বন্ধু তোর লাইগা রে …

কলেজ থেকে ছুটিতে আসলে আমাদের প্রধান কাজ ছিল সব বন্ধুরা (ক্যাডেট পার্টি) একসাথে আমার বাসার সামনে বা আহমেদের বাসার সামনে দুই দলে ভাগ হয়ে ক্রিকেট খেলা। সকাল থেকে শুরু হতো একেবারে দুপুর গড়িয়ে বিকাল না হলে থামাথামির কোন নামগন্ধ ছিলো না।

ক্রিকেট আমার খুব প্রিয় খেলা। খেলতে এবং দেখতে। কিন্তু সমস্যা হলো খেলার সময় আমি আবার একেবারে আনাড়ী। ফলে দুই দল ভাগ করার সময় আমাকে সবাই বিপক্ষ দলের দিকে ঠেলে দিতো।
শুধু তাই না। বেছে বেছে সবচেয়ে ভয়াবহ বোলারের ওভারগুলি আমাকে ফেস করতে পাঠিয়ে দিতো। আমি মুখচোখ কালো করে ব্যাট করতে নামতাম আর ২/৩টা বল ফেস করে প্রায়ই নামের পাশে শুন্য রেখে ফিরে আসতাম। রান করার কোন উপায়ই ছিলো না, কারন ভয়াবহ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো তানভীর। শীতের সকালে আমার বাসার সামনে ঘাসে ঢাকা পিচে তানভীরের বল ফেস করার চেয়ে যেকোন পার্বতী’র মন জয় করা অনেক সহজ কাজ। অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে পড়ে শরীরের দিকে আসা ওর ইন সুইঙ্গার গুলি থেকে যেকোন একটা মিডল স্ট্যাম্প বাচানো যেতো, নিজের না হয় ক্রিজের। আমি নিজের স্ট্যাম্প বাঁচাতাম, ক্রিজেরটা তানভীরের বলে উড়ে যেতো। অবশ্য উইকেট পেয়ে তানভীর বেশি খুশি হতো না, কারন আমার উইকেট সবাইই পেতো (এমনকি দুধ ভাত বোলার তারেকও)।

আড্ডায় তানভীর বেশির ভাগ সময় নিরব স্রোতা। নিজে গল্প বলতো খুব কম কিন্তু অন্যের গল্পে গুড় লাগাতে ও বেশ ওস্তাদ। কিছুক্ষন পর পর আমরা একজন অন্যজন কে পচাঁতাম। যার গল্প বেশি সেই সবচেয়ে বেশি পচঁতো। তানভীর কে পচাঁনো যেতোনা, কারন ওর গল্প কম। সবচেয়ে বেশি গল্প ছিলো তারেকের ফলে পচঁনিটা ও বেশি খেতো। এই কাজে আমি সশ্রম অংশ গ্রহন করতাম এবং নেপথ্য থেকে তানভীর আমাদেরকে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যেতো ।

ছাত্র হিসেবে তানভীর ছিলো কেমন সেটা বলার জন্যে যে মিনিমাম মার্কস লাগবে তা আমার সারাজীবনের সব পরীক্ষার নম্বর যোগ করেও হবে না। ওর খারাপ রেজাল্ট গুলির একটা হচ্ছে ম্যাট্রিকে কুমিল্লা বোর্ডে মেধাতালিকায় ২য় স্থান। অবশ্য ইন্টারে যথারীতি প্রথম হয়ে আর বুয়েটে সেইরকম সিজিপিএ নিয়ে তানভীর ঠিকই সেই ঘাটতি পুরন করে দিয়েছে। এই বিষয়ে বেশি কথা বললে আমার নিজের মান সম্মান নিয়া টানাটানি পড়বে, তাই সাইড দিয়ে চলে যাই।

বন্ধু তানভীরের তুলনা শুধু তানভীর নিজে। গত ঈদটা আমরা প্রথম তানভীর কে ছাড়া করলাম। টাউন হলে গিয়ে সবাই জড়ো হয়েছি আড্ডা দিতে, ভুলে আমি দু’একবার বলেও ফেলেছি, ‘তানভীর টা এখনো আসে না ক্যান? শালায় সব সময় লেট।’ মনেই ছিলো না তানভীর ঢাকায় ইদ করছে। এই ইদও তানভীরকে ছাড়াই করতে হবে। এবং আমাদের কারো না কারো সেই একই ভুল হবে।

এবার আরো বেশি মিস করবো কারন আজ হঠাৎ মনে পড়লো আগামীকাল ঈদের দিন তানভীরের জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন দোস্ত।
বলি বলি করেও একটা কথা কোন দিন বলা হয়নি। আমরা সবাই তোকে খুব মিস করি। উই লাভ ইউ ম্যান।

Bondhu Tor Laiga r…

“>

আজই চলে যাচ্ছি কুমিল্লা। সিসিবিও বেশ নিরব থাকবে মনে হয় কয়দিন। তানভীর নিজেও এই ক’দিন সিসিবিতে আসতে পারবে কিনা জানিনা। কিম্বা আসতে আসতে এই শুভেচ্ছাটুকু কতটা সজীব থাকবে তাও জানিনা। তবে ভরসা শুধু এই টুকুই শুভ কামনার ঘ্রান ফুলের মতো ক্ষনস্থায়ী না।

৪,৪৮৩ বার দেখা হয়েছে

৬৭ টি মন্তব্য : “বন্ধু তোর লাইগা রে …”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    :boss: :boss: :boss:
    আমিও একটু পরে গ্রামের বাড়িতে ভাগতাছি। আগামী ৩ দিন পর আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ। সবাইকে ঈদ মোবারক।
    তানভীর ভাই কামরুল ভাই সবাই দেখি বস। B-) আসলে মনে হয় আমি বাদে সব ক্যাডেটই বস :hatsoff: :hatsoff:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    তানভীর ভাইয়ের সব গুনের কথাই বললেন। খালি চেহারা মোবারকটা নিয়া কিছু বললেন না। :-B

    তানভীর ভাই, হ্যাপী বাড্ডে। ভাল থাকেন। আর আমগো মত ফেলটুস পার্টির জন্য একটু ফুঁ দিয়া দিয়েন মনে কইরা। :hatsoff:

    কামরুল ভাই ক্রিকেট খেলার মধ্যেও পার্বতীরে ঢুকায় দিসে। তাও আবার মিডল স্ট্যাম্পের সাথে তুলনা। বুঝতেসিনা উনার হইসেটা কি। ~x(


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    নারে, তানভীর তোরে নিয়া আমারো মনে হয় একটা লেখা দিতে হইবো। হাজার হোক, ফর্মে আর ডাইনিং এ একসাথে বসার কিছু কথা তো বলার আছেই।

    বলি বলি করেও একটা কথা কোন দিন বলা হয়নি। উই লাভ ইউ ম্যান।

    :salute:

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    ....ওর ইন সুইঙ্গার গুলি থেকে যেকোন একটা মিডল স্ট্যাম্প বাচানো যেতো, নিজের না হয় ক্রিজের।

    😀 😀 😛 😀 😛 😀

    এই বিষয়ে বেশি কথা বললে আমার নিজের মান সম্মান নিয়া টানাটানি পড়বে, তাই সাইড দিয়ে চলে যাই।

    😉 😉 😉 😉

    আমরা সবাই তোকে খুব মিস করি। উই লাভ ইউ ম্যান।

    মাসুদ রানার একটা বিখ্যাত গল্প "আই লাভ ইউ ম্যান" এর কথা মনে পড়ে গেল :dreamy: ।

    শুভ কামনার ঘ্রান ফুলের মতো ক্ষনস্থায়ী না।

    দারুণ বলেছ হে :boss: :clap: :boss: ।

    তানভীরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা :party: :party: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)
    শুভ কামনার ঘ্রান ফুলের মতো ক্ষনস্থায়ী না।

    এইসব ডায়লগ আসে ক্যাম্নে কামরুল ভাই?
    ঘ্রাণ আশাকরি তানভীর ভাই আসার পরও থাকবে।
    আমার পক্ষ থেকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

    সিসিবি খুব বেশী নিরব থাকবে বলে মনে হয় না। আমি ঈদের দিন পুরাটাই আছি। দেখি ঈদ ব্লগিং কেমন চলে।

    জবাব দিন
  6. তারেক (৯৪ - ০০)

    একটা নাতিদীর্ঘ পোস্ট রেডি করছিলাম আজকে তানভীরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে। কামরুল দিলো আমার ভাত মাইরা- :grr:
    তান্স, দোস্ত, হ্যাপি বার্থ ডে।
    আরও কত কত কথাই লিখতে ইচ্ছা করতেছে এখন, তুই নিশ্চয়ই সেইটা জানস?
    অনেক ভাল থাক-
    ( আরেকটা কথা, এইবার কিন্তু সত্যিই বুড়া হইয়া যাইতেছস, একটা কিছু কর মামা, একটা কিছু কর! 😀 )


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  7. তানভীর (৯৪-০০)

    বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা সবসময়ই বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রকাশটা আমরা আতিশয্যের মাধ্যমে করি। কামরুলের এই লেখাটাও এর ব্যতিক্রম না!

    আতিশয্য বাদ দিয়েই বলছি, এতটুকু শরীরে আকাশের মত অসীম ভালোবাসা কিভাবে ধারণ করা যায় এটা যেন সবাই কামরুলের কাছ থেকে শিখে!

    তবে ভরসা শুধু এই টুকুই শুভ কামনার ঘ্রান ফুলের মতো ক্ষনস্থায়ী না।

    একে অপরের জন্য শুভকামনা আমাদের সবসময়ই থাকবে।

    দোস্ত, তোকে অশেষ ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য।

    অফটপিকঃ হায় আল্লাহ! কামরুল আমারে নিয়া এইসব কি লিখসে?? ~x( ~x( ধরণী, তুমি কই গেলা? তাড়াতাড়ি দ্বিধা হও, আমি লুকাই!

    জবাব দিন
    • এতটুকু শরীরে আকাশের মত অসীম ভালোবাসা কিভাবে ধারণ করা যায় এটা যেন সবাই কামরুলের কাছ থেকে শিখে!

      হাইটে না হয় তোর চেয়ে একটু কম , তাই বইলা সবার সামনে আমারে বাইট্টা কইলি? 😡
      এই জন্যেই লোকে বলে,
      দোস্ত দোস্ত না রাহা, পেয়ার পেয়ার না রাহা।। 😉 😉

      জবাব দিন
  8. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    তানভীররে আবার হেপি বাড্ডে দেই :party: :party:
    কিন্তু এইখানেতো একবারো কইলিনা 'বুইড়া মানুষের আবার বাড্ডে' 😡 😡
    আর তাইফুরের আফসোসটা কিন্তুক শুধু অর একলার না, সিসিবি'র জাতীয় আফসোসে পরিণত হইছে এখন 😡

    আহারে, তানভীর যদি এইখুশীতে একটা ব্লগ নামাইতো …


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  9. সিরাজ (৯৪-০০)

    অনেক দিন ধরে মন্তব্য করে করে করা হচ্ছিল না.........
    কেম এর সাথে আমার পরিচয় হ্য় HSC এর পর......।।আমার দেখা এই দুনিয়ার সব থেকে সুখী মানুস।ওর কাছে থেকে দেখেছি মানুস কত কঠিন কাজ হাসি মুখে সহজ করে ফেলে...।।বন্ধু বিপদে কেম কখন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না...।আর মাস্তির কথা বলতে গেলে এক কথায় বলতে হ্য়
    জীবন কে উপভোগ করতে চাও...। x-(
    সোজা কেম ভাই এর কাছে চলে যাও......। x-( x-( x-( :tuski: :tuski: :tuski: :awesome: :awesome:

    জবাব দিন
    • আরে ব্যাটা গর্ধভ, এই পোস্ট হইছে তানভীররে নিয়া আর তুই এর মধ্যে আমার গুনগান কইরা ফাটাইয়া ফালাইতেছস। :grr: :grr:

      না তোরে নিয়া আর পারলাম না। সাধে কি আর তোরে হা... না কমু না। কইলে আবার কে কখন মাইন্ড কইরা বসে। 🙁

      জবাব দিন
    • সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
      আমার দেখা এই দুনিয়ার সব থেকে সুখী মানুস।ওর কাছে থেকে দেখেছি মানুস কত কঠিন কাজ হাসি মুখে সহজ করে ফেলে…।।বন্ধু বিপদে কেম কখন হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না…

      কামরুল, তোমার (তোমাদের) গপ্পো আমি জানি 😀 😛 😀 😛 ।
      :salute: ব্রাদার।


      Life is Mad.

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।