ক্যাডেট নম্বর ১৮৬২-অসময়ে হারিয়ে যাওয়া অতি আপনজন(শেষ পর্ব)

[পর্ব-১] [পর্ব-২]
ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবার পর আলাদা হয়নি আমরা একেবারে। বের হয়ে ঢুকে পড়লাম বুয়েট কোচিং এ।কেউ গেল মেডিকেল কোচিং কেউ আই বি এ আবার কেউ বা আর্মি।তাতে কী?সবার কোচিং সেন্টারই ছিলো ফার্মগেট।ফল দাড়াতো এই আমরা কোচিং করতাম এগারোটা পর্যন্ত তারপর সারাদিন আড্ডা মারতাম ডিব্বা নামক এক জায়গায়।সেটা অবশ্য কোচিং করতে আসা সকল ছেলেরাই চিনতো।সেই দিন গুলো কেটে যেত বৈচিত্র‌হীন অথচ আনন্দময়।প্রতিদিন শেষেই মনে হত যেন এমনভাবে দিন কেটে যেত অনেকদিন -অসীম সময়। যতই সময় এগুতে থাকে এ আনন্দময় সময়গুলোকে আমার কাছে দুঃসহ মনে হতে থাকে।এমন সোনা ঝরা দিন গুলো আর ফিরে আসবে না ভেবে বিষন্নতা অনুভব করি।তারপর একদিন না একদিন নয় একে একে আমরা চলে যেতে থাকি নিজেদের প্রার্থিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে।সরে যেতে থাকি আমরা একে অপরের থেকে।ক্যাডেট কলেজের মায়া থেকে যায় আমাদের আত্মার বন্ধন হয়ে কিন্তু বাহ্যিক ভাবে আমরা সরে যেতে থাকি ক্রমেই একে অপরের দূরে।

একদিনের ঘটনা ।সময়টা ২০০২ সালের ডিসেম্বর।আমাদের বিচ্ছেদ পর্ব তখন ছুই ছুই।এমন সময় আমরা ঘটা করে গেলাম বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখতে।স্টেডিয়ামে।তো যাওয়ার আগে আমার এক স্কাউট বড় ভাইকে সিট ম্যানেজ করতে বলেছিলাম।কিন্তু ছেলেপেলে থিক আশ্বস্ত হতে পারছিল না।তারাও টিকিট কিনে ফেলল।তো যাওয়ার পর আমার ভাই টিকিট দিলে আমরা পরে গেলাম বিপদে।ডাবল টিকেট দিয়ে এখন কী করি?আমার আর আলমের কাধে দায়িত্ব পড়ল সে অতিরিক্ত টিকিটগুলো বেচে দিয়ে কিছু খাবার দাবার কিনে আনতে।তো আমি আড় আলম নামলাম।কিন্তু হায় কাজটা যত সহজ ভেবেছি মোটেই ততটা নয়।কেননা নিচে ব্ল্যাকারের ভিড়ে দাড়ানো যাচ্ছে না।আর মাঝে মাঝে পুলিশ এসে ব্ল্যাকার দমনে লাঠি চালাচ্ছে।আমরা প্রমাদ গুনলাম। খাইছে। পুলিশের একটা বাড়ি খায়া গেলে আর মুখ দেখানো যাবে না।যাহোক আলমের অভিনয় ক্ষমতা কাজে লেগে গেল।সে কাচুমাচু মুখে এক পুলিশকে বুঝালো আমাদের অনেক ফ্রেন্ড আসার কথা ছিলো।তারা আসেনি।টিকিট গুলো একট্রা।এগুলোর সদগতি যদি তিনি করে দেন। আলমের কাচুমাচু মুখ দেখে পুলিশ সাহেব নিজেই কিছু কম দামে আমাদের থেকে টিকিট গুলি নিয়ে আমাদের বিরাট উপকার করেছেন এমন ভাব নিলেন।তিনি যে পরে সেটা বেশি দামে ব্ল্যাকারকে কিনতে বাধ্য করার বিনিময়ে ব্ল্যাকিং এর অনুমতি দিয়েছিলেন তা বোধ করি সবাই না বললেও বুঝবেন।

আমরা সবাই আলাদা হবার আগে সুযোগ পেলাম একত্রিত হওয়ার।সেটা আমরা এক্স ক্যাডেট হওয়ার পর প্রথম রিইউনিয়নে।সেই কটা দিন ছিলো স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।সবাই আজ ফিরে এসেছি একত্রে এক্স ক্যাডেট হিসাবে।শুধু সুন্দর ছিলো না প্রথম রাতটা।সেদিন আমাদের এক বন্ধু কনসার্টে নাচার জন্যই হোক কিংবা নেশার মাত্রাধিক্যেই হোক বমি করে ভাসালো।দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা আমার আলমের জায়গাটাকেই পুরো সয়লাব করে দিয়েছে।তো আমি আর আলম সারা রাত এখানে ওখানে গার্ডদের সাথে গল্প করে পার করলাম।পরে সকালে রুমে এলাম ছেলে পেলে উঠলে কারো জায়গা দখল করব বলে।আমাদের আই ইউ টির বন্ধুদের সাথে এক পাকিস্তানিও ছিলো।এমনিতেই পাকিস্তান দেশটাকে আমি কখনো সহজ ভাবে নিতে পারি না তার উপর সেই ব্যাটা তার বিরাট ভূড়ি বুলিয়ে সুখ নিদ্রা ত্যাগ করতে করতে আমাদের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে বলল ,আন ফরগোটেবল নাইট।এই শালারে আনছে কে?……..খোলা রুমে একদম বাংলায় গালিগালাজ শুরু করে দিলো আলম।তার সাথে আমিও যোগ দিলাম ভুক্তভোগী বলে কথা।পাকিস্তানের জাতি গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছেড়ে দিলাম। পরবর্তীতে আই ইউ টির ওরা ব্যাপারটা মিটিয়ে দেয় আমাদের ভোগান্তির কাহিনী জানার পর।ঐ ব্যাটা পাকিস্তানি সরি বলছিল।কিন্তু আমি জানি সেই সরি অন্তর থেকে গ্রহন করিনি আমি আলম কিংবা ভুক্তভোগীরা কেউই।

এরপর সময় খুব দ্রুত কেটে গেল।আমি বুয়েটে ভর্তি হলাম ।আলম গেল নর্থ সাউথে।সে ওখানে ক্লাশ করলেও তার মন পড়ে থাকতো বুয়েটে। আমাদের সাথে আড্ডা দিতে চলে আসতো সে বুয়েটে।শুনতাম তার গল্প ।তার নর্থ সাউথ অভিজ্ঞতা।শুনতাম তার ভালো লাগার মানুষটির কথা।সে সময় তার ভালো লাগার মানুষটির সাথে তার চড়াই উৎরাই সম্পর্ক ছিলো।কখনো সে রেগেই যেত কিন্তু আবার সে পরক্ষনেই হয়ে যেত নমনীয়।আলমের এ এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট ছিলো।শুধু যে ও ই আসতো আমাদের এখানে তা না।আমরা ও মাঝে মাঝে যেতাম তার বাসায়।আর হ্যা ও খুব ভালো রাধতে পারতো।মাঝে মাঝেই ওর বাসায় গিয়ে খেয়ে আসতাম আমরা।এর মধ্যে মনে পড়ে বিশেষভাবে রমযানের সময় ইফতার আর ডিনারের ব্যবস্থা করেছিল ও।উফফ সেই কথা মনে করলেও জিভে জল চলে আসে।

সময় দ্রুত চলে যায়।আমাদের মধ্যকার দেখা সাক্ষাৎ অনেক কমে যায়।কিন্তু তার মাঝেও হারিয়ে যায় না মনের টান।মোবাইল চলে আসার পর আমরা একে অপরের সাথেই যেন থাকি সব সময়।আর সে সময় ই খবর পাই আলম শাখরুনার বিয়ে সমাগত।তাদের মধ্যে কী ভাবে কী হলো তা জানার আগ্রহ আমার কোনদিন ই হয়নি কেননা আমি যতবারই আলমের কাছে গিয়েছি তার সাথে শাখরুনার ভালবাসার গভীরতার নতুন নতুন নজির আমাকে মুগ্ধ করেছে।আসলেই ওদের মধ্যে বড়ই টান ছিলো।অদ্ভুত ভাবে শাখরুনার সাথে কথা বলত আলম।আমার মনে আছে।একাধিকবার আমার সামনে বসেই ওরা ফোনে কথা বলেছে। অদ্ভুত লেগেছে আমার কাছে ওদের কথোপকথন।আলম কে দেখতাম সবসময়ই আশ্বস্ত করত যে সে ঠিক আছে।এই জাতীয় কথা।আমি দেখতাম তখন আলমের চোখ তার মুখ।সেখানে যেন আনন্দের এক ঝিলিক লেগে থাকত সবসময়।

আলম চাকরিতে ঢুকল এক সময়।তার কাছে তার চাকরির গল্প শুনতে শুনতে আমার গত রিইউনিয়নে যাওয়া।আর সবাই আগে চলে গিয়ে জায়গা দখল করে আমরা দুজন আলমের জন্য রয়ে যাই আমি আড় রিফাত।বাসে বসে অনেক কথাই হলো সেদিন।আলম বলল তার বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা।বলল যে বিয়ে করে সে সাত আট বছরের জন্য যাবে ইউ কে তে আমাদের সাথে অনেকদিনই দেখা হবে না।সেদিন দুঃখ পেয়েছিলাম ওর সাথে সাত বছর দেখা হবে না ভেবে যা আজ আমার কাছে সবচেয়ে বড় পরিহাস মনে হয়।

আমার লেখাটা বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আজ।আলমের সাথে সেই রিইউনিয়নে কাটানো সময়টাই ওকে শেষবারের মত অনেক কাছে থেকে পাওয়া। সে সময় অনেক কথাই হলো।কথা হলো তাকে নিয়ে তার ভবিষ্যত নিয়ে।সে বলে গেল অকপটে যেভাবে সে বলে এসেছে এতদিন ধরে।সে বলে গেল তার ভালোবাসার মানুষটির কথা।তার শীঘ্র আগত বিয়ের কথাও বলল।সেই বিয়েতে কী হবে এই জাতীয় মজাও হলো।সেই রিইউনিয়নে আমরা আলমের ভুড়ি উচিয়ে ঘুমানোর ছবি তুললাম।তুললাম আরো অনেক বেফাস ছবি।সেই সময়টাই যেন ফিরে ফিরে আসে।আর সেই ভুড়ি উচিয়ে শোয়ার আলমীয় দৃশ্য চোখের সামনে আসে বারে বার।

****
সেই দিনটা ১৭ই মার্চ ২০০৭।পরদিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা।
সেদিন আলমের বাসায় গেলাম।সেদিন কল্পনাতেও বুঝিনি পরের যাওয়া কত ভয়াবহ কষ্টের হবে।সেদিন আলমের সাথে বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক কথা হলো।সে কোথায় চাকরির ভাইভা দিয়েছিল তার কথা বলল। বরাবরের মতই কাহিনী করে।তার পর আমাকে বলল,চল তোমাদের হলে যাই।সেখানকার হালিমটা আমার খুব ভালো লাগে।ওর গাড়িতে ওঠলাম আমরা ।ও ওর ছোট ভাইটিকে নামিয়ে দিল কোথায় যেন।তারপর আমরা তিন বন্ধু মিলে বুয়েটে এলাম।বুয়েটের ক্যান্টিনে ওকে হালিম খাওয়ালাম।শহীদ মিনারে বসে আড্ডা হলো।তারপর আমরা শর্মা হাউসে গেলাম পিজা খেতে।যাওয়ার পথে ক্রিকেটার মানজারুল রানার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম।আমরা সবাই খুব দুঃখ করলাম।আলম বলল,”রানার জন্যই কাল জিতবে বাংলাদেশ।আহারে।এত অকালে চলে গেল সে।”তখন কী জানত সেই রানার চেয়েও অকালে তাকে চলে যেতে হবে।

*****
শর্মা হাউসে থাকা অবস্থায় তার ফোন এল শাখরুনা র থেকে।আমার পাশে বসে তাকে বলতে শুনেছিলাম আমার কিছু হবে না তো।চিন্তা করো না জান।আমি ঠিক পৌছে যাব।এখন খেয়েছো তুমি……..।শর্মা হাউস থেকে বের হয়ে একত্রে সিগারেট ধরালাম তিনজন।সেটাই ওর সাথে শেষ সাক্ষাত।কথায় কথায় নানা কথা হলো।ফুটবল নিয়ে কথা হলো।তার প্রিয় এসি মিলান ম্যানইউর একটা চ্যাম্পিয়ন হবে এসব আজেবাজে আলোচনায় রাত হলো।সে গাড়ি নিয়ে আমাদের থেকে বিদায় নিল খোদা হাফেজ বলে।

*******

দিনটি ছিল ২৪শে মে।আগের রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দেখে ঘুম থেকে উঠেছি একটু বেলা করেই।সিসিএনএ এর আজেইরা ভর্তি পরীক্ষা দুইটা থেকে।আমি লাঞ্চ করে রওয়ানা হয়ে ঢুকেছি পরীক্ষার হলে। মোবাইলটা বন্ধ করতে যাব এমন সময় আমার বন্ধু সুমিতের ফোন এল।
আ……….(আমার আসল নাম) তুমি কোথায়?আমি পরীক্ষার হলে।সে চিৎকার করে উঠল এখনই বাংলাদেশ মেডিকেলে চলে এস আর আসার আগে আমাদের কলেজের যাকে পার নিয়ে আসো।সেই কথায় এমন কিছু ছিলো যা আমাকে বের করে নিয়ে গেল পরীক্ষার হল থেকে।কলেজের কোন বন্ধুর কি কিছু হয়েছে?আমি কালবিলম্ব না করে আলমকে ফোন দিলাম।আলমের ফোন বন্ধ।বুকের ভিতরটা ছ্যাৎ করে উঠল।তাহলে কী ওর কিছু হলো?বন্ধু তোফিককে ফোন দিলাম।কোথায় জানতে চাইলে শুধু কান্নার গোঙানি শুনতে পেলাম।আশিককে ফোন দিতে ও জানাল ও আসছে কিন্তু কী হয়েছে আমি জানলাম না।জানতে পারলাম না।এনসিসি ব্যাংকের সামনে কেমন যেন পুলিশ প্রহরা দেখলাম।তার পর বাংলাদেশ মেডিকেলে আমার বন্ধুদের দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম।মাশরুরকে বললাম,কী হয়েছে?সে শান্তকন্ঠে জবাব দিল আলম মারা গেছে। আমার সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল সব।
আমরা অনেক সময় ই মানুষকে বোকা বানাতে এইসব চাপা মারতাম। চোখ বন্ধ করলাম যেন মনে হলো এখন ই আলম এসে হাসতে হাসতে বলবে ভয় পেয়েছিলে?
চোখ খুললাম না কেউ এল না।দুষ্টামির লেশ নেই কারো চোখে মুখে আসলেই হারিয়ে গেছে আমাদের আলম।ব্যাংকের সামনে টাকা ছিনতাইকারীদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওদের গুলিতে সে চলে গেছে অনেক দূরে।

******
মেডিকেলের মর্গের সামনে আমরা সবাই দাড়িয়ে।ক্যাডেট কলেজ আমাদের শিখিয়েছিলো চোখের অশ্রু দুর্বলতার চিহ্ন।সেই অশ্রু সংবরণের কোন চেষ্টা কারো মাঝে নেই।আমাদের মনের মধ্যে যে ঝড় বইছে তাকে প্রকাশ করার কোন মানবীয় মুদ্রা নেই।অদ্ভুত ফাকা ফাকা লাগছে চারদিক।শাখরুণার অবস্থাও ভালো নয় ।চোখের সামনে আলমের মৃত্যুতে সে ফেইট হয়ে আছে।সে দিকে ভাববার মতো মনের অবস্থা আমার নেই।আমাদের কাহিনীবাজ আলম এভাবে নিজেই এত বড় কাহিনী হয়ে হারিয়ে যাবে তা বোধ করি অনুমানেরও বাইরে।পোস্টমর্টেম শেষে তার লাশ মাইক্রোতে তোলা হলো।সেই সময় তাকে দেখবার একটু সুযোগ হলো।না ক্ষত বিক্ষত কোনলাশ নয় একেবারে সেই আলম রিইউনিয়নের মত ভুড়ি উচিয়ে শুয়ে আছে।কোন ক্লেশের ছাপ নেই তার চেহারায়।শুধু গালের কাছে কিছুটা জায়গা ছরে গেছে।যেখান দিয়ে তার শরীরে প্রবেশ করেছে সেই প্রানঘাতী গুলি।

******

মেডিকেল থেকে বেরিয়ে বুয়েটের দিকে হাটতে শুরু করি।চিরচেনা এই পথকে অচেনা মনে হতে থাকে।আকাশে মেঘ করেছে।এত গুলো প্রানের চাপা আর্তনাদের সাথে সে যেন একাত্ম ঘোষনা করেছে।আমার মনটা অদ্ভূত বিষন্নতায় ভরে আছে।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।সেই হাসি খুশি সদা উৎফুল্ল বোকাসোকা ভালো লাগার প্রিয় সেই মানুষটি বারবারই আসছে আমার দৃষ্টিসীমায়।আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।কিছু ভাবতে পাচ্ছি না।সব এলোমেলো হয়ে আছে।একসাথে।সেই আলম সেই সেলিম সেই জসীম সেই সদরুল যাই বলি তার এই অকা প্রয়ান আমাকে আঘাত করে চলে প্রতিনিয়ত।আমাদের সকল ব্যাচ গেট টুগেদারে আমরা অনুভব করি তার বিদেহী আত্মার সরব উপস্থিতি।

*****
ক্যাডেট নম্বর ৫৯৫ নামে মোস্তফা মামুন ভাইয়ের একটা বই পড়ে ছিলাম।অদ্ভুত ভাবে সেখানে এক ক্যাডেট মারা যায় ।সেই ফিলিংস গুলো বুঝতে পারিনি তখন।আদিখ্যেতা মনে হয়েছিল সেদিন।সেদিন কী জানতাম আমাকেও একদিন আরেক মৃত ক্যাডেটের গল্প লিখতে হবে।ভুল বললাম মনে হয় আলম মরে গিয়েও মিশে আছে আমাদের সবার মাঝে।আমি তার উপস্থিতি অনুভব করি যখনই ক্যাডেট কলেজের গল্প আসে।খোদা তার বিদেহী আত্মার মঙ্গল করুন।আলম তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো তোমার সকল বন্ধুদের পক্ষ থেকে আমার শুভকামনা রইল।অনেক কথাই মনে আসছিল।কিন্তু চোখ ধরে আসছে আঙ্গুলগুলো যেন বিদ্রোহ করতে চাইছে।মাথায় শুধু ঘুরছে একটি কথা একটি কথাই।সেটা হলো ক্যাডেট নম্বর ১৮৬২।

(সমাপ্ত)

৪,৪৭৭ বার দেখা হয়েছে

৩৬ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট নম্বর ১৮৬২-অসময়ে হারিয়ে যাওয়া অতি আপনজন(শেষ পর্ব)”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    ক্যাডেট নম্বর ৫৯৫ নামে মোস্তফা মামুন ভাইয়ের একটা বই পড়ে ছিলাম।অদ্ভুত ভাবে সেখানে এক ক্যাডেট মারা যায় ।সেই ফিলিংস গুলো বুঝতে পারিনি তখন।

    আলমের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করছি।
    ক্যাডেট কলেজের বন্ধুর মৃত্যুযে কতটা অসহনীয় সেটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি।
    আল্লাহ, আমাদের মতো যারা বন্ধুহারা হয়েছেন, তাদের সবার হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে হেফাজতে রাখুন।

    আমিনকে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। ক্যান্টনমেন্ট সুবাদে আলম আমাদেরই এক ব্যাচমেটের সুপরিচিত ছিলো। ওর কাছ থেকে দুঃখজনক ঘটনাটা আগে জেনেছিলাম। স্রষ্টার কাছে দোয়া করছি আলমের জন্য।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আলম ভাইয়ের সাথে একসাথে পড়েছি।এস্পিজি বিল্ডিঙ্গের কিছুটা আঁটোসাঁটো করিডরে লিফটে ওঠার সময় বিশালদেহী এই মানুষটিকে অনেক জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই আমি লাইন ভেঙ্গে চলে যেতাম-"আরে আলম ভাই কেমন আছেন?"দিয়ে শুরু হত খোশ খবর।২০০১ সালের এথলেটিক্স মীটে আলম ভাই আর আমার একই ইভেন্ট ছিল।এমসিসির আরেক প্রতিযোগী ছিলেন আমানত ভাই যিনি প্রতিটা থ্রো এর আগে নামাজ পড়ার ভঙ্গিতে মুনাজাত করতেন-এটা নিয়ে আমরা একটু ঠাট্টা করতেই উনি বলে উঠেছিলেন-ওই বেটা হাসিস না,হাউস কম্পিটিশনে যেই আমানত আমার ধারে কাছে আসে না সে-ই কি সম দোয়া টোয়া পড়ে থ্রো করে আমার চেয়ে বেশি দূরে হ্যামার মেরেছে।সবচেয়ে অবাক ব্যাপার-আকারে বিশাল হওয়া সত্বেও ভিতরের মানুষ্টা ছিলেন শিশুর মত সহজ-সরল।হাসি ছাড়া কোনদিন গোমড়ামুখে দেখেছি বলে মনে পড়েনা।পেপারে যখন দেখলাম যে এক্স ক্যাডেট আলম মারা গিয়েছে তার প্রায় ৬ মাস পরেও বুঝতে পারিনি যে ইনি সেই আলম ভাই।সামহোয়্যারইনে আমিন ভাইয়ের লিঙ্ক থেকে ফেসবুকে ছবি দেখে আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল বোঝাতে পারবনা।এন এস ইউ তে এস্পিজি বিল্ডিংয়ে দরজা পার হবার সময় এখনো খালি মনে হয় এই দেখব বিশালদেহী আলম ভাই মাথা একটু উঁচু করে আমাকে ডাকবেন-কিরে মাসরুফ কই যাস?

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    আল্লাহ আলম ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুক।


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  4. নাজমুল (০২-০৮)

    স্রষ্টার কাছে দোয়া করছি আলম ভাই এর জন্য।এবং সমস্ত হারিয়ে যাওয়া এক্স ক্যাডেট দের জন্য :boss: :boss: সেই সাথে ছিনতাইকারীদের কী ব্যাবস্থা করা করা উচিত সেটা ভাবা দরকার

    জবাব দিন
  5. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমাকে একবার একজন চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছিল, "আপনি যদি ঠিক এই মুহূর্তে মারা যান তবে আপনার কি কি ব্যাপারে আফসোস থাকবে"? আমি প্রম্পটলি এর কোন উত্তর দিতে পারিনি। একটু ভালোমতোন চিন্তা করতেই বুঝলাম 'মৃত্যু' শব্দটা আমার কাছে সিম্পলি নিঃশর্ত সারেন্ডার নির্দেশ করে। আমরা সবাই এই অমোঘ সত্যটার কাছে চূড়ান্তরকম অসহায়। এর সাথে কিচ্ছুটি করার সাধ্য নেই।

    ভাই আলম, আমরা সবাই তোমার সাথে ঠিক মিলব। খালি কিছুটা সময়ের ব্যবধান।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  6. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    আমিনের এই ধারাবাহিক লেখাটি সামহোয়ারইনে পড়েছিলাম। ভীষণ মনোকস্টে ছিলাম তখন, এখনো। আলমের জন্য বিশাল হৃদয় ভালোবাসা।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      আমার এই লেখা যখন সামহোয়ারে লেখা হয় তখন ক্যাডেট কলেজের পানিশমেন্টের বিষয়ে কিংবা ট্রেডিশনের বিরুদ্ধে অক্যাডেট এবং বিসি টাইপ ক্যাডেটডের মেজাজ খারাপ করা মন্তব্যে আমি লেখা বন্ধ করার কথা ভাবছিলাম।
      তখন সামহোয়ারের তিন ক্যাডেট ব্লগার ঝিনাইদহের আন্দালিব ফৌজদারহাটের সানাউল্লাহ ভাই এবং ময়মনসিংহ গার্লসের মানবী আপু আমাকে বিশেষ ভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন।তাদের উৎসাহেই আমার পক্ষে এই লেখা শেষ করা সম্ভব হয়েছে।তাদের সবার প্রতি অশেষ ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    আলমকে আম্রাও "সাবু" ব্লে ডাকতাম...যখন প্রথম কলেজে আস্লো,ওর বিশাল দেহের কারণে ওকে সবাই বাই ডিফল্ট "ঘাউস" ব্লে ধরে নিয়েছিল...কিন্তু, আস্তে আস্তে আমাদের ও বুঝতে দেরী হয়নাই যে, ওর বিশাল দেহের ভিতরে আসলে শিশুর মত একটা মন...অন্য হাউসের জুনিয়র হওয়ায় তেমন একটা সরাসরি সম্পরক ছিলনা, কিন্তু আমরা ওকে কাছে পেলেই অনেক মজা করতাম...

    নিজের খুব কাছে থেকে দেখা ছোট ভাইগুলার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলতে খুব কষট হয়...ভালো থাকো, সাবু...ভালো থাকো, জাহিদ রেজা(ফহা ৩২তম), তাওহীদ(নহা ৩৫তম?)...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  8. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    নিজের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে এতটা ব্যস্ত আমি যে ব্লগে আসারও সময় পাই না।তৌফিককে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ আমার অসমাপ্ত লেখার শেষ অংশটা ছাপানোর জন্য।
    কমেন্টগুলো অনেক ভালো লাগলো।গত নয় ই নভেম্বর ছিল আলমের জন্মদিন।এই লেখার পুরোটা আমার পক্ষ থেকে আলমকে তার জন্মদিনের পুরষ্কার থুক্কু উপহার।
    আলম যেখানেই থাকো ভালো থেকো।

    জবাব দিন
      • রকিব (০১-০৭)

        মাঝে সাঝেই পুরানো পোষ্টগুলো ঘাঁটি।
        ভাইয়া, আসলে সময় বোধহয় সবকিছুর উপরে একটা ধুলোর আস্তরণ চাপিয়ে দেয়। মাঝে সাঝেই বাতাসে ধুলো খানিকটা সরে গিয়ে মন ভারী করে দেয়।


        আমি তবু বলি:
        এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

        জবাব দিন
        • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

          ভালো একটা কথা বলছস। মন খারাপ আমার এমনিতেই থাকে সবসময়। এই কমেন্ট টা পড়ে যে বোধ হলো তা হলো বিষণ্ণতা।

          তোর পুরাণ পুস্ট ঘাটানোতে ভালো হইছে। কিছু লেখা যেগুলো আগে পড়ি নাই, তোর কমেন্টের লিংক ধইরা যাইতে পারতেসি।

          জবাব দিন
          • রকিব (০১-০৭)

            এই পুরান লেখাগুলো আমার জন্য কেমন টনিকের মতো কাজ করে। যখন মাথা জ্যাম হয়ে যায়, কোন কাজে মন বসে না; সিসিবির ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাই। ঘন্টা দুয়েক বসে বসে পুরানো পোষ্ট হাতড়াই। কিভাবে যেন একটা রিফ্রেশমেন্ট হয়ে যায়।


            আমি তবু বলি:
            এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

            জবাব দিন
  9. নাফিস (২০০৪-১০)

    আমার ক্যাডেট নাম্বার ২২৬২ , কলেজে থাকার সময় যাদের ক্যাডেট নাম্বারের শেষে ৬২ আছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। ২১৬২ আরেফীন ভাই, ২০৬২ সিসিবি র ই ফারাবী ভাই, ১৯৬২ কায়েস ভাই.. কোন এক কারনে ১৮৬২ কে আমি খুঁজে পাইনি।
    আজ ৩/৪ বছর পরে এভাবে যে খুঁজে পাবো তা কখনো ভাবিনি। খুঁজে না পেলেই মনে হয় ভালো হতো.... ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।