পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ তিন

লোডশেডিং শুরু হল। ঠিক একঘন্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। অন্ধকার পথ ধরে ফিরছি।
ঘন ঘন লোডশেডিং হয় বলে সন্ধ্যার পর রোগীও আসে কম! লালবাগ আর আজিমপুর জুড়ে লোডশেডিং-এর প্রাবল্য খুব বেশি, বলতে গেলে সুষম সবিরাম। গলির ভেতরটায় রিকশাগুলো জ্যাম লাগিয়ে ফেলেছে। এরা কিভাবে যেন জ্যাম বাধায়, আবার কিভাবে কিভাবে যেন জ্যাম ছুটে যায়! সারি সারি রিকশা কেউই কোনদিকে যেতে পারছে না। আমি শরীরটাকে কায়দা করে বাঁকিয়ে দুই রিকশার মধ্যে দিয়ে পার হবার সময় কানে এলো রিকশায় বসা ছেলেটি বলছে, “জান, তুমি লগে থাকলে আমার কইলজাটা ইস্প্রিংয়ের লাহান ফাল পারে।” একটা খিলখিল হাসির শব্দে থতমত খেলাম। এবারে মেয়েলি কন্ঠ কানে এলো, “ইসসিরে ছইরা বসেন। এমনে বছলে আমার সইলে ভাইব্রেছন হয়, বুঝেন না ক্যালা?”
ওই ঘন অন্ধকারেও অসহনীয় গরম আর জ্যামের মধ্যেও একটা ভালবাসাবাসির ভুরভুরে সুগন্ধ কি মনকে আলোড়িত করেনি?

পুনশ্চঃ আমি শিখেছিলাম জীব ও জড় – দুই জগতেই ভাইব্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ! একজন হেসে হেসে বলেছিল, “ওই যে বুকের কাঁপনটা – ওইটা যতদিন থাকবে ততদিন ভালবাসা।”
কবি পূর্ণেন্দু পত্রী ‘র কবিতাটা সেই থেকে মাথায় ঘুরছে – তোমাদের ওখানে এখন লোডশেডিং কী রকম?
“তুমি অন্ধকারকে সর্বস্ব, সব অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
খুলে দিতে পার কত সহজে।
আর শুভঙ্কর মেঘের মত একটু ঝুঁকলেই
কী, হচ্ছে কী?”

জুলাই ২৮, ২০১৫
টরন্টো, কানাডা।

১টি মন্তব্য “পুরনো ঢাকা’র গল্পঃ তিন”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।