“এই যে লাটসাহেবের বিবি, শীঘ্রই ওঠো। তোমার কাজগুলো তোমার কোন সতীন এসে করে দিয়ে যাবে শুনি?” – মহিলা দজ্জাল পুলিশটার ধমকে ঘুম ভাঙল শিউলির। আহ ! কি শান্তির ঘুমটাই না নষ্ট করলো ওই দজ্জাল বেটি ! – মনে মনে ভাবে শিউলি।
গত ৫ বছরে প্রায় ১৫ টার মত রুমে থেকেছে ও। মানে ওকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। জেলারের কড়া আদেশ এই রুমে যদি ও কোনও ঝামেলা করে তাহলে ওর নামে কমপ্ল্যাইন করা হবে। সেই ভয়ে শিউলি এখন আর অতো বেশি ঝামেলা করে না। কিন্তু এখনকার দিনগুলি ওর খুব অসহায়ভাবে কাটে। সময় যেন কাটতেই চায় না এই জেল রুমে। সেই শৈশবের কত স্মৃতি মনে পরে জায়। আর বুক ফেটে যায় কষ্টে। মাঝে মাঝে ভাবে ওর জীবনটা কি এরকম হওয়ার কথা ছিল? সবাই বলে, “আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন”। একসময় এ কথাটা শিউলিও বিশ্বাস করত। কিন্তু এখন আর করে না। বিশ্বাস করার কোনও কারণও খুঁজে পায় না। সারাদিন জেলের বাগানে কাজ করে ও। আর সন্ধ্যা হলেই শুরু হয়ে যায় ওর পুরানো স্মৃতি হাতড়ে বেরানো।
চাঁদপুর জেলার মতলব থানার ছোট একটা গ্রামে জন্ম ওর। এইচ.এস.সি পরীক্ষা পর্যন্ত শিউলি ওর জীবনের ১৮ টি বছর কাটিয়েছে ওখানে। ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলি। ছোটবেলা থেকে খুব ডানপিটে স্বভাবের ছিল ও। এখনো মনে আছে ওর, যখন ওর ১১ বছর বয়স, ওদের বাড়ির পাশের বিশাল আমগাছটার আম পাড়তে গিয়ে পরে গিয়ে ওর হাত ভেঙ্গে যায়। সেই কাণ্ড দেখে ওর মা তো কেঁদেকেটে অস্থির। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল শিউলি সেবার। হাতের জন্য নয়, ওর আব্বা ওকে কি বলে সেই ভয়ে। আব্বাকে প্রচণ্ড ভয় পায় ও। যাকে বলে বাঘের মত ভয় পাওয়া। কিন্তু অবাক করা কাণ্ড হচ্ছে সেবার আব্বা কিছু বলে নাই। মনে মনে আল্লাহ্র কাছে অনেকবার শুকরিয়া জানিয়েছিল ও। সেই কোন ছোটবেলার কাহিনী। এখনো ভাবলে ভালো লাগে শিউলির। কিন্তু যখন ওর বর্তমান অবস্থাটা চিন্তা করে তখন আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। অন্য সবার সাথে অযথাই মারামারি, চুলাচুলি করে।
শুধু যে ডানপিটে ছিল তা কিন্তু নয় পড়াশোনাটাও খুব মনোযোগ দিয়ে করত ও। ওদের গ্রামের মেয়েরা অতো বেশি কেউ পড়াশোনা করতো না। কিন্তু গ্রামের সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে ছিল বলে সে সুযোগটা পেয়েছিল ও। ভালো ছাত্রী হওয়ার দরুন বোর্ড পরীক্ষাগুলোতেও ভালো ফলাফল করেছিল। তাই ওর আব্বা সিদ্ধান্ত নেন যে এবার মেয়েকে শহরে পাঠাবেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়াবেন। শিউলিরও খুব ইচ্ছা। সবই ঠিক ছিল কিন্তু বেঁকে বসলেন ওর মা। তিনি কিছুতেই মেয়েকে একা শহরে পাঠাবেন না। শেষ পর্যন্ত আব্বা অনেক কষ্টে রাজি করায় মাকে।
শিউলি তার আব্বার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। ওর কাছে সেটা তখন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। এটাই ছিল ওর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ১ম বছরে হলে সিট না পাওয়ায় অনেক অসুবিধা হয়েছিল। ঢাকায় কোনও আত্মীয়- স্বজন না থাকায় মহিলা হোস্টেলেই থাকতে হয়েছিল ওকে। দ্বিতীয় বছরে অনায়াসেই সিট পেয়ে যায় হলে। শামসুন নাহার হলের সাথে অ্যাটাচড্ ছিল ও। আস্তে আস্তে সবার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিশেষ করে সিনিয়র আপুদের সাথে। তার দরুন কোনও মিটিং-মিছিল হলেই ওকে ডেকে নিয়ে যেত আপুরা। পড়াশোনার অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও ও মানা করতে পারত না। পাছে আপুদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এভাবেই ধীরে ধীরে ছাত্র-রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পরে শিউলি। বড় বড় নেতাদের সাথেও যোগ-সংযোগ বেরে যায়। এভাবেই কাটতে থাকে দিন।
তখন শিউলি ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী অর্থাৎ অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। ক্যাম্পাসে ওর অন্যরকম একটা ক্ষমতা ছিল। হঠাৎ একদিন এক বড় গোছের নেতা ওকে ডেকে পাঠায় রাতের বেলা। কি এক জরুরী গোপন মিটিং আছে! শিউলিও সাত- পাঁচ না ভেবে জরুরী মনে করে যায়। গিয়ে রীতিমত পুরা অবাক ও। ও ছাড়া আর কেউ মিটিং-এ উপস্থিত নেই। মনে মনে একটু ভয় পেয়ে যায়। উল্লেখ্য নেতাটি ড্রয়িং রুমে আসলে ও ঘটনা কি জানতে চায়। নেতাটিকে সবাই সোহরাব ভাই বলেই চেনে। সে বলে যে আমার বউ বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে তাই তোমাকে ডেকে পাঠালাম একটু গল্প করার জন্য। আরও ভয় পেয়ে যায় শিউলি। ও জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার সোহরাব ভাই, আপনার চোখ এত লাল কেন?” সোহরাব ভাই ঢুলতে থাকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না শিউলির যে সোহরাব ভাই মাতাল হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই সোহরাব ভাই ওকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। দম বন্ধ হয়ে আসে শিউলির। মাথা গরম হয়ে যায় ওর। কি করবে ভেবে না পেয়ে ড্রয়িং-রুমের ফুলদানিটা ভেঙ্গে সোহরাব ভাইয়ের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর যতবার পারলো ভাঙ্গা ফুলদানিটা সোহরাব ভাইয়ের পেটে ঢুকাল। কিছু না ভেবেই শিউলি চলে আসে হলে। চোখ-মুখ পুরা লাল হয়ে যায় ওর। বান্ধবীরা কি হয়েছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর দিতে পারে না ও।
যথারীতি পুলিশ তদন্ত করে শিউলিকে খুঁজে বের করে। শিউলি সব স্বীকার করে সত্য ঘটনা বলে পুলিশকে। সোহরাব ভাই নামক ওই পিশাচটা নাকি দুইদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তারপর মারা যায় ওই নরপশুটা। খুব খুশি হয় শিউলি। একটা মানুষ নামক জানোয়ারকে তো ও মারতে পেরেছে! আদালতের বিচারে ১৫ বছরের সশ্রম জেল হয় ওর। আব্বা-আম্মা কার কাছ থেকে যেন এসব ঘটনা শুনে ঢাকায় এসে শিউলিকে ত্যাজ্য সন্তান করে। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে ও ওই পিশাচটাকে খুন করেছে কোনও ব্যাখ্যা না শুনেই তারা চলে যান গ্রামে। অতঃপর শিউলির হাজত-বাস শুরু হয়ে যায়।
তারপর………….
তারপর শুধু শিউলি তার পুরানো স্মৃতিগুলোকেই হাতড়ে বেড়ায়। এরপরে কি হবে ওর ঠিক জানা নেই। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কোথায় যাবে তাও যানা নেই। শুধু এখন পুরানো স্মৃতিগুলোকেই হাতড়ে বেরানো…..…
( বি.দ্র.- সিসিবিতে এটাই আমার প্রথম লেখা। কোনও ভুল-টুল হইলে মাফ কইরা দিয়েন)
:brick: এবার পড়ে আসি 😀
😛 ভাইয়া, আনাড়ি হাতের লেখা। কষ্ট করে পরার জন্য ধন্যবাদ।
হুমমম....প্রথম লেখা ভালই লিখেছ :clap:
😛 ধন্যবাদ ভাইয়া।
ব্লগে স্বাগতম ফারজানা... মন খুলে লিখতে থাক।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। দোয়া করিয়েন। 🙂
ভাল হইসে :clap:
আরও লিখতে থাকো 😀
আপা, দোয়া রাইখেন আপনার এই ক্ষুদ্র লকার পা্টনার এর জন্য... 🙂
ব্লগে স্বাগতম ফারজানা… মন খুলে লিখতে থাক।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।। 🙂
ভাল লাগলো গল্পটি। শুরুটা পড়তে বেশ নতুনত্ব পেয়েছি। আরেকটু টানলে আরো ভাল হতো।
ব্লগে স্বাগতম!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
পরের বার থেকে আরও ভাল লেখার চেষ্টা করব ইশাআল্লাহ্।
ফারজানা তোমার গল্পটা আমার খুবই ভাল লেগেছে। ভাল লাগার কারণ শিউলির জীবনটা বর্তমানে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেলেও তার জীবনে একটা আদর্শ আছে এবং সেটা বাস্তবায়ন করতে পেরে সে কষ্টকে মেনে নেয় - এরকম একটা মেসেজ থাকার কারণে। আশা করি নিয়মিত তোমার লেখা দেখবো।
ভাল থেক।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। এরকম অনুপ্রেরণা পেলে ইশাআল্লাহ্ আর ভাল লিখতে পারব। 🙂
:clap:
বেশ একটা চমক দিয়ে গল্পটা শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় চরিত্রটি একটি শক্ত বুনিয়াদের উপর তৈরী।
ডালপালা বিস্তৃত করে একটূ পরিসর বাড়ানো গেলে বোধকরি আরো ভাল লাগতো।
ব্লগে স্বাগতম।
সৈয়দ সাফী
ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ। আনাড়ি হাতের চেষ্টা আর কি!! 😛
পরের বার থেকে আর ভাল লিখার চেষ্টা করব 🙂
বাহ! 🙂 ব্লগে স্বাগতম ফারজানা। দুইহাত খুলে লিখতে থাকো।
আপা, অনেক ধন্যবাদ। দোআ রাইখেন।। 🙂
আপু, হাত খুলে ফেল্লে লিখবে কিভাবে?? 😛
:))
ইসতিয়াক...কেয়ামত পর্যন্ত লঙ্গাপ, সিনিয়রের কথায় ডাউট দেস?? এত্ত সাহস পোলাপানডির??
ভাল লাগলো গল্পটি। শুরুটা পড়তে বেশ নতুনত্ব পেয়েছি। আরেকটু টানলে আরো ভাল হতো।
ব্লগে স্বাগতম!
ধন্যবাদ ভাইয়া্! চেষ্টা করবো পরের বার থেকে আরও ভাল লিখার... 🙂
প্রথম ব্লগ লেখার পর কিছু ফরম্যালিটিজ আছে,তাড়াতাড়ি করে ফেল..
ভাইয়া, আমি তো এখানে নতুন তাই বুঝতে পারছি না কি ফরম্যালিটিজ আছে?? 🙁
না,তেমন কিছুই না,জাস্ট ১০০ টা ফ্রন্ট রোল,১০০ টা ফ্রগ জাম্প,১০০ টা সাইড রোল আর মাত্র ১০০টা পুশ আপ;নিজে নিজে দিয়ে দিতে হয়।(এইটা অনেস্টি+ইনটিগ্রিটি এক্সাম)
আর কমেন্টের সাথে :frontroll: এইটা ১০ কপি জমা দিতে হয় সিসিবিতে
😛 😛 ভাইয়া, দিতেই হবে? ছাড় দেওয়া যায় না?
মাহমুদ ভাই, কারেকশন, এ জিসি, বিসি না। জিসি হলে মোটরসাইকেল দেয়ার নিয়ম B-)
@ফারজানা,আমি ছাড় দিতেই চাইছিলাম কিন্তু এডু স্যার বলছে...
@সামিয়া,মোটরসাইকেল মানে?
লেখা ভালো হইছে... :clap: :clap:
প্রথম ব্লগ লেখার পর কিছু ফরম্যালিটিজ আছে,তাড়াতাড়ি করে ফেল..
তারপরে :teacup: :teacup:
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু কি ফরম্যালিটিজ আছে? কিছুই বুঝতে পারছি না ... 🙁
বোমাবাজ সামিয়াপুরে জিগা... 😛
সেই ভালোমতো বুঝাইতে পারবে।।
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
সিসিবিতে স্বাগতম ফারজানা। গল্পটা আরো বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে এভাবে লিখতে লিখতে একসময় দেখবে অনেক ভালো লিখে ফেলেছো। :thumbup:
হুম.............. ব্লগের নিয়ম-কানুন দেখি কিছুই জানো না! আর জানবে কি করে, ভাইস প্রিন্সিপাল সেই যে ছুটি নিছে..... আর খবরই নাই! অ্যাডজুটেন্ট মাঝখানে এসে চক্কর দিয়ে আবার ঘাপটি মেরেছে! কিন্তু পোলাপাইন আছে কি জন্য?? হুম.............
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ।
ব্লগ এর নিয়ম-কানুন ধীরে ধীরে ইশআল্লাহ্ শিখে যাবো। 😀
সিসিবিতে স্বাগতম আপু। হাত পা খুলে লিখতে থাকো!!!! 🙂
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ধন্যবাদ ভাইয়া... 🙂
হাত পা খুলে... 😛 ... ;))