আগের কথাঃ লেখাটা ছিলো এই ব্লগে আমার প্রথম লেখা। তখন বাংলা টাইপ প্রায় পারতাম না। তাই লেখাটা বাংলিশ এ দিয়েছিলাম। সম্ভবত জিহাদ কষ্ট করে বাংলায় টাইপ করে দিয়েছিলো। আর যেহেতু লেখালেখি থেকে অনেকদিন দূরে ছিলাম তাই বেশি লিখতে পারি নাই। হঠাত লেখাটা চোখে পড়লো। মনে হলো অনেক কিছু লেখার ছিলো আরো। তাই কিছু অংশ সংযোজন করে আবার দিলাম।যারা পড়েন নাই, তাদের জন্য বিশেষ করে।
লেখার প্রেক্ষাপটঃ হঠাৎ খুঁজে পেলাম আমার পুরোনো একটা লেখা।এটা লিখেছিলাম কলেজ থেকে বের হবার দুই দিন আগের রাতের বেলা।হঠাত বের হবার আগে ভাব চলে আসছিলো। ওই ভাব থেকেই এই লেখাটা লেখা। নামগুলা একটু বদল করলাম। নামে কি এসে যায়।
ঘড়ি বলছে এখন রাত বারোটা বেজে দশ মিনিট।এই চুপচাপ রাতে কোথাও একটা সুর বাজছে।বেদনার এবং বিদায়ের।বারবার যা মনে করিয়ে দিচ্ছে কলেজে আমাদের থাকবার দিন ফুরিয়ে এলো বলে।সত্যিই ভাবতে অনেক অবাক লাগে কেমন করে ছয় ছয়টা বছর পার করে দিলাম।সেই ক্লাস সেভেনে এসেছিলাম।কি সহজ সরল একেকটি মুখ।কত হাসি,কত দুঃখের স্মৃতি।যাবার বেলায় একে একে সব কিছু মনে পড়ছে।
ক্লাস সেভেনে থাকতেই শিখেছিলাম CCC মানে Comilla Central Custody.সত্যিই প্রথম এই কারাগারে আসার পর ক্লাস সেভেনে কতই না মন খারাপ করেছি কেন এখানে আসলাম ভেবে।নিজেকে মনে মনে কতোবার গালি দিয়েছি।মনে পড়ে ক্লাস সেভেনে একেকটি দিন একেকটি বছর মনে হতো।টার্ম যেন আর শেষ হতেই চাইতোনা।শুধু কাউন্ট ডাউন চলতো কবে আবার বাসায় যাবো।তার উপর সকাল বিকাল লেফট-রাইট।বাসায় যাবার আগের দিন যেন বাতাসে ভাসতাম।আবার বাসা থেকে আসার কয়েকদিন আগে থেকে শুরু হত “মন খারাপ পর্ব”।কিছু ভাল লাগতোনা তখন।আবার কলেজে এসে প্রথম রাতে চলতো সবার ভ্যাকেশন এর অভিজ্ঞতা শেয়ারিং।কে কয়টা পারবতী এর সাথে কি করেছে সেই হিসাব।তখন আস্তে আস্তে আবার বাসার কথা ভুলে যেতাম।
মনে পড়ে যায় আমাদের একনায়ক ফর্ম লীডার রনির কথা।ও যে তিন মাস ফর্ম লীডার ছিল আর একনায়কতন্ত্র চালিয়েছিল আমাদের ওপর।আরো মনে পড়ে আরিফ কিংবা খালেক এর জ্ঞানী কথা,আসিফ এর না বুঝেই হাসি,সাগর এর মাহিন ম্যাডামের প্রতি দূর্বলতা,অনিক এর নিজের জোকস এ নিজেই হাসা।মনে আছে একবার ক্লাস সেভেন এ রইস স্যার ছিলেন আমাদের ফর্ম মাস্টার। এক দিন সাগরকে ধরে কি মারটাই না দিলেন।ওর ফল্ট ছিল ও মারুফকে জড়িয়ে ধরেছিল।মনে পড়ে, অনিক ঘুমটাকে একটা আর্ট এর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।ওর একদম কাছে গিয়েও ঠিকমত না দেখলে বোঝা যেত না ও ঘুমাচ্ছে কীনা।আর আমার রুম মেট এর নাম তো ক্লাস সেভেন থেকেই ছিলো “স্লিপিং প্রিফেক্ট”। আরেকটা মজার জিনিস হতো ক্লাসে যখন কুমিল্লা বনাম এন্টি কুমিল্লা ডিবেট হতো।সেকি ডিবেট, যাতে কেউ কখনো হেরেছে বলে মনে পড়ে না? (কি বলস তারেক?)।ও আরেকটা ডিবেট হতো, বলিউড এর সোনালী ফ্যান ক্লাব ভার্সেস আদার্স।
মনে পড়ে হাউসএর ১৮ জনের কথা।নানাসময়ে রুম,করিডোর অথবা কমনরুমে টেস্ট,ওয়ান ডে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর কথা।মনে পড়ে নানা টিভি প্রোগ্রাম এর সময় ডাইনিং হল থেকে কি দৌড়টাই না দিতাম।তখন খালি চারিদিক থেকে শোনা যেত-”তোর পাশে আমি”।কেউ কোন গল্পের বই আনলে মুহূর্তেই সিরিয়াল হয়ে যেত।ভুলতে পারবোনা-”মুই তোয়ারে হোচপাং”। চাকমা বন্ধু প্রনবের কাছে থেকে শেখা একমাত্র চাকমা ভাষা।বাংলাতে যার অর্থ দাঁড়ায়- “আমি তোমাকে ভালোবাসি”
তমাল এর সাথে প্রায় ছয় বছর রুমমেট ছিলাম।কিভাবে কিভাবে যেনো আমাদের রুম পরিবর্তন হতো না। আর আমাদের জন্য সেটা ছিলো জোস। কারন আমরা কলেজে যাবার আগে থেকেই ময়মনসিং হে একসাথে কোচিং করতাম। আমরা বোধহয় ৬ বছরে ১টা টার্ম শুধু রুম মেট ছিলাম না।এমন কি কলেজ থেকে বের হয়ে কোচিং লাইফ ও আমরা একসাথে থেকেছি।
আরেকটা মজার লাইফ ছিল ক্যান্ডিডেটস লাইফ।লাইফ এ ফার্স্ট পাবলিক পরীক্ষা।সে কী পড়াশুনা,রাত জেগে পড়ার চেয়ে যেন গরম পানি করে হরলিক্স খাওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।পড়াশুনা বাদ দিয়ে কার্ড খেলা আর কয়টা স্ট্যান্ড করবো তার হিসাব নিকাশ করা।আরেকটা মজা হতো কার রুম কত অপরিস্কার সেই কম্পিটিশন করা।তবে এই ব্যাপারে ৩৪ নাম্বার এর সাথে কেউ পারতোনা।এই লাইফ এ তমাল অবশ্য ভালো পেইন দিয়েছে। কারন রাতে যখন আমাদের পড়া শেষ হতো, তখন সে ঘুম থেকে উঠে খুব মুড নিয়ে পড়তে বসতো। আর পড়ার আয়োজন করতে করতে আবার ঘুমিয়ে পরতো।
কখনো ভুলবোনা কলেজ এর pac-08 অথবা শেল এর কথা।কলেজে যেদিন ফার্স্ট শেল আসে সেদিন আমিই প্রথম ইডি খেয়েছিলাম।তাও আমার প্রথম ইডি।
যাবার বেলায় সবকিছুই মনে পড়ছে।আর কয়েকদিন পর আর কখনো সবাই একসাথে হবোনা।কেউবা বিদেশে চলে যাবে,কেউ যাবে আর্মড ফোর্সে, আবার কেউ ভার্সিটির রোমান্টিক হিরো হবে।এই হাউস বা রুম এ আমরা থাকবোনা আবার এগুলো খালিও থাকবেনা।আসলে জেলে থাকতে থাকতে জেলের জন্যও মায়া হয়ে যায়।তাইতো যাবার বেলায় সবকিছুই মনে পড়ে।যাবার সময় কষ্ট হবে,হয়তো কাঁদবো।তারপর ব্যস্ত হয়ে যাবো অন্য জীবনে।তাইতো এই মুহুর্তে রুম মেটের ঘুম বা পাশের রুম এর ক্রিকেট খেলাটাকেও পড় আপন লাগছে।বড় মায়া লাগছে এই বিছানা আর লকারটাও জন্যও।
হুড়মুড় করে ভেসে এল হাজারটা স্মৃতি।রবিন ভাই, নস্টালজিক করে দিলেন! 🙁
সিসিবি তে জয়েন এর পর থেকে আমি সারাদিন ই নষ্টালজিক থাকি
🙁 😕 🙁
অশ্রুসজল চোখের ইমো চাই 🙁 🙁
নস্টালজিক করা লেখা।
ভালো লাগলো :clap: :clap: ।
Life is Mad.
ধন্যবাদ
:(( :(( :((
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
:(( :(( :(( :(( :(( :(( :((
নস্টালজিক করে দেয়া লেখা।
তোদের হাউসের কমন রুমের ক্রিকেটটা খুব মিস করি।
মিস করতেই হবে তানভীর ভাই। 😀
দোস্ত, সেই কমন রুম, সেই ক্রিকেট খেলা, আহ
রবিনভাই এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশ চিন্তা করতাম..আর ভাল লাগেনা.....
লেখা ভাললেগেছে :clap: বিধায় মন খারাপ হয়ে গেল 🙁
আশরাফ ভাই... পাঁচ বছর পরে কাহিনিগুলো একই ছিল।
শুধু মানুষগুলো আমরা ছিলাম। :dreamy: :dreamy: 🙁
সাবাস, ট্রাডিশন ধরে রেখেছে
এই জন্যই আমরা সময় আর কলেজ ভেদেও এতদ্রুত এক হয়ে যাই। আমাদের সবার কাহিণী সেইম, শুধু দৃশ্যপট আর চরিত্র গুলি ভিন্ন।
মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। রবিন মিয়া, লেখাটা খুব ভাল লাগল। :clap: :clap: :clap:
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
কলেজ থেকে বের হবার আগে খুব মন খারাপ করে লেখা
অনিক আর আমি তো পুরা ট্রু কপি। পুরা ক্যাডেট লাইফে, কি ক্লাস কি প্রেপ, ঘুমাইতে গিয়া ধরা খাইছি মাত্র একবার, তাও প্রিন্সিপাল এমদাদ স্যারের কাছে 🙁
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আপ্নারে আমার রুম মেট এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়
আমাদের ব ক ক কেও বলা হত বরিশাল কেন্দ্রিয় কারাগার
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
পুরাপুরি নিজের কাহিনিই মনে হইলো।
রবিনরে :salute: , পুরাই নস্টালজিক কইরা দিলিরে। এই গভীর রাইতে চোদ্দ-পনের বছর আগের হাজার হাজার স্মৃতি মনে করায়া দিলি
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ভাই রে,এই সিসিবি আসার পর থেকে সারাদিন কলেজের কথাই মনে পড়ে
ভাই কিছু নাম আর স্থান বদলে দিলে সকল ক্যাডেটের কাহিনি কিন্তু একই।
একমত
আমিও 🙁 আমি আবার ক্যাডেট কলেজে যাপো :((
চল যাই
:just: কপি!! JCC
জীবনে এই একটা সময়ের জন্য আমি চিরকাল আফসোস করবো। শেষ টার্মটা কলেজে আর কাটানো হয়নি। ধুর, হুট করে পুরানো কথা আবার মনে পড়ছে।
রবিন ভাই, দারুন লিখেছিলেন। :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..