ভালোবাসার বন্ধুত্ব- ১০

ভালোবাসার বন্ধুত্ব- [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮] [৯]
৪১।
সেদিন নীলের সাথে নীলিমাকে দেখে হাসান অবাক হয়ে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলো। তারপর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে বের হয়ে গেছে। এমনকি নীল ও কিছু বলে নাই। আসলে নীল বুঝতে ছিলো না কি বলবে নাকি বলবে না।
হাসান বাসায় গিয়ে যখন অনেক্ষন চুপ চাপ বসে সোহেল বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে।
সোহেলঃ কিরে কি হইছে?
হাসানঃ আচ্ছা, নীল কে কি তোর বেঈমান মনে হয়েছে কখনো?
সোহেলঃ কি বলতেছিস? হইছে কি?
হাসানঃ নীল কে আজকে দেখলাম নীলিমার সাথে বসে আছে। এমন তো না নীল জানে না যে আমি নীলিমাকে পছন্দ করি। আমি যেদিন প্রথম কথা বলতে যাই, নীলই তো সাথে ছিলো। তাহলে সে কেমন করে এমনটা করতে পারলো?
সোহেলঃ তোকে একটা কাহিনি শুনাই। শুনবি?
হাসানঃ আমি তোরে সিরিয়াস কথা বলতেছি আর তুই কাহিনি শুনাবি মানে?
সোহেলঃ এইটা রিয়েল, লাইফ কাহিনি। তোর মনে আছে নীল কয়েক বছর আগে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো?
হাসানঃ কার কথা বলিস? অনীতা?
সোহেলঃ নাহ, ওইযে, একটা মেয়ে যাকে নীল মাঝে মাঝে এদিক সেদিক দেখতো, তারপর পছন্দ করলো।
হাসানঃ হ্যা, যাকে পরে আর আমরা অনেক খুজে পাই নাই।
সোহেলঃ ভুল। আমি আর নীল খুজে পেয়েছিলাম। তোকে জানানো হয় নাই।
হাসানঃ মানে?
সোহেলঃ মানে হলো, সেই মেয়েটি ছিলো নীলিমা। কিন্তু যখন নীল জানতে পারলো যে ওর যাকে পছন্দ করে সেই মেয়েটি তোর নীলিমা তখন সে আমাদের সবার মুখ বন্ধ করে দেয়। তোকে কিছু জানাতে মানা করে। তারপর নিজে গিয়ে নীলিমার সাথে তোর কথা বলিয়ে দেয়। তারপর সে নিজে সরে যায়।
হাসানঃ কিন্তু তুই আমাকে বলিস নাই কেনো?
সোহেলঃ বললে কি হতো? তুই ও হয়তো নীলের জন্য সরে দাড়াতি। তাতে কি লাভ হতো?
হাসানঃ কিন্তু এখন আবার মানে কিভাবে?
সোহেল গত কয়েকদিনের সব কথা খুলে বল্লো হাসান কে। অয়ন, ফারিয়ার সাথে ওর কলেজ এ যাওয়া, নীলিমার সাথে হঠাত দেখা, দেখে নীলের এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত সব।
সব শুনে হাসান অনেক্ষন চুপ চাপ বসে রইলো।
সোহেলঃ দেখ আমার মনে হয় নীলের এই সুযোগটা প্রাপ্য। নীলিমা যদি ওকে গ্রহন করে তাহলে হবে নাইলে তো হবে না। এমন তো না নীল চাইলো আর সম্পর্ক হয়ে গেলো।
হাসানঃ নীল একবার আমাকে বলতে পারতো? না বলে ওর এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা একদম ঠিক হয় নাই।
সোহেলঃ দেখ আমার যা বলার তোকে বললাম। বাকি দেখ তুই চিন্তা করে।
হাসানঃ আমিই তো চিন্তা করবো। তোকে জিজ্ঞাসা করতে আসবো নাকি? তুই যদি আমার বন্ধু হইতি, অনেক আগেই এইসব আমাকে বলতি।
সোহেলঃ দেখ মাথা গরম করিস না।
হাসানঃ আমাকে বলতে হবে না আমি কি করবো।
এই বলে হাসান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো
৪২।
সেখান থেকে বের হয়ে অয়ন আর নীল গেলো তমালের হোস্টেলে।
অয়ন তমাল কে সব খুলে বল্লো আজকে কিভাবে হাসানের সাথে দেখা।
তমালঃ নীল এখন তুই কি করবি?
অয়নঃ আরে কি করবে মানে কি? তুই কি চাস এখন নীল নীলিমার সাথে দেখা বন্ধ করে দিবে?
তমালঃ তোর কি মনে হয় হাসান ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে?
অয়নঃ এখানে অস্বাভাবিক কি আছে? নীল নীলিমাকে পছন্দ করে। নীলিমা নীলের সাথে ঘুরতে কমফোর্ট ফিল করে। এখানে সব কিছুই তো নরমাল।
তমালঃ নারে, আমরা সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে। অন্তত আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চাবো না, একটি মেয়ের কারনে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আমি জানি না নীল কি ভাবছে।
নীলঃ দেখ আমি হাসান কে খুব ভালো ভাবে চিনি। এখন ভুলেও আমাকে নীলিমার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। এমন কি কখনো বলবে না। আর একটি ব্যাপারে আমি অয়নের সাথে একমত। জানি হয়তো বলবি আমি সার্থপরের মতো বলতেছি। কিন্তু আমিও তো নীলিমাকে ভালোবাসি। নীলিমাও হয়তো।
তমালঃ দেখ, আমার যা মনে হয়েছে আমি বলেছি। বাকি টা তোর ইচ্ছা।
নীলঃ আচ্ছা আমাকে তুই একটা কথা বল, আমি যদি এখন নীলিমার সাথে ধর কথা দেখা বন্ধ করে দিলাম। তারপরেও কি হাসান আমার সাথে আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারবে?
তমালঃ মনে হয় না।
নীলঃ হ্যা, সেটাই। সুতরাং আমি এর শেষ দেখতে চাই। অন্তত বলতে তো পারবো যাকে আমি পছন্দ করেছিলাম তাকে আমি প্রপোজ করেছি। মানা করলে করবে।
তমালঃ যেটা ভালো মনে করিস দেখ।
অয়নঃ চল বাসায় যাই।
৪৩।
রাতে একা একা নীল অনেক্ষন চিন্তা করলো যা করতেছে, ঠিক করতেছে নাকি হুজুগে কিছু ভুল হচ্ছে? অনেক্ষন চিন্তা করার পর দেখলো যদি ভুল হয়েও থাকে হয়ে গেছে। এখন আর পেছানোর উপায় নাই।শুধুই এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো সামনে সুন্দর রাস্তা অথবা গর্ত।
৪৪।
পরদিন সকালে সোহেল এসে আগেরদিনের হাসানের প্রতিক্রিয়া এর কথা বল্লো। শুনে নীল বুঝলো ওর আর হাসানের বন্ধুত্ব কখনোই আর আগের মতো হবে না। যা হবার হয়ে গেছে। নীল এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।
এরই মাঝে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো।হাসানের সাথে নীলের দেখা হয়েছে কিন্তু নীলিমার ব্যাপারে কোনো কথা হয় নাই। অন্য সব ব্যাপারে স্বাভাবিক কথা। কিন্তু এই স্বাভাবিকতার মাঝে যে কতো বড় অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে ওরা।
তারপরে একদিন নীল যখন নীলিমার সাথে…
নীলিমাঃ আচ্ছা, আমার কথা তো অনেক কিছুই বলেছি তুমি তো কিছুই বলো না। তুমি কি কখনো কাউকে পছন্দ করেছো?
নীলঃ হ্যা করি তো।
নীলিমাঃ আরে এই কথা এতোদিনে বলছো? কে সেই লাকি মেয়ে?
নীলঃ আছে একজন। সে লাকি কি না জানি না, কিন্তু আমি লাকি সেটা জানি।
নীলিমাঃ কবে থেকে এই ঘটনা?
নীলঃ আরে ঘটনা আর কই হলো? এখনো তো বলতেই পারলাম না।
নীলিমাঃ মানে?
নীলঃ মানে বলি না যদি সে মানা করে।
নীলিমাঃ নাও তো করতে পারে। বলেই দেখো।
নীলঃ সিওর।
নীলিমাঃ আরে না বললে যদি সারাজীবন আফসোস করতে হয়? তার চেয়ে তো বলা ভালো। তাই না?
নীলঃ হুম, ঠিক। ঠিক আছে বলে দিবো।
নীলিমাঃ গুড। আমাকে বলো কি হলো। পরিচয় করিয়ে দিও।
নীলঃ তোমাকে বলবো নাতো কাকে বলবো
নীলিমাঃ মানে?
নীলঃ আরে তুমি আমার এতো ভালো বন্ধু। বলতে তো হবেই।
৪৫।
সেদিন রাতেই নীলিমার মোবাইল এ নীলের এস এস এস এলো।একটি শের।
“নিদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে
খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে
পার তুমহারি ইয়াদ ম্যায়
না নিদ আয়ে না খোয়াব আয়ে”
নীলিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো লাইন গুলার দিকে…
(চলবে…)

৩,৪২৪ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব- ১০”

  1. হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    “নিদ আয়ে তো খোয়াব আয়ে
    খোয়াব আয়ে তো তুম আয়ে
    পার তুমহারি ইয়াদ ম্যায়
    না নিদ আয়ে না খোয়াব আয়ে”

    মারহাবা মারহাবা 😛 বস জটিল হইতেসে।

    নীলিমাঃ ধুর বাদ দাও। একটা মজার কথা বলি, একটা ছেলে আছে। অনেক বছর ধরে আমাকে পছন্দ করে। এতোবার মানা করেছি,তার পরেও পছন্দ করে।
    নীলঃ নাম কি বলো তো।
    নীলিমাঃ আরে আমি কি নাম মনে রেখেছি নাকি?

    এইটা কি হাসান?

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    ক্লাইম্যাক্স তুঙ্গে তুলে থেমে গেলেন :(( :((
    ভালো হচ্ছে ভাইয়া, এইটার ১০০ পর্ব হইলে ভালো হয় 😀 😀 ।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    এখন আর পেছানোর উপায় নাই।শুধুই এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো সামনে সুন্দর রাস্তা অথবা গর্ত।

    মনে আছেতো? গির্তে পিরলে পাঙ্গা :grr: :grr:
    চলুক সাসপেন্স :clap: :clap:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    রবিন তো মনে হইতাছে একলগে হূমায়ুন আহেমদ, ইমদাদুল হক মিলন আর আনিসুল হকের ভাত মারবো!! রীতিমতো ডিজুস প্রেম কাহানি!!!!!!!!!!!!!!!! :grr: :grr: :grr:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    তোমার সিরিজটা পড়লাম, 🙂

    তুমি দেখি আমাদের জীবন কাহিনী লিখে ফেলেছ। একদম মিলেনি, তবে খুব কাছাকাছি গিয়েছে।

    তুমি তোমার নিজের জীবন থেকে লিখছো না তো আবার এইটা............।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  6. সামি হক (৯০-৯৬)

    মিয়া গ্রামীণ এর চাকুরী ছেড়ে সিরিয়াল লিখা শুরু করো, ভালা লাগতাছে বহুত চালায়ে যাও।

    আর ফয়েজ ভাই এর কাহিনী মাসরুফ এর কাহিনী সব কাহিনী মিক্সড করে দিতে পারো। যাই এইবার ১১ পড়ি।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।