কিছু কিছু বই আছে কেন জানি পড়া হয় না। পড়া হয় না মানে হয়ত বইটা কাছেই আছে কিংবা চাইলেই পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় তবুও কেন জানি আর পড়া হয় না। কলেজে টেস্ট বা প্রিটেস্ট কোন একটা পরীক্ষার আগে ফর্মে আমার পাশে বসে বসে ইরফান একটা বই পড়ে, উলটে পালটে আবার পড়ে এবং পড়া শেষে প্রত্যেকবার বলে- রাশেদ বইটা পড়িস কিন্তু। কিন্তু আমার আর পড়া হয় না। এর মাঝে অনেক সময় চলে যায়। দুই হাজার দুই তিন থেকে আমি চলে আসি দুই হাজার দশে আর হাতে উঠে আসে পুরান সেই বই, সেলিনা হোসেনের “লারা” এবং অনেকদিন পর আবার আমার একটা ব্লগ লিখতে ইচ্ছে করে।
একটা উপন্যাসের শুরুটা কেমন হওয়া উচিত? দূর্দান্ত? আমার অবশ্য তাই মত। তবে এই উপন্যাসের শুরুতে লেখিকার কিছু দুঃস্বপ্ন আমাদের ভিন্ন রকম শুরুর ইংগীত দেয়, শান্ত ধীরস্থির। কিন্তু ধীরে ধীরে উপন্যাসের গতি উঠে আসে কখনো মা-মেয়ের কথোপকথনে আবার কখনো ঘটনার বর্ণনায়। মায়ের খোলসে ঢুকে এই উপন্যাস আমাদের জানিয়ে দেয় সন্তানদের নিয়ে এক মায়ের অন্তর্গত যতসব চিন্তা আবার মেয়ের খোলসে ঢুকে উপন্যাস তুলে আনে এক সন্তানের নিজস্ব জগত, যে কিনা শক্ত হাতে ভেংগে ফেলতে চায় তার চারপাশে প্রতিরোধের যতসব দেয়াল কিন্তু আবার আমাদের অজানা কোন এক কষ্টে সে নিজেই কষ্ট পায়, নিজের খোলসে নিজেই পুড়ে। এই খোলস বদলের খেলায় কখন যেন আমরা নিজেরাই ডুবে যাই, উপন্যাসের পৃষ্ঠা উলটে যাই।
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কে? অবশ্যই লারা। সেলিনা হোসেনের মেয়ে লারা কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ইন্সট্রাক্টর হতে যাওয়া ফারিয়া লারা। কিন্তু এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হয়ে হওয়ার পথে এসব পরিচয় ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠে অন্যসব ছোটখাট খুটিনাটি জিনিস। কখনো সাত বছর বয়সে ছোট ভাইয়ের দ্বায়িত্ব নেওয়া সেই ছোট্ট মেয়েটা, কখনো নিষেধ অগ্রাহ্য করে পাহাড়ে উঠে পড়া সেই ছোট্ট মেয়ের বিজয়ী হাসি অথবা কলোরডায় বেড়াতে গিয়ে উচ্ছল সেই কিশোরীর গল্প- এসব আমাদের আকর্ষণ করে, আমরা পৃষ্ঠা থেকে পৃষ্ঠান্তরে ঘুরে বেড়াই। বিজয়ী মানুষের গল্প পড়তে আমরা কে না ভালবাসি হয়ত এটাও এই উপন্যাসের একটা বড় আকর্ষন। মেয়েটা চ্যালেঞ্জ ভালবাসে, প্রতিকূলতা কে জয় করতে পছন্দ করে হয়ত তাই কখনো সাংবাদিক হতে চায় আবার কখনো আকাশে পাখি হয়ে উড়তে চায়। আমাদের দেখা অদেখা মেয়েদের প্রতিকূলতা গুলো কে সাবলীল ভংগীতে অতিক্রম করে তাই একসময় কেন জানি বিশ্বাস করতে শুরু করি এই মেয়ে হয়ত পরাজিত হতে জন্মে নি । কিন্তু আমরা অবাক হই যখন দেখি মেয়েটার কোন গোপন দুঃখের জায়গা আছে। তার প্রিয়জনদের মত আমাদেরও কৌ্তুহল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তবে আমাদের আর জানা হয় না, আবিষ্কার হয় না সেই গোপন দুঃখের জায়গা কারণ মেয়েটা খালি পুড়ে, নিজের খোলসে নিজেই পুড়ে।
এই উপন্যাসের নাম লারা কেন? ডক্টর জিভাগোর নায়িকা লারা বলে নাকি এক মায়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য? সম্ভবত দু’টোই। এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে তাই আমরা ঢুকে পড়ি মায়ের খোলসে। আর এক মায়ের অন্তর্গত জগত আমাদের নাড়া দিয়ে যায়। তখন সেই খোলসের অধিকারী আর লেখিকা সেলিনা হোসেন থাকে না- হয়ে উঠে একজন মা, সন্তানের চিন্তায় মগ্ন এক মা। সন্তান জন্মের সময় যে মায়ের আকুতি আমাদের চোখে পরে, যে মা সন্তানের কৃতিত্বে গর্বিত হয়, যে মা সন্তানদের বন্ধু হতে চায়। কিন্তু সবটুকু বন্ধুত্বই কি মায়েরা পায়? হয়ত পায় কিংবা কখনো কখনো পায় না।
এটি আসলে জীবনের গল্প, ভাল করে বললে দুইটা জীবনের গল্প- মেয়ের কিংবা মায়ের যাপিত জীবনের গল্প। যেখানে অজস্র অভিজ্ঞতার টানাপোড়নে লেখিকা জীবনের বাইরে জীবন নির্মান করেন, স্তব্ধ সময় কে অতিক্রম করতে চান। অথবা এইসব কিছু বাদ দিয়ে এটা শুধুমাত্র এক সন্তান হারানো মায়ের গল্প।
একটা উপন্যাস পাঠে কখন পাঠক তৃপ্ত হয়? সম্ভবত যখন শুরু থেকে শেষ পুরো ভ্রমণ পাঠক কে তৃপ্ত করে। এই উপন্যাসের পরিণতি আমাদের অনেক আগে থেকেই জানা তবুও তা আমাদের ভ্রমণের গতি থামায় না। হারিয়ে যাওয়া সন্তান যেন মায়ের মত আমাদের সবার সামনেও ছবি হয়ে আসে, শেষ হয় আমাদের লারা দর্শন। শুধু থেকে যায় লারার উক্তি- দুঃখই লেখকের স্থায়ী সুখ।
🙂
ভাবী এত শীতের মধ্যে ফ্রীজ খুলা নিষেধ নাইলে ফার্স্ট হওয়ার জন্য মিষ্টী খাওয়াতাম 😛
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ফ্রীজ খুলতে কার নিষেধ আসে শুনি? 😕
গতরাতে ফ্রীজ় খুলে মিষ্টী খাচ্ছিলাম (একদম সত্যি কথা) এইসময় হঠাত মাতাজান আসিয়া যে ধমক খান দিলেন :(( :((
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধমকখান কি ঝাতি ঝানতে চায় ;))
খাঁটি কথা কইসোস। 🙁
পাবেনা কেন? অবশ্যই পায়। 🙂
লেখা ৫ তারা। :thumbup:
এইবার চা দে, ঠান্ডার মধ্যে মিষ্টি বন, চা খোলা। 😛
তাইলে চা খান :teacup:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধইন্যাপাতা 😀
'লারা' উপন্যাসটা একটানে পড়ার পরে খুব এলোমেলো ধরনের কষ্ট হচ্ছিলো। আমি আর কোনদিন বইটা পুরো পড়িনি, এরকম অনুভব, মায়ের এবং মেয়ের, তাদের সম্পর্ক আর একজনকে হারিয়ে ফেলে অপরের বেদনা (হ্যাঁ, আমি মনে করি লারাও তার মা'কে হারিয়েছেন। পোয়েটিক রিয়েলিটি), এটা আমার পক্ষে সহ্য করা মুশকিল, ধারণ করা তো দূরের কথা!
এইসব পরিস্থিতিতে উপন্যাসের সার্থকতা অনেক লঘু 'চলক' হয়ে ওঠে।
তোমার 'ডায়েরি' (বানান, বানান, রাশেদ! 🙂 ) ভালো লাগছে। আরো কী পড়ছো, সেগুলো নিয়ে লেখো। 😀
এইজন্যই স্বার্থকতা শব্দটা এইখানে একবারও সচেতন ভাবে ব্যবহার করি নাই 🙂
আর আমি এতদিন ভাবতাম এইটাই বুঝি সঠিক বানান 🙁
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লারা উপন্যাসটা পড়ে খালি একটা কথাই মনে হয়েছিল-সাহিত্যিকরা এমনকি নিজের জীবনের মর্মান্তিকতম ঘটনা নিয়েও এভাবে লিখতে পারেন বলেই তাঁরা সাহিত্যিক আর আমরা সাধারণ মানুষ :boss:
অফ টপিক- সেলিনা হোসেনের ছেলে এসবিএ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন।অত্যন্ত মেধাবী এবং সুদর্শন এই শিক্ষক তাঁর নিজের কোর্সেরই এক ছাত্রীকে,যে কিনা আমার এক সহপাঠিনীর বড় বোন,বিবাহ করেছিলেন।এটা নিয়ে আমরা অনেক মজা করতাম 😛
সম্ভবত এই জন্যই এই বইয়ের শেষ লাইন হচ্ছে- দুঃখই লেখকের স্থায়ী সুখ
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমার পড়া খুব প্রিয় একটা উপন্যাস । সেই কবে পড়ছি ক্লাশ টেন এ মনে হয় । আরো কিছু রিভিউ দে । নতুন লেখকদের লেখা পড়িস না তোরা । পড়লে কিছু রিভিউ দে । আমার তো ধারনা নাই নতুন লেখকদের সম্পর্কে । তোরা রিভিউ দিলে কিনতে সুবিধা হবে ।
আদনান ভাই আসলে সেইরকম করে নতুন লেখন পুরান লেখক বেছে বই পড়া হয় না, যখন হাতের কাছে যা পাই তাই পড়ি। আর পড়ার মাঝে যেদিন লিখতে ইচ্ছে করে সেইদিন সবশেষে পড়া বইটা নিয়ে কিছু একটা লিখে ফেলি 🙂
তবে সামনে এই কথাটা মাথায় রাখতে চেষ্টা করব 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম আমাদের সময়টাকে ধরে রাখে এমন কোন লেখক আছে নাকি? এখন ধর আগে যাদের লেখা পড়তাম তাঁরা তাঁদের সময়টাকে ধরে রেখেছেন । আমাদের এখনকার লেখকরা কিভাবে সমাজকে দেখছেন জানতে ইচ্ছা করে । এইগুলাই আর কি? ইদানিং ছফা পড়তে ইচ্ছা করতেছে, বিশেষ করে সচলে শুভশীষের ছফাগিরি পড়ার পর থেকে ইচ্ছাটা আরো বাড়ছে ।
আহমদ ছফার 'বাঙ্গালী মুসিলমানের মন' আমার পড়া অন্যতম সেরা প্রবন্ধ। তার উপন্যাসগুলারেও ভালো লাগে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জন্যঃ মুসিলমানের :bash:
পড়ুনঃ মুসলমানের
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাই আজকে সকালে ক্যাম্পাসে আপনারে দেখলাম কিনা এইটা নিয়া ডাউটে আছি 😕
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
পরিপুর্ণ একটা রিভিউ।
রাশেদ কে :thumbup:
পড়ার জন্য ধন্যবাদ সাব্বির ভাই 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বইটা পরতে শুরু করেছিলাম কিন্তু কেন জানি শেষ করতে পারি নাই।আজকে আবার পরতে ইচ্ছা করছে।
এই বইয়ের শুরুটা একটু স্লো, এইটা হয়ত একটু সমস্যা করে তাই চুপচাপ মাথা গুজে কিছুক্ষণ পড়, দেখবা বই তোমারে এমনেই টানছে 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এই পুচ্চিটাকে এইখানে দেখে ভাল লাগতেছে :hug:
🙂
স্যার খালি হাসি যখন দিলেন দাত দেখায়াই হাসি দিতেন 😀
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অর্দাতেব্যথা
হাসেরছানাআয়তাইলেব্যাটারদাত্তুলেফেলি 😀
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বইটা পড়ে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলাম।
রিভিউটা চমৎকার হয়েছে রাশু ভাইয়া।
অঃটঃআপনার খবর টবর কি???
কিছু কিছু লেখা পড়লে মন খারাপ হয় "লারা" সেই ধরনের লেখা।
অটঃ খবর? আছি ভালই 😀
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
রাশেদ তোমার রিভিউ পড়ে আমি আমার বই কেনার তালিকাটা দীর্ঘ করি। লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল - একজন মা এবং মেয়ে হিসেবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপনার প্রথম লাইনটা পড়ে কেন জানি খুব ভাল লাগল আপু 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
পড়া হয়নি, তবে পড়তে পারবো বলেও মনে হচ্ছে না... রিভিও পড়েই স্বাদ নিতে হবে... সময়ের বড়ই অভাব...
এইটা পড়ে কি আর আসল বইয়ের স্বাদ পাবেন? দেখেন খুজেপেতে সময় ব্যাটার থেকে কিছু সময় বের করতে পারেন কিনা 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এইট-নাইনের দিকে পড়সিলাম...তারপর অনেকদিন পর মনে পড়লো ভাইয়া!আবার পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে এই লেখা পড়ার পর!
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
পড়ে ফেল পড়ে ফেল, ইচ্ছা যখন হইছে তখন তাড়াতাড়ি পূরণ কর। কলেজে থাকতে বইটা যখন প্রথম আনা হল তখন এ হাত সে হাত করে সবার হাতেই ঘুরল কিন্তু কেন জানি আর পড়া হল না 🙁
অটঃ লাইব্রেরীতে কি কাশেম স্যার এখনো আছে?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লারা পড়ি নাই। বইটা দিস, তোর কাছ থিকা নিয়া পড়ুম।
নিচে মালিক কান্নকাটি করতাছে ওর কাছে চা 😀
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লারা পড়ার পর আমারো খুব একটা ব্লগ লিখতে ইচ্ছা করসিলো। অলসতার দরুণ আজ অবধি হয়নাই।
ভালো কথা, আমার বই দুইদিনের মধ্যে ফেরত দিয়া যাবি x-(
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ক্যাম্পাসে আইসা দেখা না কইরা চইলা যাস তাই তোরে মাইনাস :chup:
তোর সংসার কেমন চলে ;;) ;;)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বই পড়ার দিক থেকে আমি ভীষন দৈন্য...। কেন যেন অভ্যাসটা ঠিক মতে গড়ে তুলতে পারিনি। কিন্তু সবার অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে পড়তে হবে বইটা...।
ধন্যবাদ রাশেদ।
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বইটা এখনও পড়া হলোনা। 🙁
রিভিউ চমৎকার হয়েছে রাশেদ।
পড়ে ফেলেন ভাইয়া 🙂
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
:hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আপ্নেরেও :hatsoff:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
চমৎকার রিভিউ 🙂
তোমার বইটা ফেরত পাইলা 😛
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লারা নিয়ে এই ব্লগে আরেকটা লেখা আছে এইখানে -
//cadetcollegeblog.com/raihanabir/11764
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়