কিছু দৃশ্য, যা গল্প হতে পারত

(একটা প্রেমের গল্পের প্লট ঘুরছিল মাথায়, আজকে সাইজে আনলাম, পড়ুন, মন্তব্য করুন এবং অন্যকে পড়তে ও মন্তব্যে উৎসাহীত করুন 😀 )

১।

সাব্বির স্যারের মাথার চুল গুলো একদম নরম পালকের মত, সিল্কি, অনেকটা বাচ্চাদের চুলের মত। স্যারের অভ্যাস ছিল বীজগনিতের অংক করার ফাঁকে ফাঁকে নিজের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়া। এলোমেলো আগোছালো চুল গুলো এত সুন্দর লাগতো তখন, মনে হত চুলে আগুল চালিয়ে এলোমেলো করে দেই কাশফুলের মত করে।
স্যারের আর একটা স্বভাবের কারনে তুই আমার উপর খুব রেগে গিয়েছিলি। স্যারের অভ্যাস ছিল পাশের ছাত্র-ছাত্রীর খাতা নিজের কাছে টেনে এনে টানা অংক করে যাওয়া। বিপত্তি ঘটলো সেই দিন, যেদিন স্যার তোর খাতা টেনে অংক করতে গিয়ে দেখলো খাতায় টানা দুই পৃষ্টা জুড়ে তোর নাম লিখে রেখেছি আমি।

“বড়ই বিব্রতকর অবস্থা, স্যারের কাছে তো বটেই, বন্ধুদের কাছেও” যদিও এটা বলার সময় তোকে বিব্রত মনে হয়নি আমার।

২।

তোর সংগে বেশ ভালই জমেছিল ডায়েরি নিয়ে খেলাটা। আমাদের দুই জনের ছিল একটাই ডায়েরী, ভাগাভাগি করে লিখতাম। কলেজে যাবার সময় আমি নিয়ে যেতাম, ছুটিতে এলে তোকে দিতাম। সেই অর্থে ডায়রীটা আমার কাছে থাকত প্রায় নয় মাস, তোর কাছে মাত্র তিন মাস।

আমি নয় পৃষ্টা লিখলে তুই তিন পৃষ্টা তো লিখবি?

কিন্তু তুই তিন লাইনও লিখতি না। কৈফিয়ত দিয়েছিল এই বলে “ভালো লিখতে পারিনা জন্য লিখিনা”। অনেক দিন পর্যন্ত আমি এটাই সত্য জানতাম, তুই লিখতে পারিস না।

৩।

প্রথম পরিচয়টা মনে আছে তোর-আমার? আমি তোকে একটা বাঁশ পাতার খাতা উপহার হিসাবে দিয়েছিলাম মাসুমের মাধ্যমে। কারন তুই আমাকে দেখতে চেয়েছিলি। মাসুম ছিল তোর আর আমার কমন বন্ধু, তোর ছোটবেলার আর আমার বালক বেলার। মাসুম প্রেম করত ধর্ম-কুঠি লেনের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার সংগে। আর করবে নাই বা কেন, সেই মেয়েটা যে ওর একদম ছোট বেলার খেলার সাথী, “ন্যাংটা কালের দোস্ত”, মাসুম বলত। আর সুন্দরীদের উপরে পাড়ার মাস্তানরা একটু অভিভাবক সুলভ ভাবেই দেখে রাখে, খোজ খবর নেয়, কি করে, কার সাথে মেশে। পাড়ার একটা মান সম্মান আছে না? মাসুমও প্রেম করতে গিয়ে এই রকম এক পাড়াতো অভিভাবকের ধমক খেল, এটার সমাধান করে দিলাম আমি, আর এর বিনিময়ে তোর কাছে হিরো হয়ে গেলাম। তোর মা তোকে অনুমতি দিল “ এ রকম একটা ছেলের সংগে বন্ধুত্ব হতে পারে তোমার” বলে। তুই ডাকলি আমাকে, আমি দেখা না করে উপহার দিলাম বাঁশপাতার খাতা। এইতো, এভাবেই।

৪।

মেয়েদের ব্যাপারে বরাবরই একটু উন্নাসিক ছিলাম। অনেক “নায়ক নায়ক ভাব” ছিল নিজের ভিতরে, এমন নায়ক, যার ছবিতে নায়িকার দরকার নেই একদমই। ড্যাম-কেয়ার। তবুও তোর সংগে কথা বলে ভালো লাগলো, কারন তোর সাবলীলতা, কোন মেয়েকে এত সাবলীল দেখিনি আমি এর আগে। বেশ একটা কেয়ারিং ভাব সব সময় ঘিরে থাকত তোর চারপাশে।

কিংবা এগুলো কিছু নয়, তোকে ভাল লাগার পিছনে এগুলো কোন কারনই নয়, শুধু ভালো লেগে গেল, ব্যাস।

৫।

আমরা আসলে ছিলাম তিনজন, নোবেল সহ। যেহেতু আমি, মাসুম তোর বাসায় আড্ডা দিতে যাই, এটা খুব সাধারন ব্যাপার যে নোবেলও যাবে তোর বাসায়। কারন আমরা তিনজন, ছুটিতে এক সংগেই ঘুরতাম।

এখনো মাঝে মাঝে হিসাবের খাতা উল্টাই, আমরা কেন তিনজন এক সংগে ঘুরতাম? নোবেল না থাকলে কি কি ক্ষতি হত আমাদের, আর লাভের খাতা থেকে কেটে দিতে হত কোন গুলো? প্রায়ই হিসেব করি, কিন্তু কোন দিনই হিসাব মিলেনি। মিলবেও না মনে হয় আর। দেখা যাক।

৬।

নোবেল তোকে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছিল, এটা তুই জানার আগেই আমি জানি, কারন তোকে চিঠিটা আমার পাশে বসেই লিখেছিল সে। আমি তোকে বলেছিলাম, এটাকে গুরুত্ব না দিতে, আমি বরং আমার ব্যাপারে তোকে ভাবতে বলেছিলাম। আমি জানতাম নোবেলের দিকে ঝুকে যাচ্ছিস তুই, আমি জেনে বুঝেই তোকে এটা করতে মানা করেছিলাম। তুই ধরে নিয়েছিলি, আমি তোর নজর সরিয়ে নিচ্ছি নোবেলের দিক থেকে আমার দিকে, ভংয়কর স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি তোর ব্যাপারে।

তোর ধারনা ভুল ছিল। কারন তুই প্রথম মেয়ে নয়, যাকে নোবেল রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছিল, আমার ধারনা তুই মনে হয় প্রথম পাচঁজনের মধ্যেও পড়বি না। তবে তোর আত্ম-বিশ্বাস ছিল প্রচুর, আমাকে বলেছিলি, “নোবলের আশ্রয় দরকার একটা, আমি ওর আশ্রয় হতে চাই” ।

নোবেল খুব ভাল ছেলে, যখন ভালবাসে, তখন মন-প্রান উজার করে ভালোবাসে, কিন্তু বাস্তবতা হল, ওর ভালোবাসার ক্ষেত্র বদলায়। ও আশ্রয় নেয় ঠিকই, আবার বদলেও ফেলে তা খুব সহজেই। বাঁধনে জড়ায় না।

তোর চাওয়াটা পুরোটাই উলটো ছিল, তুই বাঁধনে জড়াতে পছন্দ করতি।

তোরা দুজনেই ছিলি আমার খুব কাছের মানুষ, তোদের সবই আমি বুঝতাম। কিন্তু আমি বুঝাতে পারিনি তোকে, তুই ভুল করছিস। তুইই বরং ভেবেছিলি, আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছি।

৭।

তোর আর আমার ব্যাপারটা নোবেল ধরতেই পারেনি। তবে এটুকু বুঝেছিল, আমি তোকে কোন এক কারনে এড়িয়ে চলছি। ঠিক কি কারনে জানিনা, “সম্পর্ক চুকেবুকে গেছে” এটা তোকে জানানোর দিন নোবেল আমাকে ওর সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল তোদের বাসায়। আমি খুব আগ্রহ ভরেই সেদিন গিয়েছিলাম। আমি দেখতে চাইছিলাম, নোবেল যখন তোকে প্রত্যাখান করবে, তখন তোর মানসিক অবস্থা কেমন হবে? তুই কি হাসবি খুব আমার দিকে তাঁকিয়ে?

আমি তোর মানসিক ক্ষমতা দেখতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুই পাশ করবি। তুই করিসনি। বরং প্রথম তোর চোখ ভরা কান্না দেখলাম। আর সেই প্রথম আমি তোর বাসায় পেট ভরে খেলাম। নোবেল মনে হয় তোকে আগেই বলে রেখেছিল সে যাবে তোর বাসায়, অনেক কিছু বানিয়েছিলি তুই। অনেক নতুন নতুন খাবার। সাসলিক প্রথম সেদিনই খেলাম, তোর হাতের বানানো। আর মিষ্টি। খুব মজা লেগেছিল আমার।

আমি অনেকদিন গিয়েছিলাম তোর বাসায়, কোনদিন তুই এত যত্ন করে খাবার সাজিয়ে দিসনি আমাকে। সেইদিন বুঝেছিলাম, তুই আসলে নোবলকে আশ্রয় দিতে চাসনি, বরং তুইই আশ্রয় চেয়েছিলি নোবেলের কাছে।

সেই অর্থে তুই আমাকে অজস্র মিথ্যা বলেছিস। আমি কিছু মনে করিনি, কারন ভালবাসায় মিথ্যা বলাতে কোন পাপ নেই।

তবে তুই মিথ্যা কথা গুলো আমাকে না বললেও পারতি।

৮।

তুই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস, তখনও একবার গেলাম। এবারো নোবেল নিয়ে গেল। আমি তখন বেকার, কোথাও ভর্তি হতে পারিনি, অফুরন্ত সময় হাতে।

না গেলেও পারতাম। তবুও গেলাম, তোর ভালোবাসার গভীরতা দেখতে। অস্বীকার করবো না, নোবেলের প্রতি তোর অনুরাগ দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তোকে আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল, আবার রাগও হচ্ছিল খুব, তুই আমার এত কাছের বন্ধু হয়ে কেন একটা ভূলের পিছনে বারবার মাথা খুটছিস। তখন আমি তো শুধুই তোর বন্ধু, আর কিছুতো না। তোর ভালবাসা আমার কাছে অতীত।

আর একটা কারন ছিল যাবার। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তুই কত কষ্টে আছিস। আমি যতটুকু কষ্টে আছি তার কাছাকাছি গিয়েছিস কিনা? গিয়েছিলাম তোকে দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে।

ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল আমাদের। বগুড়ার একটা হোটেলে ছিলাম আমি আর নোবেল। নোবেল বার বার বলছিল তোর কথা, আমাকে অনুরোধ করছিল ব্যাপারটা একটু দেখতে।

আমি আগ্রহ দেখাইনি আর। আমি জয়ী হতে ভালবাসি। খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। জয়ের কাতারে আমি একাই দাড়িয়েছিলাম। নতুন করে আর মাঠে নামতে ইচ্ছে করেনি।

৯।

আমরা তিনজন ভালই আছি। মাসুম বিয়ে করেছে তার শৈশবের খেলার বন্ধুকে, নোবেল ব্যস্ত নতুন আশ্রয়ে। বেশ আছি আমিও, চাকুরী, সংসার, পড়াশুনা।

কেমন আছিস তুই?

৯,২১৪ বার দেখা হয়েছে

১১৬ টি মন্তব্য : “কিছু দৃশ্য, যা গল্প হতে পারত”

  1. গিয়েছিলাম তোকে দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে।

    এই জায়গাটা ভাইয়া চরম লাগল...
    এই রকমের অনুভূতি মনে হয় সবার মাঝেই কম-বেশি, সজ্ঞানে-অজ্ঞানে কাজ করে তাইনা?

    আমরা তিনজন ভালই আছি। মাসুম বিয়ে করেছে তার শৈশবের খেলার বন্ধুকে, নোবেল ব্যস্ত নতুন আশ্রয়ে। বেশ আছি আমিও, চাকুরী, সংসার, পড়াশুনা।

    কেমন আছিস তুই?

    এইখানটায় এসে কেমন যেন লাগল... ভিতরটা ফাকা ফাকা বোধ করলাম...

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    নোবলের আশ্রয় দরকার একটা, আমি ওর আশ্রয় হতে চাই” ইরাম নোবেল টাইপ পুলার আশ্রয় হইতে চাওয়া একজনের কাছেই লাইফের পরথম বড় ধরণের ছ্যাঁকাটা খাইছিলাম :(( ।পরে সেই নোবেলের আশ্রয় যখন বদলায়া গেল তখন তার কাঁচুমাচু প্রত্যাবর্তন দেইখা সত্যি বলতে কী,বেশ আনন্দই পাইছিলাম :)) ।

    আমারে স্যাডিস্ট কন,আরো কন যে আমি উনারে "প্রকৃত" ভালবাসিনাই ইত্যাদি ইত্যাদি-কিন্তু জাইনা শুইনা ফাজিল পোলার আশ্রয় হইতে চাওয়া মাইয়ার পরিণতিতে আমি যদি কই যে কষ্ট পাইছি তাইলে সেইটা ডাহা চাপা মারা হইবো।এইদারে জেলাসীও কইতে পারেন-কি আমার মত পুলা থাকতে ওই বেটারে চুজ করল কেন( x-( ) টাইপ---

    ফয়েজ চাচা-কত্ত কিছু যে রিলেট করতে পারলাম... :shy: :shy: :shy:

    জবাব দিন
  3. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    বস,
    সালাম।
    এক্কারে পাথরায় (rocking) ফেলসেন কইলাম। 😛

    জোস লাগসে - শুরু থেকে চলন এবং শেষটুকু। চমৎকার ফ্রেমে বন্দী করেছেন তিনটি প্রান আর বয়ে চলা জীবন।
    :clap:

    আপনের গল্পটা পইড়ে এরপর কয়েকটা আনবিক-পারমানবিক পদক্ষেপ নিমু ভাবতাছি।
    :salute:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এলোমেলো আগোছালো চুল গুলো এত সুন্দর লাগতো তখন, মনে হত চুলে আগুল বুলিয়ে এলোমেলো করে দেই কাশফুলের মত করে

    আমি শুরুতে ভাবছিলাম এট্টা টিচার-ইস্টুডেন্ট পেরেম কাহিনী হৈব(নীতিগত ভাবে আমি এইটার ঘোর বিরোধী)

    অফ টপিক-বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘ বিরতির পর আপনেদের মাস্ফ্যু এইবার আবার নসুতে টিচিং এসিস্টেন্ট হিসাবে ঢুক্তেছে :shy:

    জবাব দিন
  5. এহসান (৮৯-৯৫)

    অসাধারণ গল্প। ছ্যাঁকা খাইয়াও নায়ক সাহেব বেশ ভালো আছে ভাবতেই ভালো লাগলো। ৫তারা।

    একটা ব্যাপার বেশ কিছু দিন ধরে বলি বলি করে বলা হচ্ছে না... এর আগেও আরেকটি পোস্টে লক্ষ্য করে ছিলাম। ভূল বানানটা ভুল।

    জবাব দিন
  6. তারেক (৯৪ - ০০)

    দুইটা পয়েন্ট মাথায় আসলো প্রথমবার পড়ার পরই।
    গল্পের নায়কের ভালবাসার গভীরতা আসলে কতটুকু? নোবেল বাবাজীর হাতে চলে যাওয়া আটকানোর জন্যে চেষ্টায় কতটুকু জোর ছিলো?
    আমার কাছে কিন্তু সেরকম কোন প্রচেষ্টা চোখে পড়লো না। এবং এ কারণেই গল্পের একদম শেষটুকুর বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেছে অনেক। যারে আমি চাইই নাই তেমন কইরা, তার জন্যে আমার বিরহ বোধের উৎস কোথায়?

    হবে না ফয়েজ ভাই। লেখার গতিময়তা দিয়া পাঠক ভুলাইবেন, এই দিন আর নাই।
    আবার লিখেন। 😀


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  7. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    হিন্দী সিনেমার কাহিনী হিসেবে খুব ভালো।
    গল্প হিসেবে মোটামোটি।

    শুধু বলার ঢং টা ভালো লাগছে, কিন্তু কাহিনীতে নতুনত্ব নাই। 🙁


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
      • কামরুল হাসান (৯৪-০০)

        ঠিক ধরছেন। 😀
        আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের রচনা সমগ্র পড়ছি। সেখানে একটা বিরাট অংশ জুড়ে সমালোচনার কথাবার্তা আছে। 🙂


        ---------------------------------------------------------------------------
        বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
        ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

        জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

          @ কামরুল

          হ্যাঁ ঠিক বলেছ। ত্রিভূজ প্রেমের খুব সাধারন একটা প্লট এটা। একই রকম প্লটে আরও কিছু গল্প এর আগেও সিসিবিতে এসেছে।

          আমি একটু ভিন্নভাবে বলতে চেয়েছি এটা সত্যি। দৃশ্য হিসাবে কল্পনা করে করে। বর্ননা মূলক ভাবে প্রথম পুরুষে। কিন্তু একটা জিনিস পারিনি, নায়কের মধ্যে ট্র্যাজেডিটা আনতে পারিনি পঞ্চাশ ভাগও।

          দেখা যাক পরে এটা কাটিয়ে উঠতে পারি কিনা।


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
  8. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    বস, আপনার গল্পটা জটিল লাগলো। কিন্তু গল্পের আপনাকে পছন্দ করতে পারলাম না। আমার মনে হয় না, সত্যিকারের ভালোবাসাতে কেউ এইভাবে ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দিয়ে আসতে পারে।

    জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        এই বেলা আমার ব্যক্তিগত মতামত বলি।আমার সাথে কাউকে একমত হতে বলছিনাসশুধু বন্ধুভাবে ভাগাভাগি করছি অনুভূতিগুলো।

        ভালোবাসাটা যদি খাঁটি হয় তবে তা কেন জানি এক অদ্ভুত ধরণের অভিমানের জন্ম দেয় ভালোবাসার মানুষের মনে-আর এ কারণেই ভালবাসার অপমান অথবা অবহেলাকে সে ক্ষমা করে দিতে পারেনা কোনভাবেই।আর পারেনা বলেই সাতঘাটের জল খেয়ে ভালোবাসার মানুষটি যখন ধরা দেয় হাতের নাগালে-তখন পুরোন দিনের অবহেলার স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হয়না-ভালবাসাটুকুও উত্তাপ হারায়।"যখন তোমার জন্যে এক হাতে সূর্য আরেক হাতে চাঁদ এনে দিতে চাইতাম তখন তুমি আমায় হেলায় ফেলে চলে গিয়েছ অন্যের কাছে আর আজ তার কাছে পদাঘাত পেয়ে আশ্রয় চাইছ আমার কাছে-আমি এত সস্তা নই"এরকম একটা চিন্তাধারা কাজ করে।এবং আমার অভিজ্ঞতা বলে-ক্যাডেটদের ভেতরে এই "ইগো" বা আত্মসম্মানবোধটা এতই প্রবল থাকে যে সেটা থেকে বেরিয়ে শুধু ভালবাসার খাতিরে সবকিছু উপেক্ষা করতে তার অস্তিত্বে বাধে।

        ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে আমি থাকতে পারব কিন্তু ভাঙ্গা মেরুদন্ড নিয়ে নয়-ক্যাডেট স্বজাতির ভেতরে এই বোধটা প্রবল ভাবেই কাজ করে বলেই আমার ধারণা।হয়তো এটা ভুল,ভালবাসা এসব ছোটখাটো ব্যাপার উপেক্ষা করতে শেখায় এমনটিও হতে পারে,তবে আমার ক্ষেত্রে নয় অন্ততঃ।এটা ভালবাসার ব্যর্থতা নয়,আমার সীমাবদ্ধতা।

        অনেক আউলা ঝাউলা বইলা ফেললাম কেউ মাইন্ড খাইয়েন না।তারেক ভাইয়ের লেখায় ভাল কমেন্ট করার যোগ্যতা থাকলে আমি "আবার খাপো মাস্ফ্যূ" হইতাম না 😀

        জবাব দিন
          • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

            @ মইনুল

            আমি নায়কের মধ্যে একটা কঠিন মানসিকতা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম। না মচকানোর মত একটা ব্যাপার।

            আর একটা ব্যাপার, সত্যিকারের ভালোবাসা বলেই হয়ত ছেড়ে আসতে পারে, এইভাবে ভাবত পার, কিনবা অন্যভাবে, আমি তোমাকে ছাড়াও চলতে পারি। যা ভাব আরকি। মাস্ফুর মত করে বলি

            ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে আমি থাকতে পারব কিন্তু ভাঙ্গা মেরুদন্ড নিয়ে না

            তবে নায়কের ট্র্যাজেডিটা ফুটাতে পারিনি, এনিওয়ে


            পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

            জবাব দিন
            • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

              আসলে বস, ভালোবাসা আর যুদ্ধে সব জায়েজ - এই টাইপের কথা প্রচলিত থাকলেও আমার কখনো ভালোবাসা = যুদ্ধ মনে হয়নি। আমার ধারনা, ভালোবাসার ক্ষেত্রে দুই পক্ষই জয়ী হয়।
              আসলে আমার সব সময় মনে হয়েছে, কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে, তার চিন্তা জুড়ে থাকে, অন্য জন কিসে সুখী হবে। আমার বন্ধুরা ভুল করে, আমি ক্ষমা করে দেই। কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ ভুল করলে আমার ইগো আমার সামনে এসে দাড়ালে আমার কাছে মনে হবে (ব্যক্তিগত চিন্তা) আমার ভালোবাসাতে ভুল ছিলো। তার পাশে যখন আমার সত্যিকারের অর্থেই থাকা দরকার, তখন যদি ইগোর জন্যে থাকতে না পারি, আমার মনে হয় খারাপ লাগবে।

              গল্পের ফয়েজ ভাই নোবেল ভাইয়ের আগে না পরে নাকি সমসাময়িকভাবে নায়িকার প্রতি নিজের অনুরাগ প্রকাশ করেছেন বা ইঙ্গিত করেছেন, ব্যাপারটা পরিস্কার না। আর নারীচরিত এর ব্যাপারে আমার তেমন ভালো আইডিয়া নেই, তবে যতদুর মনে হয় বুঝি, তাতে মনে হয়েছে, নায়িকা হয়ত আশা করেছিলেন তার ভালোবাসা দিয়ে নোবেল ভাইকে বহুমুখী থেকে একমুখী বানাতে পারবেন। মাঝে মাঝেই তো মেয়েরা এমন করে।

              আবার দেখেন বস, খারাপ পথে থাকা কোনো ছেলে যদি কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে প্রত্যাখ্যাত হয়, তখন মাঝে মাঝে আমরা ছেলেটার প্রতি সমবেদনা অনুভব করি, যে ইসসস - ভালোবাসার আশ্রয় পেলে হয়ত ছেলেটা ঠিক হয়ে যেতে পারত। কিন্তু মেয়েটা যদি ছেলেটাকে গ্রহন করে পরে প্রতারিত হয়, মেয়েটাকে -- (মহিলা) গাধা কোথাকার !!! ভাবতে দেরী করিনা।

              আর একটা ব্যাপার, সত্যিকারের ভালোবাসা বলেই হয়ত ছেড়ে আসতে পারে, এইভাবে ভাবত পার, কিনবা অন্যভাবে, আমি তোমাকে ছাড়াও চলতে পারি। যা ভাব আরকি।

              আসলে বস সত্যিকারের ভালোবাসাটাই তো কনফিউজিং ব্যাপার। (কনফিউজিং এর ভালো বাংলা কি??) এখনো এইটার সংগাটাই বুঝতে পারলাম না। তবে আমি যাকে ভালোবাসি সে, যে কারনেই হোক কষ্টে আছে, কিন্তু আমি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কিছুই করলাম না, এই ব্যাপারটা মাথায় নিয়ে চলতে, আমার কাছে আমার ইগো হারানোর চাইতে বেশী কষ্ট হবে। কি জানি, ফ্যান্টাসি বই বেশী পড়ি দেখেই হয়ত এই ধরনের চিন্তা ভাবনা চলে আসে, বাস্তবতা মনে হয় অন্যরকম।

              জবাব দিন
            • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
              তবে নায়কের ট্র্যাজেডিটা ফুটাতে পারিনি,

              আসলেই বস, গল্পের আপনাকে নায়িকার কষ্টে তেমন একটা দুখী মনে হয়নি, কেবল একটা লাইন ছাড়া -

              জয়ের কাতারে আমি একাই দাড়িয়েছিলাম।

              গল্পের আপনি যে আসলে হেরে গিয়েছেন, এইটা ফোটে নাই ... :frontroll: :frontroll: :frontroll:

              জবাব দিন
  9. সামি হক (৯০-৯৬)

    ফয়েজ ভাই, গল্পটা পড়ে ভালো লাগলো খুব, আর যেই দূর্বলতা গল্পটার তা আপনি নিজেই বলে দিলেন যে ছেলেটার কষ্টটা ততো ফুটে নাই। আর শেষের লাইনটা দেখে বহুত আগে আমি একটা কবিতা লিখসিলাম তার শেষ লাইনটা মনে পড়ল-

    'তারপর এক সময় আমরা সবাই ভালো থাকি...'

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।