বয়স এখন একান্ন – ক’দিন বাদেই বাহান্নতে পা দিব। আর ‘যাহাই বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন’ – তাই বয়সের হিসাব ছেড়ে দিয়ে ইংরেজীতে প্রচলিত ‘গ্রেসফুলি এইজিং’ কথাটাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আমাদেরকে ধীরে ধীরে বার্ধক্যকে বরণ করে নিতে হয়। তারপরেও বয়স বাড়ার কিছু উপসর্গ থাকে আর সেই সাথে আসে কিছু উপলব্ধি। সৃষ্টিকর্তাকে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে কিনা সেই উপলব্ধির সূত্র ধরে গত বছর পঞ্চাশ বছর বয়সে পবিত্র হজ্ব পালন করি।
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ আট
মেয়েটি সবটুকু দিয়ে ছেলেটিকে ভালই বেসেছিল। ছেলেটি শুধু শরীরটুকু নিয়ে কেটে পড়ল। মেয়েটি শরীর জুড়ে কামড়ের দাগ, নখের আচড়, কালশিটে ছাপ, তলপেটে ব্যথা, ভারী বুক আর জলে ভেজা চোখ নিয়ে লুকিয়ে থাকে।
হুজুরের কাছে আরবী পড়তে এসে এ কী হল মেয়েটির … কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, “হুজুর, ব্যথা পাই।” হুজুর উত্তেজনায়, ব্যস্ততায় উত্তর দিয়েছিল, “আল্লাহ্, আল্লাহ্, কর!”
রাস্তার বোবা অর্ধ-উলঙ্গ পাগল মহিলাকেও একদিন দলবেঁধে জাপটে ধরল ওরা।
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ সাত
এক দেশের এক সাদা মেয়ে একটু বেশি চিনি আর দুধ দিয়ে চা খেতে খেতে বইয়ের পাতা উল্টায় – দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেইন। বই পড়তে পড়তে মনে হয় কাল রাতে সে কোন খদ্দের পায়নি। আজকের দিন-রাতও যদি এভাবে যায়। না ভাবতে পারে না – আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা আর অম্বলের ব্যথাটা একসাথে চাড়া দিয়ে ওঠে। আরেকটু চিনি নেবার জন্য কাউন্টারে আসতেই পরিচিত এক খদ্দেরের সাথে দেখা হয়ে যায়।
বিস্তারিত»পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ সাত
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে, ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হেঁটে যাই একা। চেম্বার থেকে হেঁটে ফিরব বাসায়। লালবাগ থেকে শঙ্কর। মাঝের পথটুকু – আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নিউ মার্কেট, সাইন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর, স্টার কাবাব, আবাহনী মাঠ – কখনো দুনিয়াবি চিন্তা, কখনো বাজার-সদাই, কখনো লালনের গানের সাথে কেটে যায়।
হঠাৎ মনে পড়ে যায় সেই হাসিমুখ মানুষটিকে। সুগন্ধি পান খেয়ে, মিঠে গলায় হারিয়ে যাওয়া দিনের কথা বলতেন। “বুজলেন নি বাজান?
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ ছয়
পরীক্ষার হল একমাত্র জায়গা যেখানে একটি ছেলে একটি মেয়েকে নির্ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারে, “তোমারটা একটু দেখি, দেখাবা?”
গল্পটার শুরু এখানেই।
মেয়েটি’র খুব রাগ হয়েছিল। ছেলেরা এত্ত খারাপ!
অনেক অনেক দিনের পরে মেয়েটি একদিন বলেছিল, “দেখবা?”
চাঁদ তখন ভীষণ ছুটছে মনকে নিয়ে যেন ডুরি ছেঁড়া ঘুড়ি।
পূর্ণিমার আলো-আঁধারিতে মেয়েটি কী এক হাসি হেসেছিল,
সেই থেকে ছেলেটি অন্ধ-কালা-বোবা!
কোন এক ভরা পূর্ণিমাতে দূরের এক সাঁওতাল পল্লীতে কালো এক ছোঁড়ার কাঁকাল ধ’রে মাতাল এক ছুঁড়ির নাচার বড় ইচ্ছে জমা হয়েছিল অনেক অনেক দিন ধ’রে,
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ চার
একটা ছেলে দেশ থেকে অনেক দূরে, খানিকটা অভিমান, খানিকটা অহং আর খানিকটা ভাগ্য মিলিয়ে। মাঝে মাঝে ভাত খেতে বসলে দেশের খাবারের সেই স্বাদের কথা মনে পড়ে যায়। এখনো সে দেশ নিয়ে ভাবে, দেশের প্রকৃতির ছবি, দেশের মানুষের হাসিমুখ কিংবা দেশের জয় দেখলে পুলকিত হয়।
মনে মনে কে যেন বলে, “বুঝি, এত পচা একটা দেশ, তবু কেন জানি তাকে না ভালবেসে থাকা যায় না।”
একটা মেয়ে জানে আরেকটা মানুষ বড্ড খামখেয়ালিতে পূর্ণ;
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ এক
মানুষটা আকাশের পানে চেয়ে থাকে। চকচকে শহরের ঝকঝকে আলোর ফাঁকে মেঘের আড়ালে আছে ঠান্ডা গোল চাঁদ। বেরিয়ে আসে, আবার ঢাকা পড়ে। জীবনে একবার প্রকাশিত হওয়া, আবার লুকিয়ে থাকার যুগপৎ চেষ্টা – লোকটি মনে মনে হাসে – হাসতে হাসতে চোখে জলের ধারা নামে। কেন কে জানে?
অনেক দূরে আরেকজন চেয়ে ছিল আরও বেশি তন্ময় হয়ে চাঁদের পানে। জোছনা গলে গলে নেমে আসছে যেন নদীর জল হয়ে।
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ পাঁচ
এই দেশে কালো লোকটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে কিছু ফেলে দেয়া খাবার খুঁজে নিয়ে ক্ষুধা মেটায়। প্রথম কয়েক লোকমা গোগ্রাসে গিলে নেয়। স্বাদ, গন্ধ কোন কিছুই তো কমতি লাগে না তার কাছে! পেটের কোণে একটু ভুটভাট হয় এই যা। ক্ষুধা কমে এলে একটু আরাম ক’রে মেহগিনি গাছটার সাথে হেলান দিয়ে বাকিটুকু ধীরে ধীরে গিলতে থাকে। তারপরে উজ্জ্বল, খোলা আকাশের পানে চেয়ে একটু হেসে দেয়।
আরেক দেশে সাদা মেয়েটি শেষ রাতে এক কাপ কফির পয়সা জোগাড় করে ব্লোজব-এর বিনিময়ে।
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ তিন
একটা ছেলে কী সুন্দর বাঁশি বাজায়। এই যেদিন একটু ফুল-টুল ফোটে, চাঁদ-টাদ উঠে, সেদিন বাঁশির সুরটাও যেন চড়ে বেশ! মেয়েটি বলেছিল, একটা কথা তার খুব জানার-শোনার ইচ্ছা বহুদিনের – সেও অপেক্ষায় থাকে, যেদিন একটু ফুল-টুল ফোটে, চাঁদ-টাদ উঠে, যদি ছেলেটি আজ বলে।
না বলা, না জানা’র ব্যথা যে কী ভীষণ বাজে বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে!
আরেকটি ছেলে ভালই বাসতে গিয়েছিল নির্ভেজাল জীবনের বাইরে।
বিস্তারিত»ছায়া কিংবা ছবিঃ দুই
কৈশোরে বিভূতিভূষণ’র লেখা ‘পথের পাঁচালী’ পড়ে মন আটকে গিয়েছিল অপু’র চরিত্রে, কাহিনী’র বিন্যাসে, আর জীবনবোধ বিশ্লেষণে। অনেক পরে টেলিভিশনের পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের হাতে গড়া সেই উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন দেখেছিলাম।
পার্থক্যটা পরে বলছি।
বাংলা’র শিক্ষক শিখিয়েছিলেন – ‘অপু আমাদের সমষ্টিগত কৈশোর – ব্যাখ্যা কর। – এটি ছিল পরীক্ষার সবচেয়ে ওপেন কোশ্চেন!
সেই উপন্যাস আমার এখনো সেরা পড়ার তালিকায় – সবার ওপরেই আছে!
কাছে এসে,
বিস্তারিত»পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ ছয়
“চাঁন রাইতে চাঁদনী চক যাইবি না কিলা? এক্কেরে আসল মজা পাইবি।”
পুরনো ঢাকার এই সংলাপ মিথ্যা নয় প্রমাণ পেলাম। একবার ঈদের আগের রাতে মা’র ব্লাউজ আনতে গেলাম। দর্জি ডেলিভারি দিতে দেরি করছে। পরে বুঝেছিলাম সে আসলে বানায়নি সেই ব্লাউজ, শুধু কাপড় কেটে রেখে দিয়েছে, সেলাই বাকি! অথচ দু’দিন আগে ডেলিভারির ডেট ছিল।
আমি রাগে, ক্ষোভে গড়গড় করছি, পায়চারি করছি, আর আশেপাশের ঘটনা দেখছি।
পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ পাঁচ
“এই যে আসেন!” কঠিন অথচ কৌতুক মেশানো গলায় ডাক এলো পেছন থেকে।
ঘুরে তাকালাম, বিক্রেতা দুই হাতে কী সব একত্রে মাখাচ্ছেন আর হাঁক দিচ্ছেন, “এই যে আসেন, বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা বাড়ি লিয়া যায়! ধনী-গরিব ছবায় খায়, মজা পাইয়া লিয়া যায়! দাদায় খায়, দাদি তৃপ্তি পায়!”
বুট, মুরগি, ডিম, কিমা, গিলা, কলিজা, মগজ, ঘি, চিড়াসহ অসংখ্য পদ দিয়ে তৈরি হয় ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামের এই অদ্ভুত ইফতার আইটেম;
পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ চার
পথ হাঁটতে হাঁটতে রিকশায় চড়া প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। নিউমার্কেট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, মহাখালি কিংবা গুলশান থেকে আজিমপুর অথবা লালবাগ, সদরঘাট হতে এলিফ্যান্ট রোড, রায়ের বাজার থেকে শাহবাগ, আর রাতে সব কাজ শেষে লালবাগ থেকে শংকর হেঁটেই যাতায়াত করতাম। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
এর মধ্যে রিকশা ভাড়াও অনেক বেড়ে গিয়েছিল টের পাইনি। ধাক্কাটা খেলাম এক সন্ধ্যায়। লালবাগ চৌরাস্তায় পথের ক্লান্তি নিয়ে চলতে থাকা একজন এখানকার স্থানীয় এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করেছেন,
পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ তিন
লোডশেডিং শুরু হল। ঠিক একঘন্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। অন্ধকার পথ ধরে ফিরছি।
ঘন ঘন লোডশেডিং হয় বলে সন্ধ্যার পর রোগীও আসে কম! লালবাগ আর আজিমপুর জুড়ে লোডশেডিং-এর প্রাবল্য খুব বেশি, বলতে গেলে সুষম সবিরাম। গলির ভেতরটায় রিকশাগুলো জ্যাম লাগিয়ে ফেলেছে। এরা কিভাবে যেন জ্যাম বাধায়, আবার কিভাবে কিভাবে যেন জ্যাম ছুটে যায়! সারি সারি রিকশা কেউই কোনদিকে যেতে পারছে না। আমি শরীরটাকে কায়দা করে বাঁকিয়ে দুই রিকশার মধ্যে দিয়ে পার হবার সময় কানে এলো রিকশায় বসা ছেলেটি বলছে,
পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ দুই
ডিম পাড়া মুরগির মত লাবণ্য ঘিরে থাকে কারুর চেহারায় – কবিতায় পড়ি আর বাস্তবে মেলানোর চেষ্টা করি। কাপ্তান বাজার হয়ে হেঁটে বাসায় ফিরি সান্ধ্য অফিস শেষে। জীবনের প্রথম চাকুরি বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা আটটা। দু’দিন হল পাল্লা দিয়ে বাজারের দুই প্রান্তে রাতে ওয়াজ মাহফিল আর কাওয়ালি চলেছে। উৎসব শেষে প্যান্ডেল খোলার কাজ চলছে।
বাজারে প্রায়ই বেশি আয়ের কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষদের কাজকারবার মনে দাগ কাটে।