ঘটনা ১৯৯৭ সালের,এসএসসি পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে। আমাদের সাইন্স পার্টির শুধু টিউটোরিয়াল বাকী আর আর্টস পার্টির একটা শেষ পরীক্ষা। যাই হোক এই পরীক্ষা শেষে আর্টস পার্টির ভিতর বিরাট হৈ চৈ ,মহা অসন্তোষ ইতিহাসের এক স্যারকে নিয়ে।স্যার এর সঠিক নামটা ঠিক মনে নাই কিন্তু আমরা সবাই বড়ভাইদের দেয়া টিজনাম টাং টাং হিসাবেই চিনতাম। স্যার ক্যাডেটদের পিছনে খুবই লেগে থাকা টাইপএর ,অসম্ভব রোগা আর কথা বলার সময় কাপতেন, সেটা রাগে না অন্য কোন মানসিক রোগে তা আল্লাহ মাবুদই জানেন।
আর্টস পার্টির ক্ষেপার বহুত কারণ -“স্যার সবসময় অপমান করে কথা বলেন”, “তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ক্যাডেটদের গুষ্টি উদ্ধার করেন” ,”পান থেকে চুন খসলে উপরে জানায় দেন” আর সবচেয়ে বড় ঘটনা আজকে উনি অন্যান্য স্যারদের সামনে আর্টস পার্টিরে পুরা ধুইয়া দিসেন। ওদের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ কিন্তু ১ মার্কের একটা অবজেক্টিভ নিয়ে কনফুসন ছিল।তাই খাতা জমা দেয়ার আগে হলের বেয়ারারে একাডেমী ব্লকে পাঠায় দিয়া স্যারএর কাছে একটা try মারসে। আর যায় কোথায় ?স্যার তো এইটাই চান। স্যার বেয়ারারে ধমক দিয়ে ভাগায় দেয়ার বদলে বিশাল এক ড্রামা করছেন।টিচার কমন রুমে বেয়ারারে সাক্ষী বানায়ে অনেক সময় নিয়ে আর্টস পার্টির সবার চোদ্দ গুষ্টিসহ চরম অপমান করছেন , বলতে গেলে একদম ধুয়ে দিছেন। …..বরাবরের মতোই টিচার্স কমন রুমের বিজ্ঞ স্যারদের অনেকেই মহা উতফুল্ল হয়ে তা উপভোগ করছে। টাং টাং স্যারএর আশু প্রমোশন প্রাপ্তির সম্ভবনায় অনেকে বেশ ঈর্ষান্নীত ও হইছেন।তবে মহান আল্লাহ পাক খুশী হন নাই ,খুশী হইলে ১৯৯৭ সালে পুরা jessore বোর্ডে ফার্স্ট স্ট্যান্ড আমাদের আর্টস পার্টির থেকে কিভাবে হয়?
যাই হোক যখন আর্টস পার্টির তিনজন লাঞ্চে ডাইনিং হলে আমাদের সবাইরে ঘটনা জানালো তখন রাগে ক্ষোভে পুরা ক্লাস ফাইটা পড়ল। সবার একটাই দাবী টাং টাং স্যাররে উচিত শিক্ষা দিতে হবে কারণ কম বেশী সবাই ভুক্তভোগী। যেই দাবী সেই কাজ। ঠিক হলো যেদিন স্যার ডিউটি মাষ্টার সেদিন রাত্রে শেরে বাংলা হাউসের ডিউটিমাষ্টার রুমে ওনারে আটকায় রাখতে হবে। এবং এর পরবর্তী আধাঘন্টা আমরা আর স্বাধীন দেশের পরাধীন ক্যাডেট থাকব না,মুক্তমনের চিন্তা প্রকাশ করবো।
এই কাজে ধরা পরলেই আউট তাই পুরা ব্যাচ সতস্ফুর্তভাবে আন্ডারগ্রাউন্ড কাজ শুরু করে দিলো। ডিউটি মাস্টারের রোস্টার হাতে পাওয়ার পর দেখলাম স্যার এর দুর্ভাগ্য , আমাদের এসএসসির ছুটির আগের দিন তার ডিউটি।অনেক চিন্তা কইরা দেখলাম হাউস বেয়ারা হক ভাইরেও আটকায় রাখা জরুরী কারণ উনার রুমও দুইটা রুম পরে, radius কম তাই রিস্ক বেশী। । আর দরজায় তালা লাগানোর সময় শব্দ হবে তাই পায়জামার শক্ত দড়ি use করতে হবে।আর শেরে বাংলা হাউস এ ক্লাসমেট যাদের গভীর রাত পর্যন্ত বহুমূত্র আর ইবাদতের অভ্ভাস তাদেরও সতর্ক করা হলো যে “বত্স মহেন্দ্রক্ষণ নিকটবর্তী,ঐ দিন লাইটস অফের আগেই মুক্ত হইয়া যাও”
সূক্ষ পরিকল্পণামতো ঘটনার দিন রাত ১টায় স্যার ডিউটিমাষ্টার রুমে ঘুম দিলে আমরা উনার দরজার বাইরে নাইলন দিয়া শক্তভাবে লক কইরা দিলাম।গ্রীন সিগনাল দেয়ার সাথে সাথে সব পোলাপান বিস্কুটের খালি টিন,বোতল,চামচ নিয়া পুরা তিন হাউস কাপায় ফেলল।আর ভাষার কথা কি বলব ? সেটা এতই অশাব্য যে , রবিঠাকুর শুনলে হয়তো নোবেলই পাইতেন না-বাংলাভাষার উপর আগ্রহ হারায় ফেলতেন,মাইকেল মধুসূদন বিলেতেই থাকতেন আর কাদের সিদ্দিকী সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন “এই ভাষার জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করছি ” -এক হাউস শেষ তো আরেক হাউস শুরু।ব্যচের সবচেয়ে নিরীহজনের ভাষা শুইনাও চমকায় গেলাম আর আর্টস পার্টির কথা তো বাদই দিলাম । প্রায় ২০ মিনিট ধরে স্যারএর উপর শান্তি বর্ষিত হইল। এর পর যে যার রুমে লুকায় গেল।
স্যার ওনার বন্ধ দরজায় লাথির পর লাথি মারতে লাগলেন কিন্তু জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় তৈরী দরজা ওনার অবাধ্যই থাকল আর শেষে যখন হাউস বেয়ারা হক ভাইরে ডাকতে লাগলেন তখন হক ভাইয়েরও করুণ কন্ঠসর শোনা গেল — ” স্যার এরা আমারেও আটকায় রাখছে “
পরের ঘটনা ইতিহাস। ভোররাতের দিকে ক্লাস ১২ (মর্তুজাভাইদের ব্যাচ ৯১-৯৭) স্যাররে পাগলপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে। আমরা এসএসসির ছুটি শেষে আর স্যাররে পাই নাই। স্যার ভলান্টারী ট্রান্সফার নিয়ে আমরা আসার আগেই অন্য কলেজ এ গায়েব।
আজ ১৮ বছর পর আমি বহুদূর থেকে সেই ঘটনার পরিকল্পনা ও নাইলনের দড়ি সরবরাহকারী হিসেবে স্যারএর উদ্দেশে ক্ষমাপ্রাথী।শ্রদ্ধেয় স্যার -আসলেই অনেক ছোট ছিলাম আমরা তাই ক্ষমাপ্রাথী ,যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন।
মেহেদী (ব ক ক ৯৩-৯৯),সিডনি -অস্ট্রেলিয়া।
আর্টস পার্টির ক্ষেপার বহুত কারণ -“স্যার সবসময় অপমান করে কথা বলেন”, “তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ক্যাডেটদের গুষ্টি উদ্ধার করেন” ,”পান থেকে চুন খসলে উপরে জানায় দেন” আর সবচেয়ে বড় ঘটনা আজকে উনি অন্যান্য স্যারদের সামনে আর্টস পার্টিরে পুরা ধুইয়া দিসেন। ওদের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ কিন্তু ১ মার্কের একটা অবজেক্টিভ নিয়ে কনফুসন ছিল।তাই খাতা জমা দেয়ার আগে হলের বেয়ারারে একাডেমী ব্লকে পাঠায় দিয়া স্যারএর কাছে একটা try মারসে। আর যায় কোথায় ?স্যার তো এইটাই চান। স্যার বেয়ারারে ধমক দিয়ে ভাগায় দেয়ার বদলে বিশাল এক ড্রামা করছেন।টিচার কমন রুমে বেয়ারারে সাক্ষী বানায়ে অনেক সময় নিয়ে আর্টস পার্টির সবার চোদ্দ গুষ্টিসহ চরম অপমান করছেন , বলতে গেলে একদম ধুয়ে দিছেন। …..বরাবরের মতোই টিচার্স কমন রুমের বিজ্ঞ স্যারদের অনেকেই মহা উতফুল্ল হয়ে তা উপভোগ করছে। টাং টাং স্যারএর আশু প্রমোশন প্রাপ্তির সম্ভবনায় অনেকে বেশ ঈর্ষান্নীত ও হইছেন।তবে মহান আল্লাহ পাক খুশী হন নাই ,খুশী হইলে ১৯৯৭ সালে পুরা jessore বোর্ডে ফার্স্ট স্ট্যান্ড আমাদের আর্টস পার্টির থেকে কিভাবে হয়?
যাই হোক যখন আর্টস পার্টির তিনজন লাঞ্চে ডাইনিং হলে আমাদের সবাইরে ঘটনা জানালো তখন রাগে ক্ষোভে পুরা ক্লাস ফাইটা পড়ল। সবার একটাই দাবী টাং টাং স্যাররে উচিত শিক্ষা দিতে হবে কারণ কম বেশী সবাই ভুক্তভোগী। যেই দাবী সেই কাজ। ঠিক হলো যেদিন স্যার ডিউটি মাষ্টার সেদিন রাত্রে শেরে বাংলা হাউসের ডিউটিমাষ্টার রুমে ওনারে আটকায় রাখতে হবে। এবং এর পরবর্তী আধাঘন্টা আমরা আর স্বাধীন দেশের পরাধীন ক্যাডেট থাকব না,মুক্তমনের চিন্তা প্রকাশ করবো।
এই কাজে ধরা পরলেই আউট তাই পুরা ব্যাচ সতস্ফুর্তভাবে আন্ডারগ্রাউন্ড কাজ শুরু করে দিলো। ডিউটি মাস্টারের রোস্টার হাতে পাওয়ার পর দেখলাম স্যার এর দুর্ভাগ্য , আমাদের এসএসসির ছুটির আগের দিন তার ডিউটি।অনেক চিন্তা কইরা দেখলাম হাউস বেয়ারা হক ভাইরেও আটকায় রাখা জরুরী কারণ উনার রুমও দুইটা রুম পরে, radius কম তাই রিস্ক বেশী। । আর দরজায় তালা লাগানোর সময় শব্দ হবে তাই পায়জামার শক্ত দড়ি use করতে হবে।আর শেরে বাংলা হাউস এ ক্লাসমেট যাদের গভীর রাত পর্যন্ত বহুমূত্র আর ইবাদতের অভ্ভাস তাদেরও সতর্ক করা হলো যে “বত্স মহেন্দ্রক্ষণ নিকটবর্তী,ঐ দিন লাইটস অফের আগেই মুক্ত হইয়া যাও”
সূক্ষ পরিকল্পণামতো ঘটনার দিন রাত ১টায় স্যার ডিউটিমাষ্টার রুমে ঘুম দিলে আমরা উনার দরজার বাইরে নাইলন দিয়া শক্তভাবে লক কইরা দিলাম।গ্রীন সিগনাল দেয়ার সাথে সাথে সব পোলাপান বিস্কুটের খালি টিন,বোতল,চামচ নিয়া পুরা তিন হাউস কাপায় ফেলল।আর ভাষার কথা কি বলব ? সেটা এতই অশাব্য যে , রবিঠাকুর শুনলে হয়তো নোবেলই পাইতেন না-বাংলাভাষার উপর আগ্রহ হারায় ফেলতেন,মাইকেল মধুসূদন বিলেতেই থাকতেন আর কাদের সিদ্দিকী সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন “এই ভাষার জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করছি ” -এক হাউস শেষ তো আরেক হাউস শুরু।ব্যচের সবচেয়ে নিরীহজনের ভাষা শুইনাও চমকায় গেলাম আর আর্টস পার্টির কথা তো বাদই দিলাম । প্রায় ২০ মিনিট ধরে স্যারএর উপর শান্তি বর্ষিত হইল। এর পর যে যার রুমে লুকায় গেল।
স্যার ওনার বন্ধ দরজায় লাথির পর লাথি মারতে লাগলেন কিন্তু জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় তৈরী দরজা ওনার অবাধ্যই থাকল আর শেষে যখন হাউস বেয়ারা হক ভাইরে ডাকতে লাগলেন তখন হক ভাইয়েরও করুণ কন্ঠসর শোনা গেল — ” স্যার এরা আমারেও আটকায় রাখছে “
পরের ঘটনা ইতিহাস। ভোররাতের দিকে ক্লাস ১২ (মর্তুজাভাইদের ব্যাচ ৯১-৯৭) স্যাররে পাগলপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করে। আমরা এসএসসির ছুটি শেষে আর স্যাররে পাই নাই। স্যার ভলান্টারী ট্রান্সফার নিয়ে আমরা আসার আগেই অন্য কলেজ এ গায়েব।
আজ ১৮ বছর পর আমি বহুদূর থেকে সেই ঘটনার পরিকল্পনা ও নাইলনের দড়ি সরবরাহকারী হিসেবে স্যারএর উদ্দেশে ক্ষমাপ্রাথী।শ্রদ্ধেয় স্যার -আসলেই অনেক ছোট ছিলাম আমরা তাই ক্ষমাপ্রাথী ,যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন।
মেহেদী (ব ক ক ৯৩-৯৯),সিডনি -অস্ট্রেলিয়া।
ও রে দুষ্ট পোলাপাইন!
দাদা আমি কিন্তু স্যাররে কিসুই বলি নাই। আমার আর্টসপার্টির প্রিয়বন্ধু রুম্মানরে ধরেন। এখন রাব এর মিডিয়া উইং এর উপ পরিচালক, শান্তশিষ্ট সবসময় টিভিতে দেখা যায় ,দেশের উজ্জল নক্ষত্র কিন্তু সি সি বি তে ওর সব ব্লগে সবসময় আমারে পঁচায়..তাই এই ক্রিসমাসের ছুটিতে আমি কিসুটা মুক্ত হইলাম... 😀
১০ টা ফ্রন্ট রোল দে।
ব্লগে স্বাগতম।
হ টিভিতে ইদানিং রুম্মানরে দেখা যায়।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
থাঙ্কস রাজিবভাই , সি সি বি তে আপনাদের সবার অসাধারন লেখা বিশেষ করে মাসরূফের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখাটা এক কথায় অপূর্ব। ছুটি শেষের আগে যতটুকু পারতেসি পইরা শেষ করে ফেলতেসি... ভালো থাকবেন।
এই জাতের লেখা গুলি আর আসে না কেনো? সি সি বি তে নতুন তাই আগের লেখা গুলি আবিষ্কার করছি। আগে দেখি অনেকে অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা দিয়েছে, ওরা কই গেল সব?