আমার এবং আমার সহধর্মীর ভাত না খেয়ে একদিন মানে ২৪ ঘন্টা পার করা মুশকিল। গত এক যুগেরও বেশি সময় পশ্চিমা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে পার করলেও ডাল-ভাত না খেয়ে নিজেদের কষ্ট দেয়ার মত পশ্চিমী হতে পারি নি এখনো। বরং যে শহরেই যাই না কেন গুগলে রিভিউ পড়ে সে শহরের বেস্ট ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করে মনের আশা পুরণ করি।
পড়ন্ত বিকেলে উড়াল হাওয়া মনটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল।
মেপল পাতাগুলো উড়ে চলে তার পাশে পাশে। কানাডার ৪২তম সাধারণ নির্বাচন।
টানটান উত্তেজনা। নেতৃত্বের পরিবর্তন চায় বেশিরভাগ মানুষ!
পাগলা হাওয়া আজ। মনে জেগেছে ভাব।
দেবী আজ ভীষণ মানবী। দেবতাও বুঝি একদিন ছিলেন কবি।
দূর থেকে ভেসে আসে কানেঃ
যা দেবী সর্বভুতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা!
লিখে দিলে নাম ‘দুর্গতিনাশিনী’ হেসে
তবু সে তোমারেই আজ দুর্গতির কারণ মানে!
মেঘ ক’রে আসে চারিদিকে। বুক ভরা জল নিয়ে চুপ ক’রে বসে থাকে। বৃষ্টির ধারা হয়ে নেমে আসে না। প্রিয় কবি রুদ্র-এর কবিতা মনে পড়েঃ
“এলে মনে হয় তুমি কোনদিন আসতে পারোনি।
চলে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে,
চলে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভুবনে আছো।”
কী অদ্ভুত এই মন দখল ক’রে নেবার খেলা, দখল ছেড়ে দেয়া, দখল বুঝে নেয়া, কিংবা কোনদিনই দখল না পাওয়া!
দুপুরে রফিক ভাই এলেন। তিনি আমাদের বাড়িতে এই প্রথম। তাকে দেখার জন্যে আমরা দোতলার রেলিং-এ ঝুঁকে পড়লাম। রাস্তার ধারে আমাদের বাড়ি। এই রাস্তায় যারা নিয়মিত যাওয়া আসা করে তাদের প্রায় সবাইকেই আমরা চিনি। আমার বোন তিনটি এ ব্যাপারে আশ্চর্য রকম দক্ষ। রাস্তার মানুষদের অদ্ভুত সব নাম দেয়ায় তাদের জুড়ি নেই। তাদের গল্পের বেশির ভাগই রাস্তার লোকজন সম্পর্কিত। বলা যায়, পথিক চর্চা,
– এই, আজকে লাল জামাটা এসেছিল?
ঘটনা ১৯৯৭ সালের,এসএসসি পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে। আমাদের সাইন্স পার্টির শুধু টিউটোরিয়াল বাকী আর আর্টস পার্টির একটা শেষ পরীক্ষা। যাই হোক এই পরীক্ষা শেষে আর্টস পার্টির ভিতর বিরাট হৈ চৈ ,মহা অসন্তোষ ইতিহাসের এক স্যারকে নিয়ে।স্যার এর সঠিক নামটা ঠিক মনে নাই কিন্তু আমরা সবাই বড়ভাইদের দেয়া টিজনাম টাং টাং হিসাবেই চিনতাম। স্যার ক্যাডেটদের পিছনে খুবই লেগে থাকা টাইপএর ,অসম্ভব রোগা আর কথা বলার সময় কাপতেন,
ইদানীং কোন লেখকের লেখা পড়তে যতটানা আগ্রহ বোধ করি তার চাইতে কেন জানি বেশি আগ্রহ জাগে ঐ লেখকের নিজের সম্বন্ধে, সেই সাথে তার লেখা সমূহের পেছনের ইতিহাস সম্বন্ধে, যা বেশির ভাগ সময় আমাদের কাছে অজানাই থেকে যায়। কল্পজগতের নাটকের চাইতে লেখকের নিজের জীবন যে ভাবনা তা আমার কাছে অনেক অনেক বেশি নাটকীয় মনে হয়। সেই সব অজানা কাহিনী যতই একের পর এক পাপঁড়ি মেলে ধরে ততই বিস্মিত হই।
“এই যে লাটসাহেবের বিবি, শীঘ্রই ওঠো। তোমার কাজগুলো তোমার কোন সতীন এসে করে দিয়ে যাবে শুনি?” – মহিলা দজ্জাল পুলিশটার ধমকে ঘুম ভাঙল শিউলির। আহ ! কি শান্তির ঘুমটাই না নষ্ট করলো ওই দজ্জাল বেটি ! – মনে মনে ভাবে শিউলি।
গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ টার মত রুমে থেকেছে ও। মানে ওকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। জেলারের কড়া আদেশ এই রুমে যদি ও কোনও ঝামেলা করে তাহলে ওর নামে কমপ্ল্যাইন করা হবে।
ছোট্ট একটা মফস্বল শহর।১৯৬৫ সাল।পূর্ব পাকিস্তানের নরসিংদী এলাকার শ্রীনগর।এলাকার মাঝামাঝি স্থানে পাশাপাশি দুটি বাড়ী।তার একটা জলিল সাহেবের অন্যটা রনজিত সাহার।ধর্মে ভিন্ন হলেও তাদের অন্যান্য কিছুতে তারা ভিন্ন নয়।দুজন একই অফিসে চাকরী করেন।গত আট বছর ধরে তারা পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন।দু’ পরিবারে বেশ ভাব।যে কোন অনুষ্ঠান কিংবা পারিবারিক কাজে সবাই যেন পরস্পরের জন্য নিবেদিত প্রান।জলিল সাহেবের পরিবারে আছে তার স্ত্রী সহ দুই ছেলে।জলিল সাহেবের দুই ছেলের মাঝে একজন আমার বড় ভাই ফারুক অন্যজন আমি।রনজিত সাহার দুই মেয়ে,জয়িতা আর সুনন্দা।জয়িতার বিয়ে হয়েছে কলকাতার এক ব্যবসায়ীর সাথে।সুনন্দা আমার সাথে কলেজে পড়ে।সুনন্দাকে আমি সুনু বলেই ডাকি।অন্যান্য মেয়েদের চাইতে সুনু একটু আলাদা।তার মাঝে একটা অন্যরকম ভাব আছে যা অন্যদের মাঝে নেই।সুনুর সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হল সে হাসলে গালে টোল পড়ে।ওর মায়াভরা মুখটা আমার সবচেয়ে আপন লাগে।হাসির মধ্যে একটা শিশুসুলভ ভাব রয়েছে।যদিও ছোটবেলায় ও বেশ মোটা ছিল কিন্তু ও যেন দিনদিন আমার কাছে আলাদা রকম আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে।জানিনা আমার আকর্ষন বোধটা অন্য মেয়েদের চেয়ে ওর প্রতি এতটা বেশী কেন।হয়তোবা ওর সেই অন্যরকম বৈশিষ্ট্যের জন্যই।আমরা আলাদা ধর্মের হলেও কখনও সুনু কিংবা আমি পরস্পরকে আলাদা ভাবিনি।মোটকথা সুনন্দাকে আমার বেশ ভাল লাগে।তবে ওকে নিয়ে আমি কখনও সেরকম ভাবনা ভাবিনা।সেরকম ভাবনা বলতে আমি ভালবাসা কিংবা প্রেম-টেম বোঝাচ্ছিনা,আমি বলতে চাইছি আকর্ষনের ব্যাপারটা।
কলেজে ক্লাশ টেন এ থাকা কালীন এটা লিখা শেষ করছিলাম।ইচ্ছা ছিল কোন একদিন সুযোগ হলে কারও কাছে সাবমিট করবো চলমান ছবি হিসেবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।সেই স্বপ্নটা সত্যি হতে চলেছে শীঘ্রই ইনশাল্লাহ :-)যা হোক সিসিবি তে সবার সাথে ধারাবাহিক হিসেবে শেয়ার করার চেষ্টা করছি…( এটা একটা সত্য ঘটনা,চরিত্র গুলোর নাম অনেক গুলোই বাস্তব,ঘটনার কিছু কিছু অংশ শুধু লেখার জন্য একটু আলাদা করে ফুটিয়ে তোলা)
****************************
আমি এই মুহুর্তে কোথায় আছি সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি,বোধ হয় হাসপাতালে।আশেপাশের সবাই সম্ভবত আমাকে নিয়ে দারুন ব্যস্ত আর উৎকন্ঠিত।জানিনা কেন তাদের এত ব্যস্ততা আমার জন্য।হয়তো আমার প্রতি এ মুহুর্তে তাদের প্রচন্ড ভালবাসা জন্মে গেছে,সে ভালবাসা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম,যা রঙ বদলায়।ভালবাসার কি আদৌ কোন নির্দিষ্ট রঙ আছে?ঠিক জানিনা।তবে আমি এটুকু বলতে পারি,প্রত্যেকের মাঝেই ভিন্ন ধরনের ভালবাসা আছে।আমি এমন কেউ নই যে এরা আমাকে নিয়ে এতটা উৎকন্ঠিত হবে,আমি আমার নিজের কাছে খুব সাধারন,হয়তোবা অন্যদের কাছে আলাদা।আমি এ মুহুর্তে আমার বুকের সব জায়গা জুড়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি,এক ধরনের তীব্র যন্ত্রনায় আমার সর্বাঙ্গ ভরে যাচ্ছে।আমার মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেয়া হয়েছে।আমি শুধু চেয়ে চেয়ে সবার কাজ দেখছি।কেবল চেয়েই আছি,চোখ বুজতে ইচ্ছা করছেনা,কেমন যেন একটা অদৃশ্য ভয় আমাকে ছেয়ে আছে।সে ভয়ের জন্য আমি চোখ বুজতে পারছিনা,বুঝতে পারছিনা কি সে ভয়।সেটা কি মৃত্যু?আমার আশেপাশে যারা আছে তারা বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছে তবে তাদের কথার বিষয়টা বুঝতে পারছিনা,হয়তোবা আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে এদের মাঝে।আমায় এখানে নিয়ে আসার আগে কি ঘটেছে আমার খেয়াল নেই।তবে,এটা মনে আছে যে কেউ একজন আমার হাতটা চেপে ধরে কেঁদেছিলো,কিন্তু কে কেঁদেছিলো?না,মনে পরছেনা।অনুভব করতে পারছি যে তার হৃদয়ে আমার জন্য ভালবাসার এতটুকু কমতি নেই।কিন্তু কে সে?আমি প্রচন্ড চেষ্টা করছি মনে করার;না মনে পরছেনা।আচ্ছা সবারই কি এমন হয়?যে মানুষটা তাকে ভালবাসে,প্রচন্ড রকম ভালবাসে অথচ তাকেই সে অনুভব করতে পারেনা কিংবা তার অস্তিত্বকে সহজে আবিষ্কার করতে পারেনা।কি জানি,তবে আমার মনে হচ্ছে আমি আবিষ্কার করতে পারবো।
( বন্ধুর মনে যখন ভাইরাস আক্রমন করল,ভালবাসা উথলাইয়া পড়িতে শুরু করল,তখন লেখা শুরু হলো)
টিক…টিক…টিক ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে।চারপাশে সুনসান নীরবতা।আলতো করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সুমন,অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন ঘড়িটার দিকে।সময় কতটা দ্রুত কেটে যাচ্ছে।চোখটা বুজে আলতো করে।
আজ সারাদিন কাজ শেষে অনেক ক্লান্ত শরীর।কাজের ফাঁকে এক মুহূর্তের জন্যেও সোনামনির কথা ভুলতে পারেনি সে।এইতো মাত্র কয়েকটা দিন আগেও জীবনের মুহূর্তগুলো এতটা সুখের মনে হতোনা।খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়া,দুপুরে আফিসে বসে একা একা লাঞ্চ করা,সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরা।তারপর রান্না করা,সাময়িক বিনোদন হিসেবে ইন্টেরনেট এ বসে বসে অনলাইন নাটক বা মুভি দেখা অথবা দেশে থাকা বন্ধুদের সাথে মাসেঞ্জার এ চ্যাট করে আড্ডা জমানো।প্রত্যেকটা দিন এভাবে কেটে যেত।জীবন যেন অনেকটা একঘেয়েমিতে ভরে যাচ্ছিলো।
লাস্ট টার্মে কলেজে পৌছেই সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে! কোন ধরনের নিয়ম বহির্ভুত কাজে যোগ দিব না! প্রপার ক্যাডেট বলতে যা বোঝায়,তাই হব! ঠিক করলাম নামাজ পড়তে হবে! পরদিন ফজর থেকে শুরু করলাম নামাজ পড়া। জুনিয়রকে বলে দিয়েছি রিভেল দিতে,ক্লাস সেভেন এইট নামাজ পড়ে,তাদের থেকে হুজুর দেখেই একটাকে বললাম “ফজরের নামজে জামাতের আগে ডাক দিবা”! জুনিয়রটাও মহাউৎসাহে ডাক দেয় প্রতিদিন! প্রথম দুদিন আমারও চরম ঊৎসাহ!