয়ে ফেলেন। আমি নিশ্চিত কলেজের আপনাদের কাহিনী এখানে বলা শুরু করলে এইটাও আপনার অই স্যার-ম্যাডাম নিয়ে সিরিজের মত হিট হবে। আর ওইটা লেখেন না কেন অনেক স্যার তো বাকি রয়ে গেল। সোহরাব স্যার কে নিয়েই তো এখনো কিছু লেখলেন না।

    জবাব দিন
  4. এমন ক্যাডেট খুব কম এ আছে যার বেষ্ট ফ্রেন্ড ক্যাডেট কলেজের বাইরের অন্য কেও।
    ক্যাডেট কলেজের ভালাবাশার মুল কারন হল কিছু বন্ধু,কিছু্ স্নেহপ্রবন সিনিওর,কিছু বিসসস্ত জুনিওর।

    জবাব দিন
  5. আহ্সান (৮৮-৯৪)
    আমি সব টের পাই। গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকি। ভুলেও চোখ খুলি না।

    কিছু কিছু ভালবাসা চোখ বন্ধ করে নিতে হয়।

    কি করে এত সুন্দর করে অনুভূতিগুলোকে সবার হৃদয়ের গভীরে পৌছে দাও???
    অসম্ভব সুন্দর লেখা।
    মাসুদ আর তোমাদের বন্ধুত্বের প্রতি রইল আমার অসীম শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা।

    জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    নিজের পুরান লেখা পড়তেছি। 😉
    কেউ মাইন্ড খাইয়েন না। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।