ভালোবাসার বন্ধুত্ব- [১] [২] [৩] [৪][৫] [৬]
৩০/
হাসানঃ নীল তোর মনে আছে সেই দিনটার কথা? যেদিন হাসান প্রপোজ করতে গেলো? আর তুই গেলি ওর সাথে?আমি তো তোর চেহারা দেখে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। না জানি কি করে ফেলবি।
নীল আনমনে ভাবতে লাগলো সেই দিনের কথা। সেদিন হাসান কে নীলিমার পাশে রেখে সে যখন ফিরছিলো তখন তার মনে হচ্ছিলো তার কোনো কিছুর আর অনুভুতি নাই। চারিপাশ কেমন যেনো শুন্য হয়ে গেছে। জীবনের অর্থই যেনো শেষ হয়ে গেছে। কিভাবে ফিরে আসলো তারপর সবাইকে কি যেনো বলে সে চলে গেলো পার্কে। একা একা কতখন বসে ছিলো বলতে পারবে না। হঠাত দেখে তার পাশে সোহেল এসে বসে আছে। তারপর সোহেলের সাথে বাসায়।
সে দিনের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর। না, নীলিমা হাসান কে গ্রহন করে নাই। সরাসরি মানা করে দিয়েছে। নীলের কড়া নিষেধের কারনে কেউ হাসান কে বলে নাই নীলের নীলিমাকে পছন্দের কথা। হাসান কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছিলো নীল যাকে পছন্দ করতো সেই মেয়েটির কথা। কিন্তু এই কথা সেই কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছে।
ওরা সবাই কলেজ পাস করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। নীল, হাসান আর সোহেল একই ভার্সিটিতে আর তমাল মেডিকেল এ। নীল কখনো হাসান কে বুঝতে দেয় নাই তার নীলিমার প্রতি ভালোবাসার কথা। যদিও হাসান ওই দিনের পর আরো কয়েকবার প্রপোজ করে প্রত্যাখিত হয়েছে। শুধু হাসান প্রতিবার যখন ডেকেছে, নীল কোনো না কোনো কারনে এড়িয়ে গেছে। নাহ, নীলের এর পর কারো সাথে কোনো সম্পর্ক হয় নাই।
এই সময় হাসান চলে আসাতে প্রসংগ পাল্টাতে হলো।
সোহেলঃ কিরে হাসান কোথা থেকে আসলি?
হাসানঃ আর বলিস না, বোরিং ম্যাথ ক্লাস ছিলো। তোরা তো গেলি না।
নীলঃ ধুর এতো ক্লাস করে কি হবে?
হাসানঃ হ্যা তুই তো ভাই জিনিয়াস। পড়া ছাড়াই ভালো নাম্বার পাস।
নীলঃ শোন, প্রব্লেম হলো তোরা বেশি সিরিয়াস পড়াশোনা নিয়ে। আমি এতো না।
সোহেলঃ চল, ক্যান্টিনের দিকে যাই।
হাসানঃ চল।
৩১।
ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে অয়ন বসে আছে। অয়নের সাথে ভার্সিটিতে এসে পরিচয়। ওদের শহরেরই ছেলে। কিন্তু অন্য কলেজের কারনে তখন পরিচয় ছিলো না।
অয়নঃ কিরে তোরা কোথা থেকে?
নীলঃ হাসান আসলো ক্লাস থেকে আর আমরা বাইরে থেকে।
অয়নঃ দোস্ত, আমার আগের বাসাটাতে প্রব্লেম হচ্ছে। আমার মনে হয় নতুন বাসা খুজতে হবে।
নীলঃ তোকে আগেই বলেছি, তুই ওই বাসা ছেড়ে আমার সাথে এসে থাক। আমি তো একাই থাকি।
অয়নঃ তাই মনে হয় করতে হবে।
নীলঃ চল, বিকালে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
হাসানঃ ওই মেয়েটি কে রে ওই টেবিলে বসে আছে?
সোহেলঃ নতুন ভর্তি হয়েছে।
হাসানঃ নীল দেখ কিছু করতে পারোস কি না।
নীলঃ হ্যা আমার তো আর খেয়ে কাজ নাই।
হাসানঃ এই হলো জগতের নিয়ম। তোর পিছনে সারা ভার্সিটির মেয়েরা পাগল আর তুই কাউকে পাত্তা দেস না।
নীলঃ পাত্তা দেয়ার মতো হলে ঠিকই দেখতে পাবি আমার সাথে।
হাসানঃ কিন্তু কারন টা কি? তুই এই কয়েক বছরে অফার তো কম পাস নাই। কেউ কি পছন্দসই ছিলো না?
নীলঃ ফালতু আলাপ রাখ। চল বের হই।
৩২।
কয়েকদিনের মাঝেই অয়ন এসে নীলের বাসায় উঠলো। নীলের তো ভালোই হলো। বাসায় একা একা বোরিং লাগতো। একটা কথা বলার মতো মানুষ হলো। এমনিভাবে একদিন কথায় কথায় নীল ওকে নীলিমার কাহিনি বললো। সব শুনে অয়ন প্রথমে কিছু বললো না। তারপর বললোঃ
যখন হাসান এর কিছু হলো না, তখন তুই বলতে পারতি তোর মনের কথা?
নীলঃ তোর কি মনে হয় ব্যাপারটা ভালো হতো? মনে হয় না। হাসান খুবই কষ্ট পেতো। আর এখন আর আমি তখনকার যোগ বিয়োগ করতে চাই না, কি হলে কি হতো। বাদ দে।
অয়নঃ না আমি এমনি বলছিলাম হাসানের চেয়ে তুই সব দিক দিয়েই যোগ্য ছিলি।
নীলঃ কি জানি হবে হয় তো।জানি না, আমি আর চিন্তাও করতে চাই না।
অয়নঃ একটা কথা বলি?
নীলঃ কিঃ
অয়নঃ তুই কিন্তু এখনো নীলিমাকে খুবই পছন্দ করিস।
নীলঃ ধুর, কে বললো তোকে? আমি ওকে কবে ভুলে গিয়েছিলাম। তখনো আমি সিরিয়াস ছিলাম না। কিছুটা পছন্দ হয়েছিলো।ব্যাস ওইটুকুই। কিন্তু হাসান ওকে প্রচন্ড পছন্দ করতো এবং সেটা আমার আগে থেকে।
অয়নঃ দেখ, আমার সহজ হিসাব। তুই যদি ওকে তখন পছন্দ না করতি তাহলে হাসানের জন্য ত্যাগ করতে পারতি না। প্রচন্ড ভালোবাসা মানুষকে মহৎ করে তোলে। আর এখনো যে পছন্দ করিস সেটা আজকে আমি তোর কথা থেকেই বুঝতে পারতেছি। আর দেখ, ভার্সিটি তে এতো মেয়ে তোকে পছন্দ করে কিন্তু তুই কাউকে পাত্তা দেস না। তারও কারন ওই নীলিমা।
নীলঃ দেখ আমি মহৎ হবার জন্য করি নাই কিছু। যেটা আমার মনে হয়েছে ক্রয়া দরকার সেটাই করেছি। আমার জায়গায় তুই হলে মনে হয় একই কাজ করতি।
অয়নঃ মনে হয়। কিন্তু যখন হাসান রিফিউজ হয়েছে কয়েকবার তখন মনে হয় একবার ট্রাই করতাম।
নীলঃ বলা খুব সোজা রে। জীবনটা এতো সহজ না, এতো হিসাব করে চলেও না। বাদ দে। পরশু থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। চল পড়তে বসি।
অয়নঃ ঠিক আছে। কিন্তু আমার কথা গুলা চিন্তা করে দেখিস।
৩৩।
রাতে নীল শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো অয়নের কথা গুলো। আসলেই তো। নীল কি এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পেরেছে নীলিমাকে? হাসানের চেহারা দেখলেই তো ওর মনে পড়ে যায় ওই দিনের কথা।নীলিমার ওই মায়াময় মুখটার কথা। সে কি তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো? হাসানও তো পায় নাই ওকে
নাহ, ওই মুহুর্তে সে সঠিকই করেছিলো। এছাড়া আর সে কিইবা করতে পারতো? হাসানের সাথে এক মেয়ে নিয়ে গ্যাঞ্জাম? না ঠিকই করেছিলো সে।
(চলবে)
৩২ টি মন্তব্য : “ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৭”
মন্তব্য করুন
as usual :gulli2:
১ম
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
উপরে দেখ
:(( :(( :((
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
kahini dekhi aro critical hoye gelo... kon dike turn korbe bojha jache na..!
আমিও বুঝতেছি না
প্রথমে আমার গল্পের চরিত্রের নাম ব্যবহার করার জন্যে তোমারে ব্যাঞ্চাই ... :gulli2: :gulli2: :gulli2:
আর আমি যেটা আন্দাজ করেছিলাম, তুমি সে রকমই করেছ। আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম, তুমি গল্পের টাইমলাইন বদলে ফেলবে। এখন তোমার গল্পে তুমি নতুন করে গতি আনতে পারবে।
এখন আমার একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, হাসান বা নীল কেউ নীলিমার বর্তমান খবরাখবর জানে কিনা। কারন যদি এখনো, ওদের দুজনের কেউ, নীলিমার জন্যে ভালোবাসার অনুভুতি পুষে রাখে, তাহলে খুব স্বাভাবিক যে, একটু ডিস্ক্রিট ভাবে ওদের কেউ নীলিমার খোঁজ রাখবে।
তমালও কি নীল এবং নীলিমার ব্যাপারে জানে ?? জোক্স হবে, যদি নীলিমাও মেডিক্যাল এ ভর্তি হয় এবং তমাল বা অয়ন যদি অর প্রেমে পড়ে যায়।
:khekz: :khekz:
আর নীলকে তো ভাই তুমি আর পুরুষ রাখলানা ... =)) =)) =))
ভাইয়া আপনার প্রশ্নের উত্তর হলোঃ হাসান এখনো নিয়মিত খবর রাখে নীলিমার।কারন সে এখনও হাল ছাড়ে নাই। আর তমাল যেহেতু নীলের সাথে কলেজে ছিলো সেও সবই জানে।
কেন ভাই? অয়নের সাথে থাকে বলে? ভার্সিটি লাইফে তো এরকমি সবাই মেসে থাকে। :))
অয়নের সাথে থাকে বলে না, তুমি নীলের চরিত্রের কোনো দুর্বল দিক এখনো দেখাওনি।
তুমি এই ছেলেটাকে মহাপুরুষ বানিয়ে দিচ্ছো।
তুমি শুধুমাত্র নীলের ভালোদিক গুলোর দিকে ফোকাস করছো। এইটাই আমার কাছে আনন্যাচারাল লাগছে। কাহিনী যেহেতু নীলকে কেন্দ্র করে, তাই ওর সম্পর্কে আরো তথ্য দেয়া দরকার।
এটা আমিও লেখার পর ভাবতেছিলাম। একজন পাঠক হিসাবে আপনি আর কি তথ্য জানতে চান নীলের?
প্রথমত, ওরা ভার্সিটির কোন বর্ষে পড়ে। যেহেতু, এখনো বোরিং ম্যাথ ক্লাস করতে হচ্ছে ওদের একজনকে, আমি ধরে নিচ্ছি প্রথম বর্ষের শেষ বা দ্বিতীয় বর্ষের শুরু। পরিস্কার করে দিয়ো ব্যাপারটা।
আর ভার্সিটির পোলাপাইনসুলভ মৌজমাস্তির দিকে কেনো ওর মনোযোগ নাই, সেটার একটা ব্যাখ্যা লাগবে।
অফ টপিক, আমার এখন সিরিয়াসলি মনে হচ্ছে, এইটা ব্যাক্তিগত বা কাছের বন্ধুদের জীবন থেকে নেয়া।
আগে ওরা কলেজ এ পড়তো। যেহেতু তিন বছর পরের কাহিনি তাই হিসাব করলে ওই রকমই হবে।
আর মৌজমাস্তি হবে। মাত্র তো শুরু করলো।
নীল পোলাটা দেখি এক্কারে আমার মতন 😐 😐
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রবিন একটা কথা কই, ঠিক করছি সিরিজ পড়মু লাস্ট পর্ব আসার পরে, তাই তোমার প্রতি পর্বে ঢুকি আর চলবে দেখলে ফুটি............। 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আরে আমিও ফয়েজ ভাইর মত। চিমটি ভাইয়া।
আমি ঠিক করছি পরের পর্ব থেকে চলবে লিখা টা মাঝখানে দিবো। তাহলে চলবে লেখাটা খোজার জন্য আপনি পড়বেন লেখাটা
তাইলে নিচে লেইখা দিস যে 'চলবে' লেখাটা মাঝে কোথাও আছে, নিজ দায়িত্বে খুজে নিন ;))
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
x-( x-(
'আছে' না দিয়ে 'থাকতে পারে' দিলে আরো সাসপেন্স হয়।
দোস্ত...তোর উপন্যাস ত দারুণ চলতেছে! :clap: :clap:
অপেক্ষায় আছি কবে সব প্যাচ ছুটবে আর একটা মধুর সমাপ্তি হবে। :dreamy: :dreamy:
নারে কাহিনি তে মনে হয় আমারেই নায়ক হয়ে আসতে হবে। নাইলে প্যাচ ছুটার চান্স দেখতেছি না :))
রবিন ভাই, নীলিমা কোথায় পড়তেছে??
যেখানেই পড়ুক, এম বি এ করার জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট এ আইনেন... ;;;
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কোথায় পড়তেছে আমি কেম্নে কমু? গল্পে দরকার পড়লে আনমু নে ওরে।
আচ্ছা ওরা কে কোথায় চাকরি করবে ??
কেমনে কমু? পরীক্ষার জন্য কয়েকদিন লিখতে পারমু না মনে হয়। আর কাহিনি এম্নিতেই উপন্যাস হইয়া যাইতেছে। দেখি আর বেশি লম্বা করার ইচ্ছা নাই।
খালি চিন্তা কইরা পাইতেছি না কার সাথে কার মিল দিমু
আজাইরা বইসা না থেকে, আজকে লিখে ফেল্লেই তো পারতা।
কেমনে? অফিসে বইসা কমেন্ট যে করি এইটাই অনেক। লেখার কোনো স্কোপ নাই
:clap: :clap:
আমি সিরিজ ভালবাসি :dreamy: 😡
কবে পাবো পরের পর্ব? স্বপ্নচারীর সাথে আমিও একমত নীলকে কেমন জানি অতি মানব টাইপের লাগছে।