(লেখাটি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মামুন রশীদ ভাইয়ের। আজকের সমকাল ও ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ক্যাডেট কলেজের যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা।)
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ছেড়েছি প্রায় তিন দশক আগে। আমার অনেক সিনিয়র, সহপাঠী ও জুনিয়র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন কিংবা এখনো করছেন। বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি অংশ নিয়েছে এবং কয়েকজনের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তর। স্বধীনতার জন্য বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অনেকে পেয়েছেন নানা পদক ও সম্মান। আমি নিশ্চিত, আরো অনেকে এ পথে চলবেন অকুতোভয়ে। তারা আমাদের চলার পথেও প্রেরণা হয়ে আছেন। কিন্তু স্বাধীনতার তিন যুগেরও বেশি সময় পর আমাদের চেনাজানা প্রিয় মানুষদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হবে, গণকবরে গিয়ে তাদের সন্ধান করতে হবে, এ ভাবনা একবারের জন্যও আসেনি। অথচ এটাই ঘটেছে কালো বুধবারে। নির্বিরোধী সেনা অফিসার, বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশু, বয়ষ্ক দম্পতি এবং সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য আমরা আজ শোকে মুহ্যমান। আমাদের ক্যাডেট কলেজের ২০ জন সাথীকে আমরা হারিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমরা এক রুমে থেকেছি। প্যারেড-পিটিতে অংশ নিয়েছি। খেলেছি ফুটবল ও ভলিবল। নদী-পাহাড়-বনে গিয়েছি ভ্রমণে। আমাদের শিক্ষাজীবনকালে পেয়েছি কর্নেল এরশাদকে। তিনি ছিলেন ভদ্র ও বিনয়ী এবং একটু লাজুক ধরনের। আমার এক বছরের জুনিয়র কিন্তু বন্ধু লে· কর্নেল কায়সার ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ম্ব। মেজর হাসান ফুটবল খেলতেন দারুণ। কিন্তু হায়! তাদের সবাইকে প্রাণ দিতে হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার এবং তাদের কোনো ভুল বা অন্যায়ের কারণে এমনটি ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না। তাদের পরিবারের সদস্যরাও কেউ এটা বিশ্বাস করবে না। একই কথা বলতে পারি রাজশাহী, ঝিনাইদহ, পাবনা ও কুমিল্লা ক্যাডেটদের সম্পর্কে। কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের নাফিজ মোমেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমাকে বলেছেন ক্যাপ্টেন মাজহারের কথা। তিনি সদ্য বিবাহিত। প্রিয়তম স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার সময় করতে পারেননি তিনি। এমনকি ২৫ ফেব্রুয়ারির দরবারে যোগ দেওয়ার জন্য তার ছুটির সময়ও সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল। এমন একের পর এক মর্মস্পর্শী কাহিনী জানতে পারছি এখন আমরা। কেউ প্রথম সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। কেউ সন্তান নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন। কেউ ভাবছিলেন সেনাবাহিনীর দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পরবর্তী জীবনের কথা। কিন্তু সবকিছু পাল্টে গেল কয়েক মুহুর্তে। প্রিয়জনকে হারানোর ব্যথা বড় কষ্টের।
ক্যাপ্টেন মাজহার ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করেন। ২০০০ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সামরিক একাডেমী থেকে কমিশন লাভ করার পর তাকে বিডিআর মহাপরিচালকের এডিসি নিয়োগ করা হয়। তরুণ ও মেধাবী এ অফিসার ছিলেন সবার প্রিয় মুখ। তিন মাসও হয়নি, নুসরাত জাহান বাঁধনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কর্নেল মুজিব, কর্নেল গুলজার, লে· কর্নেল এনায়েত, ব্রিগেডিয়ার বারী, মেজর মোমিন এবং আরো অনেকের ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকালেও আমাদের চোখের পাতা ভিজে যাবে একইভাবে। তাদের হারানোর ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এতে আমরা বেদনাহত হই, একইসঙ্গে হই ক্ষুব্ধ ও যন্ত্রণাকাতর।
আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে হত্যাকান্ডের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। মুষ্টিমেয় উচ্ছৃংখল বিডিআরের আচরণ ছিল ন্যায় ও সুন্দরের বিরুদ্ধে। তারা নিজেরা যে শপথ নিয়েছিল তার বিরুদ্ধে। তারা দেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের জন্য লড়াই করতে সংকল্পবদ্ধ ছিল। সরকার তাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারত। কিন্তু তারা প্রমাণ করেছে যে এর যোগ্য তারা নয়, এমনকি চাকরিরও যোগ্য নয়।
যারা জীবন দিয়েছে, তাদের জন্য আমরা শ্রদ্ধাবনত হই। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা এবং এজন্য প্রিয়জনদের নানাভাবে বঞ্চিত করা- এসব কিছুই এখন অতীত। এমন করুণ মৃত্যুর কোনো সান্স্ন্বনা নেই। একজন ক্যাডেট হিসেবে জানি কত কঠিন একজন সাথী হারানো। অথচ আমরা হারিয়েছি ২০ জনকে। আমার বন্ধু ক্যাডেট লে· কর্নেল (অব·) শাহাদত তার ৫ জন সহপাঠীকে হারিয়েছেন। শুক্রবার ক্যান্টনমেন্টের মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে শিশুর মতো কাঁদতে দেখেছি। মেজর (অব·) হাতেম হারিয়েছেন চারজন কোর্সমেট। তাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছিল না। একই অবস্থা ছিল ডা· রিজভী, প্রকৌশলী আরিফ শাকুর এবং স্থপতি আরিফের। যারা মাতৃভূমিকে বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন তারা নিজের দেশে থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেন না। কিন্তু বন্ধুরা, এটা জেনে রাখ দেশ তোমাদের মনে রাখবে। তোমাদের সাহস ও বীরত্ম্ব আমরা ভুলব না। আমরা তোমাদের অভিবাদন জানাই – ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন! (ওয়াল্কল্ট হুইটম্যানের কবিতা, ১৮৬৫)
লেখকঃ মামুন রশীদ, ব্যাংকার, সাবেক ছাত্র, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, চট্টগ্রাম
গণহত্যার সাথে জড়িত আদেশদাতা ও তার পালনকারী প্রত্যেকের বিচার চাই........ এবং সেটা পাবলিক আদালতের মত ৩০ বছরে হলে চলবে না...... ৩০ ঘন্টারও কম সময়ে হতে হবে
সহমত
বিচার চাই ।
আমি মুর্খ বুদ্ধিজীবিগুলোরও বিচার চাই। যারা এই লুটেরা,খুনী সৈনিক নামের অযোগ্য (যে নিজের দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে তাকে আমি সন্ত্রাসীর অধিকার দিতেও রাজী নই, সৈনিক তো নয়ই) খুনীর কাজগুলোকে "মহান শ্রেনীসংগ্রামের ধারক" বলে অভিহিত করেছিল তাদের বিচারটাও জরুরী। এসব বুদ্ধিজীবিরাই বারবার দেশকে, দেশের মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি টেনেছে।
এদের জিহবাগুলোরও শাস্তি জরুরী।
..................
Life is Mad.
আমার ধারনা এটা কর্নেল ইনশাদ হবে ।
কর্নেল মুজিব, কর্নেল গুলজার, লে· কর্নেল এনায়েত, ব্রিগেডিয়ার বারী, মেজর মোমিন- এদের কেউ এক্স-ক্যাডেট কি-না কেউ জানাতে পারবেন?
কর্নেল এরশাদ নামে কাউকে পেলাম না। এখানে বোধহয় ফৌজিয়ান লেঃকঃ ইনশাদ আমীন হবে।
.
গনহত্যার বিচার চাই.......
as soon as possible.......
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation