অতঃপর সেই আমি-২

পার্ট ১ এর পর ২ নং টা ছাড়লামঃ
পার্ট ১ পড়তে ক্লিক করুন

ছোট্ট একটা মফস্বল শহর।১৯৬৫ সাল।পূর্ব পাকিস্তানের নরসিংদী এলাকার শ্রীনগর।এলাকার মাঝামাঝি স্থানে পাশাপাশি দুটি বাড়ী।তার একটা জলিল সাহেবের অন্যটা রনজিত সাহার।ধর্মে ভিন্ন হলেও তাদের অন্যান্য কিছুতে তারা ভিন্ন নয়।দুজন একই অফিসে চাকরী করেন।গত আট বছর ধরে তারা পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন।দু’ পরিবারে বেশ ভাব।যে কোন অনুষ্ঠান কিংবা পারিবারিক কাজে সবাই যেন পরস্পরের জন্য নিবেদিত প্রান।জলিল সাহেবের পরিবারে আছে তার স্ত্রী সহ দুই ছেলে।জলিল সাহেবের দুই ছেলের মাঝে একজন আমার বড় ভাই ফারুক অন্যজন আমি।রনজিত সাহার দুই মেয়ে,জয়িতা আর সুনন্দা।জয়িতার বিয়ে হয়েছে কলকাতার এক ব্যবসায়ীর সাথে।সুনন্দা আমার সাথে কলেজে পড়ে।সুনন্দাকে আমি সুনু বলেই ডাকি।অন্যান্য মেয়েদের চাইতে সুনু একটু আলাদা।তার মাঝে একটা অন্যরকম ভাব আছে যা অন্যদের মাঝে নেই।সুনুর সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হল সে হাসলে গালে টোল পড়ে।ওর মায়াভরা মুখটা আমার সবচেয়ে আপন লাগে।হাসির মধ্যে একটা শিশুসুলভ ভাব রয়েছে।যদিও ছোটবেলায় ও বেশ মোটা ছিল কিন্তু ও যেন দিনদিন আমার কাছে আলাদা রকম আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে।জানিনা আমার আকর্ষন বোধটা অন্য মেয়েদের চেয়ে ওর প্রতি এতটা বেশী কেন।হয়তোবা ওর সেই অন্যরকম বৈশিষ্ট্যের জন্যই।আমরা আলাদা ধর্মের হলেও কখনও সুনু কিংবা আমি পরস্পরকে আলাদা ভাবিনি।মোটকথা সুনন্দাকে আমার বেশ ভাল লাগে।তবে ওকে নিয়ে আমি কখনও সেরকম ভাবনা ভাবিনা।সেরকম ভাবনা বলতে আমি ভালবাসা কিংবা প্রেম-টেম বোঝাচ্ছিনা,আমি বলতে চাইছি আকর্ষনের ব্যাপারটা।
হয়তোবা ভাললাগা কিংবা ভালবাসা দুটি জিনিসই আলাদা কিন্তু একটা ছেলের প্রতি একটা মেয়ের অথবা একটা মেয়ের প্রতি একটা ছেলের আকর্ষন বোধ থাকতেই পারে,সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।সুনন্দা বেশ মজার মেয়ে।যে কোন ব্যাপারে আমার সাথে খোলাখুলি কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেনা।তবে ও বেশ আবেগপ্রবন।নিজে যত কষ্টে বা দুঃখে থাকুক অন্যকে সেটা বুঝতে দেবেনা।তবে আমি ওর মুখের দিকে তাকালেই ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারি।আমার মনে পরছে,আমি আর সুনু একবার স্কুল পালিয়ে গোল্লাছুট খেলতে গিয়েছিলাম বলে ওর মা ওকে বেদম পিটিয়েছিলো।সেদিন আমাদের বাড়ী এসে মায়ের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো।আমিও কেঁদেছিলাম।সেসব দিনের কথা মনে পড়লে এখনও হাসি পায়।
সুনু আজ একলাই কলেজে গেছে।আমি যাইনি।কলেজে আমরা ভর্তি হয়েছি মাত্র দু মাস।কলেজের ক্লাশগুলো কেমন যেন একঘেঁয়ে লাগে।বাবা এজন্য মাঝে মাঝে বকেন।কলেজে শামীম আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।কলেজে কিংবা অন্যসময়ে আড্ডায় শামীমই আমার সঙ্গী।ওর সাথে আমার পরিচয় হাইস্কুল থেকে।ওর বাবা আমাদের এলাকার নামী ব্যবসায়ী।প্রতিদিন কলেজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে সুনু আর আমি একসাথেই ফিরি।আজ জানালার কাছে বসে সুনুর জন্য অপেক্ষা করছি।কিছুক্ষনের মাঝেই হয়তো এসে পড়বে।যেদিন কলেজে না যাই সেদিন ওর জন্য এইসময়টাতে অপেক্ষা করি।
সুনু আসছে।আমি ওকে চুপ করে দেখছি।হাতে বেশকিছু বই।বইগুলো দু হাতে বুকে চেপে ধরে আছে।মাথায় ফিতা দিয়ে বেনী করা চুল।পড়নে সেলোয়ার-কামিজ।চেহারায় বেশি সাজগোজ নেই।সাধারন ভাবে শুধু চোখে কাজল দেয়া আর কপালে টিপ।সুনুকে এমনিতেই ভালো লাগে।ওর বা হাতে একটা ঘড়ি,জয়িতার বর দিয়েছে।সুনু জানালার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।আমাকে দেখলেই ও ওই হাসিটা হাসে,এটা ছোটবেলা থেকেই।ওর হাসিটা দেখলে আমি অন্যরকম একটা টান অনুভব করি,ওর হাসির অর্থটা আবিস্কারের চেষ্টা করি।গালে টোল পড়লে ওর চেহারাটা আসলেই আলাদা লাগে।আমার দিকে তাকিয়ে যখন হাসি দেয় মনে হয় আমি যেন ওর কতটা আপন।আমার বিশ্বাস পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটাও যদি সুনুর হাসি দেখে সে তার দুঃখ ভুলে যাবে।
-এই সুনু শোন
-আসছি
সুনু জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো।হাতে একথলি মোয়া।
-নে,ধর।আজ তিনটে খেয়েছি।আচ্ছা,তুই ডাকলে আমার কি মনে হয় জানিস?
-কি মনে হয়রে?
-তুই আমাকে নুনু বলে ডাকছিস
-তোর চিন্তা ভাবনা না সবসময়ই নিম্নগামী
-যাহ!অসভ্য
-বারে,আমার দোষ কি?আসলে তোরা মেয়েরা নিজেদের কি ভাবিস বলতো?
-তুই না আসলে একটা ইয়ে…
-আমি কি?
-আমার দেড়ী হয়ে যাচ্ছে,চললাম
-বললিনা আমি কি?
-একটা রামছাগল
সুনু আবার সেই হাসিটা হাসলো,মায়াময় হাসি।ও চলে গেলো।আমি চোখ বন্ধ করে হাসিটা আবার মনে করার চেষ্টা করলাম।অনুভব করলাম একধরনের অন্যরকম আকর্ষন।

৪ টি মন্তব্য : “অতঃপর সেই আমি-২”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।