ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৬

ভালোবাসার বন্ধুত্ব- [১] [২] [৩] [৪][৫]
২৬।
“এখন তুই কি করবি?” অনেক খন পর সোহেল বললো।
“জানি না” নীল আর কিছু বলার মতো খুজে পেলো না।
সোহেলঃ আমি এখনো ভাবতে পারতেছিনা এমন কেনো হলো। সব রেখে তোদের সাথেই এমন কেনো হলো?
নীল কি বলবে? ওর মাথায় কিছুই আস্তেছে না। ওএ সাথেই এমন কেনো হলো? যাও বা একটা মেয়ে কে পছন্দ হলো তাকেই কিনা ওর বেস্ট ফ্রেন্ড অনেকদিন ধরে পছন্দ করে। এখন সে কি করবে?
নীলঃ বলতে পারিস আমার সাথেই এমন কেনো হলো?
সোহেলঃ কি বলবো।
নীলঃ আচ্ছা, আমার এখন কি করা উচিত।
সোহেলঃ দেখ, এটা এখন তোর উপর কি করবি। কারন তুই যদি এই মেয়ে কে চাস, বা ওকে প্রপোজ করিস, তোর চান্স বেশি। কারন সব দিক দিয়েই তুই হাসানের চেয়ে এগিয়ে।
নীলঃ চল, বাসায় যাই। আর শোন, ভুলেও হাসান কে কিছু বলিস না।
সোহেলঃ ঠিক আছে, চল যাই।
২৭।
বাসায় ঢুকার মুহুর্তে অনীতার সাথে দেখা।
অনীতাঃ ভাইয়া কোথা থেকে আসলেন?
নীলঃ এইতো একটু বাইরে ছিলাম।
অনীতাঃ বিকালে একটু বাইরে যাবেন? ঘুরতে বের হবো।
নীলঃ আজকে না। আজকে আমার একটু কাজ আছে। আরেকদিন
অনীতাঃ কি ব্যাপার, মুড খারাপ নাকি?
নীলঃ নাহ, ওইরকম কিছু না। যাও বাসায় যাও।
রুমে ঢুকেই নীলের মাথায় নীলিমার চেহারাটা ভেসে উঠলো। ওর সাথেই এমন কেনো হলো? কেমন জানি সব কিছু ফাকা ফাকা মনে হতে লাগলো ওর কাছে। এখন সে কি করবে? সে কি বলবে মেয়েটিকে? নাকি হাসানের জন্য পিছিয়ে যাবে।
বিকালে সোহেল আসলো আবার ওর বাসায়।
সোহেলঃ কিরে কিছু চিন্তা করলি?
নীলঃ দোস্ত, তুই বলতে পারিস আমি এখন কি করবো।
সোহেলঃ দেখ, আমি যদি চিন্তা করি তোর কথা তাহলে তুই সব দিক দিয়েই ওই মেয়ের উপযুক্ত। তোর সাথেই ওকে মানায়। কিন্তু হাসানের জন্যই তো চিন্তাটা থেমে যাচ্ছে।
নীলঃ দোস্ত আমি ঠিক করেছি আমি আর আগাবো না। হাসানই ওকে পাক, আমি সেটাই চাই।
সোহেলঃ তুই কি ভেবে বলতেছিস?
নীলঃ জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত আমি না ভেবে বলতেছি না।
সোহেলঃ তুই কি পারবি ঠিক থাকতে যখন দেখবি সে হাসানের সাথে?
নীলঃ পারতে আমাকে হবেই।
সোহেলঃ চাইলে আরেকবার ভেবে দেখতে পারিস।
নীলঃ বেশি ভেভে কাজ নাই। এটাই ফাইনাল।
সোহেলঃ চল, হাসানের বাসায় যাওয়ার কথা না আমাদের।
নীলঃ চল যাই।

২৮।
হাসানের বাসায় ঢুকেই দেখে হাসান আর পলাশ বসে আলাপ করছে।
হাসানঃ আয় তোদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
নীলঃ কেনো? তোর রাজকন্যাকে বিয়ে করতেছিস নাকি।
হাসানঃ ওটা তো করতেই চাই। হচ্ছে আর কই?
নীলঃ হবে না কেনো? শোন, বসে থাকলে কোনো কাজ হবে না। তুই কালকেই ওকে তোর মনে কথা খুলে বলবি।
হাসানঃ কি বলিস? কালকেই?
নীলঃ হ্যা। কালকে তুই যাবি। সরাসরি কথা বলবি।
হাসানঃ তোরা যাবি তো সাথে?
নীলঃ আমরা রাস্তার এই পাড়ে থাকবো। তুই গিয়ে বলে আসবি?
হাসানঃ মানে দুয়েকদিন পরে বলি?
নীলঃ না কালকেই।
হাসানঃ আচ্ছা, বলছিস যখন ঠিক আছে। আচ্ছা, তোর সেই মেয়েকে পেয়েছিস? দুই বন্ধু একসাথে করতে পারলে জোস হইতো।
নীলঃ নারে, ওকে দুয়েকবার দেখেছিলাম। এমন কিছু না। এমন তো আমার অনেক কেই পছন্দ হয়।
হাসানঃ হ্যা। তুমি ভাই লেডি কিলার মানুষ।
নীলঃ ফালতু আলাপ বাদ দে। কালকে কি বলবি ঠিক কর।
হাসান উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে কিভাবে ওর মনে কথা খুলে বলবে নীলিমাকে। সোহেল দেখতে থাকে নীল কি নির্বিকার হয়ে ওর পছন্দ কে সাজিয়ে দিচ্ছে হাসানের হাতে। হাসান জানতেও পারলো না নীল কতোবড় আত্মত্যাগ করলো বন্ধুর জন্য।
২৯।
পরদিন ওরা সবাই অপেক্ষা করছে কোচিং এর নীচে।
নীলঃ সব মনে আছে তো কি বলবি।
হাসানঃ আছে তো। কিন্তু ওর সামনে গেলেই তো ভুলে যাই।
নীলঃ লাথি খাবি ভুলে গেলে। তুই না ওকে পছন্দ করিস। আজকে বলতে না পারলে কিন্তু আর পাবি না।
হাসানঃ কিরে বদ দোয়া দিস না।
নীলঃ আমি মুখে না হাতে বিশ্বাসী। বলতে না পারলে মাইর খাবি।
তখনই দেখলো নীলিমা এসে নামলো রিক্সা থেকে। নীলের মনে হলো আজকে কি ওকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে?সে কি ভুল করলো নিজে সরে গিয়ে? সেকি ঠিক থাকতে পারবে সারাজীবন হাসানের সাথে ওকে দেখে?
সোহেলঃ হাসান এই সময়। যা বলে আয়।
হাসানঃ দোস্ত আমার খুব ই নার্ভাস লাগতেছে।
নীলঃ এইটা নার্ভাস হবার সময় না। যা তাড়াতাড়ি।
হাসানঃ দোস্ত, তুই চল আমার সাথে। খালি পাশে দাঁড়িয়ে থাকবি। আমি বলবো।
নীলঃ আমি যেতে পারবোনা। আমার সমস্যা আছে।
হাসানঃ শালা বন্ধুর বিপদের সময় তোর সমস্যা না? চিনলাম তোকে।
নীল অসহায় ভাবে তাকায় সোহেলের দিকে।
হাসান আবার তাড়া দেয়। চল না।
সোহেল তাকিয়ে দেখে নীলের অসহায় চেহারা। হঠাত করে সেখানে এক অন্য রকম কঠোরতা দেখে সে।
নীলঃ চল ।
সোহেলঃ নীল, তুই থাক আমি যাই ওর সাথে।
নীলঃ শুনতে পাস নাই আমি যাবো?
নীলের কন্ঠে এমন এক শীতল ভাব ছিলো যে হাসান পর্যন্ত অবাক হয়ে তাকালো। এ যেনো অন্য কোনো নীল।
ওরা দুই জন নীলিমার পাশে গেলো। এই প্রথম নীল এতো কাছ থেকে দেকছে। অদ্ভুত সুন্দর।
নীলঃ দেখুন আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছা নাই। আমার এই ফ্রেন্ড শুধু কিছু কথা বলবে আপনাকে।
ভেবেছিলো নীলিমা বলবে কেনো? কি কথা/ আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না ইত্যাদি। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে বললোঃ বলেন।
নীলঃ হাসান তুই কথা বল আমি ওইদিকে আছি।
এই বলে নীল চলে গেলো। অপর পাড় থেকে সোহেল পুরো ঘটনা টা দেখছিলো। ও দেখলো সেই নীল কথা শেষ করে এদিকে আসছে ওর মাঝের জীবনিশক্তি যেনো হঠাত করেই শেষ হয়ে এলো। যেনো এক সেনাপতি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যুদ্ধ ময়দান থেকে ফেরত আসছে। নীল যেনো জীবনের উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
(চলবে)

৩,১২১ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৬”

  1. রকিব (০১-০৭)

    পুরানা কথা মনে পইড়া যায়!! :(( :(( (মানে আমার এক ফ্রেন্ডের এই অবস্থা হইছিল, পোলাডা কত ভালা ছিল :grr: ।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    কষ্ট লাগলো এবং মানতে পারলাম না। বিশেষ করে শেষ লাইনগুলো।
    যাই হোক, আশা করি তোমার মনে আছে, কাহিনী ছ্যাকাতে শেষ হলে পাঙ্গা আছে। আশা করি তোমার পরীক্ষা শেষ এবং এখন নিয়মিত লিখবে।

    জবাব দিন
      • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

        কষ্ট লাগলো এবং মানতে পারিনি ---- তোমার শেষ প্যারাটা পড়ে।

        ও দেখলো সেই নীল কথা শেষ করে এদিকে আসছে ওর মাঝের জীবনিশক্তি যেনো হঠাত করেই শেষ হয়ে এলো। যেনো এক সেনাপতি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যুদ্ধ ময়দান থেকে ফেরত আসছে। নীল যেনো জীবনের উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

        নীল এই মেয়েটাকে শুধু দূর থেকে দেখেছে, ওর সাথে পরিচয় হয়নি - মেয়েটার ব্যক্তিত্ব এবং আচার-আচরন সম্পর্কে নীলের কোনো ধারনাই নেই। শুধু চোখের দেখায় এতটা গভীর অনুভুতি ???
        ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রেমের তেমন অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, cadets are not just suckers of pretty faces. খুব সুন্দর চেহারা হয়ত আমাদের আকৃষ্ট করবে, কিন্তু ভেতরে কিছু না থাকলে, আমার মনে হয় না, আমরা কেউ সে সম্পর্ক চালিয়ে যাবো। যা হোক, এটা আমার ব্যক্তিগত ধারনা।
        অনীতাকে আমার খুবই সুইট লেগেছে। আশা করি তুমি তাকে নীলের rebound lover বানাবে না। আর নীলিমা যদি হাসানকে গ্রহন না করে বা আপাতত গ্রহন করল এবং পরে কোনো কারনে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলো, নীল যদি তখন চেষ্টা করে, ব্যাপারটা খুব দৃষ্টিকটু হবে। যদি ধরে নেই, তুমি ছ্যাকাতে শেষ করবে না ( মনে থাকে যেনো, তাইলে বিশাল পাঙ্গা), তোমার কাহিনীটা খুব সাসপেন্সের মধ্যে আছে। 🙂 🙂
        দেখা যাক, আমি যে দিকে মোড় নেবে বলে আন্দাজ করছি, কাহিনী সে দিকে যায় কিনা ............... অনেক আগ্রহ নিয়ে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষাতে থাকলাম।

        অফ টপিক, কোথায় ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছো ???

        জবাব দিন
  3. কি রে ভাই, এত তাড়াতাড়ি শেষ ক্যান?

    রবিন ভাআআইই, বামে থেকেএএএএ... জলদিইইইহ্হ্হ্ লেখ্ .... থুক্কু লেখেন।
    অনীতা মেয়েটার দিকে বেচারা নীলের জন্য পাগল, আর ব্যাটা ফিরাও তাকাইতাছেনা।
    শেষে আবার অনীতা নীলরে ছ্যাঁক দেয়।

    কাহিনীটার সাথে এফসিসির একটা পুলার কাহিনীর মিল পাইতাছি।

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    হাসান আর নীলের মধ্যে গ্যাঞ্জাম পাকায়া দেন...যাতে কুন হা...পো...ই নীলিমাকে না পায়... :grr:
    আমরা থাকতে আজাইরা পোলাপাইন আইসা...ফাইজলামি নাকি??? x-(


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    অনেকদিন সিসিবিতে আসা হয় না... কম্পিউটারটা বিগড়ায় গেসিলো। যাই হোক, কাহিনীতে ব্যাপিক টুইস্ট-এর আলামত পাইতেসি। আরো টুইস্ট করেন। হিন্দি সিরিয়াল বানায় দেন (পারলে ঐ ঢিশ-ঢাশ মার্কা মিউজিকগুলাও যদি এ্যাড করা যায় আরো ভালো 😛 )

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।